গল্প স্বপ্নের আমেরিকা আফছানা খানম অথৈ

0

স্বপ্নের আমেরিকা

আফছানা খানম অথৈ

আসিফ লটারীর ভিসায় পেয়ে স্বপরিবারে আমেরিকা যায়।বড় ছেলে কাফির বয়স সাত বছর,মেঝো ছেলে রাফির বয়স পাঁচ বছর,ছোট মেয়ে তানহার বয়স তিন বছর।যাক তারা সেখানে বসবাস শুরু করে।সিরিয়াল অনুযায়ী তিন সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করান।আমেরিকাতে আমাদের বাংলাদেশের মতো জাতীয় ভাষা বাংলা না।আমেরিকান ভাষা হলো ইংরেজি।বাচ্চাদের ইংরেজি শিখতে প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও পরে তারা আস্তে আস্তে ইংরেজি ভাষা শিখে ফেলে।
আসিফের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা ধার্মিক, নামাজী, পর্দানশীন।তার কাছে আমেরিকার কৃষ্টিকালচার্ড ভালো লাগছে না।আদব কায়দা কিচ্ছু নেই।যে যার মতো চলাফেরা করে।নারীরা রাস্তাঘাটে, মার্কেটে,অফিস আদালতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উলঙ্গ চলাফেরা করে।শুধু পেন্টি আর ব্রা পরে চলাফেরা করে।শুধু তাই নয় যার তার সঙ্গে মেলামেশা করে।ইয়ং ছেলে মেয়েরা যা ইচ্ছা তাই করে,কোন ধরাবাঁধা নেই।।এই পরিবেশে বাচ্চাদের কিভাবে মানুষ করবে?এসব ভাবনা তাকে ভাবিয়ে তুলেছে।

একদিন তার বাচ্চারা দুষ্টামির চলে মারামারি করছে।জাকিয়া তাদেরকে সেফ করতে গিয়ে এক বাচ্চা পড়ে যায় এবং তার নাকের ঢগায় আঘাত লাগে।পরদিন স্কুলে যাওয়ার পর তা টিচারের দৃষ্টিতে পড়ে।তিনি কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই, রাফি বলল
মম আমাকে মেরেছে।
এই সেরেছে তাৎক্ষণিক পুলিশ ডাকা হয়।আমেরিকার আইন কিন্তু কড়া।পুলিশ বাচ্চাকে থানায় নিয়ে যাই।তারপর টিচার ফোন করে বলেন তার বাচ্চাকে পুলিশ থানায় নিয়ে গেছে।জরুরী ভিত্তিতে তাদেরকে যেতে বলেছে।ছয় সাত বছরের বাচ্চাকে কেনো পুলিশ ধরে নিয়ে গেল।তারা চিন্তা করে কিনারা পাচ্ছে না।যাক তারা ছুটে গেলো থানায়।পুলিশ সুপার জিজ্ঞেস করলেন,
এতটুকুন বাচ্চাকে মেরেছেন কেনো?তাছাড়া শিশু নির্যাতন দণ্ডনীয় অপরাধ।
স্যার ওরা তিন ভাই বোন দুষ্টামির চলে মারামারি করছিলো।আমি সেফ করতে গিয়ে ওহ পড়ে আঘাত পায়।আমি তাকে মারিনি।
আপনি মিথ্যে বলছেন।বাচ্চা বলেছে আপনি তাকে মেরেছেন?বাচ্চা আপনাকে দেয়া হবে না।
সরি স্যার ভুল হয়ে গেছে।আর কখনো এমন হবে না।আমার বাচ্চা আমাকে দিয়ে দিন।
বাচ্চা দিতে পারি এক শর্তে?
বলুন স্যার কী শর্ত?
ভবিষ্যতে কখনো বাচ্চার গায়ে হাত তুলতে পারবেন না।বাচ্চা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চলবে।তার কাজে কখনো বাঁধা দিতে পারবেন না।বলুন এসব শর্ত মানতে পারবেন?
জ্বি স্যার পারব।
যাক কোনমতে থানা পুলিশ ম্যানেজ করে সই স্বাক্ষর দিয়ে তারা বাচ্চাকে নিয়ে আসে।
এর ফাঁকে কেটে গেলো কিছু সময়।সন্তানেরা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে।আমেরিকার কৃষ্টিকালচার্ড ফলো করছে।মা-বাবার কাছ থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে।জাকিয়ার ভিতরে সারাক্ষণ ভয় কাজ করছে।মনে হচ্ছে বাচ্চারা ঠিকমতো মানুষ হবে না।নামাজ রোজা করবে না।ইসলামের বিধিবিধান মানবে না।

একদিন জাকিয়া তার স্বামীকে বলল,
ওগো চলো আমরা বাংলাদেশে ফিরে যাই?
কেনো কেনো?
এদেশে থাকলে সন্তানদের ভালো মানুষ বানাতে পারবো না?
কী বলছ এইসব।এত টাকা খরচ করে স্বপ্নের আমেরিকাতে আসলাম।আর এখন বলছ চলে যেতে।তা কী করে হয়?
বাচ্চারা আর একটু বড় হোক তখন বুঝবে আমেরিকা কী?
তা সময় হলে দেখা যাবে।এসব বাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।
তা না হয় ফেললাম।এদেশে সভ্যতার নামে সে অসভ্যতা চলছে।নারী উলঙ্গ হাটছে।যার তার সঙ্গে মিশছে।ছেলে মেয়েরা ও তাই করছে।কেউ কাউকে বাঁধা দিচ্ছে না।এই পরিবেশে কিভাবে বাচ্চাদের ভালো মানুষ বানাবে?

এটা আমেরিকার কালচার।আমাদের সন্তান কেনো ওদের ফলো করবে?
যদি করে তখন কী করবে?
তুমি দেখো ওরা মানুষের মতো মানুষ হবে।
হলেতো ভালো।আর না হলে কী করবে?
তা তখন দেখা যাবে।তাছাড়া আমি অনেক সাধনার পর আমেরিকা এসেছি।আমার স্বপ্ন আমেরিকাতে ডলার কামাবো।বাড়ি গাড়ি করব।আমি আমার স্বপ্নের আমেরিকা ছেড়ে কোত্থাও যাব না।
স্ত্রীর শত অনুরোধ ব্যর্থ হলো।স্বামী কিছুতেই স্বপ্নের আমেরিকা ছেড়ে আসতে রাজী হলো না।তার স্বপ্ন ডলার বাড়ি গাড়ি।দিন যায় রাত হয়।ছেলে মেয়েরা সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে যৌবনে পদার্পন করলো।বড় ছেলে কাফি একসময় স্কুল কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে পা রাখল।সিরিয়াল অনুযায়ী বাকী দুজন স্কুল কলেজে পড়ছে।সহকর্মী বন্ধুরা যেভাবে চলেফেরা করছে।তারা ও সেভাবে করছে।বড় ছেলে কাফির অবস্থা ভালো না,খুব খারাপ।সে নেশা করে, মেয়েদের সাথে মেলামেশা করে।যা ইচ্ছা তাই করে।ক্লাবে সুন্দরী নারীদের নিয়ে ড্যান্স করে রাত কাটাই।এসব বাবা মা সহ্য করতে পারলো না।তাই বাবা আসিফ একদিন তাকে কড়া শাসন করে।আর তখনি সে পুলিশের কাছে কমপ্লেইন করে মা-বাবার নামে।পুলিশ মা-বাবাকে জরুরী তলব করে।

সেদিনকার মতো পুলিশ সুপার তাদেরকে বলেন,
সন্তানের ব্যক্তিগত কাজে বাঁধা দিবেন না ।সে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চলবে।তার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষ্যাপ করা যাবে না।শুধু তাই নয়,তাকে আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিতে হবে।সে সেখানে থাকবে নিজের ইচ্ছামতো।এটা আমেরিকার কালচার। এই নিয়ম ভঙ্গ করলে আপনাদেরকে জেল খাটতে হবে।শুধু তাই নয় লিখিত ডকুমেন্ট দিতে হবে।ভবিষতে যাতে এধরনের ভুল না করেন।
কী আর করা মা-বাবা বাধ্য হয়ে সই স্বাক্ষর করে জামিনে মুক্তি পায়।তারপর ছেলেকে আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেয়।এরপর থেকে সন্তানকে আর কখনো শাসন করার সাহস পায় না।তার দেখাদেখি অন্য সন্তানেরা ও খারাপের দিকে চলে যায়।বাঙালি কৃষ্টিকালচার্ড তাদের ভিতরে এখন আর নেই।তারা আমেরিকান কালচারে মানুষরুপী অমানুষ হচ্ছে।মা- বাবার চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।কিছু বললে জেল হাজত।কিছু বলতেও পারছে না।সহ্য করতেও পারছে না।নিরবে নিভৃতে শুধু চোখের জল ফেলছে।যেখানে শতকরা নিররানব্বই জন লোকই খারাপ, সেখানে একজন ভালো হবে কী করে?
একসময় কাফি পুরোপুরিভাবে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।শুধু তাই নয় সে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে।তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।এক গাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার জানায় তার লিভার ক্যান্সার। তার হায়াত আর বেশীদিন নেই।বড়জোর মাসখানেক থাকতে পারে।ঠিক তাই হলো।একমাস পর কাফি মারা গেলো।খারাপ হলেও সন্তানতো?মা-বাবা দুজন কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
স্ত্রী জাকিয়া স্বামীকে বলল,
এখন কাঁদছ কেনো?আমার কথামতো বাংলাদেশে ফিরে গেলে এ অবস্থা হতো না?
ঠিক বলেছ বউ।আমার বাংলাদেশ ঠিক ছিলো।ডলার কামানোর আশায় “স্বপ্নের আমেরিকাতে” এসে আজ সন্তানেরা অমানুষে পরিণত হলো।লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু, আজ তা সত্যে পরিণত হলো।আজ আমার ডলার বাড়ি গাড়ি সব হলো।কিন্তু সন্তানদের হারাতে হলো।ভালো মানুষ বানাতে পারলাম না।সব অমানুষে পরিণত হলো।সব ছিলো ভুল।
আদিযুগে কাপড় ছিলো না।তবুও মানুষ উলঙ্গ থাকত না।কোন রকমে গাছের বাকল পশুর চামড়া এসব দিয়ে শরীর ঢাকতেন।আর এখন পোশাক থাকা সত্বেও মানুষ উলঙ্গ থাকছে।এটা কোন জাতির সভ্যতা নয়, অসভ্যতা।আর এই অসভ্যতাকে সভ্যতা বলে চালিয়ে নিচ্ছে কিছু নোংরা শ্রেণীর মানুষ।আর তা ফলো করছে অধিকাংশ মানুষ।ইসলামের নিয়ম কানুন প্রায় মুসলিমের মাঝে নেই বললে চলে।পশ্চিমাদের কৃষ্টিকালচার্ড ফলো করছে প্রায়ই মুসলিমরা।তাদের জ্ঞান থাকা সত্বেও তার ভুলপথে পা বাড়াচ্ছে।বিধর্মী নারীরা উলঙ্গ হাটছে,পেন্টি আর ব্রা পরছে।শুধু তাই নয় কখনো কখনো পুরোপুরিভাবে উলঙ্গ হয়ে শরীরে ট্যাটো এঁকে শরীর প্রদর্শন করছে সবার সামনে।আর তা ফলো করছে মুসলিম নারীরা।আর এই বেহায়াপনাকে সভ্যতা বলে চালিয়ে নিচ্ছে প্রায়ই নারীরা।আসিফের মতো বহু পরিবার ডলার বাড়ি গাড়ির আশায় বিধর্মী রাষ্ট্রে পাড়ি জমাচ্ছে।আর শেষ জীবনে সন্তানদ্ধারা নির্যাতিত, লাঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

ঃ সমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to “গল্প স্বপ্নের আমেরিকা আফছানা খানম অথৈ”

Leave a Reply