“রূপকথার গল্পে আমি”- ০৮

0

(৮)

ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার তিন মাস পর এস.এস. সি পরিক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে গতকাল। জিপিএ গ্ৰেড A পেয়েছি। আজ মিষ্টি নিয়ে প্রথমে স্কুলে যাই গিয়ে স্যারদের সাথে কুশল বিনিময় করে মিষ্টি দিয়ে তারপর ইনস্টিটিউটে যাই। সোজা অফিস রুমে গিয়ে মিষ্টির কার্টুন প্রিন্সিপাল স্যারের হাতে দেই। স্যার হাসিমুখে গ্রহণ করে অভিনন্দন জানান। অফিস থেকে বের হয়ে ক্লাসে আসছি আর ভাবছি “অফিস রুমে সব স্যারদের দেখলাম কিন্তু অনিক স্যারকে দেখলাম না। গত সপ্তাহে স্যারের সাথে দেখা হয়েছিল। স্যার তো সিলেটের বাইরে কোথাও গেলে কথার ফাঁকে আমাকে বলতেন। স্যার কি অসুস্থ! তাইতো এক সপ্তাহ থেকে স্যারকে দেখছি না”।

এসব ভাবতে ভাবতে ক্লাসরুমে এসে সিটে বসে আছি আনমনা হয়ে।

কয়েকজন বান্ধবি এসে বললো – কিরে আমাদের সবার চেয়ে রেজাল্ট তর ভালো, তুই মন খারাপ করে বসে আছিস কেনো? কি হয়েছে তর?

না কিছু হয়নি। ওহ্ তদের খবর কি, আমাদের ব্যাচ এর সবাই কি পাশ করেছে!

হ্যা সবাই মোটামুটি পাশ।

তাদের মধ্য থেকে নিহা বলল- জানিস অধরা আমাদের অনিক স্যার অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন স্কলারশীপ নিয়ে।

অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম – অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন !! কেনও তুই জানিস না। ভিসা ও পেয়ে গেছেন।

ভালো! বিদেশ যাবেন পড়ালেখা করতে এতে আমাদের সুনাম বাড়বে। দেশেরও অনেক আর্থ-সামাজিক উপকার হবে।

আরেকজন বান্ধবি খুঁচা দিয়ে বলল- তরও অনেক ভালো হবে।

আমার ভালো হবে? মানে?

তুই বিদেশি বর পাবে। 

নিহা বলে উঠল-তুইও বিদেশ চলে যাবে। আমাদের তখন ভুলে যাসনে!

এবার রাগ করে বললাম- তুরা সবাই আমাকে এসব কেন বলছিস?

রাগ করছি দেখে ওরা বলল-টিক আছে অধরা রাগ করিস না আর বলবো না।

এরপরে সবাই চুপ হয়ে যার যার সিটে গিয়ে বসে থাকে। ক্লাস শেষে কারো সাথে কোন কথা না বলে বাসায় চলে আসি।

সারা বিকেল ধরে বিষন্ন মনে বসে আছি বারান্দায় মনে হচ্ছে যেন ভালো লাগার মত কিছু অবশিষ্ট নেই। সন্ধ্যার সময় পশ্চিমাকাশের দিকে এক ঝাক পাখি কি সুমধুর কিচিরমিচির ডেকে উড়ে যায়। ওই দূরে পাখির ডাক শুনে দৌড়ে বারান্দায় বের হয়ে আকাশপানে অপলক থাকিয়ে দেখি তাদের এ আয়োজন। ইচ্ছে হত পাখি হয়ে ওই এক ঝাক পাখির সাথে মিশে উড়ে যেতে। প্রতিদিনের মত আজও পাখি উড়ে যাচ্ছে কিচির মিচির ডেকে। আজ ভালো লাগছেনা পাখির ডাক শুনতে। আজ আর ইচ্ছে হচ্ছে না পাখি হয়ে উড়ে যেতে। কিন্তু এ ভালো না লাগা কেন? কেন অবহেলায় কাটে সুন্দর বিকেলটা? সন্ধ্যায় অগনিত তারা লজ্জাবনত মুখে আকাশের কোলে উঁকি মারে তখন বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে চিরচেনা সৌন্দর্যের মুখচ্ছবি ভাবতে কি আনন্দ! কিন্তু কোথায় আজ সে আনন্দ? সারা দিনের কর্ম- কোলাহল পিছনে ফেলে এ বিশ্ব সংসারের গভীরতা নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। সন্ধ্যায় আধো আধো অন্ধকারের মধ্যে মানব মনে ভাবের শত-সহস্র হিল্লোল এসে আঘাত করে এবং জগৎ সংসারের সমস্ত কোলাহল ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে প্রাণের মধ্যে শান্তি স্থাপন করে। সন্ধ্যার সুকোমল শীতল ছায়ায় মানব মনে বেশ কবিত্ব অনুভূত হয়। কিন্তু আজ কেন অনুভূতিহীন নিস্তেজ বিমর্ষ বিকেল কাঠে আমার? ভাবনায় ডুবে নিজের সাথে নিজে বিড় বিড় করে কথা বলছি – টিচার-স্টিউডেন্ট রিলেশান যে রকম আমার তো এর চেয়ে ভিন্ন রিলেশান অনিকের সাথে নয়। তাহলে কেন ওর অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার কথা শুনে আমার সুন্দর বিকেলের সময় মাঠি হয়ে যাবে। আমার বান্ধবিদের অনেকে জানে তার বিদেশ যাওয়ার কথা কিন্তু আমি কেনো জানলাম না আরো আগে, তাহলে তো আজকের দিনের কথা গুলো শুনার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকতাম। কিছুটা খারাপ লাগলেও হয়তো এতো বেশি খারাপ লাগতো না। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে থাকি। পরে আবার বিড়বিড় করে বলতে শুরু করি – “আরে ধ্যাত সে গেলে আমার কি? আমার খারাপ লাগবে কেন? সেতো আমাকে তেমন কিছু বলে নি শুধু শুধু তাকে নিয়ে ভাবছি! বুঝতে পারি সে আমার প্রতি কিছুটা দূর্বল আর সেটা আমার বান্ধবিরাও বুঝতে পেরেছে তাই ওরা আমাকে আজ অনেক কথা বলল যা আমি শুনতে প্রস্তুত ছিলাম না। আমার কি দোষ আমিতো এমন কোন আচরণ করিনি অনিকের সাথে। তাহলে আজ অনিক আমাকে এতো ভাবনার মধ্যে ফেললো কেন? আমার শুধু ভালো লাগে তাকে। খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি এখন থেকে ভাবনাই হবে আমার একমাত্র সঙ্গী। আর অনিক সে ধীরে সুস্থে তার পথেই চলে যাবে। ফিরে তাকানোর প্রয়োজন মনে করবে না। কারণ স্বর্ণালী দিন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এখন আর পিছনের ভাবনা ভেবে সময় নষ্ট করার মত সময় আর নেই তার। অনেক আনন্দ সামনে পড়ে আছে।

আমার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে, যাক, যে যেতে চায় তাকে হাসি মুখে যেতে দেয়া ভালো। যাও তুমি চলে যাও অনিক! আমার জীবনের পথে চলার সাথে তুমার স্মৃতি ছায়ার মতো থাকবে। আমার মনে হয় আমি চাইলে ও ঐ স্মৃতি গুলো মুছে ফেলতে পারবো না। কারণ মনের উপর জোর খাটানো যায় না। এর বিশেষ কারণ আছে বুঝতে পারছি কিন্তু এখন সুন্দর করে ভাষায় প্রকাশ করতে পারতেছি না।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Sumana Begum

Author: Sumana Begum

আমি সুমানা বেগম। সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। আমার বাবার নাম হাজী মো. আতাউর রহমান এবং মায়ের নাম তায়্যিবা খানম। তারা কেউ বেঁচে নেই। আমি তাদের সব ছোট মেয়ে। বিয়ানী বাজার সরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি এবং সিলেট এম. সি. কলেজ থেকে মাষ্টার্স। আমার স্বপ্ন ছিল চাকরি করব। কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে তেমন উন্নতি করতে পারিনি। তবে আমার আশা পূরণ হয়েছে আমি কিছু দিন শিক্ষকতা পেশায় কাজ করতে পেরেছি। আমি বিবাহিত এবং আমার একটি আট বছরের মেয়ে আছে নাম মাহনূর জান্নাত।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to ““রূপকথার গল্পে আমি”- ০৮”

Leave a Reply