কুরআন ও হাদীসের আলোকে ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক।

1

যিনি শিক্ষাগ্রহণ করেন তিনি ছাত্র এবং যিনি শিক্ষাদান করেন তিনি শিক্ষক। আর তাদের মধ্যকার সম্পর্কই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক। এ সম্পর্ক হচ্ছে অতি পবিত্র, আত্মিক, মধুর  যার মূলভিত্তি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

আদি শিক্ষক হলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। তাই ফেরেশতারা বলেছিলেন; আপনার সত্তাই পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যতটুকু জ্ঞান দিয়েছেন, তার বাইরে আমরা কিছুই জানি না।(সুরা-বাকারা, আয়াত: ৩২)। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)–এর প্রতি ওহির প্রথম নির্দেশ ছিল, আল্লাহ পাক কুরআনে বলেন,

 ‘পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত দ্বারা। পড়ো, তোমার রব মহা সম্মানিত, যিনি শিক্ষাদান করেছেন লেখনীর মাধ্যমে। শিখিয়েছেন মানুষকে, যা তারা জানত না।’ (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ১-৫)।

 অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,  ‘দয়াময় রহমান আল্লাহ! কোরআন শেখাবেন বলে মানব সৃষ্টি করলেন; তাকে ভাষা শেখালেন।’ (সুরা-৫৫ রহমান, আয়াত ১-৪)।

প্রিয় পাঠক ,জানতে হলে শিখতে হবে লিখতে হলে শিক্ষকের কাছে আসতে হবে। ‘শিক্ষা’ শব্দটি সংস্কৃত ‘শাস’ ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ শাসন করা, নিয়ন্ত্রণ করা, নির্দেশ দান করা, উপদেশ দান করা। ‘শিক্ষা’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো EDUCATION( এডিকেশন)। আরবীতে এলেম অর্থ ভেতর থেকে বাইরে আনা বা অন্তর্নিহিত শক্তি বা গুণাবলি বিকাশে সহায়তা করা। আমরা বলতে পারি  ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিকতা হলো শিক্ষা যা এলমে শরিয়াত ও এলমে মারেফাতের সমন্বয়। রাসূল (সা.) কত সুন্দর করেই না বলেছেন,

“তোমাদের মধ্যে সর্বত্তোম ঐ ব্যক্তি যে নিজে   পড়েন এবং অপরকে শিক্ষা দেন। (তিরমিজি)এ

কজন ছাত্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ইমাম শাফেঈ (রহ.) এর শিক্ষক আল্লামা ওয়াকী (রহ.) বলেন, ‘ছাত্রের একমাত্র বৈশিষ্ট্য হলো সকল পাপকাজ বর্জন করা’। সুতরাং বলা যায়, যিনি নিয়মিত অধ্যয়ন করেন, সত্যের আলোতে নিজেকে উদ্ভাসিত করেন, ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করেন, শেখার প্রতি যিনি আগ্রহী ও যত্মশীল থেকে প্রতিটি কর্তব্য যথাসময়ে সম্পাদন করেন, তিনিই ছাত্র।

আর শিক্ষকতার মতো একটি মহান পেশায় যিনি জড়িত, তিনিই শিক্ষক। শিক্ষক শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ— TEACHER। শব্দটি খুবই বিশ্লেষণধর্মী, যার মাধ্যমে একজন শিক্ষক উপলব্ধি করতে পারবেন তার স্বরূপ ও দায়িত্ব। আবার শিক্ষার্থীও উপলব্ধি করতে পারবেন তার প্রিয় শিক্ষকের প্রতিচ্ছবি। একজন শিক্ষককে সবসময় মনে রাখতে হবে যে, তিনি কে? তাঁর দায়িত্ব কী? তাকে অবশ্যই শিক্ষক শব্দের মধ্যে লুক্বায়িত গুণ-বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হবে। একজন ব্যক্তিকে যথার্থ অর্থে শিক্ষক হতে গেলে ‘শিক্ষক’ শব্দের ‘শি’ দ্বারা ‘শিক্ষণ’, ‘শিক্ষা’, ক্ষ’ দ্বারা ‘ক্ষমা’, ‘ক্ষমতা’, ‘ক’ দ্বারা কর্মঠ, কৌশলী ইত্যাদি গুণ অর্জন করতে হয়।এজন্য রাসুল (সা.) বলেছেন,  নিশ্চয় জ্ঞানটা ধর্ম স্বরূপ সুতরাং কাদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করবে তাদেরকে ভালোভাবে দেখে নাও। (সহীহ মুসলিম)

তিনি আরো বলেছেন, “আলেমগণ নবীদেরদের উত্তরাধিকারী। আর এ কথা সুনিশ্চিত যে, নবীগণ কোন রৌপ্য বা স্বর্ণ মুদ্রার কাউকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে যাননি; বরং তাঁরা ইলমের জ্ঞানভান্ডারের উত্তরাধিকারী বানিয়ে গেছেন।(বায়হাকী শরীফ)

প্রিয় পাঠক ভাইয়েরা, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক হলো আত্মার সম্পর্ক। এটি পিতা-পুত্রের সম্পর্কের ন্যায়। পিতা-মাতা সন্তানকে জন্মদান করেন। তাকে প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তোলেন একজন শিক্ষক। পুত্র পিতা থেকে সম্পদের উত্তরাধিকারী হন। আর ছাত্র শিক্ষক থেকে জ্ঞানের উত্তরাধিকারী হন। তাঁদের সম্পর্ক ভালোবাসা, স্নেহের, বন্ধুত্বের, আস্থার ও বিশ্বাসের সম্পর্ক।

পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক মুহাম্মাদ (স.) ছাহাবীগণ ছিলেন তাঁর ছাত্র। তিনি ছাহাবীদের নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। ছাহাবীগণও তাকে ভালোবাসতেন পৃথিবীর যেকোনো কিছুর তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি ছাহাবীগণ মহানবী (স.)এর সামনে উঁচুস্বরে কথাও বলতেন না। একজন শিক্ষার্থীর অনেক প্রত্যাশা থাকে শিক্ষকের নিকট। সে প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমে শিক্ষক স্থায়ী আসন লাভ করেন ছাত্রের হৃদয়ের ভেতরে। এজন্য শিক্ষককে আজীবন ছাত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। প্রকৃতপক্ষে ছাত্র-শিক্ষক পরস্পর পরস্পরের মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করে থাকেন। ছাত্র যত বড়ই হোন না কেন তাঁর জীবনে শিক্ষকের অবদান কোনো দিন অস্বীকার করতে পারেন না। আবার ছাত্রকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কেউ মহান শিক্ষকও হতে পারেন না। কারণ ছাত্র সুপ্রতিষ্ঠিত না হলে শিক্ষকের সকল যোগ্যতা ও প্রচেষ্টা মূল্যহীন।

পরিশেষে বলতে হয়, শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁর মাধ্যমে ঘটে একজন ছাত্রের সত্যিকারের বৃদ্ধি, বিকাশ, ও প্রতিষ্ঠা। আবার ছাত্রই শিক্ষক মূল্যায়নের প্রকৃত উপাদান। সুতরাং ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক এমন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে, যেখানে থাকবে শুধু পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, আস্থা আর কল্যাণচিন্তা।

 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

1

আবু জাফর মহিউদ্দীন

Author: আবু জাফর মহিউদ্দীন

কবিতা লিখি, কবিতা ভালোবাসি

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

One Reply to “কুরআন ও হাদীসের আলোকে ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক।”

Leave a Reply