গল্প সাগরিকা আফছানা খানম অথৈ

0

সাগরিকা

আফছানা খানম অথৈ

সাগরিকা ভার্সিটির সেরা সুন্দরী ও ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রী।এক বাক্যে বলা চলে সকল সুন্দরীদের সেরা। অনেক ইয়ং যুবক ক্রাশ খেয়েছে। যে পারবে সেও বলেছে আই লাভ ইয়ু,যে পারবে না সেও বলেছে আই লাভ ইয়ু। এই নিয়ে দুএকদিন পরপর অফিস কক্ষে বিচার হয় এবং দুএকজনকে বহিস্কার ও করেছেন ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।অপরদিকে ভার্সিটির সেরা ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র সায়মন মনে মনে সাগরিকাকে ভালোবাসে কিন্তু মুখ ফুটে কোনদিন বলেনি।কারণ সে গরীব পরিবারের সন্তান।অনেক কষ্টে সে এত দূর এসেছে।ভালোবাসার সাধ থাকলে ও সাধ্য নেই।তাই বুকের ভিতর তার ভালোবাসাকে লালন করে চলেছে।একদিন পড়ার টেবিলে বসতেই তার কোনকিছু ভালো লাগছে না।বারবার সাগরিকার কথা মনে পড়ছে।তখনি সে ডায়েরীর পাতায় সাগরিকার নামে ভালোবাসার দুচারটা লাইন লিখল।এদিকে ভার্সিটির মধ্যে সায়মন সবার সেরা ব্রিলিয়ান্ট ও ভালো রেজাল্ট করাতে তাকে সরকারী ভাবে স্কলারশিফের জন্য লন্ডন পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।সায়মনের ইচ্ছে বিদেশ গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নেবে।যাক তার মনের আশা পূরণ হতে চলেছে।ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র ভিসা সবকিছু ঠিক করে ফেলেছেন।মাস দুয়েক পরে সে বিদেশ চলে যাবে স্কলারশিফের জন্য।তাকে নিয়ে ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের খুব গর্ব কারণ সায়মন যেমন মেধাবী,তেমন ভদ্র নম্র ও চরিত্রবান।কিন্তু একি সায়মনের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রিন্সিপাল’র কাছে কমপ্লেইন করেছে সাগরিকা।সায়মন তার কাছে প্রেমপত্র পাঠিয়েছে।অফিস থেকে সায়মনকে জরুরী তলব করেছে।
সায়মন ভেবেছিল তার বিদেশ যাওয়ার সবকিছু রেডি হয়ে গেছে।তাই ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তাকে ডেকেছেন।সে বুক ভরা আশা নিয়ে অফিস কক্ষে গিয়ে প্রিন্সিপালকে সালাম দিলেন।প্রিন্সিপাল সালামের জবাব না দিয়ে কড়া ভাষায় বললেন,
সায়মন তুমি এতটা খারাপ আমার ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে।তোমাকে নিয়ে আমি খুব গর্ব করেছিলাম।আমার চোখে তুমি ছিলে ভার্সিটির সেরা ব্রিলিয়ান্ট ও চরিত্রবান ছেলে।কিন্তু আজ তুমি একি করলে!
স্যার আমি কি করেছি,আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
ন্যাকামো করা হচ্ছে না, কিছুই বুঝতে পারছ না,না?
নো স্যার ন্যাকামো নয়।সত্যি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
এইতো আমি বলছি,তুমি সাগরিকাকে প্রেমপত্র লিখেছ।সে তোমার বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করেছে।
নো স্যার মিথ্যে কথা আমি সাগরিকাকে কোন প্রেমপত্র লিখেনি।
সত্য না মিথ্যে তা চিঠি পড়লে বুঝতে পারবে।এই নাও চিঠি।
প্রিন্সিপাল স্যারের হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে সায়মন পড়ে দেখল।তারপর মনে মনে বলে, এটা তো আমার লেখা চিঠি,আমার ডায়েরীতে ছিল,কিন্তু সাগরিকার হাতে এলো কি করে?মনে হয় কেউ ষড়যন্ত্র করেছে।
প্রিন্সিপাল স্যারকে কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হলো।তখনি প্রিন্সিপাল স্যার বললেন,
সায়মন তোমাকে আমরা ভার্সিটি থেকে বহিস্কার করলাম।তোমার স্কলারশিফের সবকিছু ক্যানচেল করা হলো।
প্লিজ স্যার আমার কথা শুনুন।
তোমার কোন কথা আমি শুনব না।এক্ষণি তুমি হল ত্যাগ করে চলে যাবে।সাবধান তোমাকে যেন আর কখনো ভার্সিটির সীমানায় না দেখি।
সায়মন আর কোন প্রতিবাদ করলো না। তল্পিতল্পাসহ গ্রামের বাড়ি ফিরে গেল।তার বাবা মজিবল হক ভেবেছিল ছেলে বিদেশে পড়তে যাবে তাই বাবাকে বলতে এসেছে।বাবা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,
সায়মন কবে তোর ফ্লাইট?
বাবা আমার আর বিদেশ যাওয়া হবে না।
কেনরে সায়মন?
বাবা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।প্রিন্সিপাল স্যারে কাছে কমপ্লেইন করেছেন।আর উনি আমাকে বহিস্কার করেছেন।বাবা আমার আর উচ্চতর ডিগ্রী নেয়া হবে না।
চোখের পানিতে বুক ভেসে গেল সায়মনের। তখনি বাবা বলল,
বাবা সায়মন কাঁদিস না।যেমন করে হোক আমি তোকে বিদেশে পড়তে পাঠাব।
ইতিমধ্যে সায়মনের খবরটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো।সায়মনের সঙ্গে অনেকে মেয়ে বিয়ে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলো।কিন্তু সায়মনের বাবা তাতে রাজী হলেন না।তিনি তার ভিটেবাড়িসহ কিছু সম্পদ আছে তা বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পড়তে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।এমন সময় তার এক ফুফাত বোন ও তার জামাই এসে বলল,
ভাইজান ভিটে বাড়ি বিক্রি করলে আপনি থাকবেন কোথায়?
বোন না করে কি উপায় আছে।আমার ছেলের আশা পূরণ করতে আমি সব ত্যাগ শিকার করতে রাজী।
ভাইজান একটা কথা বলবো?
বল কি বলবি?
আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে, সায়মনের পড়া লেখার সকল খরচ আমরা বহন করবো?
তা বুঝলাম।কিন্তু আমি তোদের এত টাকা শোধ করবো কোত্থেকে?
ভাইজান টাকা শোধ করতে হবে না।আমার একমাত্র মেয়ে পাপতিকে সায়মনের বউ করলে চলবে।আমরা আর কিছু চাইব না।ভাইজান না করবেন না। আপনি রাজী হয়ে যান।ছেলেটার আশা পূরণ হোক।
মজিবল হক ভেবে দেখলেন প্রস্তাবটা মন্দ না।তিনি রাজী হয়ে গেলেন।সায়মনকে পাপতির বাবার টাকায় বিদেশে পড়তে পাঠালেন।পাপতিও বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।বাবা সামছুদ্দিন’র অনেক টাকা পয়সা।গঞ্জের হাটের প্রায় অর্ধেক দোকান সামছুদ্দিন সাহেবের।পাপতি ও দেখতে শুনতে মন্দ না খুব সুন্দরী।ইতিমধ্যে অনেক ছেলে ক্রাশ খেয়েছে।লাভ লেটার ও অনেক জমা পড়েছে।পাপতি সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েট ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হলো এরই মধ্যে এত্তকিছু।ইয়ং বয়স বলে কথা পাপতি আর নিজকে কত সংযত রাখবে।এত “আই লাভ ইয়ু” শুনার পর কি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারে।সে এক সময় বাবা-মায়ের অজান্তে এক ছেলের প্রেমে পড়ে যায়।
এদিকে সাগরিকা সায়মনের বহিস্কারকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেনি।নিজের ভিতরে সিরিয়াস অপরাধ বোধ কাজ করছে।একদিন সাগরিকার সহপাঠি অভি বলল,
সাগরিকা আমি তোর কাছে সিরিয়াস একটা অন্যায় করেছি।
বল কি অন্যায় করেছিস?
সায়মন তোর নামে চিঠিটা লিখেছে ঠিকই।কিন্তু সে ওটা তোর বইয়ের ভিতরে রাখেনি।
তাহলে কে রেখেছে?
ওটা আমি রেখেছি।
কেন রেখেছিস?
সাগরিকা সত্য কথা বলতে কি,আমি তোকে ভালোবাসি।আর যখনি তার ডায়েরীতে তোর নামে লেখা চিঠিটা দেখলাম সহ্য করতে পারলাম না।বন্ধু হয়ে শত্রুর কাজ করলাম।তাকে প্রিন্সিপাল স্যারের চোখে খারাপ বানানোর জন্য চিঠিটা তোর বইয়ের ভিতর রেখে দিলাম।আর এ চিঠিকে কেন্দ্র করে যে এত্তকিছু হবে, স্যার যে এত কড়া আইন জারী করবেন,ভাবতে পারেনি।
ছিঃঅভি ছিঃ পারলি তুই বন্ধু হয়ে ওর এত বড় সর্বনাশ করতে।
I hate you অভি I hate you.
আমি আর কখনো তোর মুখ দেখতে চাই না।
সেদিনের পর থেকে সায়মনের প্রতি সাগরিকার ভালোবাসা বাড়তে থাকে।সে খোদার কাছে ফরিয়াদ করে,হে পরওয়ার দেগার আমি তোমার পাপি বান্দা, তোমার দরবারে দুহাত তুলেছি।আমি চরম অপরাধী।না জেনে, না শুনে একজন নিরপরাধ ভালো মানুষকে অপরাধী বানিয়ে বিচার দিয়ে চরম সাজাও ক্ষতি করেছি।হে পরম করুনাময় আল্লাহ আমি যদি জীবনে কোন একটা ভালো কাজ করে থাকি,সেই ভালো কাজের উছিলাতে হলে ও বেঁচে থাকা অবধি ঐ লোকটার উপকার করার তৌফিক দান করুন।আমীন।।
মুনাজাত শেষ করে সে পড়া লেখায় মন দিলো।সাগরিকার বাবা শহরের স্বনামধন্য বিশিষ্টি শিল্পপতি।গাড়ি বাড়ি টাকা পয়সা কোনকিছুর কমতি নেই।সাগরিকা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে টাকা ব্যয় করেন এতে বাবা মার কোন অভিযোগ নেই।মেয়ে লন্ডনে পড়তে যাবেন বাবা-মা আপত্তি করেননি।বরং সবকিছু রেডি করে মেয়েকে উচ্চত্তর ডিগ্রী নেয়ার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন লন্ডনে।দুজন পাশা-পাশি ইউনিভার্সিটি ও পাশা-পাশি মেসে থাকে।সাগরিকা রোজ সায়মনকে দেখে।সায়মন কি করে না করে সব খবর সে রাখে।সায়মন কিন্তু এসবের কিছুই জানে না।সায়মন পড়ার পাশা-পাশি জব করছে।যার কারণে পড়ার খরচ চালাতে সমস্যা হয় না।পাপতির বাবা এখন তাকে আর খরচ দিতে হয় না।মাঝে অনেক সময় পার হলো।সামনে তার ফাইনাল এক্সাম।অনেক টাকা লাগবে।তাই মন দিয়ে পার্ট টাইম জব করছে সায়মন।জব করে মেসে ফেরার পথে গাড়ি একসিডেন্টে সে গুরুতর আহত হয়।উপস্থিত লোকজন গাড়ি করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন।ইমারজেন্সি চিকিৎসা শুরু…।
ডাক্তার জানালো চিকিৎসা ব্যয় বহুল।তার চোখ দুটো চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে গেছে।খবরটা দেশে পৌছানোর পর সায়মনের বাবা কাঁদতে কাঁদতে ছুটে যান পাপতির বাবার কাছে।তাকে কাঁদতে দেখে পাপতির বাবা বলল,
ভাইজান কাঁদছেন কেনো,কোন দু:সংবাদ?
তিনি ডুকরিয়ে কেঁদে উঠে বলেন,
হ্যাঁ ভাই দু:সংবাদ।সায়মন গাড়ি একসিডেন্ট করেছে।তার চোখ দুটো নষ্ট হয়ে গেছে।
চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগবে।ভাই তুই আমার ছেলেরে বাঁচা,।
তিনি আর ও কাঁদেন সজোরে কাঁদেন।পাপতির বাবার চোখের পানিতো পড়লো না বরং তিনি বলেন,
ভাই আমার কাছে এখন কোন টাকা নেই।তাছাড়া তোমার ছেলের যে চিকিৎসা হবে তার ও কোন গ্যারান্টি নেই।অযথা টাকা নষ্ট করার কোন মানে হয় না।
ভাই এসব কি বলছিস, তোর জামাইকে চিকিৎসা করাবি না।
ভাইজান আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে মনে হয়।এমন অসুস্থ অন্ধ ছেলের সঙ্গে কে মেয়ে দিবে বলুন।আমি কেন,কোন বাবাই দিবে না।
সামছুদ্দিন ভাই তুমি তো তখন ওয়াদা করেছিলে।
তখন তো তোমার ছেলে ভালো ছিল।
আর এখন অসুস্থ হয়েছে বলে তুমি ওয়াদা বরখেলাপ করছ,এইতো?
ঠিক বুঝেছ,শুধু তাই নয়।আমার দেয়া টাকা সুদে আসলে শোধ করতে হবে।
আমি পারবো না তোমার টাকা শোধ করতে।
বললে হলো টাকা না দিলে আমি তোমাকে পুলিশে দেব।
তারা আর ও কিছু সময় কথা কাটাকাটি করলো। পাপতির বাবার এক কথা বাড়িঘর বিক্রি করে হলেও তার টাকা শোধ করতে হবে।নতুবা বাড়ি ঘর তার নামে লিখে দিতে হবে।তানা হলে তিনি মজিবল হককে পুলিশে দেবেন বলে ভয় দেখান।
মজিবল হক একবুক ব্যথা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।বাড়িঘর বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠাতে চেয়েছিল।কিন্তু সামছুদ্দিনের জন্য পারলো না।এখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া অসহায় বাবার পক্ষে আর কিছুই করার নেই।তিনি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কেঁদে কেঁদে ছেলের রোগ মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেন।
এদিকে সাগরিকা খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে গেল হাসপাতালে।তারপর চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে সকল কাজ সম্পন্ন করলো।সাগরিকার টাকায় সায়মনের চিকিৎসা চলছে।সায়মন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠল।এখন চোখ দানের পালা।সাগরিকা নিজের একটা চোখ সায়মনকে দান করলো।সায়মন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠল।সায়মন ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলো কে তাকে চোখ দান করেছে।ডাক্তার বলল,
সরি দান করা লোকের নিষেধ আছে।আমরা বলতে পারবো না।
তা বুঝলাম।কিন্তু আমার চিকিৎসার টাকা কে দিয়েছে?
দেশ থেকে আপনার বাবা পাঠিয়েছে।
সাগরিকার অনুরোধ রাখতে ডাক্তার মিথ্যে বলল।সায়মন আর ফোর্স করলো না।সে তার লেখাপড়া ও জবে ফিরে গেল।সময়মতো তার এক্সাম শেষ হলো।রেজাল্ট বের হওয়ার অপেক্ষা মাত্র।
এদিকে সামছুদ্দিন মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিলেন।আর সায়মনের বাবার বাড়িঘর নিজের নামে লিখে নিয়ে তাদেরকে উচ্ছেদ করে দিলেন।তিনি একবুক দু;খ নিয়ে শহরে পাড়ি দিলেন।অজানা শহরে কে তাদেরকে আশ্রয় দিবে।তাদের থাকার জায়গা হলো ফুটপাতের আস্তানা।
এদিকে সময়মতো রেজাল্ট বের হলো।সায়মনের আশা পূর্ণ হলো।সে সবার সেরা রেজাল্ট করলো।ভার্সিটির পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন ও পুরুস্কৃত করা হলো।সে দেশে ফিরে আসল।এসে একি দেখল বাবা-মা বাড়িতে নেই।সেখানে অন্য লোক বসত করছে।সায়মন তার খালেক চাচাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি কেঁদে কেঁদে সব সত্য প্রকাশ করলেন।সায়মন গর্জে উঠে বলল,
আমি সামছুদ্দিনকে ছাড়ব না।এক্ষণি তাকে মেরে রক্তাক্ত করব।
সায়মন সামছুদ্দিনকে মারার জন্য ছুটে যেতে উদ্যত হলো।তখনি তার চাচা বলল,
সায়মন বাবা থাম,আগে ভাইজান ভাবীকে খুঁজে বের কর। তারপর যা করার করিস।
ঠিক বলেছেন চাচা।
সায়মন আর গ্রামে থাকল না।পরদিন ঢাকা শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।ঢাকা পৌছে প্রথমে বাসা ভাড়া নিলো। তারপর মা-বাবাকে খুঁজতে শুরু করলো।কিন্তু কোথাও তাদেরকে পেলো না।এতবড় ঢাকা শহরে ঠিকানা বিহীন কাউকে খুঁজে পাওয়া কি সম্ভব?আদৌ না।
মা-বাবার শূণ্যতা অনুভব করছে প্রতিটি মুহূর্তে সায়মন।তবুও তার জীবন থেমে থাকেনি।বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির টিচার পদে জব করার জন্য সে সি ভি জমা দিয়েছে।
এদিকে সাগরিকা ও উচ্চত্তর ডিগ্রী নিয়ে একই ফ্লাইটে বাংলাদেশে ল্যান্ড করেছে।কিন্তু সাগরিকা সায়মনকে দেখলেও, সায়মন সাগরিকাকে দেখেনি।সাগরিকা নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে যাতে সায়মন জানতে না পারে সে তাকে প্রতিটি কাজে হেল্প করছে।প্রতিটি মুহূর্তে সায়মনকে ফলো করছে সাগরিকা।হৃদয় গহীনে সায়মনের ভালোবাসা অনুভব করছে প্রতিটি মুহূর্ত প্রতিটিক্ষণ।
যাক ভাগ্যচক্রে দুজনের একই ইউনিভার্সিটিতে চাকরী।অর্থাৎ যে প্রিন্সিপাল সায়মনকে বহিস্কার করেছে, সেই প্রিন্সিপালের সঙ্গে আবার সায়মনের দেখা।তাকে দেখা মাত্রই প্রিন্সিপাল বলল,
সায়মন তুমি!
