গল্প স্বপ্নে দেখা পুরুষ আফছানা খানম অথৈ

0

স্বপ্নে দেখা পুরুষ

আফছানা খানম অথৈ

সকাল নয়টা উর্মি এখনো ঘুমাচ্ছে। কলেজের সময় হয়ে গেছে।মা এগিয়ে এসে মেয়েকে জাগিয়ে দিলেন।উর্মি চোখ মেলে মায়ের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।মা তো অবাক কথাবার্তা ছাড়া মেয়ে এমন করে তাকিয়ে আছে কেনো।তখনি মা বলল,
উর্মি এমন করে তাকিয়ে আছিস কেনো?কলেজে যাবি না?
মায়ের কথা যেন উর্মির কানে যাচ্ছে না।সে আপন নিয়মে ভাবছে,তার স্বপ্নে দেখা পুরুষটির কথা।যে দেখতে সুউচ্চ,সুন্দর ও সুগঠিত।কিছুক্ষণ আগে যে হাতে হাত রেখে ভালোবাসার কথা বলেছিল।সে কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছে না।কোনকিছু ভালো লাগছে না।বারবার তার কথা মনে পড়ছে।ভাবনার অবসান হতে না হতে মা আবার বলল,
উর্মি কী হয়েছে?কথা বলছিস না কেনো?কলেজে যাবি না?
এতক্ষণে উর্মি সম্বিত ফিরে পেল।সে উত্তর দিলো,
জ্বি হাঁ মা যাব।এইতো আমি রেডি হচ্ছি।
বলতে না বলতে উর্মি কলেজে মুখো হল।এভাবে কেটে গেল কয়েক দিন।প্রায় প্রতিরাতে সেই সুদর্শন যুবকটি স্বপ্নের মাঝে উর্মির সঙ্গে দেখা দেয়।ভালোবাসার কথা বলে।রোমান্স…।
আর ও কত কি।
কিছুদিন পর উর্মির ইন্টার ফাইনাল এক্সাম অনুষ্ঠিত হবে।সে অনেক রাত জেগে পড়ালেখা করছে।চোখ দুটো আর কত সইবে।খুব জ্বালা করে উঠল।আর পড়তে ইচ্ছে করলো না।সে ধপাস করে শুয়ে পড়লো।চোখ জোড়া অনায়াসে বন্ধ হয়ে গেল।নাক ডেকে আরামছে উর্মি ঘুমাচ্ছে।ঠিক তখনি সেই সুদর্শন যুবকটি তার সামনে এসে দাঁড়ালো।আজ কিন্তু উর্মি থেমে থাকল না।বলে উঠল,
এই তুমি কে?
আমি মানুষ।
তা বুঝলাম।কিন্তু তোমার নাম কী?
আমার নাম সুজন।
তুমি থাক কোথায়?
তা পরে বলব।এখন থাক।
তুমি রোজ রাতে আমার সাথে দেখা কর কেনো?
আমি যে তোমাকে ভালোবাসি।
তাহলে দূরে চলে যাও কেনো?
কী করবো বলো।এখনো যে কাছে থাকার সময় হয়নি।
কখন সময় হবে?
আগে পড়ালেখা শেষ করি তারপর।
কবে শেষ হবে তোমার পড়ালেখা?
এইতো কিছুদিন পর।
ততদিন আমি থাকলে তো?
কী করবে?
বিয়ে করবো।
মিথ্যে বলছ।তুমি আমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।
কী করে বুঝলে?
আমার মন বলছে।তাছাড়া তুমি আমাকে অনেক ভালোবাস।
মিথ্যে কথা।আমি তোমাকে ভালোবাসি না।
মিথ্যে বলছ।তুমি আমাকে ভালোবাস।আমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।কারণ আমরা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসি।কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
সত্যি বলছ তো?
হুম সত্যি।এখন চলি।
আবার কবে আসবে?
ঠিক সময়মতো চলে আসব।তুমি টেনশন করো না প্রিয়তমা।ভালো থেকো।বাই বাই বাই।
তখনি উর্মি বলে উঠল,
প্রিয়তম এখন যেওনা।আর কিছুক্ষণ থাক।
না আর থাকা যাবে না।আমি চলে যাচ্ছি।
উর্মি সুজন যেওনা যেওনা বলে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠল।তারপর আশপাশ তাকিয়ে দেখল কেউ নেই।সে একা বিছানায় পড়ে আছে।কিন্তু এতক্ষণ যাকে দেখল সে কোথায়?ভাবতে লাগল…।
ভাবনার অবসান হতে না হতে সবকিছু তার মনে পড়ে গেল।সে বুঝতে পারলো এটা বাস্তব নয়, স্বপ্ন।
কি আর করা চোখ বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়লো।এমনিভাবে দু’একদিন পর পর গভীর রাতে সুজন নামের লোকটি স্বপ্ন যোগে উর্মির সঙ্গে দেখা দেয়।উর্মিও তার প্রেমে একেবারে দিওয়ানা হয়ে উঠে।বাস্তব জগতে তাকে খুঁজতে শুরু করে।উর্মি দেখতে মন্দ না খুব কিউট।তার পিছনে ঘুরঘুর করে ডজন খানেক ইয়্যংম্যান।সে কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না।যখনি কাউকে নিয়ে ভাবে, তখনি যেন স্বপ্নে দেখা পুরুষটি প্রতিচ্ছবি হয়ে তার সামনে ভেসে উঠে।এবং তাকে ভালোবাসার কথা বলে।কি করা উর্মি তাকে রিজেক্ট করে দেয়।এমনিভাবে কেটে চলেছে উর্মির দিনকাল।এর ফাঁকে তার ফাইনাল এক্সাম শেষ হলো।একদিন তার কলেজের সিনিয়র বড় ভাই বলল,
উর্মি তুই কি রে?
কেনো বাদল ভাই, কী হয়েছে?
তুই কি কোনদিন বিয়ে করবি না?
উর্মি হা হা হো হো করে হেসে উঠে বলল,
উফ এই কথা।আমি ভাবলাম সিরিয়াস কিছু।
সিরিয়াস নয়তো কি।কারো সাথে এপেয়ার ও করিস না।বিয়ের প্রস্তাব আসলেও না করে দিচ্ছিস।ব্যাপারটা কি বলতো?
বাদল ভাই সিরিয়াস কিছু না।এখনো মনের মতো কাউকে পাইনি।তাই বিয়ে কিম্বা এপেয়ার কিছুই করতে পারছি না।
তা কেমন পুরুষ তোমার পছন্দ?
সুশিক্ষিত, সত্যবাদী,সৎ ও বিচক্ষণ।সুউচ্চ,সুন্দর ও সুগঠিত।
এমন পুরুষ যদি না পাও,তাহলে কী করবি?
বিয়ে করবো না।সারাজীবন কুমারী থেকে যাব।
সত্যি তো?
হুম সত্যি।
দু’জনের মজার কথোপকথন শেষ করে উর্মি বাসায় ফিরে গেল।তখনি মা বলল,
উর্মি তাড়াতাড়ি সাজুগুজু করে ড্রয়িংরুমে আয়।
কেনো মা?
এক ভদ্র মহিলা তোকে দেখতে এসেছে।
মা বলেছি না আমি এখন বিয়ে করবো না।
তা পরে দেখা যাবে।এখন তাড়াতাড়ি আয়।
প্লিজ মা আমায় ফোর্স করো না।আমি যেতে পারবো না।
মা মেয়ের কথা কাটাকাটির মাঝে ভদ্র মহিলা উর্মির রুমে গিয়ে দাঁড়ালো।উর্মি ভদ্রতার সহিত সালাম দিলো।তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন,
মা মনি তোমার নাম কী?
রেবেকা সুলতানা উর্মি।
কিসে পড়?
সবেমাত্র ইন্টার ফাইনাল এক্সাম শেষ হলো।
মাসআল্লাহ ভালো।
ভদ্র মহিলার উর্মিকে পছন্দ হয়ে গেল।তখনি তিনি বললেন,
আপা আপনার মেয়েকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে।যদি কোন আপত্তি না থাকে বিয়ের কথা পাকা করতে পারি।
না আপা বিয়ে শাদীর ব্যাপার, হুট করে কোনকিছু করা ঠিক হবে না।ভালো করে যাছাই বাছাই করতে হবে।তাছাড়া আপনাদের সম্পর্কে তো আমরা কিছুই জানি না।
ঠিক আছে, আপনার খোঁজ খবর নিয়ে দু’একদিনের মধ্যে জানাবেন।
ভদ্র মহিলা বিদায় নিলেন।উর্মি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছোট মেয়ে।সকল ভাই-বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।এখন তার সিরিয়াল।বিয়ের বয়স ও হয়েছে।কিন্তু সে বিয়েতে আপত্তি করছে।কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে কোন উত্তর দিতে পারছে না।শুধু বলছে এখন না আরও পরে।
