গল্প ব্ল্যাকমেইল আফছানা খানম অথৈ

0

ব্ল্যাকমেইল

আফছানা খানম অথৈ

রাশেদ হায়দার ওরফে রাশু নিজেকে একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা বলে ন্যাশনাল আই ডি তৈরী করেছেন।ঢাকার মফস্বল শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন।শুধু তাই নয় নকল মা-বাবা,ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন বানিয়ে বিয়ে করার নামে নারীদেরকে ব্ল্যাকমেইল করছেন।
প্রথমে ভিবিন্ন উচু লেভেলের চাকরীজীবি অবিবাহিতা মেয়েদের তালিকা তৈরী করে নিলেন।চেহারা চুরুত দেখতে মন্দ না মাসআল্লাহ অনেক ভালো,তার উপরে গায়ে দামী দামী পোশাক সুট ট্রাই একেবারে রাজার হালে চাল চলন।তার তালিকার প্রথম নারী একজন ডাক্তার। সে রোগী সেজে তার কাছে গেল।ভদ্রতার সহিত সালাম দিয়ে ডাক্তারের সামনে বসল।ডাক্তার নাম বয়স জিজ্ঞেস করে রোগের বর্ণনা জানতে চাইল।সে নামের সঙ্গে পদবী ও বলল।তারপর রোগের কিছু বর্ণনা দিলো।ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে বলল,
সাতদিন পর আবার আসবেন।
এই সুযোগে রাশেদ বলল,
প্লিজ আপনার কন্টাক নাম্বারটা দিবেন?
ডাক্তারের ও তার প্রতি কেন জানি মায়া হলো।তাই আর কিছু না বলে কন্টাক নাম্বার দিয়ে দিলো।এই সেরেছে রাশেদ কি আর থেমে থাকে, কারণে অকারণে ডাক্তারের কাছে ফোন দেয়া শুরু…।

উচ্চ পদস্থ কর্মচারী বলে কথা তাই ডাক্তার ও বিরক্ত হচ্ছেন না।নিরিবিলি আলাপ-সালাপ করেন।মাত্র দু’তিন দিনের মধ্যে দুজন দু’জনের খুব কাছের মানুষ হয়ে গেল।আর এই সুযোগে রাশেদ হায়দার বিয়ের প্রস্তাব দেন।ডাক্তার সুমাইয়া রহমান ও তাই ছেয়েছিলেন।তাই খুশি হয়ে তাতে সাঁয় দেন।এবং ঘটক মারফত তার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর কথা বলেন।রাশেদ হায়দার খুশি হয়ে বলল,
ঠিক আছে আমি কালই ঘটক মারফত বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব।
বলতে না বলতে ঘটক বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাসায় আসল।ঘটককে চা নাস্তা করিয়ে পাত্রের নাম ঠিকানা নিলেন সুমাইয়ার বাবা।তারপর আরিফুর রহমান পাত্রের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে স্ত্রীকে বললেন,
আছমা পাত্রের সম্পর্কে সকল খোঁজ খবর নিয়ে এসেছি।
তো কেমন মনে হলো?
খুব ভালো।সত্যি সে ইঞ্জিনিয়ার।ফ্যামিলি স্ট্যাটার্স ও ভালো।বাড়ি গাড়ি কোন কিছুর অভাব নেই।তাছাড়া ছেলেটিও খুব হ্যান্ডসাম।
তাহলে আর দেরী কেনো আকদ’র দিন ঠিক করুণ।
ঠিক করেছি তো।
কবে?
আগামী শুক্রবার।
সময়মতো আকদ অনুষ্ঠিত এবং সপ্তাহ খানেক পরে বিয়ের দিন ধার্য করা হলো।খুব ধুমধাম করে দুপক্ষের আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতির মাধ্যমে বিয়ের কাজ শেষ হলো।ডা: সুমাইয়া রহমান বউ সেজে রাশেদ’র ঘরে উঠল।রাশেদ বউ’র সঙ্গে খুব ভালোবাসাবাসি ও টেককেয়ার করে চলেছে।ডা: সুমাইয়া রহমান ও এমন একটা স্বামী পেয়ে খুব খুশি।সপ্তাহ খানেক পরে একদিন রাশেদ বাসায় ফিরে খুব মন খারাপ করে বসে আছে।দৃশ্যটি ডা: সুমাইয়া রহমানের চোখে পড়তে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
জান কি হয়েছে,মন খারাপ?
রাশেদ কোন কথার উত্তর না দিয়ে আগের নিয়মে বসে আছে।ডা: সুমাইয়া রহমান কিন্তু আর থেমে থাকল না।স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
জান কথা বলছ না কেনো,কী হয়েছে?
না কিচ্ছু হয়নি। তো..।
তো কী বল?
না মানে, বাড়ি করার সময় আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলাম।এখন তার টাকার ইমারজেন্সি প্রয়োজন।
তো কি হয়েছে দিয়ে দাও।
তাতো দিতে হবে।কিন্তু বিয়েতে তো অনেক লাখ টাকা ব্যয় হলো।এই মুহূর্তে আমার একাউন্টে এতো টাকা নেই।এখন টাকা দেব কোত্থেকে সেটাই ভাবছি।
ডা: সুমাইয়া হাসি মুখে বলল,
ও সেই কথা।তোমার একাউন্টে নেই তাতে কি হয়েছে।আমার একাউন্টেতো আছে।আমি চেক লিখে দিচ্ছি।এক্ষণই টাকা দিয়ে এসো।
বউকে জড়িয়ে ধরে রাশেদ বলল,
ওকে সুইট হার্ট থ্যাংকস। আমাকে টেনশন মুক্ত করলে।
ডা: সুমাইয়া রহমান চেক লিখে দিলো আর রাশেদ বন্ধুর নাম করে টাকাগুলো নিজের একাউন্টে রেখে দিলো।
তাদের দু’জনের বিবাহিত জীবন ভালোই কাটছে।রাশেদ এমনভাবে অভিনয় করে চলেছে ডা: সুমাইয়ার বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলো না তার প্রতি।সত্যিকার স্বামী ভেবে সে দিনকাল যাপন করছে।এর মাঝে কিছুদিন পার হলো।একদিন রাশেদ বউকে জড়িয়ে ধরে বলল,
সুইট হার্ট তুমি বাড়ি কিনবে?
হুম কিনব।কোথায়?
গুলশান ১২ তৈরী করা বাড়ি।খুব সুন্দর এয়ার কন্ডিশন।
চলো আমরা দেখে আসি।
তোমার দেখা লাগবে না।আমি দেখে এসেছি।কথাও পাকা করে এসেছি।শেয়ার পার্টনারে কিনছি।দশ জনে মিলে।প্রতিজনের বিশ লাখ টাকা করে পড়বে।যদি তোমার কাছে টাকা থাকে বিশ লাখ টাকা দাও।আমি বায়না দিয়ে আসি।
ডা: সুমাইয়া আর দেরী করলো না।চেক লিখে দিলো।রাশেদ এই টাকাগুলো ও বাড়ি করার নাম করে নিজের একাউন্টে জমা করে নিলো।
এদিকে ডা: সুমাইয়ার মা হঠাৎ স্ট্রোক করলো।ফোন পেয়ে ডা: সুমাইয়া হাসপাতালে ছুটে গেল।মাকে নিয়ে তিনি সপ্তাহ খানেক খুব ব্যস্ত ছিলেন।তারপর মা সুস্থ হওয়ার পর তিনি স্বামী গৃহে ফিরে এলেন।তাকে দেখে রাশেদ চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ করে বলল,
সুমাইয়া তুমি আমাকে না জানিয়ে কোথায় গেলে?
প্লিজ রাশেদ শান্ত হও,বুঝতে চেষ্টা কর। মা হঠাৎ স্ট্রোক করলেন।তাই আমাকে ছুটে যেতে হলো।তোমাকে বলার সময় পাইনি।
রাশেদ কিন্তু শান্ত না হয়ে আর ও আশান্ত হয়ে বলল,
তোমার মা স্ট্রোক করলে আমার কী।তাই বলে আমাকে না জানিয়ে যাবে।
রাশেদ তুমি এভাবে কথা বলছ কেনো? আমার মা তোমার গুরুজন শ্বাশুড়ি।সম্মান করে কথা বলো।
আমি তোমার মাকে সম্মান করে কথা বলতে পারবো না। রাশেদ ঠিক করে কথা বলো।তুমি কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছ।আমার মা সম্পর্কে আর একটা বাজে আচরণ করেছ তো…।
তো কীআমায় ত্যাগ করবে?
প্রয়োজন হলে তাই করব।
তোমাদের মতো চাকরীজীবি মেয়েরা না সব পার।রোজ রোজ নতুন মানুষ দেখতো। স্বামী না হলেও চলবে।
এমন বাজে আচরণ শুনার পর ডা: সুমাইয়ার মেজাজ কী আর থেমে থাকে।সে কড়া ভাষায় বলল,
স্টপ রাশেদ।আর একটাও বাজে কথা বলবে না।আমি আর তোমার সঙ্গে সংসার করবো না।তুমি একটা বাজে লোক।তোমার আচরণ যে এত রুঢ় তা আগে জানলে আমি তোমাকে বিয়ে করতাম না।তাছাড়া যে সংসারে ভালোবাসা নেই,বিশ্বাস নেই,সে সংসার কখনো সুখের হয় না।আমার প্রতি তোমার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।অতএব এ সম্পর্ক শত চেষ্টা করলে ও টিকিয়ে রাখা যাবে না।আমি তোমাকে ডিভোর্স দেব।কারণ তোমার মতো বাজে লোকের সঙ্গে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
কী আমি বাজে লোক?
হ্যাঁ তুমি বাজে লোক।
এমনিভাবে তারা আরও কিছু সময় তর্ক করলো।তর্ক এক সময় চরমে পৌছে গেল।কোন সমাধান হলো না।ডা: সুমাইয়া রাগ করে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে গেল।সুমাইয়ার প্রত্যাগমনে রাশেদ খুশিতে গদগদ।কারণ সেও চাই সুমাইয়া তাকে ত্যাগ করুক।তারপর সে পরবর্তী মিশন শুরু করবে।
সুমাইয়া ভাবল তার স্বামীর রাগ পরলে সে তাকে আনতে যাবে।কিন্তু সপ্তাহ পার হয়ে গেল।এখনো তার কোন খবর নেই।এবার সে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে তাকে ডিভোর্স দিলো।রাশেদ খুশি হয়ে ডিভোর্স লেটার সাইন করে দিলো।তারপর পরবর্তী মিশন শুরু করলো।তার দ্বিতীয় টার্গেট একজন ইঞ্জিনিয়ার পাত্রী।সে সরাসরি তার অফিসে চলে গেল।ভদ্রতার সহিত সালাম দিলো।ইঞ্জিনিয়ার সানজিদা হক সালামের জবাব দিয়ে বলল,
আপনার পরিচয়?
আমি গার্মেন্টস’র এম ডি রাশেদ হায়দার।
থ্যাংকস। তো আমি আপনার জন্য কী করতে পারি?
আমি একটা বাড়ি বানাব।আমাকে হাই কোয়ালিটির কিছু ম্যাপ তৈরি করে দিন।
ঠিক আছে আপনি অপেক্ষা করুণ।আমি এক্ষণই ম্যাপ এঁকে দিচ্ছি।
বাড়ির ম্যাপ এঁকে রাশেদের হাতে দিলো ইঞ্জিনিয়ার সানজিদা হক।তারপর ম্যাপের বিল পরিশোধ করে রাশেদ বলল,
ম্যাডাম আপনার কন্টাক নাম্বারটা দিন।
এইতো দিচ্ছি।
রাশেদ তার মোবাইলে নাম্বারটা সেভ করে করে নিলো।তারপর শুরু করলো ফোনালাপন।রাশেদের মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠ,তার উপরে সুদর্শন চেহারা,বড় চাকরী সব কিছু সানজিদা হককে মুগ্ধ করলো।ইচ্ছে করছে রাশেদকে ভালোবাসার কথা বলতে।কিন্তু কেনো জানি বলতে পারছে না। আর তখনি ফোন আসল রাশেদের।সানজিদা হক রিসিভ করে বলল,
হ্যালো রাশেদ সাহেব কী করছেন?
কী আর করবো। একা একা ভালো লাগছে না।
তাতো ঠিক।বাড়ি গাড়ি সবইতো হয়েছে।তবু বিয়ে করছেন না কেনো?
ম্যাডাম বিয়েতো করতে চাই।কিন্তু মনের মতো কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না।
কী রকম মেয়ে আপনার পছন্দ?
আসলে সত্য কথা বলতে কী, আপনার মতো হলে চলবে।
আমার মতো মানে ঠিক বুঝলাম না।
মানে হলো আপনাকে আমার খুব পছন্দ।আমাকে বিয়ে করবেন?
না মানে…।
কোন মানে নয়।সত্যি আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।বলুন রাজী?
ঠিক আছে আপনি সামাজিকভাবে আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠান।
ওকে পাঠাব।এখন রাখি।গুড নাইট।
পরদিন রাশেদ, ইঞ্জিনিয়ার সানজিদার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাল।সানজিদার বাবা ঘটককে বলল,
ঠিক আছে,আমি পাত্রের ব্যাপারে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে তারপর আপনার সাথে কথা বলব।
দু’দিন পরে পাত্রের খোঁজ খবর নিতে সানজিদার বাবা সরাসরি রাশেদের বাসায় আসল।আগে থেকে সব প্ল্যান করা ছিল।তাই অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হলো না।তার নকল মা-বাবা সবকিছু ম্যানেজ করে নিলো।অতি সহজে সানজিদার বাবার মন জয় করে ফেলল।সঙ্গে নকল ঘটক ও আছে।তারা সঙ্গে সঙ্গে দিন তারিখ ও ঠিক করে ফেলল।সময়মতো বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো।সানজিদা হক রাশেদের বউ হয়ে তার বাড়ি গেল।তাদের দাম্পত্য জীবন খুব মধুর হয়ে উঠল।রাশেদ স্ত্রীর মন জয় করার জন্য, বিশ্বাস অর্জন করার জন্য,খুব ভালোভাবে বউয়ের টেককেয়ার ও ভালোবাসাবাসি করে চলেছে।যাতে স্ত্রী তাকে সন্দেহ না করে।একদিন সানজিদার সর্দি জ্বর,ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়।রাশেদ দ্রুত ডাক্তার ঔষধ পথ্য নিয়ে আসে।শুধু তাই নয়,বউয়ের মাথা আঁচড়িয়ে দেয়,নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দেয়, আর ও কত কী।স্বামীর এমন সেবা পেয়ে স্ত্রীতো মহাখুশি।মাকে ফোন করে বলে,
মা তোমার জামাই খুব ভালো।আমি ওর মতো স্বামী পেয়ে খুব খুশি।
সত্যি বলছিস তো?
জ্বি মা সত্যি। তুমি একবার এসে দেখে যাও আমার সুখের সংসার।
আসবরে মা আসব।ভালো থাকিস।এখন রাখ।
রাশেদ আঁড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনে বলল,আর কোন টেনশন নেই।আমাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে ফেলেছে।এবার যা বলব তাই শুনবে।আর দেরী করা যাবে না।এক্ষণই মিশন শুরু করতে হবে।সানজিদা হক এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।রাশেদ আবেগের সহিত বউকে জড়িয়ে ধরে বলল,
সুইট হার্ট এখন কেমন লাগছে?
মোটামুটি ভাল।
শুন তুমি আরও দুই দিন রেস্ট নাও।
তাহলে আমার অফিসের কাজগুলো কে করবে শুনি।
সমস্যা নেই। আমিসহ করে দেব।আগে তোমার সুস্থতা তারপর অফিস।
ঠিক আছে সাহেব তাই হবে।তো এখন কোথায় যাচ্ছেন?
প্রথমে অফিস তারপর সাইডে যাব, বাড়ির কাজ দেখতে।ও ভালো কথা আমাকে কিছু টাকা ধার দিতে পারবে?
কত টাকা লাগবে?
আপাতত লাখ বিশেক হলে চলবে।ইট বালি,সিমেন্ট,রট এগুলোর বিল দিতে হবে।সমস্যা নেই আমি আগামী মাসে তোমাকে দিয়ে দেব।
বারে দিতে হবে কেনো,তোমার টাকা আর আমার টাকাতো সমান কথা।
তা অবশ্যই ঠিক।তবুও স্ত্রীর টাকায় বাড়ি করতে নেই।
কেনো কেনো?
সে অনেক লম্বা কাহিনী। অন্যদিন বলব।আমার অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে।চেক লিখে দাও।
সানজিদা আর দেরী করলো না।দশ লাখ টাকার চেক লিখে স্বামীর হাতে দিলো।রাশেদ তার ভাড়া করা লোকদের বিল পরিশোধ করে বাকী টাকা তার একাউন্টে রেখে দিলো।
মাঝে সপ্তাহ খানেক পার হলো।সানজিদা হক অফিসের কাছে হেড অফিসে গেল।আর এই সুযোগে রাশেদ তার এক ফ্রেন্ডের পিক’র সঙ্গে সানজিদার পিকচার ম্যাচিং করে কয়েকটা নোংরা পিকচার তৈরী করে নিলো।কিভাবে অভিনয় করতে হবে ভাড়া করা বন্ধুকে সব শিখিয়ে দিলো।সানজিদা বাসায় ফিরল।রাশেদ কিন্তু তার সঙ্গে আগের মতো কথাবার্তা আর ভালোবাসাবাসি করছে না।রাগের ভান করে মুড অফ করে আছে।দৃশ্যটি সানজিদার চোখে পড়তেই বলল,
জান তোমার কী হয়েছে।মুড অফ কেনো। শরীর খারাপ?
সানজিদার হাত সরিয়ে দিয়ে রুঢ় ভাষায় রাশেদ বলল,
“ডোন্ট টাচ্ মি”।
আমাকে টাচ্ করবে না।তোমার দিকে তাকাতে, কথা বলতে ঘেন্না হচ্ছে।
কেনো আমি কী করেছি।
কী করনি বলো।স্বামী থাকতে পর পুরুষের সঙ্গে নোংরামো।ছি: সানজিদা ছি: তুমি এত নিচ্,এত নোংরা।
এবারের কথাগুলো সানজিদার গায়ে লেগেছে।তাই আর থেমে থাকল না। কড়া ভাষায় বলল,
স্টপ রাশেদ।আর একটা বাজে কথাও বলবে না।আমি অনেক সহ্য করেছি,আর নয়।কে তোমাকে এসব কথা বলেছে।প্রমাণ দাও।
তুমি প্রমাণ চাইছ এইতো?
হ্যাঁ চাইছি।
রাশেদ আর দেরী করলো না।মোবাইলের নোংরা পিকচার গুলো তার সামনে ওপেন করে বলল,
এরপর ও কী তুমি বলবে তুমি নোংরামো করনি?
হ্যাঁ বলবো আমি নোংরামো করিনি।কারণ এই লোকটাকে চেনা তো দূরের কথা,কখনো দেখেনি।আর বর্তমান ডিজিটাল যুগে এই ধরনের পিকচার তৈরী করা কোন ব্যাপার না।আমাদের সুখ নষ্ট করার জন্য কেউ ষড়যন্ত্র
করে এই পিকচার গুলো পাঠিয়েছে।এর কোন সত্যতা নেই।
কথ কাটাকাটির মাঝখানে আসল সানজিদার ফোন।সে রিসিভ করে বলল,
হ্যালো কে বলছেন?
আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড সুমন বলছি।কেমন আছ জান?আমার কিন্তু কিচ্ছু ভালো লাগছে না।বারবার তোমার কথা মনে পড়ছে।
এই শুনুন।কি সব যাতা বলছেন।আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই।তাছাড়া আমি আপনাকে চিনি না।
জান বুঝতে পেরেছি। তুমি স্বামীর ভয়ে মিথ্যে বলছ।জান তোমাকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত ও কাটে না।এই তো বিগত কয়েক দিন আমরা খুব মজা করেছিলাম।এক সাথে রাত কাটালাম,আর ও কত কী…।
আর তার কিছু পিকচার তোমার স্বামীর কাছেও তোমার কাছে পাঠিয়েছি।
তার মানে ছবিগুলো আপনি পাঠিয়েছেন?
হ্যাঁ পাঠিয়েছি।ভালোবাসাবাসির পিকচার তো।তোমার স্বামীকে দেখাতে হবে না,হা হা হা…।
আর কোনকিছুর শুনার অপেক্ষা না করে লোকটি ফোন কেটে দিলো।
এরপর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে শুরু হলো তুমুল ঝগড়া।কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না।একে অপরে খুব জঘন্য ভাষায় কথা বলছে।পরিবেশ সম্পূর্ণ ঘোলাটে হয়ে গেল।কেউ কাউকে মানছে না।সানজিদা হক রাগ করে বাবার বাসায় চলে গেল।কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখল, রাশেদ কোন খোঁজ খবর নিচ্ছে না।তারপর ডিভোর্স দিয়ে দিলো।এভাবে রাশেদ ১৮৫ টি নারীকে বিয়ে করার নামে ব্ল্যাকমেইল করেছিল।প্রত্যেকটা নারীকে সম্মানের সহিত বিয়ে করে ঘরে তুলত।তারপর বিভিন্ন কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিত।তারপর নানা ভাবে উত্তক্ত ও নির্যাতন করে ডিভোর্স করতে বাধ্য করত।কিন্তু এরা প্রত্যকে নিজের সম্মানের কথা চিন্তা করে আইনের আশ্র‍য় না নিয়ে নিজ থেকে ডিভোর্স দিয়ে দিতো।কিন্তু এতে কী সে মুক্তি পেয়েছিল?পাইনি।এবার দেখুন ১৮৬ নাম্বার বিয়ে,সে বর সেজে বসে আছে মজলিশে।কনের বান্ধবী, মানে রাশেদের প্রাক্তন স্ত্রী, কিছুদিন আগে যার সঙ্গে ডিভোর্স হয়েছিল সে তাকে দেখে চমকে উঠেছিল।তারপর বান্ধবীকে বলল,
নীরা তুই কী লোকটাকে ভালো করে চিনিস?
হ্যাঁ চিনি তো।সে একজন সরকারী কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
নীরা এই লোকটা অফিসার টপিসার কিচ্ছু না।সে একটা চিট্ বাটপার।
তুমি জানলে কি করে?
আরে বোকা কিছুদিন আগে ওর সঙ্গেতো আমার ডিভোর্স হয়েছিল।
সত্যি বলছিস তো?
আমি মিথ্যে বলতে যাব কেনো?
কিন্তু সেতো বলল অবিবাহিতা।
সে মিথ্যে বলেছে।আর দেরী না করে পুলিশকে খবর দেহ।
বলতে না বলতে পুলিশকে খবর দেয়া হলো।পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হতে তার “ব্ল্যাকমেইল’র” সকল সত্য বেরিয়ে আসল।তাকে তাৎক্ষণিকভাবে এরেস্ট করে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো। এবং যাবৎ জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলো আইন কর্তৃপক্ষ।
ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to “গল্প ব্ল্যাকমেইল আফছানা খানম অথৈ”

Leave a Reply