আমার শৈশব

1

সেই কবে যে গুলতি দিয়ে

নারিকেল গাছের ডগায় বসে থাকা
পাখিগুলোরে বিরক্ত করেছিলাম ভুলেই গেসি!
কঞ্চি’র তীর ধনুক দিয়ে কলাগাছগুলোকে কতশতবার আঘাত করেছি তার ইয়ত্তা নেই!
গাছগুলো, পাখিগুলো একটাও অভিযোগ করেনি!
টু শব্দ পর্যন্ত করেনি!!

বাঁশের সবুজ পাতা, খাতার খসখসে পাতা দিয়ে
কত যে নৌকা বানিয়ে স্বপ্নের সাগরে ভেসে বেড়িয়েছিলাম তার হদিস নেই!
হিসাব নেই ঐ গোল্লাছুটগুলোর!
ধানের মাড়াই!
সদ্য তোলা খড়ের তোপখানা
খানখান করে দিতাম,
নানিরা এসে মিষ্টি করে তাড়িয়ে দিত!

দাদার সাথে সাতার কাটতে যেতাম!
পানি খেয়ে পেট ফুলিয়ে বাড়ি ফিরতাম!
ধান কাটতে যেতাম,
লুঙ্গি পড়ে হাটতাম,
ছোট্ট মোড়ল হওয়ার ভান করতাম।
মা কে বলতাম,
“মা লুঙ্গিখানা পেটের উপর বেধে দাও তো,
ঐ বাড়ির আব্দুল কাদির দাদার মতো
মোটা হয়ে যাচ্ছি আমি, মোড়ল আমি!”

টুলের উপর দাঁড়িয়ে ক্যারেম খেলে
ময়দা মেখে বাপের দৌড়ানো খাওয়া-
এ যুগে বিরল!
ক্যারেমখুর ছিলাম! চ্যাম্পিয়ন ছোট থেকে!
আশ্চর্য লাগে!

ক্লাসে ম্যামকে গালি দিয়ে
বই খাতা ছুড়ে ফেলে বাসায় ভবঘুরে সাজা!
আবার বাপের মাইর খেয়ে বেহুশ হওয়া তো এখন নজরেই পড়েনা! আমরা করতাম, আমি করতাম!
চল্লিশ বছরের বাবাকে যুক্তি দিয়ে বুঝাতাম-
“পাঁচ বছরের শিশু আমি, অনেক ছোট,
এতগুলো বই পড়ি ক্যামনে?”

তারপর আবার মাইর! বেহুশ!
হুশ ফিরে আবার যুক্তি…
তারপর আবার মাইর! বেহুশ!

মনে আছে একবার বড় ভাইয়ের পিটুনি খেয়ে বেহুশ হয়েছিলাম! অভিভাবক ছিল আমার ভাইটিও!

আমাদের শৈশব ছিল খড়ের ঘরে ঘুমানো!
ঘুম থেকে উঠে মক্তবে দৌড়ানো,
মায়ের বকুনি খেয়ে!
পাখির সাথে উড়ে বেড়ানো
গরুর সাথে হাটা, দৌড়ানো
বিস্তৃত মাঠে ঘাসের বিছানায়
পিঠ হেলান দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে
গল্প জুড়ে দেয়া! ঘাসের সাথে!
দূর্বাঘাসগুলোও বিরক্ত হয়নি!
গল্প করতে করতে ঘাসগুলোকে ছিড়েখুঁড়ে যা করেছি তার সংগা নাই!
তবুও বেচারা ঘাস আর মাটি আমার সাথে গল্প করে ক্লান্ত হয়নি কখনো! অভিযোগ দেয়নি!!

এতো এতো সোনালী সময়গুলোর কল্পনায় ফিরে যেতে চাইলেই চ্যাৎ করে উঠে বুক!
নাহ- সম্ভব না!
কেমন অস্পষ্ট মনে হচ্ছে!
এইতো গুটি কয়েকদিন!
কিভাবে সময়গুলো চলে গেল!
কেরোসিনের কুপির নিচে
পড়ার কথা মনে উঠলেই
ভেসে উঠে নির্ভেজালা চারিধারের কথা!

আমার শৈশব!
কই তোমরা!
তোমরা কখনো বৃদ্ধ হওনা?

✍️ মোহাম্মদ তানহীর হোসাইন

 


আরো পড়ুন-


 


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

1

Md Tanhir Hossain

Author: Md Tanhir Hossain

A student

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

তুমি

হেমন্তের বিকেল শেষে শীতে সকাল আসে, এভাবেই যাচ্ছে সময় তোমার প্রহর গুনে। কথার পিঠে কথা সাজিয়ে বাহানা করেছো হাজার, কি

স্মৃতিচারণ

স্মৃতিচারণ ✒ অনিন্দ্য সূত্রধর মনে পড়ে কি সেই ছোট্ট বেলার কথা? পাখির মতো ছিল তখন উড়ার স্বাধীনতা।। প্রাথমিকের জীবনের দিনগুলো

দু’ ফোঁটা বর্ষণ

""দু' ফোঁটা বর্ষণ"" "শহরতলীর বুকে ঝড়ে পড়া দু ' ফোঁটা বৃষ্টির এসিডময় ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বায়নাগুলো। প্রেমশূন্য ভিটে - দমকা

কবিতা জাতীয় ইলিশ আফছানা খানম অথৈ

কবিতা জাতীয় ইলিশ আফছানা খানম অথৈ সোনার বাংলার জাতীয় ইলিশ যাচ্ছে ভারতে, বাংলার মানুষ পাচ্ছে না খেতে দাম বেড়ে যাওয়াতে।

Leave a Reply