কিন্তু কেনো?এই নিয়ে মা খুব টেনশনে আছে।এর ফাঁকে অনেক সময় পার হলো।উর্মি অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করলো।তারপর শুরু হলো চাকরীর ইন্টারভিউ।ইন্টারভিউ নয়তো যেন একটা যুদ্ধক্ষেত্র।একটা পদের জন্য হাজার হাজার প্রার্থী।গাড়ি থেকে শুরু করে সব জায়গাতে জ্যাম আর জ্যাম।ঐযে বললাম যুদ্ধক্ষেত্র ঠিক তাই। প্রতিনিয়ত যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে সে চাকরীর এক্সাম দিয়ে চলেছে। ভাগ্যচক্রে এক সময় তার গভ:মেন্ট হাই স্কুলের সহকারী টিচার পদে চাকরী হয়ে যায়।এবার মা বলল,
উর্মি এতদিন তো চাকরীর দোহাই দিয়েছিলে।এবার আমি আর তোর কোন কথা শুনব না।তোর বড় চাচা একটা প্রস্তাব এনেছে।ছেলে ইঞ্জিনিয়ার খুব ভালো।এই ছেলের সঙ্গে আমি তোর বিয়ে দেব।
মেয়ের মুখের উপর কিছু কড়াকথা বলে মা নিজের কাজে গেল।উর্মি কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না।নামাজ পড়ে আল্লাহপাকের কাছে প্রার্থনা করলো,
হে পরওয়ার দেগার তুমি সবজান্তা শমসের।তুমি সবকিছু জান,বুঝ,শুন।এই বিশ্ব ভুবনের মালীক তুমি।তোমার ঈশারায়,তোমার হুকুমে সবকিছু চলে।হে পরওয়ার দেগার আমি পাপী বান্দার প্রার্থনা তুমি কবুল কর।আমার স্বপ্নে দেখা সুদর্শন যুবকটির সঙ্গে আমার দেখা করার তাওফিক দান করুন।হে পরওয়ার দেগার আমাকে নিয়ে আর নিষ্ঠুর খেলা খেলো না।আমি আর সইতে পারছি না।আমার মনের বাসনা অতি সত্ত্বর পূরণ করে দাও।আমীন।।
নামাজ শেষে সে পাঠ সহায়িকা পড়তে বসলো।তখনি তার বড় চাচা ফোন করে জানাল,ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি নিজের মতে ভালোবেসে বিয়ে করেছে।তখনি মা কড়া ভাষায় বলল,
তোর ভাগ্যটাই খারাপ। যখনি বিয়ের কথা বলি,তখনি একটা না একটা অঘটন ঘটে।
এবার উর্মি বলল,
প্লিজ মা থামত।জন্ম,মৃত্যু, বিয়ে এসব আল্লাহপাকের হুকুম ছাড়া হয় না।একটু ধৈর্য ধর,সময়মতো সব হবে।
মারে আর কত ধৈর্য ধরব।তোর বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে।তোর বাবা বেঁচে থাকলে কি আর এসব নিয়ে আমি ভাবতাম।আমার হয়েছে যত জ্বালা।
এরফাঁকে কেটে গেল কিছুদিন।একজন নতুন টিচার জয়েন করলো গভ:মেন্ট হাই স্কুলে।উর্মি অফিস কক্ষে প্রবেশ করতে একি দেখল,
তার স্বপ্নে দেখা পুরুষটি অফিস কক্ষে আসন পেতে বসে আছে।উর্মি তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তখনি হেড টিচার বলল,
ম্যাডাম উনি আমাদের নতুন টিচার বি সি এস ক্যাডার সুজন আহমেদ।
থ্যাংকস।
ওয়েলকাম।
হেড টিচারের পরিচয়ের সুবাধে দু’জনের মাঝে আলাপ পরিচয় হলো।এই আলাপ পরিচয়ের সুত্রধরে একে অপরের মনের গভীরে চলে গেল।একদিন সুজন আহমেদ বিয়ের প্রস্তাব দিলো।উর্মি রাজী হলো।তারপর দু’পক্ষের সম্মতি ক্রমে মহাধুমধাম করে তাদের বিয়ে হলো।বউ সেজে উর্মি গেল সুজন’র বাড়িতে।সুজন আহমেদ মজা করে বাসর রাতে বলল,
ম্যাডাম শুনেছি আপনার কাউকে পছন্দ হয় না।এখন আমাকে পছন্দ হয়েছে?
হুম হয়েছে।
আমাকে ভালোবাসতো?
হুম বাসি।কারণ তুমি আামার….।
উর্মি থামলে কেনো বলো তুমি আমার কী?
তুমি আমার “স্বপ্নে দেখা পুরুষ”।এতদিন আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম।
সত্যি?
হুম সত্যি।দীর্ঘ অপেক্ষার পর আমি তোমাকে পেলাম।
মজার ব্যাপার তো।
শুধু মজা নয়।আশ্চার্য ও বটে।
ঠিক বলেছ।আর দেরী করা ঠিক হবে না।এবার কাছে আস দু’জন মিলে….।
দু’জন মিট হয়ে সংসার জীবন শুরু করলো।
ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply