গল্প সভ্যতার করুণ সংকট আফছানা খানম অথৈ

0

সভ্যতার করুণ সংকট

আফছানা খানম অথৈ

প্রাইমারী স্কুল টিচার আশিকুর রহমান চাকরী থেকে অবসর নিয়েছেন।কিন্তু এখনো টিচিং ভুলতে পারেননি।তাই পাড়া প্রতিবেশী ছেলে মেয়েদের পড়া দেখিয়ে দেন প্রায়ই সময়।ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের আগের মতো বিদ্যালয়মুখী করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।গরীব দুঃখী ছেলে-মেয়েদের মাঝে মাঝে কাগজ কলম কিনে দেন।প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামুলক তা অশিক্ষিত লোকদের বুঝিয়ে বলেন।প্রায় অনেকে উনার মুল্যবান কথায় সাঁই দেন, ফলো করেন আবার অনেকে করেন না।।এমনিভাবে উনার অবসর জীবন কেটে চলেছে।আসছে 2017 সালের হ্যাপি নিউ ইয়ার।সবদিকে নতুন বছরের আয়োজন চলছে।রাত বারোটা বাজার পর শুরু হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালা।প্রথমে শুরু হয় আতশ বাজি। আশিকুর রহমানের বাড়ির সামনে প্রাইমারী স্কুলের বিল্ডিংটার চাদের উপরে উঠে ইয়ং ছেলে মেয়েরা আতশ বাজি খেলা শুরু করে।সমস্ত আকাশে যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আগুনের ফুলকির মতো আলো জ্বলছে।কিছুক্ষণ পর আবার নিবে যায়।
মাস্টার আশিকুর রহমান ছুটে গেলেন ঐখানে,মানে বিল্ডিংটার চাদের উপরে।তিনি গিয়ে দেখেন সবাই তার ছাত্র-ছাত্রী।টিচারকে দেখে সবাই কেমন জানি আতঙ্কিত হয়ে গেল।সবাই আতশ বাজি বন্ধ করে স্যারকে সম্মানের সহিত সালাম দেয়।তিনি সালামের জবাব দিয়ে এক ছাত্রের নাম ধরে বললেন,
রাফি তোমরা আতশ বাজি বন্ধ করলে কেন?
রাফি চমকে উঠে বলল,
স্যার ইয়ে মানে…।
রাফি আর মানে মানে করতে হবে না,আমাকে দেখে ভয় পেয়েছ না।আরে কোন সমস্যা নেই। তোমাদের বয়সে হ্যাপি নিউ ইয়ারে আমরা ও অনেক মজা করেছিলাম।
সবাই এক সঙ্গে বলল,
সত্যি বলছেন স্যার
ইয়েস সত্যি।
শিক্ষকের মুখে মজার কথা শুনে আবার তারা আতশ বাজি খেলা শুরু হলো।
আশিকুর রহমান সাহেব কিছু সময় ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে মজা করলেন,তারপর বাসায় ফিরে আসলেন।মাঝে কিছু সময় পার হলো। উনার শরীর স্বাস্থ্য আর আগের মতো ভালো যাচ্ছে না।তার উপরে হাই প্রেসারের রোগী।একদিন এক বাচ্চাকে পড়া দেখাতে গিয়ে উনার প্রেসার বেড়ে যায়।উনি পড়ে যেতে চাইলে লোকজন তাকে ধরে ফেলে।তারপর দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যায়।।সময়মতো চিকিৎসা সেবার কারণে আল্লাহপাক কোন রকমে উনাকে সারিয়ে তুলেছেন।কিন্তু উনার বাম পায়ে একটু সমস্যা হয়ে গেছে।আগের মতো ভালো ভাবে হাটতে পারেন না।লাটিতে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে হাটতে হয়।তার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা দু’এক দিন পরপর তাকে দেখতে আসেন।তিনি কিছু সময় তাদের সাথে গল্প করেন।এখনো তিনি শিক্ষার কথা ভুলেননি।কোন ছাত্র ছাত্রীকে পেয়েছেন তো,শিক্ষা সম্পর্কিত এক গাদা আলাপ নিয়ে বসেছেন।
অনেকে বিরক্তবোধ করে, আবার অনেকে কান পেতে শুনে।এমনিভাবে চলছে মাস্টার আশিকুর রহমানের জীবন।
এখন আর আগের মতো দিন তারিখের হিসেব তিনি রাখেন না।ঐ দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি মৃত্যুর কথা প্রতি মুহূর্তে স্মরণ করেন।মনে হয় যেন মৃত্যু উনার খুব নিকটে যে কোন মুহূর্তে আসতে পারে।
এই জন্য এখন আর দুনিয়ার হিসেব নিকেশ নিয়ে ভাবেন না।নামাজ রোজা নিয়ে প্রায় ব্যস্ত থাকেন।কোন এক ফাঁকে যে 2018 Happy new year. এসে গেছে সে কথা তার মনে ছিলো না।রাত বারোটার পর থেকে যখন আতশ বাজি শুরু হয় আলো গুলো আগুনের ফুলকির মতো আকাশে ছড়িয়ে পড়ে তখন উনি তা দেখতে পান।তিনি তার ছোট ছেলের বউকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,
বউ মা আকাশে এসব কি জ্বলছে?
বাবা আজ হ্যাপি নিউ ইয়ার 2018.
তাই নাকি?
জ্বি বাবা।
মাস্টার আশিকুর রহমান সাহেব কথাটা শুনামাত্রই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন।হাতে লাঠি ভর দিয়ে স্কুলের চাদের উপর উঠে গেলেন।দেখলেন কিছু ছেলে মেয়ে আতশ বাজি খেলছে।
আর নোংরা পোশাক পরে ড্যান্স করছে।মাস্টার আশিকুর রহমান বৃদ্ধ হলে ও এখনো মানুষকে ঠিক চিনতে পারেন।তিনি টর্চ লাইট মেরে দেখলেন চাদের উপরা এরা কারা?উনি বৃদ্ধ চোখের চাহনি দিয়ে ঠিক ওদের চিনতে পারলেন ওরা উনার সেই ছাত্রছাত্রী যারা গত হ্যাপি নিউ ইয়ারে শিক্ষককে দেখে ভদ্রভাবে সালাম দিয়ে আতশ বাজি বন্ধ করে দিলেন।কিন্তু আজ সেই ছাত্র-ছাত্রীরা উনাকে দেখে আতশ বাজি বন্ধ করা তো দূরের কথা সালাম ও দিলেন না।তারা গানের তালে তালে নাচছে আর আতশ বাজি খেলছে।
কেউ কেউ নেশা ও করছে।
উনি আর সহ্য করতে পারলেন না।কড়াকড়িভাবে বললেন,
স্টপ রাফি আতশ বাজির নামে এসব কি হচ্ছে, যতসব নোংরামি…।
নেশা খোর আর অনেশা খোর সবাই একসঙ্গে বলল,
কি হয়েছে স্যার এগুলি তো এখন যুগের ফ্যাশন।আপনার ভালো না লাগলে চলে যান।
স্টপ আর একটা কথা ও বলবে না।আমি যা বলি মন দিয়ে শুন।
যাক স্যারের স্টপের সাথে সাথে সবার মুখ অফ।আর এই সুযোগে শিক্ষক বলতে শুরু করলো।
সবাই এক সঙ্গে উত্তর দিবা।
জ্বি স্যার বলুন।
তোমরা মুসলিম না অমুসলিম?
সবাই একসঙ্গে উত্তর দিলো,
স্যার আমরা সবাই মুসলিম।
তাহলে অমুসলিমের মতো কাজ করলে কেন?গত হ্যাপি নিউ ইয়ারে আমাকে দেখে কত সম্মান করেছিলে,সালাম দিয়েছিলে, বছর ঘুরতে তোমাদের এত অধ:পতন।সভ্যতা বলে আছে কিছু?
হেনা শান্তা, রুবি,তোমরা মুসলিম মেয়ে হয়ে এসব কি পোশাক পরেছ,ছেঁড়া স্কিনের ফ্যান্ট হাফ গেঞ্জি।
স্যার এগুলি তো এখন সবাই পরে।
সবাই বিষ খাবে,তাই বলে তুমি ও খাবে,শুন প্রত্যেক মুসলিম মেয়েদের উচিত সামাজিক ও শরীয়ত সম্মত পোশাক পরা।তা না হলে কঠিন পাপের অংশীদার হতে হবে।যা আল্লাহপাক কখনো ক্ষমা করবেন না।
এবার তোমরা বলো, তোমাদের এ পোশাক পরা কি উচিত হয়েছে?
জ্বি না স্যার আমাদের ভুল হয়ে গেছে।আজ থেকে আমরা সামাজিক ও শরীয়ত সম্মত পোশাক পরবো।
এবার মাস্টার আশিকুর রহমান সাহেব তার প্রিয় ছাত্র রাফি,সোহেল,বাপ্পী তাদের পরনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
তোমরা ছেড়া ফ্যান্ট পরেছ কেন?
তারা আমতা আমতা করে বলে,
ইয়ে মানে স্যার…।
কি থেমে গেলে কেন, বলো এটা ও যুগের ফ্যাশন।আরে বোকা ছেলে শুন এটা হচ্ছে অমুসলিমদের পোশাক।ভীনদেশী নায়কদের পরনে এসব পোশাক দেখে তো তোমরা পরতে শুরু করেছ এই তো?
জ্বি স্যার।
কিন্তু ওরা তো অমুসলিম,তোমরা মুসলিম হয়ে অমুসলিমদেরকে কেন ফলো করবে?
স্যার আমরা এতকিছু ভেবে দেখেনি।
আমাদের ভুল হয়ে গেছে স্যার।
ঠিক আছে মানলাম, না বুঝে ভুল করার জন্য।আজকে হ্যাপি নিউ ইয়ার থেকে “দি কেয়ারফুল” আর কখনো এমন পোশাক পরবে না।কারণ এ সমস্ত নোংরা পোশাক ইসলাম বিরোধী ও গুনার কাজ।
ঠিক আছে স্যার আমরা আর কখনো এমন নোংরা পোশাক পরবো না।
এবার তোমাদের সবার উদ্দেশে একটা কথা পবিত্র কোরানে মদ,গাজা,হেরোইন এ সমস্ত জিনিসকে হারাম বলে ঘোষণা করেছেন।তোমাদের মধ্যে এখানে অনেকে নেশা করেছ।আজকের হ্যাপি নিউ ইয়ারের পর থেকে কেউ এ সমস্ত হারাম জিনিস পান করবে না।কারণ এ সমস্ত বড় গুনা কখনো আল্লাহপাক ক্ষমা করবেন না।পরকালে কঠিন সাজা ভোগ করতে হবে।
সবাই এক সঙ্গে নম্র স্বরে বলল,
সত্যি বলছেন স্যার?
হ্যাঁ সত্যি কোরানের কথা কখনো মিথ্যা হয় না।
স্যার আমাদেরকে ক্ষমা করুন।আমরা আর কখনো এমন বাজে নেশা করবো না।
শুন সবাই, ক্ষমা আমার কাছে নয়, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে চাইতে হবে।কি বলেছি মনে আছে তো?
জ্বি স্যার, আজকের হ্যাপি নিউ ইয়ারে শফথ করিতেছি যে আর কখনো,এমন নোংরা পোশাক বাজে নেশা করবো না।ইসলামের বিধি বিধান মেনে চলতে সর্বদা চেষ্টা করবো, “ইনশা আল্লাহ’।
আল্লাহপাক তোমাদের প্রার্থনা কবুল করুক।
সবশেষে সভ্যতা সম্পর্কে দুচারটা কথা বলে আমি বাসায় ফিরে যাব।
জ্বি স্যার বলুন।
আজকে এ সমস্ত নোংরামীর কারণে আমাদের “সভ্যতার করুণ সংকট” দেখা দিয়েছে।ভাবতে খারাপ লাগে আমরা সভ্য মুসলিম হয়ে অমুসলিমদের অসভ্যতাকে ফলো করে চলেছি।যার ধরুণ সভ্যতা আমাদের দিনে দিনে সমাজ থেকে লুপ্ত হতে চলেছে।এভাবে চলতে থাকলে সভ্যতার করুণ সংকট আর ও ভয়াবহরুপ ধারণ করবে।তাই বলছি সময় থাকতে সবাই ভালোর দিক বেচে নাও।তা না হলে পরকালে জাহান্নাম।এটা আমার কথা নয় কোরানের কথা।বাবারা অনেক কড়া কথা বলে ফেললাম।আমার সময় শেষ,আর কদিন বাঁচব।আমাকে ক্ষমা করে দিও সবাই।বিগত বছরের পুরানো জরাজীর্ণতাকে ভুলে এই হ্যাপি নিউ ইয়ার থেকে সবাই সুন্দরভাবে নতুন জীবন শুরু কর,এই কামনা করি।খোদা হাফেজ। চলি।
তিনি লাঠি ভর দিয়ে এগিয়ে চললেন।তার প্রাণ প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা আর থেমে থাকতে পারলো না।স্যারকে বাসায় পৌছে দিলো।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply