অপেক্ষা। পর্ব-০৭। সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি

0

 

আলো আর জহির রায়হান মুখোমুখি বসে আছে। আলো মাথা নত করে নিরবে চোখের আশ্রু বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছেন। তার একপাশে আমেনা বেগমও দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছেন। যা দেখে জহির রায়হান মুখে বিরক্তিকর শব্দ উচ্চারণ করলেন।

“কি সমস্যা তোমাদের? এভাবে কাদছো কেন মা মেয়ে মিলে?”

জহির রায়হানের কথার পিঠে আমেনা বেগম বলে উঠলেন,”কান্দমু না তাইলে? আমার মাইয়াডার নামে কলঙ্ক লাগাইয়া বেড়াইতাছে ওই কুতুব ভাই। মাইয়াডারে এহন ভালা ঘরে বিয়া দিবার পারুম?”

“আমার মেয়ের বিয়ে না হলেও সমস্যা নেই। আমি আমার আলোকে সাবলম্বী বানাবো। আমার মেয়ের যোগ্য পাত্র এই গ্রামে খুঁজে পাওয়া যাবে না তখন। শহর থেকে আমার মেয়ের জন্য অনেক ভালো ভালো সম্বন্ধ আসবে দেখে নিও তুমি।”

তারপর জহির রায়হান আলোর দিকে ফিরে কাঠ কাঠ গলায় শুধালেন,”আলো, কাঁদছো কেন? তুমি কি কিছু করেছো?”

আলো কান্না চেপে রাখার জন্য মুখে কিছু বলতে পারলো না। মাথা দু দিকে নাড়িয়ে না সূচক ইশারা করলো। তা দেখে জহির রায়হান দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। কারন তিনি ভালো করেই জানেন উনার মেয়েটা যে বড্ড বোকা। সাথে কিছুটা বাচ্চামো রয়েছে। তাই তিনি আগের বারের মতো করে আলোকে বুঝানোর প্রয়াস করলেন।

“দেখো আলো, তোমাকে আমি সেদিনও কিছু বুঝিয়েছিলাম। জানি না বুঝতে পেরেছো কিনা। তবে যতো তারাতারি বুঝার চেষ্টা করবে ততো তোমার জন্য ভালো। আমি সেসব আর বলবো না। মনে করে একটু ভেবে দেখো ঘুমানোর সময়। তবে হ্যাঁ, আর একটা কথা আমি আবারো বলতে চাই। যাই হয়ে যাক না কেন নিজের আত্মসম্মান কখনো হারাতে দিও না। এটা ছাড়া বেঁচে থাকা অনেক কষ্টের। মৃত সম কষ্ট দিবে এটা হারালে। আমি কুতুব ভাইজানকে না, তোমাকে বিশ্বাস করি। আমি জানি তুমি কখনো এরকম কিছু করতে পারো না। সে বিশ্বাস আমার তোমার প্রতি আছে। তবে তুমি বড় হয়েছো, তোমাকে সব বুঝতে হবে। তোমার সাথে এখন একটা ছেলের মিলা-মিশা কেউ ভালো নজরে দেখবে না। ভালো হবে তুমি তাফীফের সাথে মিলা-মিশা কমিয়ে দাও। আর কে কি বললো তাতে আপাতত কান দিয়ো না। এছাড়া কুতুব ভাইজানের স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে সবাই কম বেশি পরিচিত। তারপরও কিছু মানুষ এটা নিয়ে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলবে। আশা করি সঠিক প্রতিবাদ তুমি করবে। যেখানে তুমি কোনো দোষ করো নি সেখানে সবার সামনে নত হওয়ার কোনো মানেই হয় না।”

আলো কোনোরকমে নিজের কান্নাকে সংবরণ করে বললো,”জ,জ্বী।”

“এখন কান্না বন্ধ করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।”

আলো জহির রায়হানের বলা কথাগুলো শুয়ে শুয়ে ভাবছিলো। সেই মুহূর্তে জানালার বাহির থেকে পাতার মরমর শব্দ কানে ভেসে আসে। আলো বুঝে যায় নিশ্চয় তাফীফ এসেছে। এখন এই সময় যদি কেউ তাফীফকে দেখে ফেলে তাহলে কেলেংকারী হয়ে যাবে। তাই তাফীফ জানালায় টোকা দেওয়ার আগেই তারাতাড়ি উঠে আলো জানালাটা খুলে দিলো।

সবে মাত্র জানালায় ঠক ঠক শব্দ করতে নিয়েছিলো তাফীফ। সেই মুহুর্তে জানালা খুলতে দেখে চোখ যুগল ছোট ছোট করে দাঁত দেখিয়ে চমৎকার এক হাসি উপহার দেয় আলোকে। কিন্তু আলো আজ সেই হাসি দেখলো না। নিজের ঘরের দরজার দিকে একবার তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,”এতো রাতে এইহানে আয়ছোছ কেন?”

তাফীফ আলোর ফিসফিসিয়ে কথা বলতে দেখে নিজেও আলোকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে বললো,”তোরে দেখতে।”

“ফালতু কথা বাদ দে। আর কোনোদিনও রাতে এইহানে আসিস না তাফীফ। কেউ দেখলে অনেক বড় ঝামেলা হইয়া যাইবো।”

তাফীফ বেপরোয়া ভাব নিয়ে বললো,”মাইনষের কথা কি আমি ভাবি?”

“তুই না ভাবলেও আমি ভাবি। তুই আর এমনে আমার সাথে রাতে দেখা করতে আসবি না।”

“এমন করছ কেন আলো? রাতে তোরে না দেখলে আমার দুই চোক্ষে ঘুম নামে না তুই জানস না?”

“কেন আমারে দেখার লগে তোর ঘুমের কি সম্পর্ক?”

“ওইটা যদি তুই বুঝতি তাইলে আইজকা এইহানে না থাইকা আমি আমার জোনাকিরে ঘুম পাড়াইয়া দিতাম।”

জোনাকি নামটা শুনতেই আলো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু সেটা তাফীফকে বুঝতে দিতে চাইলো না। তাই ঠোঁট কামড়ে নিজেকে শান্ত করে জিজ্ঞেস করলো,”তো এই জোনাকি’টা কে শুনি।”

“ইশ আমি কমু না, আমার শরম করে।”

“তাইলে কইছ না। আর কোনোদিন আমার জানালায় আসবি না তুই।” বলে আলো জানালা বন্ধ করতে নিলেই তাফীফ খপ করে জানালা ধরে ফেলে।

“আরে কইতাছি তো। মাইয়া আমারে একটু বুঝেও না। ইশ কেমনে যে কই।”

“বলতে না পারলে যা তো।”

“আরে বলমু তো।”

“তাইলে বল।”

“আসলে হইছে কি আলো। জোনাকি হইলো গিয়া।”

“পুরাটা বলবি নাকি থাপ্পড় খাবি?”

“না মানে আসলে হইছে কি।”

তাফীফ লজ্জা পাওয়ার ভান করে দুহাতে মুখ ঢেকে বললো,”জোনাকি আমার আর আমার একমাত্র বউ এর মাইয়া লাগে।”

তাফীফের অভিনয় দেখে আলো কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে বসে রইলো। তারপর যখন কথাটি মস্তিষ্কে পুরোপুরি ঢুকলো তখন ফট করে হেসে দিলো। আলোর হাসির দিকে তাকিয়ে তাফীফ তার বুকের বা পাশে নিজের ডান হাত রাখলো। আর আনমনে বলে উঠলো,”আমি তোর সব হাসির কারন হইতে চাই আলো।”

তাফীফের কথা শুনে আলোর হাসি থেমে গেলো। হাসির বদলে লজ্জার দেখা মিললো। যা দেখে তাফীফ আনমনে হেসে উঠলো। তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললো,”চাচা তোরে কিছু কইছে?”

“নাহ, তোরে কেউ কিছু কইছে?”

তাফীফ নিজের শার্টের কলার ঠিক করতে করতে শুধালো,”আমারে কিছু কওনের কারো সাহস আছে নাকি?”

“আহা ঢং দেখলে আর বাঁচি না। এবার যা তো। আর আসবি না রাতে।”

“তোরে না দেখলে আমার সত্যি ঘুম হয় না রে। তুই শুধু এই সময় একটু জানালা খুইলা সামনে বইসা থাকিস। আমি তোরে এক নজর দেইখা যামু গা। তাইলেই হইবো।”

আজও এই দুইজনকে দূর থেকে একজন দেখলো। দেখে বিরস হেসে উঠলো। তার মুখে হাসি কিন্তু নেই কোনো আনন্দের ছাপ। তারপর একসময় সে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।

চলবে…..


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Sumaiya Akter Bristy

Author: Sumaiya Akter Bristy

❝শুভ্রচিন্তার উদ্ভব ঘটে যার কথা ভেবে সে যদি মোহ হয় দোষ বা কি তাতে?❞ ~Sumaiya Akter Bristy

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

2 Replies to “অপেক্ষা। পর্ব-০৭। সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি”

Leave a Reply