আমরা জানি, পুষ্টি বিজ্ঞানীরা খাদ্যের উপাদানগুলোকে মোট ছয়টি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন। যার মধ্যে একটি হচ্ছে প্রোটিন, যাকে বাংলায় বলি আমিষ। বেচে থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। ১০ টি প্রধান হাই প্রোটিন জাতীয় খাবার কোনগুলো এখানে জেনে নিন!
প্রোটিন জাতীয় খাবার নিয়ে এই লেখাটিতে যে সকল বিষয়ে আলোকপাত করতে চলেছি–
প্রোটিন এর কাজ কি
ছয়টি খাদ্য উপাদানের মধ্যে অন্যতম একটি হলো প্রোটিন। আমাদের দেহে প্রোটিনের কাজ সুদূর পর্যায়ে বিস্তৃত। প্রোটিনের নানাবিধ কাজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আমাদের দেহের ক্ষয় পূরণ করা। আমরা প্রতিনিয়ত কাজ কর্মের মধ্যে থাকি। এর মাঝে বিভিন্ন কারণে আমাদের দেহের ক্ষয় হয়, কোনো অংশ কাটা যায়, কোষ মারা যায়।
সেক্ষেত্রে আমাদের দেহ আবার নিজের ক্ষয় পূরণ করতে সক্ষম। আর এর জন্য প্রয়োজন আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য। প্রোটিনকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অ্যামিনো এসিড। এই এসিডকে মানব শরীরের জন্য অত্যাবশকীয় উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়।
তো, প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে কি হয়? প্রোটিনের অভাবে নানা রকম রোগ হতে পারে। এসকল রোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রোগটি হচ্ছে কোয়াশিয়রকর। এই রোগটি সাধারণত আফ্রিকা অঞ্চলে বেশি দেখা দেয়। প্রোটিনের অভাবজনিত কোয়াশিয়রকর রোগটি হলে দেহের বাকি অংশ শুকিয়ে গেলেও পেট সামনের দিকে বের হয়ে আসে। কোয়াশিয়রকর রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি না পেলে মৃত্যু অবধারিত।
আমাদের অনেকের স্বাস্থ্য কিছুটা রোগা প্রকৃতির। অনেক সময় এর জন্য আমাদের কটু কথাও শুনতে হয়। রোগা স্বাস্থ্যের অনেক কারণ থাকলেও আমিষের অভাবকে কারণ হিসেবে দেখা হয়। যদি কেউ প্রোটিনে অভাব পূরণ করেন তবে তিনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন। প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে কি হয়? আশা করছি ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন।
প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা
এখন আমরা জানবো প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপকারিতা সম্পর্কে। পূর্বেই আমরা জেনেছি প্রোটিন আমাদের দেহের ক্ষয় পূরণ করে। কিন্তু এর পাশাপাশি প্রোটিন বিভিন্ন শারীরিরবৃত্তীয় কাজ সম্পাদন করে থাকে। চলুন জেনে আসি আমিষ জাতীয় খাদ্যের উপকারিতাগুলো কি কি–
সত্যি বলতে গেলে মানবদেহ প্রায় সম্পূর্ণ আমিষ বা প্রোটিন দ্বারাই গঠিত। আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ অ্যামিনো এসিড বা প্রোটিন জাতীয় পদার্থ দ্বারা গঠিত হয়েছে। তার দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয় পূরণে প্রোটিন হচ্ছে আবশ্যক উপাদান।
পুষ্টি বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়েছেন আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার এক চতুর্থাংশ আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য হতে হবে। ভাত ও সবজির পাশাপাশি মাছ, মাংস কিংবা ডিম একটি উপযুক্ত খাদ্য তালিকা হতে পারে। যেখানে ভিটামিন আমিষ শর্করা জাতীয় খাবারের পাশাপাশি প্রোটিন জাতীয় খাবার বিদ্যমান রয়েছে।
প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা
যে ১০ টি খাবার প্রোটিনের প্রধান উৎস, সেগুলো হচ্ছে–
আমাদের দৈনিক খাদ্য তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাদ্য থাকতেই হবে। কেননা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ না করলে আমাদের শরীর দ্রুতই রোগা হয়ে পড়বে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। উপরের তালিকায় ১০ টি প্রধান হাই প্রোটিন খাদ্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ সকল খাদ্য আমাদের দেশে অতি সহজলভ্য যঅদিও বাজারে এসবের দাম প্রায়ই ওঠানামা করে।
আমাদের মধ্যে অনেকে এমন আছেন যারা প্রতিদিন মাংস কেনার সমর্থ্য রাখেন না। এমনকি বাজারে মাছের দামও এখন উর্ধ্বগতি! তবে কিছু কিছু মাছ রয়েছে যেগুলোর স্বাদে ও গুনে উৎকৃষ্ট এবং সহজে মাছের বাজারগুলোতে পাওয়া যায়। যেমন রুই, কাতলা, শোল, পাঙাশ ইত্যাদি। এ সকল মাছ আমাদের দৈনিক দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখলে সহজে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা যাবে।
প্রোটিন জাতীয় ফল
বেশির ভাগ উৎকৃষ্ট মানের আমিষ বিভিন্ন প্রাণীর মাংস থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু তাই বলে এই নয় যে উদ্ভিদ থেকে আমিষ পাওয়া যায় না। আপনারা যারা নিরামিষ খান কিংবা ফল পছন্দ করেন, তাদের জন্য রয়েছে কিছু আমিষ সমৃদ্ধ ফল।
এ সকল আমিষ সমৃদ্ধ ফল আমাদের হাতের নাগালে পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশেও ব্যাপক হারে জন্মে। এছাড়া কিছু বিদেশি ফল বাংলাদেশের অনেক কৃষক চাষ করছেন। এই সকল বিদেশি ফল, যেমন অ্যাভাকাডো ও কিউই আমিষের উৎকৃষ্ট উৎস।
কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই কাঁঠাল গাছ দেখতে পাওয়া যায়। কাঁঠাল একটি সুস্বাদু ফল, যেটি দামেও সস্তা এবং আকারে বৃহৎ হয়ে থাকে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে আমাদের এই প্রিয় ফল কাঁঠাল আমিষের একটি প্রধান উৎস।
পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে কাঁঠালকে মাংসের বিকল্প হিসেবে খাওয়া হয়। বাংলাদেশে অনেকে কাঁচা কাঁঠালের তরকারি খেয়ে থাকেন। এছাড়া পাকা কাঁঠাল অত্যন্ত রসালো একটি ফল। কাঁঠালের বিচি ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। এক কথায়, কাঁঠাল আমিষের উৎস হিসেবে একটি উপযুক্ত ফল।
শুকনো জাতীয় ফল, যেমন কাজু বাদাম, চিনা বাদাম, আখরোট, কিসমিস, পেস্তা বাদাম ইত্যাদি আমিষের উৎস। এই সকল খাবারগুলো আমরা সকালে কিংবা বিকালের নাস্তার সাথে খেতে পারি।
প্রোটিন জাতীয় ঔষধ
আমরা অনেক সময় চরমভাবে আমিষের ওভাবে পড়ে যাই। দৈনন্দিন খাবারের পাশাপাশি আমাদের বাড়তি আমিষেরও প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ডাক্তার অনেক সময় প্রোটিন জাতীয় ঔষধ খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বাজারে বেশ কিছু প্রোটিন জাতীয় ওষুধ রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ওষুধ আমাদের উপকারের চেয়ে ক্ষতি করে বসে। কেননা প্রোটিন এমন একটি উপাদান, যা বেশি পরিমাণ গ্রহণ করলে শরীরের জমে যায় এবং ভবিষ্যতে আমাদের শরীরের ক্ষতি করে।
তবে বাজারে এমন একটি প্রোটিন জাতীয় ঔষুধ রয়েছে যা সেবনে তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই। এই ওষুধটি সম্পূর্ণ ভেষজ উপাদানের তৈরি ঔষুধের নাম স্পিরুলিনা, এক ধরনের শৈবাল থেকে এই ওষুধ প্রস্তুত করা হয়।
যেহেতু শৈবাল থেকে ওষুধটি প্রস্তুত করা হয় তাই এই ওষুধটি রং সম্পূর্ণ সবুজ। আমিষের অভাব দেখা দিলে এই ওষুধ প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি করে খেতে পারেন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় বড় রকম অসুবিধায় পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
দশটি উৎকৃষ্ট মানের প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের তালিকা প্রণয়নে আমরা বিবেচনায় রেখেছি উক্ত খাদ্যে প্রোটিনের মাত্রা, খাদ্যগুণ, সহজ লভ্যতা এবং বাজারের দর। বাংলাদেশে এ সকল খাদ্য অতি সহজলভ্য এবং আমরা প্রায়শই এসকল খাদ্য খেয়ে থাকি।
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এসকল খাদ্য রাখলে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি দেহের ক্ষয় পূরণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যাদের রক্ত জনিত রোগ রয়েছে তাদেরকে ডাক্তারেরা প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে পরামর্শ দেন। রক্তকে শুদ্ধ রাখতে আমিষ জাতীয় খাবারের কোন বিকল্প নেই।
খাদ্য বিষয়ক আমাদের অন্যান্য লেখাগুলো পড়ুন–

ভালো লিখেছেন
❤️
উপকৃত হলাম