শশ্মানের সেই রাত। পর্ব-০১। সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি

1

 

মাহিন : বন্ধু রমেশ!

রমেশ : হ্যাঁ বন্ধু।

মাহিন : আমাদের মনে হয় আজ রাতে বের হওয়াটা ঠিক হয় নি।

রমেশ : হঠাৎ এই কথা যে?

মাহিন : আকাশের অবস্থা দেখেছিস? এছাড়াও চারদিকে কেমন ঝড় হাওয়া বইছে। যেকোনো সময় প্রবল বেগে বৃষ্টি নেমে যাবে।

রমেশ : এতো আরো ভালো কথা। আজ প্রকৃতিও আমাদের সাথে মেতে উঠবে। এই বৃষ্টিতে ভিজে আমরা না হয় আজ রাতে বৃষ্টিময় ভ্রমণ করবো!

আলী : আরে বন্ধু রমেশ! এই বৃষ্টিময় রাতে ভ্রমণ করে অনর্থক জ্বর বাধিয়ে কি কোনো লাভ আছে? এতে করে আমাদেরই লস। পরের রাত গুলো আর জ্বরের রেশ টেনে বেরই হতে পারবো না।

রমেশ : তা ঠিক বৈকি! চলো তবে আর কিছুটা সামনে গিয়েই ফিরে আসবো।

মাহিন : কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এখনি ফিরে যাওয়া উচিত। যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হবে।

রমেশ : ওহে বালক! এই ঝড় হাওয়াটা যদি একটুখানি উপভোগই না করতে পারি তাহলে আমার জীবন নিরর্থক।

আলী : ঠিক আছে। আমরা আর একটুখানি সামনে এগোবো। তারপর ফিরে আসবো।

রমেশ : যো হুকুম জাহাপনা।

কিন্তু হায়! ভাগ্য তাদের সহায় হলো না। আজ মনে হয় প্রকৃতি পণ করে নিয়েছিলো তাদের আর সামনে এগোতে দিবে না, আর না দিবে ফিরে যেতে। তাই তো কিছুদূর যেতে না যেতেই প্রবল বেগে বৃষ্টি শুরু হলো। সাথে রয়েছে ঝড় হাওয়া। যার ফলস্বরূপ তাদের তিনজনের দেহেই ফ্যাকাসে ভাবটা চলে এসেছে। শীতে একেকজন থরথর করে কাপতে শুরু করেছে। আশে-পাশে কিছুই নেই যার নিচে একটু আশ্রয় নিবে এই তিন যুবক। কিন্তু হয়তো ভাগ্য তাদের সহায় ছিলো। কারন আর কয়েক কদম সামনে এগোতেই দেখা মিললো ছাউনির। যার চতুর্দিকে ঘিরে রয়েছে খড়কুটোর বেড়া। যার ভিতর থেকে হালকা হালকা আগুনের আলো দেখা যাচ্ছে। হয়তো ভিতরে কেউ আছে। বুকে বল ফিরে পেলো এই তিন যুবক। বেঁচে থাকার একমুঠো আশা ফিরে পেলো। এই ঠান্ডা হাওয়া ও বৃষ্টির পানি যেনো তাদের জানটা নিয়েই নিচ্ছিলো। কিন্তু আদোও কি ভাগ্য তাদের সহায় ছিলো?

তারা আর কিছু চিন্তা না করেই ছুটলো সেই ছাউনির দিকে, একটুখানি বাঁচার তাগিদে। আশেপাশে তাকানোর খেয়াল বা ইচ্ছে কোনো টাই তাদের কারো মাঝে নেই। আপাতত নিজেদের নিরাপদ রাখাটাই বড় বিষয়। নয়তো এই ঠান্ডায় অবস্থা বেগতিক হয়ে যাবে। কিন্তু একি! ভিতরে তো কেউ নেই! তাহলে আগুন জ্বালালো কে? কিন্তু পরপরই নিজেদের মন থেকে তিন যুবকই প্রশ্নটা ঠেলে বের করে দিলো। জ্বালিয়েছে হয়তো কেউ। তারপর হয়তো চলে গেছে। এই রাতে কে থাকবে এখানে? কারন ছাউনির ভিতরে কিছুই নেই। তবে কিছু কিছু জায়গায় সামান্য খড়কুটো আর ছাই পরে আছে। তারা আর বিশেষ নজর দিলো না সেদিকে। আপাতত নিজেদের উষ্ণ করতে হবে। তাই তিন যুবক নিজেদের পরিধেয় শার্ট খুলে এক সাইডে রেখে দিলো। আর তিনজন আগুনকে ঘিরে বসে পরলো। কিছুক্ষণ পরই আলীর চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো। আর সে তলিয়ে গেলো ঘুমের অতুল সমুদ্রে। জাগ্রত রয়ে গেলো শুধু মাহিন আর রমেশ। তবে মাহিনের চোখের ঘুমের তন্দ্রা চলে এসেছে। না এসে উপায় ছিলো কি? এইরকম এক ঠান্ডা পরিবেশে কার না ঘুম পায়? মাহিন বসেই ঝিমুতে লাগলো। কিন্তু ঘুম নেই রমেশের চোখে। কেন নেই জানা নেই। তবে ঘুম নেই। কিন্তু রমেশ আছে অন্য এক জগতে। হয়তো সেই জগত হয়ে দাঁড়াবে রমেশের কাল। রমেশের এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে সে কারো সম্মোহনে চলে যাচ্ছে। রমেশ বুঝতে পারছে কিন্তু কোনো এ্যকশন নিতে পারছে না। কেনো পারছে না সেটা রমেশ নিজেও জানে না। আশেপাশের কোনো শব্দই রমেশের কানে আসছে না। সেতো অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে আগুনের দিকে। ইচ্ছে করছে ছুয়ে দিতে এই আগুনটা। জ্বালিয়ে দিতে নিজেকে। কিন্তু এ যে অস্বাভাবিক কিছু। নিজেকে জ্বালিয়ে দিলে বাঁচবে কি রমেশ? মরে যাবে না? কিন্তু এই আগুন এতো টানছে কেনো রমেশকে? এই আগুন কেমন যেনো রমেশকে অন্য এক ঘোরে ফেলে দিচ্ছে। কিন্তু এই ঘোরের মাঝেই হুট করে মনে হলো আলী মাত্র পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে গেলো। এই বৃষ্টির মধ্যে আলী কোথায় যাচ্ছে? না আলীকে থামাতে হবে। রমেশের কেন জানি মনে হলো আলীকে একা যেতে দেওয়া যাবে না। তাকেও যেতে হবে আলীর সাথে। রমেশ এসব ভাবনার মাঝে এতোটাই বিভোর ছিলো যে দেখলো না আলী তার বিপরীত পাশেই সামান্য খড়কুটো মেলে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। সেও ছুটলো তার ভ্রমের পিছু পিছু। কিন্তু সেটা কি আদোও রমেশের ভ্রম ছিলো? নাকি অন্য কিছু ছিলো?

রমেশ বেড়িয়ে গেলো ছাউনি থেকে। বের হওয়ার সময় ছাউনির দরজার সাথে সামান্য ধাক্কা খেলো। কিন্তু এতেও তার কোনো হেলদোল নেই। সে তো আলীর পিছু পিছু ছুটছে। কিন্তু কেনো জানি আলীকে ডাকতে পারছে না। তার গলা দিয়ে স্বর বেরই হচ্ছে না। ডাকবে কিভাবে?

আলীর পিছু যেতে যেতে অনেকটা পথ চলে এলো রমেশ। এই আলী যাচ্ছেটা কোথায়? কিন্তু হুট করেই কোত্থেকে যেনো একটা থাপ্পড় এসে পরলো রমেশের গালে। আর তখনই রমেশ বের হয়ে এলো কোনো এক অজানা সম্মোহন থেকে। তার মুখ দিয়ে মৃদু স্বরে আর্তনাদ বেড়িয়ে এলো। থাপ্পড়ের উৎস খুজতেই দেখতে পেলো মাহিনকে। কিন্তু মাহিন কেনো তাকে থাপ্পড় মারলো? রমেশ অবাক করা চাহনিতে চেয়ে আছে মাহিনের পানে। আর বুঝার চেষ্টা করছে হলোটা কি? কিন্তু তার আগেই মাহিন প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,”হয়েছেটা কি তোর? এতো ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না? আর এতো বৃষ্টির মধ্যে এই নদীর পানিতেই কেনো নামছিস?” এতোক্ষণে রমেশ নিজ অবস্থান সম্পর্কে টের পেলো। সে এখন কমড় অব্দি পানিতে দাঁড়িয়ে আছে। একি! সে এখানে এলো কিভাবে? একটু মাথায় জোর দিতেই মনে পড়লো, সেতো আলীর পিছু পিছু এসেছে। তাহলে আলী কোথায়? রমেশকে নিরব থাকতে দেখে মাহিন পুনরায় প্রশ্ন করলো,”কিরে চুপ করে আছিস কেনো? উত্তর দে!” রমেশ তখন চিন্তিত স্বরে বললো,”আলী! আমি তো আলীর পিছু পিছু এখানে এসেছি। কিন্তু হুট করে ও কোথায় চলে গেলো? এই মাহিন! আলী আবার এই পানিতে হারিয়ে যায়নি তো?” রমেশ এখন নিজের বলা শেষক্ত কথায় নিজেই ভয় পেয়ে গেলো। সত্যিই তো! কোথায় গেলো আলী? খারাপ কিছু হয়ে যায়নি তো? রমেশ আরো কিছু বলবে তার আগেই মাহিন বলে উঠলো,”পাগল হয়ে গেছিস? কি যা-তা বলছিস? আলী তো ছাউনির ভিতরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এই তোর আবার জ্বর বাধলো না তো? জ্বরের ঘোরেই কি এসব উলটাপালটা বলছিস?” বলতে বলতেই মাহিন রমেশের কপালে হাত দিলো। না জ্বর তো নেই। তাহলে? হয়তো ঘুমের ঘোরে চলে এসেছে। হ্যাঁ, তাই হবে হয়তো। তাই মাহিন তাড়া দিয়ে বললো,”চল, চল এখান থেকে। এভাবে এই বৃষ্টির মধ্যে ঠান্ডা পানিতে দাঁড়িয়ে থেকে জ্বর ডেকে আনার কোনো প্রয়োজন নেই।” তারপর দুজন মিলে ছাউনির দিকে যেতে থাকলো। কিন্তু ছাউনির কাছাকাছি যাওয়ার পরই কোত্থেকে যেনো গরম এক দমকা হাওয়া ছুয়ে দিয়ে গেলো দুজনকে। দুজনের শরীরই কেমন কেঁপে উঠলো। কিন্তু তারা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না। চলে গেলো ছাউনির ভিতরে। গিয়ে দেখলো আলী এখনো ঘুমে। যা দেখে রমেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

চলবে…..


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

1

Sumaiya Akter Bristy

Author: Sumaiya Akter Bristy

❝শুভ্রচিন্তার উদ্ভব ঘটে যার কথা ভেবে সে যদি মোহ হয় দোষ বা কি তাতে?❞ ~Sumaiya Akter Bristy

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply