গল্প নষ্ট বউ আফছানা খানম অথৈ

0

নষ্টা বউ

আফছানা খানম অথৈ

আজ কলেজে বার্ষিক সাংস্কৃতিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান। সুমা ডান্স করবে।সে ভালো নাচতে পারে।বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে ড্যান্স করে।গ্যালারিভর্তি দর্শক তার ড্যান্স দেখার অপেক্ষায়…।
শুরু হলো সুমার ড্যান্স।সে গানের তালে তালে নাচ্ছে।সে খুব ভালো নাচলো।গ্যালারিভর্তি দর্শক হাত তালি দিয়ে তাকে সংবর্ধনা জানালো।এই অনুষ্ঠানে আসা কবির মাস্টার তার প্রেমে পড়ে যায়।শুধু তাই নয়,তাকে মনে প্রাণে ভালোবাসে,বিয়ে করতে চাই।কথাটা বাড়িতে গিয়ে সে তার বড় ভাবীর কাছে প্রকাশ করে।ভাবী কথাটা তার বড় ভাই ও মায়ের কাছে প্রকাশ করে।কবিরের বাবা নেই।বাবার অবর্তমানে বড় ভাই অবিভাবক।তাই তাকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজী না।কারণ সুমা মেয়েটা ভালো।সে নামাজ পড়ে না রোজা রাখেনা,বেপর্দায় চলাফেরা করে।এইজন্য কবিরের বড় ভাই তাকে বিয়ে করাতে রাজী না।কিন্তু কবিরের এককথা সে এই মেয়ে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না।কী আর করা ছোট ভাইয়ের আবদার না রেখে কী পারে?

অনিশ্চাসত্বেও তিনি এ বিয়েতে মত দিলেন।মহাধুমধামে ছোট বউয়ের বিয়ে দিলেন।সুমা বউ হয়ে কবিরের পরিবারে আসল।তার চাল চলন ধ্যান ধারণা কিছুই ওদের সাথে মিলছে না।প্রথম প্রথম এই নিয়ে কবিরের মায়ের সাথে কথাকাটাকাটি হলেও পরবর্তীতে এই নিয়ে তিনি আর মাথা ঘামাতেন না।এক সময় ওরা আলাদা হয়ে যায়।কবির ছোট ছেলে তাই মা তার সঙ্গে থেকে যায়।সুমা শ্বাশুড়িকে একটু ও ভালো চোখে দেখতে পারে না।খুব খারাপ আচরণ করে।ঠিকমতো দেখভাল করে না।এই নিয়ে মাঝেমাঝে কবিরের সাথে কথাকাটাকাটি হয়।।সুমা কিছুতেই শ্বাশুড়িকে মানতে পারছে না।এই নিয়ে দফায় দফায় দুপরিবারের মাঝে বৈঠক হয়।কিন্তু কোন সমাধান হয় না।কোথাও মা মেয়েকে বুঝাবে শ্বাশুড়িকে ভালোভাবে দেখভাল করার জন্য।কিন্তু তা না করে তিনি উস্কানি দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত।পাছে মেয়ে আর ও খারাপ আচরণ করে।কী আর করা শ্বাশুড়ি মুখ বুঝে সব অপমান সহ্য করছে।আর মনে মনে নামাজ পড়ে অভিশাপ দিচ্ছে।এই বউয়ের যেন পতন হয়।

সুমা কিন্তু এসব কেয়ার করছে না।সে তার ইচ্ছেমত যা ইচ্ছা তাই করছে।যখন যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাচ্ছে।কাউকে পরোয়া করছে না।শুধু তাই নয় যার তার সঙ্গে ভাব করছে।এক সময় কবির মাস্টার এসব জেনে যায়।এই নিয়ে দুপরিবারের মাঝে বৈঠক বসে।সুমার বড় ভাই সৈকত বোনের পক্ষ হয়ে কবির মাস্টারের কাছে মাফ চায়।মাস্টার শান্ত হয় এবং সুমার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেয়।এরপর মোটামুটি কবছর ভালোভাবে কাটে।সুমা দুসন্তানের মা হয়।সুমা যেদিকে যায় খুব সাজু-গুজু করে যায়।আজও সাজু-গুজু করে সে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে যায়।সেখানে দেখা হয় এক সৈনিকের সঙ্গে।সে ও বিবাহিতা তার ও দুছেলে। যাক দুজনের মাঝে ভালোভাবসাব তৈরী হয়।সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে দুজন খোলগল্পে মেতে উঠে।শুধু তাই নয় দুজন দুজনকে বন্ধু ভাবতে শুরু করে।
যে যার মতো করে বাসায় ফিরে যায়।কিন্তু কেউ কাউকে ভুলতে পারে না।একে অপরের প্রেমে দেওয়ানা।

মাস্টার যখন স্কুলে চলে যায়।তখনি শুরু হয় দুজনের মাঝে ফোনালাপ, চ্যাটিং,ভিডিও কল।সুমা শাড়ি পরে ভিডিও কলে বলে,
আরিফ আমাকে এই শাড়িতে কেমন মানিয়েছে?
অসাধারণ, দারুণ মানিয়েছে,খুব সুন্দর লাগছে।ইচ্ছে করছে তোমাকে…।
থামলে কেনো,বলো আমাকে কী?
তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারছি না।কখন তুমি আমার হবে?
অপেক্ষা কর,সময় সুযোগ বুঝে আমি তোমার কাছে চলে আসব।তবে একটা কথা…।
বলো কী কথা?
আগে আমার পথের কাঁটা পরিস্কার কর।তা না হলে আমি তোমার হবো না।কারণ আমি সতীনের ঘর করতে পারবো না।
ঠিক আছে তাই হবে।একটু অপেক্ষা কর।
এমনিভাবে তারা আর ও কিছু সময় কথা বলে।শ্বাশুড়ি কিন্তু পাশের ঘর থেকে সব শুনতে পায়।ছেলে যখন বাড়ি ফিরে তখন সবকথা বলে।মাস্টার কিছুতেই তা বিশ্বাস করতে পারছে না।কারণ সুমার এখন বয়স হয়েছে।তার দুছেলে। এক সময় না হয় সে ছেলে মানসি করেছিলো।এখন কেনো করবে?তার বড় ছেলে সপ্তম শ্রেনীতে পড়ে,বয়স তেরো চৌদ্দ হবে।ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ছে বয়স দশ এগারো হবে।এই বয়সে সে এমন করতে পারে না।সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না।তবুও মা কসম কেটে বলল।এবার কিছুটা বিশ্বাস হলেও পুরাপুরি না।বউকে বলল,
সুমা একটা সত্য কথা বলবে?
বলো কী জানতে চাও?
তুমি নাকি পরকীয়া করছ?
কে বলেছে?
আগে বলো করেছ কি না?
বলবে তো কে বলেছে?
মা বলেছে।তুমি ফোনে কথা বলতে মা সব শুনেছে।
মা চোখে দেখে না।এসব দেখল কী করে?
মা দেখেনি সব শুনেছে?
সব মিথ্যেকথা।মায়ের বানোয়াট গল্প।মা আমাকে দেখতে পারে নাতো।তাই আমার নামে মিথ্যে রটনা রটাচ্ছে।তোমাকে ভুলভাল বুঝাচ্ছে। আমার দুটো ছেলে।আমি এসব ফালতু পথে পা বাড়াব কেনো?
সত্যি বলছ তো?
হ্যাঁ সত্যি বলছি।আমি পরকীয়া করি না।
তাই যেন হয়।এরপর ও যদি এসব করো, আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারব না।লোকে বলবে কবির মাস্টারের বউ নষ্টা।শুধু তাই নয়।তোমার দুছেলে মাথা উঁচু করে সমাজে দাঁড়াতে পারবে না।লোকে আঙুল তুলে বলবে,
ওই নষ্টা মায়ের নষ্ট ছেলে যাচ্ছে।ওর মা নষ্টা ছিলো।পরকীয়া করে চলে গেছে।
এসব তখন ছেলেরা সহ্য করতে পারবে না।দু:খে, ক্ষোভে,টেনশনে হয়তো তারা আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেবে।তখন চেয়ে চেয়ে চোখের জল ফেলা ছাড়া আমার আর কোন উপায় থাকবে না।তাই তোমাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।যদি তুমি ভুল পথে গিয়ে ও থাক,আমার জন্য না হোক,তোমার ছেলেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ফিরে আস।নিজেকে শুধরে নাও।ভালো হয়ে যাও।আমার এই অনুরোধটুকু রাখ প্লিজ।

এদিকে আরিফে তার স্ত্রীর কাছে ধরা পড়ে যায়।একদিন মাঝরাতে ফোনে কথা বলার সময় রেবা টের পেয়ে যায়।তারপর আঁড়ালে দাঁড়িয়ে সবকথা শুনে।স্পষ্ট সবকিছু বুঝতে না পারলেও কিছু একটা বুঝতে পেরেছে।
কী! আমার স্বামী পরকীয়া করছে?কথাবার্তা শুনে তো তাই মনে হলো।আমার মাঝে কী অপূর্ণতা আছে,যে সে পর নারীতে আসক্ত হবে?
এসব ভাবতে তার মাথায় সপ্ত আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।সে মুর্ছিত হয়ে মেঝেতে পড়ে যায়।পড়ার শব্দ শুনে আরিফ ছুটে আসে।।দেখে তার স্ত্রী মেঝেতে পড়ে আছে।মনে মনে ভাবে রেবা মনে হয় এসব শুনেছে।তাই মুর্ছিত হয়ে পড়েছে।যেমন করে হোক তাকে ম্যানেজ করতে হবে।এগিয়ে এসে বউকে পাঁজাকোলা করে বিছানায় শুইয়ে দেয়।তারপর নাকে মুখে পানি ছিটা দেয়।কিছুক্ষণের মধ্যে তার জ্ঞান ফিরে আসে।রেবা ফ্যাল ফ্যাল করে তার স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।আরিফ জিজ্ঞেস করে,
বউ তোমার কী হয়েছে?
আমার কিচ্ছু হয়নি?
তাহলে অজ্ঞান হয়ে পড়লে কেনো?
এতরাতে তুমি কার সাথে কথা বলেছিলে?
ওহ সেই কথা,আমার এক কলিগ।
ছেলে না মেয়ে?
ছেলে।
আরিফ তুমি মিথ্যে বলছ। আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি,মেয়েলি কণ্ঠ।
রেবা প্লিজ তুমি শান্ত হও।তুমি ঘুমের ঘোরে ভুল শুনেছ।আমি কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনি।
আবার ও তুমি মিথ্যে বললে।আরিফ আমার মাঝে কী কমতি ছিলো? যে তোমাকে পরকীয়া করতে হবে?স্বামীকে সুখী করার জন্য একজন নারীর যতগুলো বৈশিষ্ঠ্য থাকার কথা আমার মাঝে সব আছে।তবুও তুমি পরকীয়া করলে?আমি তোমাকে কোনদিকে অসুখী করেছি বলো?
তুমি আমাকে সবদিকে সুখী করেছ।তোমার ভালোবাসায় আমি ধন্য।
তাহলে পরকীয়া করছ কেনো?
এককথা আর কতবার বলবো।সত্যি বলছি আমি পরকীয়া করি না।এই তোমার মাথা ছুঁয়ে বলছি।তোমাকে ছাড়া আর আমি কাউকে ভালোবাসি না।
সত্যি বলছো তো?
হুম সত্যি সত্যি তিন সত্যি।

আরিফের শফথে রেবার মন সত্যি নরম হয়ে গেল।সে স্বামীর সবকথা বিশ্বাস করলো।কিন্তু স্বামী তার সরল বিশ্বাসে দাগা দেয়ার জন্য প্ল্যানিং করছে।একদিন ঘুরতে যাওয়ার নাম করে তাকে নিয়ে যায়।আসার পথে গাড়ি চাপা দিয়ে তাকে মেরে ফেলে।মায়ের সঙ্গে এক সন্তান ও মরে যায়।সে খুব কান্নাকাটি করে দু:খ করে।যাতে লোকে তাকে সন্দেহ না করে।বিশেষ করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন যাতে এই ব্যাপারে কিছু বুঝতে না পারে।ছহিছালামতে মা ছেলের কাপন দাফনের কাজ শেষ করে।তারপর সুমাকে যাওয়ার জন্য তাগাদা দেয়।সুমা সুযোগ বুঝে বাবার বাড়ির নাম করে তার কাছে চলে যায়।

এদিকে কবির মাস্টার বাসায় এসে তার মায়ের কাছে শুনতে পায়।তার স্ত্রী পর পুরুষের হাত ধরে পালিয়ে গেছে।সুমার বাবার বাড়ির লোকজনকে খবর দিলে তারা এই ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয় না।বিশেষসুত্রে জানা গেছে সুমার মা এই ব্যাপারে সবকিছু জানত।তিনি মেয়েকে বারণ না করে এই ব্যাপারে আর ও সহযোগিতা করছেন বলে লোকজন বলাবলি করছে।এবার কবির মাস্টার বুঝতে পারলো মায়ের কথায় সত্যি ছিলো।তার বউ ছিলো নষ্টা।তার সাথে এতদিন মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করেছে।
এদিকে আরিফ রেবা বিয়ে করে দুজন সুখে শান্তিতে বসবাস করছে।কথায় বলে,ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।সত্য কোনদিন চাপা থাকে মা।আপনা আপনি বেরিয়ে আসে।তাছাড়া সৈনিকের বউ বলে কথা।প্রশাসন এই মৃত্যুকে এমনি ছেড়ে দেবে?আসল সত্য বের করে ছাড়বে।
তাদের তদন্তে আসল সত্য মানে রেবাকে মারার প্ল্যানিং বেরিয়ে আসে।গড়গড় করে সকল সত্য বেরিয়ে আসে।পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হয় রেবা হত্যার আসল সত্য।প্রকাশ হয় আসল খুনির নাম।আসল খুনি আর কেউ না তার স্বামী আরিফ আর এর প্ল্যানিং দাতা “নষ্টা বউ” সুমা।পুলিশ কী আর থেমে থাকে? দুজনকে এরেস্ট করে থানায় নিয়ে যায় এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to “গল্প নষ্ট বউ আফছানা খানম অথৈ”

Leave a Reply