ইয়েস স্যার আমি,জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না।তাছাড়া বিধাতার লিখন না যায় খন্ডন।আপনি আমাকে বহিস্কার করা সত্বেও আমি স্কলারশিফ নিয়ে এই ভার্সিটির টিচার হয়েছি।কেন জানেন এটা আল্লাহপাক আমার কপালে লিখে রেখেছেন তাই।
সায়মন আমার কোন দোষ ছিলো না।আমিতো শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র।
অনেক হয়েছে স্যার, আর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে না?
প্রিন্সিপাল স্যারকে গুটি কতক কড়া কথা বলে সায়মন অফিস কক্ষ থেকে বের হচ্ছে,ঠিক তখনি সাগরিকা অফিসে ঢুকছে এমনসময় সায়মনের সঙ্গে ঠোকা খেল।সায়মন তাকিয়ে দেখে সাগরিকা তখনি সে বলে,
উফ বাপরে এ আবার এখানে,এক কমপ্লেইনে বহিস্কার,এবার জানি কি করে বসে।পরক্ষণে সে বলল,
সরি আমি দেখিনি।
সাগরিকা হাসি মুখে বলল,
ইটস ওকে।
টিচিং শেষ করে ফেরার পথে সায়মন দেখল তার বাবা ঠেলাগাড়ি ঠেলছে।সে গাড়ি থামিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে বলল,
বাবা তুমি?
মজিবল হক ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
বাবা তুই বেঁচে আছিস?
জ্বী বাবা বেঁচে আছি।মা কোথায়?
আগে বাসায় চল।পরে সব বলবো।
সায়মন তার বাবা-মাকে ফিরে পেল।মা-বাবাকে নিয়ে সায়মন বেশ সুখে আছে।তবুও কেন জানি বুকের ভিতর শূণ্যতা অনুভব করছে।
সাগরিকার ভালোবাসা প্রতিটি মুহূর্ত তাকে কাঁদায়।দুজনের একসঙ্গে শিক্ষতা তবুও কারো সাথে কারো কথা নেই।একদিন সেই বন্ধু অভি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল সত্য প্রকাশ করলো।সবকথা শুনার পর সায়মন বলল,
অভি সত্যি বলছিস সাগরিকা আমার জন্য এতবড় ত্যাগ করেছে।সে আমাকে এত ভালোবাসে?
সত্যি বন্ধু সত্যি।আর দেরী না করে ছুটে যাও ভালোবাসার মানুষের কাছে।
সায়মন আর দেরী করলো না।ছুটে গেল সাগরিকার কাছে।কলিংবেল টিপতেই সাগরিকা দরজা খুলতেই একি দেখল,লাল গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ সায়মন।সাগরিকা বলল,
সায়মন তুমি ভিতরে এসো।
তখনি সায়মন বলল,
সাগরিকা আমি তোমার অসম্ভব রকম ভালোবাসার কাছে হেরে গেলাম।পাগলি ভালোবাসার ঋন কেউ এমনিভাবে শোধ করে। তাও নিজের চোখ দান করে।
সায়মন তানা হলে আমি কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।
তখনি সায়মন বলল,
সাগরিকা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য ভালোবাসার লাল গোলাপের শুভেচ্ছা।
I love you সাগরিকা।
I love you too সায়মন।
দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে রোমান্স…।
সায়মন সাগরিকা দুজন মিট হলো।তাদের হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা পুণরায় জোড়া লাগল।তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো।”সাগরিকার” অসম্ভব রকম ভালোবাসায় আনন্দময় হয়ে উঠল সায়মনের জীবন।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply