সম্মিলিত মুনাজাত কি বিদ’আত?

0

সম্মিলিত মুনাজাত জায়েয নাকি বিদ’আত?

এ ব্যাপারে বিশেষ করে দুটি মত পরিলক্ষিত হয়।

১. মুস্তাহাব/উত্তম

২. বিদ’আত

 

যারা বিদ’আত বলে তাদের মধ্যে আবার দুই দল।

১. ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত বিদ’আত

২. যে কোনো সময় সম্মিলিত মুনাজাত বিদ’আত।

যারা প্রথম দলের, অর্থাৎ অন্য যে কোনো সময় সম্মিলিত মোনাজাতকে জায়েজ বললেও ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাতকে বিদ’আত বলেন। এর মধ্যে রয়েছে কওমী/দেওবন্দী ধারার ওলামায়ে কেরামও। আর দ্বিতীয় দল হচ্ছে কট্টরপন্থী সালাফি বা কথিত আহলে হাদিস। তারা সর্বাবস্থায় সম্মিলিত মুনাজাতকে বিদআত বলে থাকে। তবে দ্বিতীয় দল সম্পূর্ণ ভুল।

যারা ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাতকে বিদ’আত বলেন, তাদের দলিল হচ্ছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে ফরজ সালাতের উপর সম্মিলিত মুনাজাত করেছেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না, তাই এটি বিদ’আত।

আর যারা বলে সর্বাবস্থায় সম্মিলিত মুনাজাত বিদআত তাদের পক্ষে কোন দলিল নেই। বরং তাদের বিপক্ষে অসংখ্য দলিল রয়েছে। আমরা এ প্রবন্ধে পর্যায়ক্রমে এ সংক্রান্ত সকল দলিল উল্লেখ করবো।

আলোচনা সুবিধার্থে আমরা বিষয়টিকে চার ভাগে আলোচনা করব-

১. সাধারণ সালাতের পর মোনাজাত।

২. ফরজ সালাতের পর মোনাজাত।

৩. মোনাজাতে হাত তোলার বিধান।

৪. সম্মিলিত মোনাজাত।

 

প্রথমে আমরা সালাতের পর মুনাজাত আছে কিনা সে বিষয়ের হাদিসগুলো উল্লেখ করবো। তারপরে মুনাজাতের আদব সংক্রান্ত হাদিসগুলো উল্লেখ করবো।

 

📗 সালাতের পর মুনাজাতের দলীলসমূহ:

 

সালাতের পর মুনাজাত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ

 

١- ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻗﺎﻝ : ﯾﺎ ﻣﺤﻤﺪ ! ﺇﺫﺍ

ﺻﻠﯿﺖ ﻓﻘﻞ : ﺍﻟﻠﮩﻢ ﺇﻧﻲ ﺃﺳﺌﻠﮏ ﻓﻌﻞ ﺍﻟﺨﯿﺮﺍﺕ ﻭﺗﺮﮎ ﺍﻟﻤﻨﮑﺮﺍﺕ ﻭﺣﺐ ﺍﻟﻤﺴﺎﮐﯿﻦ۰

‏( ﺭﻭﺍﮦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ : ۲ / ۱۵۹ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۳۲۴۹ )

 

ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে মুহাম্মাদ! যখন তুমি নামায পড়ে ফেলবে, তখন এ দোয়া করবে- হে আল্লাহ! আপনার নিকট ভালো কাজের তৌফিক চাই এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন তথা আল্লাহ ওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি। [তিরমিযী: ৩২৩৩]

 

 

সালাতের পর মুনাজাত সম্পর্কে নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ

 

হাদীস—১

 

٢- ﻋﻦ ﻣﻌﺎﺫ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ ﺭﺽ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻟﮧ ﺃﻭﺻﯿﮏ ﯾﺎ ﻣﻌﺎﺫ ! ﻻ

ﺗﺪﻋﻦ ﺃﻥ ﺗﻘﻮﻝ ﺩﺑﺮ ﮐﻞ ﺻﻼۃ، ﺍﻟﻠﮩﻢ ﺃﻋﻨﻲ ﻋﻠﯽ ﺫﮐﺮﮎ ﻭﺷﮑﺮﮎ ﻭﺣﺴﻦ ﻋﺒﺎﺩ ﺗﮏ۰

‏( ﺭﻭﺍﮦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀﻱ : ۱ / ۱۴۶ ، ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ : ۱ / ۲۱۳ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۱۵۲۲ )

 

মু‘আয বিন জাবাল রাযি. বর্ণনা করেন, নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, হে মু’আয! আমি তোমাকে ওসীয়াত করছি যে,প্রত্যেক নামাযের পর এ দোয়া পড়াকে তুমি কখনো ছাড়বে না৷ -হে আল্লাহ! আমাকে তোমার জিকির, শোকর এবং উত্তম ইবাদত করার জন্য সাহায্য করো।[নাসা’ঈ: ১/১৪৬, সুনানে আবু দাউদ: ১৫২২]

 

হাদীস—২

 

٣- ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺭﺽ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﻗﻞ ﺑﻌﺪ ﺻﻼۃ ﺑﻌﺪ ﻣﺎ ﺗﺮﻓﻊ ﯾﺪﮎ : ﺍﻟﻠﮩﻢ ﺇﻟﮩﻲ ﺇﻟﮧ ﺇﺑﺮﺍﮨﯿﻢ۰

‏( ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺴﻨﻲ ﻓﻲ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﯿﻮﻡ ﻭﺍﻟﻠﯿﻠۃ : ۶۱ ﺿﻌﯿﻒ ۱۳۸ )

 

হযরত আনাস রাযি. বর্ণনা করেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নির্দেশ করেন যে, তুমি প্রত্যেক নামাযের পর হাত উঠিয়ে এ দোয়া করবে হে আল্লাহ, যিনি আমার এবং ইবরাহীমের মাবূদ। [ইবনুছ ছুন্নী: সনদ দুর্বল, তবে গ্রহণযোগ্য]

 

হাদীস—৩

 

٤- ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻄﻠﺐ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ : ﺻﻼۃ ﺍﻟﻠﯿﻞ ﻣﺜﻨﯽ ﻣﺜﻨﯽ،

ﻭﺗﺸﮩﺪ ﻓﻲ ﮐﻞ ﺭﮐﻌﺘﯿﻦ، ﻭﺗﺒﺎﺋﺲ ﻭﺗﻤﺴﮑﻦ، ﻭﺗﻘﻨﻊ ﻭﺗﻘﻮﻝ ﺍﻟﻠﮩﻢ ﺍﻏﻔﺮ ﻟﻲ ﻓﻤﻦ ﻟﻢ ﯾﻔﻌﻞ

ﺫﻟﮏ ﻓﮩﻮ ﺧﺪﺍﺝ۰

‏( ﺭﻭﺍﮦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟۃ : ۹۳، ﻭﺭﻭﺍﮦ ﺃﯾﻀﺎ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ : ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۱۲۹۶ )

 

হযরত মুত্তালিব রাযি. বর্ণনা করেন, নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রাত্রের নামাযে দু-দু রাকাআতের পর বসবে, এবং প্রত্যেক দু-রাকাতের পর তাশাহহুদ পড়বে এবং নামাযের মধ্যে নিজের নিঃস্বতা এবং বিনয়ীভাব প্রকাশ করবে। তারপর নামায শেষে দু হাত উঠাবে এবং দোয়া করবে, হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দাও। যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, তার নামায অসম্পূর্ণ থাকবে। [আবু দাউদ: ১/১৮৩, ইবনে মাজাহ: ১২৯৬]

 

হাদীস—৪

 

٥- ﻋﻦ ﻓﻀﻞ ﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﺼﻼۃ ﻣﺜﻨﯽ ﻣﺜﻨﯽ ﺗﺸﮩﺪ ﻓﻲ ﮐﻞ ﺭﮐﻌﺘﯿﻦ ﻭﺗﺨﺸﻊ ﻭﺗﻀﺮﻉ ﻭﺗﻤﺴﮑﻦ ﻭﺗﻘﻨﻊ ﯾﺪﯾﮏ ﯾﻘﻮﻝ ﺗﺮﻓﻌﮩﻤﺎ ﺇﻟﯽ ﺭﺑﮏ ﻣﺴﺘﻘﺒﻼ ﺑﻄﻮﻧﮩﻤﺎ ﻭﺟﮩﮏ ﻭﺗﻘﻮﻝ : ﯾﺎﺭﺏ ! ﯾﺎ ﺭﺏ ! ﻓﻤﻦ ﻟﻢ ﯾﻔﻌﻞ ﺫﻟﮏ ﻓﮩﻮ ﮐﺬﺍ

‏( ﺭﻭﺍﮦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺪﯼ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۳۷۵ )

 

হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সালাত দুই দুই রাক’আত৷ প্রত্যেক দুই রাক’আতে তাশাহহুদ পাঠ করবে। ভয়-ভক্তি সহকারে কাতরতার সহিত বিনত হয়ে নামায আদায় করবে। আর (নামায শেষে) দু’হাত তুলবে এভাবে যে, উভয় হাত প্রভু পানে উঠিয়ে চেহারা কিবলামুখী করবে। অতঃপর বলবে-হে প্রভু! হে প্রভু! যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, সে অসম্পূর্ণ নামাযী। (তাঁর নামায অঙ্গহীন সাব্যস্থ হবে)। [তিরমিযী: ৩৮৫]

 

হাদীস—৫

 

٦- ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺃﻣﺎﻣۃ ﺍﻟﺒﺎﮨﻠﻲ ﻗﺎﻝ ﻗﯿﻞ ﯾﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ! ﺃﻱ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺃﺳﻤﻊ؟ ﻗﺎﻝ : ﺟﻮﻑ ﺍﻟﻠﯿﻞ

ﺍﻷﺧﺮ ﻭﺩﺑﺮ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ۰ ﺭﻭﺍﮦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ : ۱ / ۰۸۷ ﻭﮐﺬﺍ۰

‏( ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟۃ : ۹۳ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۳۴۹۹ )

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, কোন দোয়া কবূল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী? ইরশাদ করেন, শেষ রাত্রে (তাহাজ্জুদের পর) এবং ফরজ নামায সমূহের পরে। [তিরমিযী: ৩৪৯৯]

 

হাদীস—৬

 

ইমাম বুখারী রহ. স্বীয় কিতাব আত-তারীখুল কাবীরে লিখেছেন-

 

٧- ﻋَﻦْ ﻛﺎﺗﺐ ﺍﻟﻤﻐﻴﺮﺓ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ : ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﻓﻲ ﺩﺑﺮ ﺻﻼﺗﻪ

 

মুগিরা রাযি. থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা. সালাত শেষে দোয়া করতেন। [আত-তারীখুল কাবীর: ১৭৭২]

 

ফরজ সালাতের পর মুনাজাতের দলীলসমূহ

 

ফরজ সালাতের র পর মুনাজাত সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ

 

١- ﻋﻦ ﺍﻟﻀﺤﺎﮎ ﻓﺈﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼۃ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ، ﻭﺇﻟﯽ ﺭﺑﮏ ﻓﺎﺭﻏﺐ، ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺌﻠۃ ﻭﺍﻟﺪﻋﺎﺀ۰ ‏( ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﻨﺜﻮﺭ : ۶ / ۳۶۵

 

যাহ্হাক রাযি. সূরা ইনশিরাহ এর “ওয়া ইলা রাব্বিকা ফারগব” আয়াতের তাফসীরে বলেন, যখন তুমি ফরয নামায থেকে ফারেগ হবে, তখন আল্লাহর দরবারে দোয়াতে মশগুল হবে। [তাফসীরে দূররে মানসুর: ৬/৩৬৫]

 

٢- عن إذﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼۃ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ ﻓﺎﻧﺼﺐ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ۰ ‏( ﺗﻔﺴﯿﺮ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ : ۵۱۴

 

ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত,তিনি উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন,যখন তুমি ফরয নামায হতে ফারেগ হও,তখন দোয়ায় মশগুল হয়ে যাবে। [তাফসীরে ইবনে আব্বাস: ৫১৪]

 

٣- ﻭﺍﻟﺪﻋﺎﺀ، ﻭﺍﺭ ﻏﺐ ﺇﻟﯿﮧ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺌﻠۃ۰

‏( ﺗﻔﺴﯿﺮ ﻣﻈﮩﺮﻱ : ۱ / ۲۹۴ )

 

কাতাদাহ, যাহহাক ও কালবী রাযি. হতে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন- ফরয নামায সম্পাদন করার পর দোয়ায় মগ্ন হবে। [তাফসীরে মাযহারী: ১০/২৯৪]

 

ফরজ সালাতের পর মুনাজাত করা রাসূল সা. এর আদর্শ

 

হাদীস—১

 

٧- ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲِ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﻣَﻘَﺎﻣِﻲ ﺑَﻴْﻦَ ﻛَﺘِﻔَﻲْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻞْ ﺧَﻴْﺮَ ﻋُﻤُﺮِﻱ ﺁﺧِﺮَﻩُ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻞْ ﺧَﻮَﺍﺗِﻴﻢَ ﻋَﻤَﻠِﻲ ﺭِﺿْﻮَﺍﻧَﻚَ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻞْ ﺧَﻴْﺮَ ﺃَﻳَّﺎﻣِﻰ ﻳَﻮْﻡَ ﺃَﻟْﻘَﺎﻙَ »

 

আনাস বিন মালিক রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ছিলাম রাসূল (সা.) এর কাঁধের পাশে। তখন রাসূল (সা.) সালাম ফিরিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ জীবনকে সবচে’ সুন্দর কর। হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ আমলকে তোমার সন্তুষ্টি অনুপাতে কর। হে আল্লাহ! তুমি তোমার সাথে আমার সাক্ষাতের দিনকে সর্বোত্তম দিন কর। [তাবারানী: ৯৪১১]

 

হাদীস—২

 

অন্য বর্ণনায় এসেছে

 

٩- ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺭﺽ ﮐﺎﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺍﻧﺼﺮﻑ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼۃ ﯾﻘﻮﻝ : ﺍﻟﻠﮩﻢ

ﺍﺟﻌﻞ ﺧﯿﺮ ﻋﻤﺮﻱ ﺃﺧﺮﮦ ﻭﺧﯿﺮ ﻋﻤﻠﻲ ﺧﺎﺗﻤﮧ، ﻭﺧﯿﺮ ﺃﯾﺎﻣﻲ ﯾﻮﻡ ﺃﻟﻘﺎﮎ۰

‏( ﺭﻭﺍﮦ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻷﻭﺳﻂ :

۱ / ۱۸۷ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۹۴۱۱ )

 

হযরত আনাস (রাযি.) বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামায থেকে ফারেগ হতেন তখন এ দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! আমার জীবনের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর কর শেষ জীবনকে এবং আমার আমলের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কর শেষ আমলকে এবং আমার দিন সমূহের মধ্যে সবচেয়ে মনোরম কর তোমার সাথে সাক্ষাতের দিনকে। [তাবারানী: ১/১৮৭]

 

হাদীস—৩

 

٨- ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ : ﺇِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺘَﻌَﻮَّﺫُ ﺑِﻬِﻦَّ ﻓِﻲ ﺩُﺑُﺮِ ﻛُﻞِّ ﺻَﻠَﺎﺓٍ ‏« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒُﺨْﻞِ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠُﺒْﻦِ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺃَﻥْ ﺃُﺭَﺩَّ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﺭْﺫَﻝِ ﺍﻟْﻌُﻤُﺮِ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﻓِﺘْﻨَﺔِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ، ﻭَﻋَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟْﻘَﺒْﺮِ »

 

সা’দ রাযি. বলেন, রাসূল (সা.) প্রতি নামাযের পর এই শব্দে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কৃপণতা থেকে পানাহ চাই! এবং অভাব থেকে পানাহ চাই! এবং অশীতিপর বৃদ্ধাবস্থা থেকে পানাহ চাই! এবং দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে পানাহ চাই! [নাসা’ঈ: ৫৪৭৯]

 

হাদীস—৪

 

আবু বকর রাযি. বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক নামাযের পর এ দোয়া করতেন,হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কুফর,অভাব অনটন এবং দোযখের আযাব থেকে মুক্তি চাই। [নাসা’ঈ: ৫৪৬৫]

 

হাদীস—৫

 

١١- ﻋﻦ ﺯﯾﺪ ﺑﻦ ﺃﺭﻗﻢ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﯾﺪﻋﻮ ﻓﻲ ﺩﺑﺮ ﮐﻞ ﺻﻼۃ ﺍﻟﻠﮩﻢ ﺑﻨﺎ ﻭﺭﺏ ﮐﻞ ﺷﻲﺀ۰

‏( ﺭﻭﺍﮦ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ : ۱ / ۲۱۱ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۱۵۰۸ )

 

হযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাযিঃ) বলেন যে, নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রত্যেক নামাযের পর দোয়া করতে শুনতাম- আল্লাহুম্মা বিনা ওয়া রাব্বি কুল্লি শাই। [আবু দাউদ: ১৫০৮]

 

হাদীস—৬

 

١٢- ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺃﻣﺎﻣۃ ﺍﻟﺒﺎﮨﻠﻲ ﻗﺎﻝ ﻗﯿﻞ ﯾﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ! ﺃﻱ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺃﺳﻤﻊ؟ ﻗﺎﻝ : ﺟﻮﻑ ﺍﻟﻠﯿﻞ

ﺍﻷﺧﺮ ﻭﺩﺑﺮ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ۰ ﺭﻭﺍﮦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ : ۱ / ۰۸۷ ﻭﮐﺬﺍ۰

‏( ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟۃ : ۹۳ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۳۴۹۹ )

 

আবু উমামা বাহেলী (রাযি.) বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, কোন দোয়া কবূল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী? ইরশাদ করেন, গভীর রাত (তাহাজ্জুদের পর) এবং ফরজ নামাযসমূহের পরে। [তিরমিযী ১/৮৭, হা: ৩৪৯৯]

 

এবার দেখুন হাত তুলে দোয়া করার দলিলসমূহ

 

হাদীস—১

 

ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﯾﺰﯾﺪ ﻋﻦ ﺃﺑﯿﮧ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﮐﺎﻥ ﺇﺩﺍ ﺩﻋﺎ ﻓﺮﻓﻊ ﯾﺪﯾﮧ ﻣﺴﺢ ﻭﺟﮩﮧ ﺑﯿﺪﯾﮧ۰

‏( ﺭﻭﺍﮦ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ : ۱ / ۲۰۹ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۱۴۹۲ )

 

সায়িব বিন ইয়াযীদ (রাযি.) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দোয়া করতেন তখন উভয় হাত উঠাতেন এবং দোয়া শেষে হস্তদ্বয়কে চেহারায় মুছতেন। [আবু দাউদ: ১৪৯২]

 

হাদীস—২

 

ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻣﻮﺳﯽ ﺍﻷﺷﻌﺮﻱ ﺃﻧﮧ ﻗﺎﻝ : ﺩﻋﺎ ﺍﻟ

ﻨﺒﻲ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺛﻢ ﺭﻓﻊ ﯾﺪﯾﮧ ﻭﺭﺃﯾﺖ ﺑﯿﺎﺽ ﺇﺑﻄﯿﮧ۰

‏( ﺭﻭﺍﮦ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ : ۲ / ۹۳۸ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ )

 

আবু মূসা আশআরী (রাযিঃ) বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়ার জন্য উভয় হাত উত্তোলন করেন। যদ্দরুন আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখতে পাই। [বুখারী: ৬৩৪১]

 

হাদীস—৩

 

ﻋﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﮐﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺭﻓﻊ ﯾﺪﯾﮧ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻟﻢ ﯾﺤﻄﮩﻤﺎ ﺣﺘﯽ ﯾﻤﺴﺢ ﺑﮩﻤﺎ ﻭﺟﮩﮧ۰

‏( ﺭﻭﺍﮦ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ : ۲ / ۱۷۶ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۶۳۴۱ )

 

উমর ফারুক (রাযি.) বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়ার জন্য যখন হাত তুলতেন তখন চেহারায় মুছার পূর্বে হাত নামাতেন না। [বুখারী: ১৪৩৫]

 

হাদীস—৪

 

ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻳَﺤْﻴَﻰ، ﻗَﺎﻝَ : ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻋَﺒْﺪَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦَ ﺍﻟﺰُّﺑَﻴْﺮِ ﻭَﺭَﺃَﻯ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﺭَﺍﻓِﻌًﺎ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺑِﺪَﻋَﻮَﺍﺕٍ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﻔْﺮُﻍَ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻪِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻓَﺮَﻍَ ﻣِﻨْﻬَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺇِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻳَﺮْﻓَﻊْ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻔْﺮُﻍَ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻪِ

 

হযরত মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহইয়া (রহ.) বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাযি.)-কে দেখেছি যে, তিনি এক ব্যক্তিকে সালাম ফিরানোর পূর্বে হাত তুলে মুনাজাত করতে দেখে তার নামায শেষ হওয়ার পর তাকে ডেকে বললেন, ‘রাসূলে আরাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল নামায শেষ করার পরই হস্তদ্বয় উত্তোলন করে মুনাজাত করতেন, আগে নয়। [তাবরানী: ৩২৪]

 

উক্ত হাদীসসমূহ প্রমাণ করে যে, রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম রাযি. ফরয নামাযের পর হাত তুলে দোয়া করতেন।

 

হাদীস—৫

 

ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﮧ ﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺽ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻓﺎﻣﺴﺢ ﺑﯿﺪﯾﮏ ﻭﺟﮩﮏ۰

‏( ﺭﻭﺍﮦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟۃ : ۲۷۵، ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ : ۱ / ۲۰۹ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۱۴۹۲ )

 

হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, দোয়া করার তরীকা হলো যে, তুমি উভয় হাত কাঁধ বরাবর তুলবে৷ [আবু দাউদ: ১/২০৯]

 

হাদীস—৬

 

ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﻤﺴﺌﻠۃ ﺃﻥ ﺗﺮﻓﻊ ﯾﺪﯾﮏ ﺣﺬﻭ ﻣﻨﮑﺒﯿﮏ۰

‏( ﺭﻭﺍﮦ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ : ۱ / ۲۰۹ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۱۴۸۹ ﺻﯿﺤﺢ )

 

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযি.) বলেন, নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে,যখন তুমি দোয়া শেষ করবে তখন উভয় হাতকে চেহারার মধ্যে মুছবে। [ইবনে মাজাহ: ১৪৮৯]

 

হাদীস—৭

 

ﻋﻦ ﺳﻠﻤﺎﻥ ﺭﺽ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇﻥ ﺭﺑﮑﻢ ﺣﻲ ﮐﺮﯾﻢ ﯾﺴﺘﺤﻲ ﺃﻥ ﯾﺮﻓﻊ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﯾﺪﯾﮧ ﻓﯿﺮﺩﮨﻤﺎ ﺻﻔﺮﺍ۰

‏( ﺭﻭﺍﮦ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﺅﺩ ﻋﻦ ﺳﻠﻤﺎﻥ ۱ / ۷۰۹ ﺑﺮﻗﻢ

۱۴۸۸ )

 

হযরত আলী ইবনে আবী তালিব থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভূ অত্যন্ত লাজুক এবং দয়ালু। কোনো বান্দা যখন তার হাত দুটি উঠিয়ে মুনাজাত করে, তখন তার হাত খালি অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে তিনি লজ্জাবোধ করেন। [আবু দাউদ: ১৪৮৮]

 

হাদীস—৮

 

ﻣﺎ ﻣﻦ ﻋﺒﺪ ﻣﺆﻣﻦ ﺑﺴﻂ ﮐﻔﯿﮧ ﻓﻲ ﺩﺑﺮ ﮐﻞ ﺻﻼۃ ﺛﻢ ﺑﻘﻮﻝ : ﺍﻟﻠﮩﻢ ﺇﻟﮩﻲ ۰۰۰

‏( ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺴﻨﯽ ﻓﯽ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﯿﻮﻡ ۱۳۸ )

 

হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত,নবী কারীম সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,যে-বান্দা প্রত্যেক নামাযের পর দু’হাত তুলে এ দোয়া পড়বে-“আল্লাহুম্মা ইলাহী ……..” আল্লাহু তা’আলা নিজের উপর নির্ধারিত করে নিবেন যে, তার হস্তদ্বয়কে বঞ্চিত ফেরত দিবেন না। [ইবনুস সুন্নী: ১৩৮]

 

 

এবার দেখুন সম্মিলিত মুনাজাতের দলীলসমূহ

 

শরীয়তে সম্মিলিত দোয়ার এমন কিছু ক্ষেত্র বিদ্যমান রয়েছে যা একেবারেই সুস্পষ্ট এবং যে বিষয়ে দ্বিমতের কোনোই অবকাশ নেই।

 

দলীল—১

 

জামাতের নামাযের জাহেরী (স্বশব্দে) কিরাআতে ইমাম যখন সূরা ফাতিহা সমাপ্ত করেন তো সবাই ‘আমীন’ বলে। নামাযে সূরা ফাতিহা মূলত কিরাআত হিসেবে পড়া হলেও তা একই সঙ্গে দোয়াও বটে। এজন্যই তা সমাপ্ত হওয়ার পর আমীন বলা সুন্নত। একই কারণে সূরা ফাতিহার অপর নাম ‘দোয়াউল মাসআলাহ। [উলূমুল কুরআন]

 

দলীল—২

 

জানাযার নামায একদিকে যেমন নামায অন্যদিকে তা দোয়াও বটে। জানাযার নামাযের মূলকথা হচ্ছে দোয়া। এই নামাযও জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয় এবং তৃতীয় তাকবীরের পর ইমাম-মুকতাদী সবাই একসঙ্গে মাইয়্যেতের জন্য দুআ করে থাকে৷

অনাবৃষ্টি দেখা দিলে এবং প্রয়োজন সত্ত্বেও যথারীতি বৃষ্টি না হলে শরীয়তে ‘ইস্তিসকা’র (অর্থাৎ আল্লাহর কাছে রহমতের বৃষ্টি কামনা করার) নির্দেশ এসেছে। ‘ইস্তিসকা’র বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে৷ একটি পদ্ধতি এই যে, সবাই সম্মিলিতভাবে দুআ করবে। যেমন সহীহ বুখারীতে আনাস ইবনে মালিক রাযি. এর বর্ণনা এসেছে যে, হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য উভয় হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন এবং তাঁর সঙ্গে উপস্থিত সকলে হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন। [সহীহ বুখারী: ১০২৯]

 

দলীল—৩

 

জুমু’আহ ও দুই ঈদের খুৎবায় খতীব দোয়া করেন এবং শ্রোতাগণ মনে মনে আমীন বলেন। সম্মিলিত দোয়ার এই পদ্ধতিও সব জায়গায় প্রচলিত রয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত ‘ইস্তিগফার’এর মাধ্যমে খুৎবা সমাপ্ত করতেন। [যাদুল মাআদ: ১/১৭৯]

 

দলীল—৪

 

কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

 

ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺪْ ﺍُﺟِﯿْﺒَﺖْ ﺩَّﻋْﻮَﺗُﻜُﻤَﺎ

 

তোমাদের দুজনের দোয়া কবুল করা হয়েছে। এ আয়াতে তোমাদের দুই জনের দোয়া বলতে হযরত মুসা আ. ও হারূন আ. এর দোয়া বোঝানো হয়েছে। একাধিক সাহাবী ও বেশ কয়েকজন তাবেয়ীর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মুসা আঃ দুআ করেছেন এবং হারূন আ. আমীন আমীন বলেছেন। একেই আল্লাহ তায়ালা দু-জনের দোয়া বলেছেন। যা আল্লাহ তায়ালা কবুল করেছেন এবং খোশখবরী শুনিয়েছেন যে, তোমাদের দু-জনের দোয়া কবুল করা হয়েছে। [তাফসীরে ইবনে কাছীর: ২/৪৭০, তাফসীরে দুররে মানছূর: ৩/৩১৫]

 

দলীল—৫

 

ﻋَﻦْ ﺣَﺒِﻴﺐِ ﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻠَﻤَﺔَ ﺍﻟْﻔِﻬْﺮِﻱِّ – ﻭَﻛَﺍﻥ ﻣُﺴْﺘَﺠَﺎﺑًﺎ :- ﺃَﻧَّﻪُ ﺃُﻣِّﺮَ ﻋَﻠَﻰ ﺟَﻴْﺶٍ ﻓَﺪَﺭِﺏَ ﺍﻟﺪُّﺭُﻭﺏِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻟَﻘِﻲَ ﺍﻟْﻌَﺪُﻭَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ – ﻳَﻘُﻮﻝُ : ” ‏« ﻟَﺎ ﻳَﺠْﺘَﻤِﻊُ ﻣَﻠَﺄٌ ﻓَﻴَﺪْﻋُﻮ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻭَﻳُﺆَﻣِّﻦُ ﺳَﺎﺋِﺮُﻫُﻢْ، ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﺟَﺎﺑَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ‏» “.

ﺛُﻢَّ ﺇِﻧَّﻪُ ﺣَﻤِﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪَ، ﻭَﺃَﺛْﻨَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﻗَﺎﻝَ : ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺣْﻘِﻦْ ﺩِﻣَﺎﺀَﻧَﺎ،

ﻭَﺍﺟْﻌَﻞْ ﺃُﺟُﻮﺭَﻧَﺎ ﺃُﺟُﻮﺭَ ﺍﻟﺸُّﻬَﺪَﺍﺀِ ،

ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟﻄَّﺒَﺮَﺍﻧِﻲُّ ﻭَﻗَﺎﻝَ : ﺍﻟْﻬَﻨْﺒَﺎﻁُ ﺑِﺎﻟﺮُّﻭﻣِﻴَّﺔِ : ﺻَﺎﺣِﺐُ ﺍﻟْﺠَﻴْﺶِ . ﻭَﺭِﺟَﺎﻟُﻪُ ﺭِﺟَﺎﻝُ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢِ ﻏَﻴْﺮَ ﺍﺑْﻦِ ﻟَﻬِﻴﻌَﺔَ، ﻭَﻫُﻮَ ﺣَﺴَﻦُ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ .

 

হযরত হাবীব বিন মাসলামা আল ফিহরী রাযি.- যিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়াত ছিলেন। তাকে একবার একটি বাহিনী প্রধান নিযুক্ত করা হয়। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের পর তিনি যখন শত্রুর সম্মুখিন হলেন। তখন লোকদের বললেন,আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন “যখনি কোন দল একত্রিত হয়, তারপর তাদের কথক দোয়া করে, আর অপরদল আমীন বলে তখন আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করে নেন। [মাযমাউজ যাওয়ায়েদ: ১৭৩৪৭, মুস্তাতাদরাক আলাস সহীহাইন: ৫৪৭৮, আল-মুজা

মুল কাবীর: ৩৫৩৬]

 

দলীল—৬

 

ﻭَﻗَﺪْ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻌَﻠَﺎﺀُ ﻣِﻦْ ﺳَﺎﺩَﺍﺕِ ﺍﻟﺼَّﺤﺎﺑﺔ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﻌﺒَّﺎﺩ ﻣُﺠَﺎﺑِﻲ ﺍﻟﺪَّﻋﻮﺓ، ﺍﺗَّﻔﻖ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻐَﺰْﻭَﺓِ ﺃﻧَّﻪ ﻧَﺰَﻝَ ﻣَﻨْﺰِﻟًﺎ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻘِﺮَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺣَﺘَّﻰ ﻧَﻔَﺮَﺕِ ﺍﻟْﺈِﺑِﻞُ ﺑِﻤَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺯَﺍﺩِ ﺍﻟْﺠَﻴْﺶِ ﻭَﺧِﻴَﺎﻣِﻬِﻢْ ﻭﺷﺮﺍﺑﻬﻢ، ﻭﺑﻘﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﻟﻴﺲ ﻣﻌﻬﻢ ﺷﺊ ﺳِﻮَﻯ ﺛِﻴَﺎﺑِﻬِﻢْ – ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻟَﻴْﻠًﺎ – ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻘْﺪِﺭُﻭﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌِﻴﺮٍ ﻭَﺍﺣِﺪٍ، ﻓَﺮَﻛِﺐَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻬﻢِّ ﻭﺍﻟﻐﻢِّ ﻣﺎﻻ ﻳُﺤَﺪُّ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻮَﺻَﻒُ، ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻳُﻮﺻِﻲ ﺇِﻟَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ، ﻓَﻨَﺎﺩَﻯ ﻣُﻨَﺎﺩِﻱ ﺍﻟْﻌَﻠَﺎﺀِ ﻓَﺎﺟْﺘَﻤَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﺇِﻟَﻴْﻪِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃﻳُّﻬﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﺃَﻟَﺴْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦ؟َ ﺃَﻟَﺴْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ؟

ﺃَﻟَﺴْﺘُﻢْ ﺃَﻧْﺼَﺎﺭَ ﺍﻟﻠَّﻪِ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺑَﻠَﻰ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﺄَﺑْﺸِﺮُﻭﺍ ﻓَﻮَﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﺎ ﻳَﺨْﺬِﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﻣِﺜْﻞِ ﺣَﺎﻟِﻜُﻢْ، ﻭَﻧُﻮﺩِﻱَ ﺑِﺼَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟﺼُّﺒﺢ ﺣِﻴﻦَ ﻃَﻠَﻊَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ ﻓﺼﻠَّﻰ ﺑﺎﻟﻨَّﺎﺱ، ﻓﻠﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻰ ﺍﻟﺼَّﻼﺓ ﺟَﺜَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘَﻴْﻪِ ﻭَﺟَﺜَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ، ﻭَﻧَﺼِﺐَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻋﺎﺀ ﻭَﺭَﻓَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻭَﻓَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱ ﻣِﺜْﻠَﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻃَﻠَﻌَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ، ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻨْﻈُﺮُﻭﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﺮَﺍﺏِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻳَﻠْﻤَﻊُ ﻣَﺮَّﺓً ﺑَﻌْﺪَ ﺃُﺧْﺮَﻯ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﺠْﺘَﻬِﺪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀِ

 

আল-বিদায়া ওয়াননিহায়া গ্রন্থে আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. সনদসহ বর্ণনা করেন, আলা বিন হাযরামী রাযি. মুস্তাজাবুদ দাওয়া সাহাবী ছিলেন। একদা বাহরাইনের জিহাদ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলে খাবার দাবার ও তাবুর রসদসহ উটগুলো পালিয়ে যায়। তখন গভীর রাত। সবাই পেরেশান। ফজরের সময় হয়ে গেলে আযান হল। সবাই নামায আদায় করলেন। নামায শেষে আলা বিন হাযরামী রাযি.-সহ সবাই হাত তুলে সূর্য উদিত হওয়ার সূর্যের কিরণ গায়ে লাগা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দোয়া করতে থাকেন। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া: ৬/৩২৮]

 

দলীল—৭

 

ﻋَﻦْ ﺳَﻠْﻤَﺎﻥَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ‏« ﻣَﺎ ﺭَﻓَﻊَ ﻗَﻮْﻡٌ ﺃَﻛُﻔَّﻬُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻧَﻪُ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﺇِﻟَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﻘًّﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﺃَﻥْ ﻳَﻀَﻊَ ﻓِﻲ ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺳَﺄَﻟُﻮﺍ

 

হযরত সালমান রাযিঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যখন কোন জামাআত তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার আশায় আল্লাহর দরবারে হাত উঠায়,তখন আল্লাহর উপর ওয়াজিব হয়ে যায় প্রার্থিত বিষয় উক্ত জামাতকে প্রদান করা। [তাবরানী: ৬১৪২, আত-তারগীব: ১৪৪, মাযমাউয যাওয়ায়েদ: ১৭৩৪১, কানযুল উম্মাল: ৩১৪৫]

 

দলীল—৮

 

হযরত ছাওবান (রাযি.) হতে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোনো ব্যক্তি লোকদের ইমাম হয়ে এমন হবে না যে, সে তাদেরকে বাদ দিয়ে দোয়াতে কেবল নিজেকেই নির্দিষ্ট করে। যদি এরূপ করে,তবে সে তাদের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করলো৷ [তিরমিযী শরীফ: ৩৫৭]

 

দলীল—৯

 

ﺃَﻧَﺲَ ﺑْﻦَ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﻰ ﺭَﺟُﻞٌ ﺃَﻋْﺮَﺍﺑِﻲٌّ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﺒَﺪْﻭِ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻫَﻠَﻜَﺖِ ﺍﻟﻤَﺎﺷِﻴَﺔ،ُ ﻫَﻠَﻚَ ﺍﻟﻌِﻴَﺎﻝُ ﻫَﻠَﻚَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ‏« ﻓَﺮَﻓَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ، ﻳَﺪْﻋُﻮ، ﻭَﺭَﻓَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺃَﻳْﺪِﻳَﻬُﻢْ ﻣَﻌَﻪُ ﻳَﺪْﻋُﻮﻥَ »

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন গ্রাম্য সাহাবী রাসূল সাঃ এর কাছে আসলেন জুমআর দিন। এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জিনিস পত্র, পরিবার, মানুষ সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একথা শুনে রাসূল সাঃ তার উভয় হাত উত্তলোন করলেন দুআর উদ্দেশ্যে। উপস্থিত সবাই রাসূল সাঃ এর সাথে দুআর জন্য হাত উত্তোলন করলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০২৯]

 

এ হাদীসে পরিস্কারভাবে রাসূল সাঃ থেকে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত প্রমানিত। লক্ষ্য করুন। রাসূল সা. দুআ করেছেন, আর উপস্থিত সাহাবীগণ আমীন আমীন বলে সম্মিলিত মুনাজাতে অংশ নিয়েছেন।

 

সারকথা: উপরিউক্ত বর্ণনাসমূহ দ্বারা ফরজ নামাজের পর ও অন্য যে কোনো সময় সম্মিলিত মুনাজাত বৈধ হওয়ারই প্রমাণ বহন করে।

 

প্রথমত: আমরা সালাতের পর দোয়া প্রমানিত করেছি। দ্বিতীয়ত: আমরা বিশেষ করে ফরজ সালাতের পর দোয়া করা প্রমাণিত করেছি।

 

যেহেতু দোয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব হচ্ছে, একজন দু’আ করবে, আর বাকি সকল লোক আমীন আমীন বলবে। হাদীসে এসেছে, এমন দোয়া অধিক কবুল হয়।

 

সেহেতু প্রমাণিত যে, ফরজ সালাতের উপর সম্মিলিত মোনাজাত করা যাবে। ইমাম দু’আ করবে আর মুসল্লিগণ বসে বসে আমীন আমীন বলবে। তবে না করলেও সমস্যা নেই।

 

হয়তো কেউ বলতে পারেন, কোনো একটি হাদিসেই তো রাসূল সা. ফরজ নামাজের পর সাহাবীদেরকে নিয়ে সম্মিলিত মোনাজাত করেছেন এমন সুস্পষ্ট কথা পাওয়া যায় না। তাহলে এতগুলো হাদিস দিয়ে দলিল দেওয়ার দরকার কী?

 

তাহলে তার প্রতি আমার পাল্টা প্রশ্ন থাকলো যে, কোনো একটি হাদিসেই তো থেকে চার রাকাত নামাজের সকল বিধি-বিধান সম্পূর্ণরূপ কেউ দেখাতে পারবে না! বরং এক এক হাদিস থেকে এক এক বিধিবিধান প্রমাণিত হয়। তার মানে কি চার রাকাত সালাতের বিধান বাতিল!

 

মূলত আমরা বলতে চাচ্ছি, যেভাবে সালাতের পূর্ণাঙ্গ বিধি-বিধান আমরা একটি হাদিস থেকে পাই না, বরং ভিন্ন ভিন্ন হাদিস থেকে পাই। সম্মিলিত মুনাজাতের বিষয়টিও একই‌। পরিপূর্ণরূপ এক হাদীসে পাওয়া না গেলেও একাধিক হাদিস দ্বারা তা প্রমাণিত।

 

সংকলন: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

 

 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply