গল্প প্রতিবাদী নুসরাত আফছানা খানম অথৈ

0

প্রতিবাদী নুসরাত

আফছানা খানম অথৈ

নুসরাত জাহান রাফি বাবা-মায়ের অতি আদরের একমাত্র মেয়ে।এ বছর আলেম পরীক্ষার্থী। পড়ালেখায় খুব ভালো।তার ইচ্ছা উচ্চতর ডিগ্রী নেবে।তাই মন দিয়ে লেখাপড়া করছে।বাবা-মায়ের ও ইচ্ছা একমাত্র মেয়েকে বড় বিদ্যান বানাবে।কিন্তু তার সেই আশা নিরাশা হয়ে গেল।মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের কুদৃষ্টি পড়ল তার উপর।তাকে ডেকে নিয়ে যায় তার খাস কামরায়।সুরেলা মিষ্টি কণ্ঠে বলল,
নুসরাত তোকে আমার ভালো লাগে।তুই আমার সঙ্গে…।
স্যার আপনি আমার বাবার সমতুল্য। এইসব কি বলছেন আজেবাজে নোংরা কথা…।
আরে বোকা মেয়ে নোংরা নয় এটা ভালোবাসার কথা,তুই আমার সঙ্গে ভালোবাসা কর।আমি কাউকে কিচ্ছু বলব না।টাকা পয়সা দিয়ে তোকে ভরিয়ে দেব।
অসম্ভব স্যার, আমি কখনো আপনার প্রস্তাবে রাজী না।
তাহলে সবকিছু হারাবি,পরীক্ষায় পাশ করতে পারবি না।
স্যার আর একটা বাজে কথা বলবেন,আমি সবাইকে বলে দেব।শুধু তাই নয়, থানায় মামলা করব।
নুসরাত তুই আমার কিচ্ছু করতে পারবি না।এসব মামলা টামলা আমার জন্য কিচ্ছু না।টাকা দিলে সব ফিনিশ…।
আমার কথাগুলো একবার ভেবে দেখ।
ছি:স্যার ছি: মেয়ের বয়সী মেয়েকে এসব বলতে আপনার লজ্জা করে না?
না করে না।কারণ আমি তোকে ভালোবাসতে চাই।
স্যার এটা ভালোবাসা নয়।এটা ব্যাভিচারী।আমি আপনাকে ছাড়ব না পুলিশে দেব।কারণ আপনি বারবার আমাকে ডিস্টার্ব দিচ্ছেন।আমি নুসরাত আপনাকে উচিৎ শিক্ষা দেব।
কিছু কড়া কথা বলে নুসরাত তার গন্তব্য স্থলে ফিরে গেল।বাড়িতে গিয়ে মা-বাবাকে বলল,
বাবা-মা ক্ষিপ্ত হয়ে থানায় মামলা করলো।ওসি সাহেব নুসরাত’র কণ্ঠের কিছু রেকডিং জমা নিলেন।কিন্তু দু:খের বিষয় হলো প্রিন্সিপালকে গ্রেপ্তার করলেন না।মোটা এমাউন্টের টাকা খেয়ে কেচটাকে আপাতত ধামাচাপা দিলেন।
এর ফাঁকে নুসরাতের পরীক্ষা শুরু হল।সে পরীক্ষা দিচ্ছে, ক’বিষয় শেষ হলো।আজও অনুরুপ সে পরীক্ষা দিতে আসল।তাকে একটা মেয়ে চাদে ডেকে নিয়ে গেল।ওখানে বোরকা পরা চার পাঁচ জন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তারা কড়া ভাষায় বলল,
নুসরাত প্রিন্সিপাল স্যারের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিস তা তুলেনে।
কেনো?তাছাড়া তোমরা কারা?
আমরা যে হই তা জেনে তোমার কাজ নেই।তোমাকে যা বলেছি তাই কর।
না আমি কখনো মামলা তুলব না।প্রিন্সিপাল নামের অমানুষটাকে উচিৎ শিক্ষা দেব।
নুসরাত তুমি একা কিচ্ছু করতে পারবে না।এখনো সময় আছে,সবকিছু অস্বীকার করে মামলা তুলে নাও।তবে তোমার ভালো হবে।তানা হলে তোমাকে মরতে হবে।
আমি মরলে মরব।তবুও মিথ্যা বলতে পারব না।মামলা তুলব না।
তাহলে মরার জন্য প্রস্তুত হও।
বলতে না বলতে তারা নুসরাতের হাত পা বেঁধে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠে।নুসরাত চিৎকার…।
সবাই দৌড়ে চাদের উপর উঠে।ততক্ষণে তার সমস্ত শরীর পুড়ে যায়।কোন রকমে তার গায়ের আগুন নিভানো হয়।তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।দ্রুত চিকিৎসা শুরু….।
তার শরীরের দুই তৃতীয়াংশ পুড়ে যায়।ডাক্তার তাকে পানি দিতে বারণ করেছে।কারণ পানি দিলে তার ক্ষতি হবে।নুসরাত’র গলা শুকিয়ে কাঠ।পানির খুব পিপাসে লেগেছে।বহু কষ্টে বাবাকে বলল,
বাবা চুরি করে হলে ও আমায় একটু পানি দাও।খুব কষ্ট হচ্ছে,আর পারছি না।
মেয়ের কথা শুনে চোখের জলে বাবার বুক ভেসে গেল।মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে মুর্ছিত হয়ে পড়ছে।ছোট ভাই ও বড় ভাই দু’জনের একই অবস্থা।নুসরাত কোনমতে কষ্টে দুচারটা কথা বলল।ডাক্তার জিজ্ঞেস করলো,
নুসরাত মা মনি তুমি কাউকে চিনতে পেরেছ?
ডাক্তার সাহেব সবাই মুখোশ ও বোরকা পরা ছিল।তবে যাবার বেলায় একজনের নাম ধরে ডাকতে শুনেছি।
হ্যাঁ মা বলো।তার নাম কি?
তারা বলেছিল,চম্পা তাড়াতাড়ি আয়।
আর কাউকে…?
আর কাউকে না। তবে মনে হলো,এদের মধ্যে দু’জন পুরুষ, দুজন মহিলা।
ডাক্তার কথাগুলো রেকড করে নিলেন।নুসরাত মারা যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে বাবাকে বলেছিল,
বাবা আমি আর বাঁঁচব না।আমায় মাফ করে দিও।তবে এই মানুষরুপী হায়নাদের উচিৎ শিক্ষা দিও।
বাবা কেঁদে কেঁদে বলে,
মারে তোকে আমরা মরতে দেব না।তুই বাঁচবি,চোখ খোলা রাখ,বন্ধ করিস না।
হায়রে পিতৃস্নেহ।বাবার ধারণা চোখ বন্ধ করলে মেয়ে মারা যাবে।তাই চোখ খোলা রাখতে বলল।এক বাবা মেয়েকে বাঁচাতে চাই।আর এক বাবার সমতুল্য মানুষরুপী অমানুষ অধ্যক্ষ তাকে মেরে ফেলল।কি নিষ্ঠুরতা,বর্বরতা দৃশ্য,কোথায় গেল তার মানবতা, কোথায় গেল তার মনুষ্যত্ব।তার সকল অপরাধ ও কুকীর্তির কথা ফাঁস হয়ে গেল।তার নাইট গার্ড সব সত্য প্রকাশ করলো।এই পর্যন্ত সে কত ছাত্রীর সাথে খাস কামরায় আকাম-কুকাম করেছে সবসব….।
তার এত অপরাধের পরও সে কি করে এতগুলো বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে চলেছে,তা ভাবতে ঘেন্না হচ্ছে।পারিপাশ্বিক সমাজের মানুষগুলো কি অন্ধ ছিল?তারা চোখে কিছু দেখেনি।এত অন্যায় তারা হজম করলো কিভাবে?
যদি আরও আগে এর প্রতিবাদ করা হত,তাহলে নুসরাতের মতো একজন মেধাবী ছাত্রীকে পুড়ে মরতে হত না।খালী হত না নুসরাতের মায়ের কোল।হারাতে হত না একমাত্র মেয়েকে।প্রতিবাদী নুসরাত মারা গেল।তাকে দাপন করা হল।সারা বাংলায় প্রতিশোধের ঝড় উঠল।প্রতিবাদী মিছিল মিটিং হল।লম্পট,ধর্ষক সিরাজ উদ্দোলাকে এরেস্ট করা হল।কিন্তু দু:খের বিষয় হল যদি তার ফাঁসি না হয়,তাহলে সে আরও বহু নুসরাতের জীবন নষ্ট করবে।এইদিক বিবেচনা করে অন্তত তার ফাঁসি হওয়া উচিৎ।প্রতিবাদী নুসরাত জাগিয়ে দিয়ে গেল সারা নারী সমাজকে। জাগো নারী সমাজ ঘুমিয়ে আর থেকো না।ধরিয়ে দাও মানুষরুপী হায়নার দলকে।তানা হলে ধর্ষিতা হবে প্রতি পদেপদে।
ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply