“রূপকথার গল্পে আমি”-১২

0

 

(১২)

কুলাউড়ার সঞ্চয়পুর গ্রামে বিরাট এরিয়া জুড়ে একটা বাড়ি। বাড়িটার গেট পেরুলে চুখে পড়ে লম্বা টঙ্গীঘর। এই টঙ্গীঘরের জন্য বাড়িতে ঢুকলে মনে হয় এই বাড়িটা প্রাচীন ঐতিহ্যের মধ্যে একটা। টঙ্গী ঘরের পিছনে বিশাল এরিয়া জুড়ে পশ্চিমে ও পূর্বে দুইটা একতলা বিল্ডিং। উত্তর দিকে একটা বড় ফুলের বাগান আছে। তার ও পিছনে সবজি বাগান। যে দিনের যে সবজি তাই ফলানো হয়। দক্ষিণে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, সুপারি এবং আরো বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ লাগানো। এখানে একটা পুকুর আছে। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি। পুকুর পাড়ে সারি ধরে লাগানো নারকেল, তালগাছ। পুকুরে দুটা শান বাঁধানো ঘাট আছে। পুকুরের পানি খুবই স্বচ্ছ। দূর থেকে থাকালে সাদা কাগজের মত লাগে। পুকুরের মাঝে তাল – নারকেল গাছের ছায়া নীল আকাশের মাঝে অসম্ভব সুন্দর, দেখলে চোখ ফিরাতে ইচ্ছা হয় না।

 

পশ্চিমের বিল্ডিং এ থাকেন খালা-খালু আর ওটাতে খালুর ছোট ভাই। তিনির দুটো মেয়ে শমী ও শম্পা। আর একটা ছেলে নাম শরণ। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে অনেক বছর আগে। সে এখন স্বামীর সাথে আমেরিকাতে থাকে। ছোট মেয়ের এক বছর হল বিয়ের। তার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার। তারা ঢাকাতেই স্যাটেল হয়েছে। শম্পা ও চাকরি করে একটা প্রাইমারি স্কুলে সহকারী শিক্ষিকা পদে। শরণ সে ও সম্প্রতি অর্থনীতিতে সম্মান ও এম.এ ডিগ্রী লাভ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এখন সে কুলাউড়াতেই থাকে এবং এখানকার একটা ব্যাংক-এ চাকরি করে।

খালুর পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া বিষয় সম্পত্তি অনেক। পরিবার বড় হওয়াতে তাদের দু’ভাইয়ের সম্মতিতে এখন আলাদা থাকেন। বাড়িতে কোনো ছোট বাচ্চা নেই। রাহি হল সব ছোট। সে এখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। পড়াশুনায় সারাদিন ব্যস্ত থাকে। শুধু বিকেলের দিকে একটু সময় পায়। আমার সাথে ক্রিকেট, বেডমিন্টন, ক্যারাম, দাবা খেলে বিকেল কাটিয়ে দেয়। আমার ও ভালো লাগে রাহির সাথে খেলতে, সময় কাটাতে।

আজ শুক্রবার, ছুটির দিন। রাহি পাশের বাড়ির তপুকে নিয়ে এসেছে। তপু আর সে একই ক্লাসে একই স্কুলে পড়ে। বিকেল কাটছেনা তাই তপুকে নিয়ে এসেছে খেলবে। আমাকেও ডেকে নিয়ে এসেছে উঠানে। সে ব্যাটিং করবে আমি বলিং আর তপু কিপার। তো শুরু হয়ে গেল খেলা। প্রায় ঘন্টা খানেক খেলে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। রাহি বল মারে আম বাগানের মাঝে গিয়ে বল পড়ে। দৌড়ে যাই বল আনতে। ওখান থেকে দেখি একটা লোক পুকুর ঘাটে বসে আছে। বল ছুড়ে দিয়ে বললম- রাহি আমি আর খেলব না তুমি তপুকে নিয়ে খেল। বলে পুকুর ঘাটের দিকে যাই। প্রথমে পানিতে দুই সিঁড়ি নেমে হাত মুখ ধুয়ে নেই। পানির নাড়া পেয়ে শরণ এদিক ফিরে তাকায়। এগিয়ে গিয়ে সালাম দেই। শরণ মাথা নেড়ে সালামের উত্তর দিয়ে বললেন- আপনি কে?

আমি অধরা, বলে সিঁড়িতে গিয়ে বসতে বসতে বললাম আপনি শরণ ভাইয়া?

হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কি করে জানেন?

রাহির কাছে শুনেছি।

আপনি রাহির কি হন?

খালাতো বোন।

কখন এলেন?

অনেক দিন। ওই যে পাশে একটা কলেজ আছেনা ওখানে ইন্টার-এ ভর্তি হয়ে এসেছি।

কই? আপনাকে তো একদিন ও দেখিনি?

দেখবেন কি করে আপনি তো ব্যস্ত মানুষ। সারা দিন অফিসে থাকেন। আর আপনিতো খালার ঘরে আসেন না?

হ্যাঁ সময় পাই না তাই আসা হয় না।

আমি অবশ্য আপনাকে দুদিন দেখেছি। একদিন অফিসে যাবার সময় আর একদিন রাতে আসার সময়।

একটু হালকা হেসে শরণ বলছে- আপনি আমাদের ঘরে আসেন না কেন?

ভালো লাগে না।

ভালো লাগে না! কেন?

আমার বয়সী কেউ নেই তো তাই। আর পড়াশুনায় সময় কেটে যায়। যে টুকু অবসর পাই রাহির সাথে খেলাধুলা করে কাটিয়ে দেই।

আর কি করে অবসর কাটান।

গান শুনি, মেডিটেশান করি, আর বালিশে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে সুন্দর স্বপ্ন দেখি।

বসে স্বপ্ন দেখা? খুবই মজার হয়, তাইনা? ইচ্ছে মত রঙ লাগিয়ে দেয়া যায়।

হ্যাঁ হ্যাঁ! বসে বসে স্বপ্ন দেখলে কখনো আকাশের পরি হয়ে সমস্ত আকাশটা অধিকার করা যায়। আবার কখনো রাজকুমারী হয়ে রাজ প্রাসাদ দখল করা যায়। আবার কখনো বা রাস্তার অসহায় ছোট্ট বালিকা হয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত অসহায়ের মত ঘুরে ঘুরে দুঃখী মানুষের দুঃখ অনুভব করতে ইচ্ছা হয়। আমার মনের মধ্যে সব সময় একটা আশা পুশে আসছি “আমি অন্তত পক্ষে একটি ভালো কাজ এ পৃথিবী, এ সমাজ, এই মানুষের জন্য করতে চাই।

আল্লাহ তুমার ইচ্ছা পূরণ করুন!

আমি একটু হাসি আর কোন কথা বলতে পারিনি। পুকুরের পানির দিকে চেয়ে আছি।

শরণ বলছে-সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে ঘরে যাবেন না?

বললাম- হ্যাঁ তাইতো! আপনার সাথে প্রথম পরিচয়ে অনেক কথা বলে ফেলেছি আপনি কিছু মনে করবেন না!

না না মনে করার কি আছে? আমার ভালো লেগেছে।

রাহি আমার অনেক ছোট ওর সাথে সবকিছু শেয়ার করা যায় না। তাই অনেক দিন পর কথা বলার মানুষ পেয়ে বলে ফেলেছি। আচ্ছা আমি আসি বলে বিদায় নিলাম।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Sumana Begum

Author: Sumana Begum

আমি সুমানা বেগম। সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। আমার বাবার নাম হাজী মো. আতাউর রহমান এবং মায়ের নাম তায়্যিবা খানম। তারা কেউ বেঁচে নেই। আমি তাদের সব ছোট মেয়ে। বিয়ানী বাজার সরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি এবং সিলেট এম. সি. কলেজ থেকে মাষ্টার্স। আমার স্বপ্ন ছিল চাকরি করব। কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে তেমন উন্নতি করতে পারিনি। তবে আমার আশা পূরণ হয়েছে আমি কিছু দিন শিক্ষকতা পেশায় কাজ করতে পেরেছি। আমি বিবাহিত এবং আমার একটি আট বছরের মেয়ে আছে নাম মাহনূর জান্নাত।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to ““রূপকথার গল্পে আমি”-১২”

Leave a Reply