গল্প একজন প্রবাসী স্ত্রীর গল্প আফছানা খানম অথৈ

0

একজন প্রবাসী স্ত্রীর গল্প

আফছানা খানম অথৈ

রিমির আব্বু বিদেশ থাকে।আম্মু প্রতিদিন রিমিকে নিয়ে স্কুলে যাই।মেয়েকে স্কুলের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে মা অন্যান্য ভাবীদের সঙ্গে বাইরে অপেক্ষা করে।রিমির আম্মু নিগার সুলতানা তেমন একটা কথাবার্তা বলে না,চুপচাপ বসে থাকে।অন্যান্য ভাবীরা কিন্তু সে রকম না, হাসি আনন্দ খোশগল্পে মেতে থাকে সর্বদা।রিফাতের আম্মু আরেক ভাবীকে বলে
ভাবী আমি কাল সারারাত পায়ের ব্যথায় ঘুমাতে পারছিলাম না। আমার জামাই আমার পা টিপে দিয়েছিল।
অন্যজন আরও বাড়িয়ে বলল,
আরে ভাবী আমি অসুস্থ হলে তো আমার জামাই খুব ভালোভাবে টেককেয়ার করে।কাপড় ছোপড় পর্যন্ত ধুয়ে দেয়।
সবাই একসঙ্গে হেসে উঠে বলল,
তাই নাকি ভাবী?
রিফাতের আম্মু রিমার আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল,
আরে ভাবী তুমি চুপচাপ কেনো,জামাই’র কথা কিছু বলো?
দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে রিমার আম্মু উত্তর দিলো,
আমার জামাইর কথা কী বলব ভাবী?সে তো বিদেশ থাকে।দুতিন বছরে একবার দেশে আসে।
রিফাতের আম্মু হেসে উঠে বলল,
ভাবী তাহলে তো আরও ভালো। তুমি দেশে বসে দু’চারটা প্রেম করতে পারবা।আমার জামাইতো আমাকে খুব সন্দেহ করে।
কী বলছেন ভাবী স্বামী থাকতে প্রেম করতে যাব কেনো,গুনা হবে না?
ভাবী রাখত এসব কথা, তোমার স্বামী বিদেশে ক’জনের সাথে প্রেম করে তা কী তুমি জান?
ভাবী না জেনে মন্তব্য করা ঠিক না।যদি সে পাপ করে তার কৈফিয়ত আল্লাহর কাছে তাকে দিতে হবে।আমি কেনো পাপ করতে যাব?
ভাবী এসব পাপ পূণ্যের এখন ভাত নাই।শ্বশুর বাড়ির লোক কখনও আপন হয় না।ব্যাংক ব্যলেন্স কর,জমিজামা কিন,তানালে যখন শুনবা স্বামী আর একটা বিয়ে করেছে, তখন আমার কথা মনে কর পস্তাবা।
রিমির আম্মু কিন্তু রিফাতের আম্মুর কথাই কান দিলো না।
পরের দিন যখন মেয়েকে নিয়ে নিগার সুলতানা স্কুলে আসল,তখনি রিফাতের আম্মু বলল,
হাই ভাবী কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ভাবী আপনি কেমন আছেন?
ভালো।তো ভাবী প্রবাসী স্বামীর খবর কী? দিনকাল কেমন কাটছে?
এইতো বেশ আছি।শ্বশুর শ্বাশুড়ি ননদ-দেবর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে।
ভাইজান কবে আসবে?
রিমার বয়স যখন তিন বছর তখন একবার এসেছিল।আবার তিন বছর পর আসবে।
বল কী ভাবী এত লেট?
হুম।
একা থাকতে তোমার কষ্ট হয় না?
হলেও কিছু করার নেই।বিয়ের পর থেকে তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকতে হয় কখন স্বামী আসবে।
তোমার খারাপ লাগে না?
হুম লাগে তবুও থাকতে হবে।এটাই প্রবাসী স্ত্রীর নিয়ম।
কি যে বলো ভাবী।তুমি টাইট দাও দেখবে স্বামী ঠিক সময়মতো চলে আসবে ।এত লেটে আসলে বউয়ের সময় কাটে কিভাবে?তাছাড়া বাচ্চা নিতে হবে না?ছেলে না হলে বুড়া বয়সে দেখভাল করবে কে?
ঠিক বলেছেন ভাবী।রিমার আব্বুর ও সখ একটা ছেলে সন্তানের।একটা ছেলে হলে আর নেবনা।কিন্তু চাইলে তো হবে না।আল্লাহ পাকের হুকুম লাগবে।
ভাবী আল্লাহ পাকের হুকুম লাগবে তা ঠিক বলেছেন।কিন্তু স্বামী কাছে না থাকলে বাচ্চা হবে কিভাবে?আপনার মেয়ের বয়স তো পাঁচ বছর হয়ে গেছে।এখন দ্বিতীয় বাচ্চা নেয়ার সঠিক সময়।এমনিতে ডাক্তারের নির্দেশ দু’বাচ্চার মাঝখানে পাঁচ বছরের বেশি গ্যাপ দিলে পরবর্তী বাচ্চা হতে অনেক বিপদ আপদ আসে।
ভাবী সেটা বুঝে ক’জনে?
ভাবী হতাশ হলে চলবে না।জামাইকে বুঝিয়ে বলতে হবে।তানা হলে নিজেরী ক্ষতি হবে।
ভাবী তা ঠিক বলেছেন।কিন্তু বুঝাতে গেলে আরও সমস্যা। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বলবে জামাইকে কু’যুক্তি দিচ্ছি।কোন রকমে শুনেছেতো সেরেছে।খোটা দিয়ে চৌদ্দ গোষ্টী উদ্ধার করে ছাড়বে।এমনিতে বিয়ের পর মেয়েদের শ্বশুর বাড়িতে কোন স্বাধীনতা নেই।উচ্চস্বরে হাসতে নেই,কাঁদতে নেই।কারো বাড়িতে যেতে নেই।পর পুরুষের সাথে নিজের প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে নেই।পান থেকে চুন খসলে কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিতে হয়।তার উপরে প্রবাসীর বউ বলে কথা।
ভাবী তা ঠিক বলেছেন। কিন্তু মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করলে হবে না।প্রতিবাদ করতে হবে,অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।নিজেদের অধিকার নিজেরা আদায় করতে হবে।
ভাবী এতে কোন লাভ হবে না।কারণ এ অন্যায়ের জন্য নারীরা সবচেয়ে বেশি দায়ী।
কি বলছেন ভাবী নারীরা দায়ী হতে যাবে কেনো?
ভাবী বুঝিয়ে বলছি শুনেন,আমার শ্বাশুড়ি একজন নারী,অথচ নারী হয়ে আরেক জন নারীকে সব সময় হেয় করে ছোট করে অপমান করে কথা বলে।প্রথমবার যখন আমার স্বামী বিদেশ থেকে এসেছিল সামান্য কটা বিদেশি চকলেট আমার বাবার বাড়িতে নিয়েছিলাম।এর জন্য আমার শ্বাশুড়ির কত কটু কথা শুনতে হলো।এ ধরনের আর ও অনেক টুকিটাকি বিষয় নিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজন সব সময় কটু কথা বলে। শুধু তাই নয় জামাইকে নিয়ে যে কোথাও বেড়াতে যাব সে উপায় ও নেই।সব সময় আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব শ্বশুর বাড়ির লোকজন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।রাতে ছাড়া কখনো জামাইকে কাছে পাই না।তবুও ভাই বোন ভগ্নিপতি অনেক বেজার হয়ে যান।তাদেরকে নাকি সময় দেন না।শুধু বউকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ তোলেন।আবার ভাগ্না ভাগ্নে আত্মীয়-স্বজন অনেকে এন্ডুয়েট মোবাইলের জন্য বেজার থাকেন।যা এনেছেন তা বিলি করেন সবাইকে।তবুও বউয়ের ঘাড়ে দোষ আছে সর্বদা।আমাদের মতো বিবেকবান মেয়েরা সবকিছু হজম করি,কিন্তু সংসার ভাঙতে পারি না।।
ভাবী এজন্য আমার প্রবাসী পুরুষ পছন্দ না।এরা কান্ডক জ্ঞানহীন।সারা জীবন প্রবাসে জীবন কাটান।বিয়ে করেন নামেমাত্র। বউয়ের কোন দায়িত্ব পালন করেন না।
ভাবী দায়িত্ব পালন করেন না বললে ভুল হবে।তারা দায়িত্ব পালন করতে চাইলে মুরব্বীরা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।বউয়ের দিকটা একটু ও ভাবেন না।সব সময় নিজেদের দেনা পাওনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
ভাবী এজন্যতো বলি এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে।
ভাবী বললাম না কোন লাভ হবে না।কারণ এর জন্য নারীরা দায়ী।
ভাবী নারীরা দায়ী হবে কেনো?
ভাবী বলছি শুনেন,প্রতিদিন টিভির নিউজ ও পত্রিকার পাতা উল্টালে দুচারটা নারী নির্যাতনের খবর শুনি।এদের নির্যাতনের বর্ণনায় দেখি শ্বাশুড়ি কর্তৃক বউ নির্যাতিত,আবার কখনো কখনো বউ কর্তৃক শ্বাশুড়ি নির্যাতিত।এবার বলেন ভাবী এখানে কোন পুরুষের ভুমিকা আছে কিনা?
ভাবী আপনার মতো এত গভীরভাবে বিষয়টা চিন্তা করে দেখিনি।তাই বিষয়টা বুঝতে পারেনি।সব সময় নারী নির্যাতনের জন্য পুরুষদেরকে দায়ী করে থাকি।
ভাবী আমরা নারীরা যদি নারীদেরকে সম্মান করি,যেমন শ্বাশুড়ি যদি বউকে মেয়ে হিসেবে দেখে,আর বউ যদি শ্বাশুড়িকে নিজের মা হিসেবে দেখে সু:খ দু:খের কথা ভাবে তাহলে সমাজ থেকে নারী নির্যাতন চিরতরে নির্মুল হবে।নারী তার অধিকার ফিরে পাবে।প্রবাসী বউয়ের জীবন সুখের হবে।এর ব্যতিরেকে নয়।
ভাবী ঠিক বলেছেন।
ভাবী শুধু সাপোর্ট করলে হবে না।কাজে পরিণত করতে হবে।নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে নিতে হবে।তবে সব কিছু সফল হবে।
তাদের গল্পের শেষ মুহুর্তে ছুটির ঘন্টা বেজে উঠল।রিমির আম্মু মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরে গেল।
ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to “গল্প একজন প্রবাসী স্ত্রীর গল্প আফছানা খানম অথৈ”

Leave a Reply