AddText 05 25 01.08.18

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী?

0

মুশরিক শব্দটির উৎপত্তি শিরক থেকে। আর শিরক হলো আল্লাহর সাথে শরিক করা। যিনি শিরক করেন তিনি হচ্ছেন মুশরিক। আল্লাহ মুশরিকদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং পরিনতির কথা পবিত্র কুরআনের নানান জায়গায় বর্ণনা করেছেন। আজ আমরা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র “মুশরিক” সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। 

যাতে আমাদের কোনো কাজে কর্মে কথা বার্তায় ঈমান আকিদায় মুশরিকি চরিত্র ঢুকে না পড়ে। কেননা মুশরিক বা শিরককারী কখনোই আল্লাহর কাছে কিয়ামতে ক্ষমা পাবে না। তাই আজকের এই টপিকটি সকল মুসলমানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মুশরিক সম্পর্কে জানতে চাইলে আগে জানতে হবে তাওহীদ কী এবং শিরক কী। 

সূচিপত্র

তাওহীদ কী?

তাওহীদ একটি আরবি শব্দ যার সহজ সোজা অর্থ হলো এক, একক, অদ্বিতীয়, একত্ব। ইসলামের আলোকে তাওহীদ শব্দের অর্থ হলো আল্লাহ এক, একক এবং অদ্বিতীয় অর্থাৎ তাঁর মতো দ্বিতীয় কোনো ইলাহ বা উপাস্য বা অন্য কেউ নেই।

অর্থাৎ আল্লাহর একত্ব তথা একত্ববাদকেই বলা হয় “তাওহীদ”। একইসাথে তাঁর মতো এই সৃষ্টি জগতে এবং এই সৃষ্টি জগতের বাইরে আর কেউ নেই থাকতে পারে না। সোজা কথায় আল্লাহ ছাড়া এই সৃষ্টি জগতে অন্য কোনো দ্বিতীয় রব বা সৃষ্টিকর্তা, বিধানদাতা, উপাস্য, ইলাহ বা কতৃত্ববাদী ইত্যাদি কেউ নেই। আল্লাহ এককভাবেই  সর্বেসর্বা একমাত্র রব এবং ইলাহ।

শিরক কী?

শিরকের অর্থ হলো অংশীদার করা। অর্থাৎ যেকোনো বিষয়ে কারো সাথে অন্য কারো শরীক সাব্যস্ত করাই হলো শিরক। আমরা যখন শিরক শব্দটি যখন আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করি, তখন এর অর্থবোধক অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহর যাবতীয় কিংবা সামান্য ক্ষমতা বা  ইবাদত কিংবা কতৃত্বের সাথে  অন্য কাউকে শরিক বা অংশীদার করা হচ্ছে শিরক। 

মোটকথা আল্লাহর নিজস্ব যেসমস্ত গুণাবলীর কারণে তিনি তাওহীদের দাবি করেন, সেইসব গুণাবলী আল্লাহরও আছে আবার একইসাথে অন্য কারোরও যেমন অন্য কোনো ইলাহ বা আল্লাহরই কোনো বান্দার আছে এমন ধারণা বা বিশ্বাস করাটাই হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক করা।

মুশরিক কাকে বলে

একজন মানসিকভাবে সুস্থ সবল মানুষ যখনই আল্লাহর কোনো গুণাবলীর সাথে অন্য কাউকে শরিক করে তখন তাকে মুশরিক বলে। সুতরাং যারাই শিরক করে তারাই হচ্ছে মুশিরক। সোজা কথায় যেসব ব্যক্তি আল্লাহর রুবূবিয়্যাত, উলুহিয়্যত এবং আল্লাহর আসমা ও সিফাতের সাথে অন্য কাউকে শরিক করে কিংবা অংশীদার বানায়, তখন তাকে মুশরিক বলে।  

অর্থাৎ আল্লাহ যেমন সৃষ্টিকর্তা ও রিজিকদাতা, ঠিক তেমনি অন্য কাউকে এমন কিংবা কম বেশী সৃষ্টিকর্তা বা রিজিকদাতা মনে করে তাহলে তা শিরক হবে। একইভাবে উলুহিয়্যত তথা ক্ষমতা,  রাজত্ব ও আইনকানুন হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর। আর আল্লাহর এইসব আইনকানুনকে পাশ কাটিয়ে কিংবা বাদ দিয়ে সেখান নিজেদের আইনকানুন বা অন্য কারোর আইনকানুন জীবনবিধান পালন করাই হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক করা।

তদ্রুপভাবে আল্লাহর নিজস্ব যেসব গুণাবলী রয়েছে, যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোনো ক্ষমতা নেই, সেইসব গুণাবলীতেও অন্য কাউকে গুণান্বিত করা হচ্ছে শিরক।

যেমন উদাহরণ স্বরুপ আল্লাহ হচ্ছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্ধারকারী, সন্তান প্রদানকারী, সুখ দুঃখ প্রদানকারী ইত্যাদি। এখন কেউ আল্লাহর এইসব গুণের সাথে অন্য কাউকে এমন উদ্ধারকারী, সন্তান প্রদানকারী বা সুখ দুঃখ দেওয়ার মালিক মনে করলে তাকে বলা হবে মুশরিক।

মোটকথা যদি কেউ এমন মনে করে যে আল্লাহ যা পারেন করেন বা করার ক্ষমতা রাখেন তা অন্য কেউ করতে পারে, তাহলে  ঐ ব্যক্তি মুশরিকে পরিনত হবে।

একইসাথে আল্লাহর স্ত্রী সন্তান পুত্র কন্যা ইত্যাদি আছে মনে করলে। কিংবা আল্লাহর নিজস্ব শরীর থেকে কাউকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে স্বীকার করলে তাকে বলা হচ্ছে মুশিরক।

শুধু তাইনয় আল্লাহর উলূহিয়্যাতে তথা আল্লাহ বান্দা থেকে যেসব ইবাদত পাওয়ার যোগ্য যেমনঃ সালাত সিয়াম সিজদা মানত কুরবানী ইত্যাদি। ঠিক একইভাবে সিজদা বা কুরবানী কিংবা মানত ইত্যাদি আল্লাহর পাশাপাশি অন্য কাউকে করলে ঐ ব্যক্তি মুশরিকে পরিনত হবে।

মুশরিক কারা ও তাদের বৈশিষ্ট্য

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি মুশরিক কাকে বলে। আল্লাহ পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে বিভিন্ন ধরনের মুশরিকদের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি প্রত্যেক মুশরিকদের একমাত্র ইলাহ হিসাবে আল্লাহকেই স্বীকার করার জন্য বারবার তাগিদ দিয়েছেন।

যদিও তারা আল্লাহকে রব হিসাবে স্বীকার করতো। কিন্তু এইসব মুশরিকরা একমাত্র  আল্লাহ নয় বরং পাশাপাশি আল্লাহর অন্যান্য বান্দাকেও ইলাহ হিসাবে মানতো। এইসব মুশরিকরা শুধু তৎকালীন সময়ে আরব দেশে ছিলো এমনটা নয়। বরং এখনো অনেক ঈমানদার মুশরিক আমাদের আশেপাশেই রয়েছে। যাদের হাকিকত জানি না বলে আমরা তাদের চিনতে পারি না। আর তাই এখন আমরা দেখব কুরআনের আলোকে বিভিন্ন মুশরিকদের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য। যাদের কথা কুরআন এবং হাদিসে রয়েছে। এবং তারা এখনো আমাদের সমাজে কীভাবে বিরাজমান। 

মুশরিকরা আল্লাহকে রব হিসাবে মানে

যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে তারা অবশ্যই আল্লাহকে রব হিসাবে মানে এবং জানে। আর তাই তৎকালীন মক্কার মুশরিকরা আল্লাহকে তাদের রব তথা  সৃষ্টিকর্তা হিসাবে স্বীকার করতো। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

আল্লাহ অন্য আয়াতে আরো বলেন,

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

উপরোক্ত আয়াতসহ কুরআনের আরো অসংখ্য আয়াতে মুশরিকরা তাদের রব হিসাবে একমাত্র আল্লাহকেই স্বীকার করে। এরা আল্লাহকে স্বীকার করার পাশাপাশি তাঁর সাথে শিরক করত।

মুশরিকরা ইব্রাহীম (আ.) এর অনুসারী

তৎকালীন সময়ে আরবের মুশরিকরা নিজেদের পরিচয় দিত হানীফ হিসাবে। এই হানীফ অর্থ হলো সব মিথ্যা ধর্মের প্রতি বিমুখ এবং একমাত্র আল্লাহর কাছে আত্নসমর্পণকারী, একনিষ্ঠ। একইসাথে তারা দাবি করতো যে তারা মিল্লাতে ইব্রাহীমের উপর প্রতিষ্ঠিত। অথচ আল্লাহ পবিত্র কুরআনে তাদের এই দাবি স্বীকার করেননি। তাদের দাবির বিপক্ষে আল্লাহ জবাব কুরআনে দিচ্ছেন এভাবে,

 

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

অর্থাৎ তৎকালীন আরবের মক্কার মুশরিকরা নিজেদের ইব্রাহীমের অনুসারী দাবি করলেও  ইব্রাহীম (আ.) তাদের মতো কখনোই মুশরিক ছিলো না। তিনি ছিলেন একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারী। তাই তিনি আল্লাহর সাথে কোনো শরিক বা অংশীদার সাব্যস্ত করেননি। এবং আমাদের রাসুল (সা.) ও হচ্ছেন ইব্রাহীমের অনুসারী। তাই তিনিও আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করেন না এবং মুশরিকদেরও অংশীদার তথা শিরক না করার জন্য আহবান জানান।

মুশরিকেরা ঈমান আনে

আমাদের অনেকেই মনে করে যারা মুশরিক তারা ঈমান আনে না। কিংবা যারা ঈমান আনে তারা শিরক করতে পারে না। কিন্তু এটা সত্য যে, যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে তারা এক আল্লাহর উপর ঈমান এনে তবেই শিরক করে। 

কেননা মুশরিকরা মূলত আল্লাহকে বিশ্বাস করে। একইসাথে আল্লাহকে সৃষ্টিজগতের সবকিছুর মালিকও মনে করে। কিন্তু তারা আল্লাহকে মানার তথা আল্লাহর ইবাদত করার পাশাপাশি অন্যান্য দেবদেবী কিংবা আল্লাহর কোনো নবী রাসুল ফিরিশতা কিংবা  আল্লাহর কোনো অলি বা বুজুর্গকেও আল্লাহর সমতুল্য মনে করে তাদেরও ইবাদত করে। 

মোটকথা তারা বিশ্বাস করে যে সবকিছুর ক্ষমতা আল্লাহর। তারপরও এইসব দেবদেবী কিংবা আল্লাহর অলি বা বুজুর্গদেরও কিছু না কিছু ক্ষমতা আছে। তারা তাদের এই ক্ষমতার মাধ্যমে ভক্ত মুরিদদের নানান উপকার করে। একইসাথে তারা এটাও বিশ্বাস করে যে, এইসব বর্তমান অলি আউলিয়া কিংবা তৎকালীন মক্কার দেবদেবীরা  আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করে। অতএব তারাও আল্লাহর উপর ঈমান এনে তাঁর সাথে শিরক করত। আর তাই তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

 

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

কুরআনের এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে, অতীত বর্তমান ভবিষ্যতে এমন কিছু মানুষ ছিলো আছে এবং থাকবে যে, যারা আল্লাহর উপর ঈমান রাখার পরও তাঁর সাথে শিরক করবে। অতএব এই মুশরিকরা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত পৃথিবীতে জারি থাকবে।

যেমন বর্তমান সময়ে মুসলমানদের মধ্যে একদল রয়েছে সুফিবাদী সুন্নি। যারা সরাসরি মাজারে কবরে সিজদা করে। তাদের বিশ্বাস এই মাজার বাসী কিংবা কবরবাসী তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে। এই মাজার কবরবাসীর উছিলায় তারা আল্লাহ থেকে নাজাত পাবে ইত্যাদি। অথচ এটা সুস্পষ্ট শিরকের কাজ। 

মুশরিকরা নামাজি ও তাওয়াফকারী

তৎকালীন মক্কার মুশরিকরা নিজেদের ইব্রাহীমের অনুসারী দাবি করতো। তাই তারা অতীত থেকেই তাদের মতো করে কাবা ঘরে নামাজ কালাম আদায় করত এবং কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ করত। অথচ  তাদের নামাজ কালাম তাওয়াফ কিছুই ইব্রাহীম (আ.) এর মতো ছিলো না। 

তারা ইবাদত করত বেহায়াপনার মতো। তখনকার মুশরিকরা উলঙ্গ হয়ে কাবা ঘরের চারিদিকে তাওয়াফ করত। তাওয়াফের পাশাপাশি তারা মুখে আঙ্গুল দিয়ে শিস বাজাত এবং দুই হাত দিয়ে তালি বাজাতো। আর এই কাজটিকেই তারা ইবাদত ও পুণ্যের কাজ বলে মনে করত। এই সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

এই আয়াতে আল্লাহ তৎকালীন মুশরিকদের নামাজ কালামকে সরাসরি অস্বীকার করছেন। অর্থাৎ তারা যাই করতো না কেন, তা কখনোই সঠিক ছিলো না। একইভাবে বর্তমান সময়ে একদল মুসলমান আছে, যারা মাজার দরবারে গিয়ে নামাজ কালাম তাওয়াফ ইত্যাদি করে। যা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। তারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট না করে তাঁর বান্দাদের সন্তুষ্ট করতে মাজারে যায় এবং ইবাদত করে। অথচ কবর মাজার দরগাহ ইত্যাদি ইবাদতের স্থান নয়।

 

এই বিষয়ে রাসুল (সা.) এর বিশেষ হুশিয়ারি রয়েছে। একটি হাদিসে হযরত আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, 

 

মুশরিক কে মুশরিকের বৈশিষ্ট ও তাদের পরিনতি কী৬

অনুরূপ সহিহ বুখারী  মাগাযী অধ্যায়ে  ৪৪৪৩ নাম্বার হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) তাঁর শেষ রোগাক্রান্ত অবস্থায় বার বার বলেছেন, 

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

একইভাবে সুনানে আবু দাউদ জানাযা অধ্যায় ৩২২৭ নাম্বার হাদিসেও অনুরূপ কথা এসেছে। সুতরাং মুসলমান দাবি করে কবর মাজারে সিজদা তাওয়াফ কিংবা নামাজ কালাম পড়া বা আদায় করা সরাসরি নিষিদ্ধ। অথচ এই নিষিদ্ধ কাজ করেই একদল মাজারভক্ত আজ মুশরিকে পরিনত হয়েছে। আমাদের সমাজে এমন মুশরিক ও শিরকি কাজ আজকাল অহরহই দেখা যাচ্ছে। 

মুশরিকরা দান সদকাকারী

যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে তারা আল্লাহর রাস্তায় দান সাদকাও করে। তৎকালীন মক্কার মুশরিকরাও যথেষ্ট পরিমাণ দান সদকা করতো। তাদের একদল সবসময়ই গরীব দুঃখীদের জন্য দুহাতে খরচ করতো। এমনকি তারা বংশ পরম্পরায়  হজ্জ্ব পালনকারীদের জন্য পানি খানাপিনাসহ সবকিছুর ব্যবস্থা করতো। এবং  সৎ পথের উপার্জন ধর্মীয় কাজে লাগাতো।

শুধু তাইনয় আজকের যে বর্তমান কাবা শরীফ, তার পূনঃনির্মাণও করেছিল এই মুশরিকরা। তারা আল্লাহর সাথে শিরক করলেও আল্লাহর ঘর কাবা নির্মাণের সময় সৎ পথের আয় দিয়েই কাবা শরীফ নির্মাণ করেছিল। এখানে ইতিহাস সাক্ষী যে, সেই সময় সৎ টাকার অভাবে কাবার দেয়াল অর্ধেক রেখেই তৈরি করা হয়েছিল।

অথচ তাদের টাকাপয়সার কোনো অভাব ছিলো না। কিন্তু তাদের সেই অর্থ সৎ আয়ের না হওয়ার কারনে তারা তা কাবার মতো পবিত্র জায়গায় খরচ করলো না। এ থেকেই তাদের আল্লাহর প্রতি ঈমান কতটুকু শক্তিশালী ছিলো তা বুঝা গেলো। তারা মুশরিক হলেও আল্লাহ বিশ্বাসী এবং ভীরু ছিলো। 

মুশরিকরা কুরবানি ও হজ্ব পালনকারী

আরবের মক্কার মুশরিকরা ছিলো হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর অনুসারী। একারণে তারা তাঁর নির্দেশিত হজ্জ্বে এবং কুরবানীর আচার অনুষ্ঠান পালন করে আসত। আর তাই তারা প্রতিবছরই হজ্জ্ব পালন এবং কুরবানী দিত।

তখনকার মুশরিকদের কিছু গোষ্ঠী ছিলো  কাবা ঘরের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে। আর কিছু ছিলো হজ্জ্ব পালনকারীদের আপ্যায়নের দায়িত্বে।  আর তারা তাদের নিয়মেই উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করে হজ্জ্ব আদায় করতো। উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করার পেছনে তাদের যুক্তি ছিলো আমরা বিভিন্ন পাপে আল্লাহর কাছে পাপী হয়ে গেছি। আর তাই আল্লাহ যেভাবে আমাদের দুনিয়ায়  পাঠিয়েছেন সেই ভাবেই তার কাছে হাজির হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে।

আর এভাবে হজ্জ্ব পালনের পর তারা কুরবানীও করতো। যদিও তারা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব পালন করত, কিন্তু কুরবানি করার সময় তারা আল্লাহর সাথে তাদের দেবদেবীদেরও শরিক করত।

অর্থাৎ তাদের পশু কুরবানীর কিছু অংশ আল্লাহর জন্য, আর কিছু অংশ তাদের পূর্ববর্তী দেবদেবী কিংবা অলি আউলিয়ার মূর্তির জন্য দিতো। এখানে সবচেয়ে মজার বিষয় ছিলো, তারা আল্লাহর জন্য যে ভাগ নির্ধারণ করত। সেখান থেকে তারা নিজেদের জন্য নিয়ে নিত। আর তাদের দেবদেবী বা অলি আউলিয়ার গুলো ওভাবেই পড়ে থাকত।

এই বিষয়ে আল্লাহ সুস্পষ্ট আয়াত নাযিল করেছে সূরা হজ্জ্ব এর ৩৭ নং আয়াতে। এখানে আল্লাহ বলেন –

 

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

উপরোক্ত এই আয়াতে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, আল্লাহর কাছে কখনোই কুরবানির পশুর গোস্ত পৌঁছায় না। বরং যিনি কুরবানি করছেন, তার অন্তরের তাকওয়াটুকুই তাঁর কাছে পৌঁছায়। এই আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট ছিলো মুশরিকদের কুরবানীকে ইংগিত করেই। যা সুরা আনআমের ১৩৬ নং আয়াতে এসেছে। 

এখানে মুশরিকদের কুরবানী এবং মুসলিমদের কুরবানীর পার্থক্য বুঝানো হয়েছে। (ইবনে কাছীর) অর্থাৎ ইসলামে মুসমানরা কুরবানী করবে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার উদ্দেশ্যে। কেননা মুশরিকরা কুরবানী করতো আল্লাহসহ তাদের অন্যান্য দেব দেবী ও অলি আউলিয়াদের উদ্দেশ্যে। তাই কখনোই আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানি করা যাবে না।

অথচ আমাদের সমাজে সুফি সুন্নিরা প্রতিটি মাজার দরবার করব দরগাহয় গিয়ে তাদের সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানি দিয়ে থাকে। তাদের উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট। তারা এইসব করব বা মাজারবাসীর কাছে গিয়ে দুনিয়াবী বিভিন্ন কিছু চায়। আর যখন আল্লাহ তাদেরকে তা দেন, তখন তারা মনে করে এই মাজার কিংবা কবরবাসীই তাদের এইসব দিয়েছেন।

সুতরাং তাদের দরবারে গিয়ে গরু মহিষ জবাই করে কবরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখায়। অথচ এটা সরাসরি সুস্পষ্ট শিরক। কেননা কোনো কবরবাসী কখনোই কিছু দিতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ শরিয়ত বিরোধী আকিদা। এই আকিদা যারা বিশ্বাসী তারা সরাসরি শিরক করে মুশরিকে পরিনত। 

বিপদে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা

আমরা আগেই জেনেছি তৎকালীন আরব দেশের মক্কার মুশরিকরা আল্লাহকে স্বীকারের পাশাপাশি তাদের দেব দেবী ও আল্লাহর অলি আউলিয়াদের মূর্তিকেও ইলাহ হিসাবে ইবাদত করত। যখন তারা ভালো খবর কিংবা সুসংবাদ পেতো তখন তারা তাদের দেবদেবী অলি আউলিয়াদের মূর্তির কাছে হাদিয়া তোফা দিত। 

অথচ বিপদ আপদে কখনোই তারা তাদের মূর্তিদের কাছে সাহায্য চাইত না। আর তাই যখনই তারা বিপদে পড়ত তখনই শুধুমাত্র আল্লাহকে সাহায্য করার জন্য ডাকতো এবং শুধু আল্লাহ‌র কাছেই সাহায্য কামনা করতো। এই বিষয়ে আল্লাহ বলেন,

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, 

 

মুশরিক কে মুশরিকের বৈশিষ্ট ও তাদের পরিনতি কী১০

 

উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও আরো অসংখ্য আয়াতে এটা প্রমাণিত যে যারা মুশরিক তারা বিপদে আপদে  শুধুমাত্র এক আল্লাহকেই স্বরণ করতো। কেননা এটা তাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে যেকোনো বিপদে তাদের দেবদেবীরা কিছুই করতে পারবে না একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। তাই তারা বিপদে উদ্ধার বা যেকোনো মনোকামনা পূরণ করতে  একমাত্র আল্লাহই করতে পারেন।

অথচ আমাদের বর্তমান সমাজের অধিকাংশ মুসলমানদের ধারণা ও আকিদা তৎকালীন মুশরিকদের চেয়েও খারাপ। তৎকালীন মুশরিকরা বিপদে আল্লাহর সাহায্য চাইলেও বর্তমান সময়ের সুফি সুন্নিরা সরাসরি তাদের পীর অলি আউলিয়াদের নাম ধরে সাহায্য চায়। তারা কথায় কথায় গাউসুল আজম, খাজা দস্তগীর, মোহছেন আউলিয়া, মাইজভান্ডারী, বাবা ভান্ডারী, বদনা শাহ, মালেক শাহ ইত্যাদি নাম ধরেই সাহায্য প্রার্থনা করে।

অথচ গাউসুল আজম অর্থ হলো সর্বোচ্চ উদ্ধারকারী। আর সর্বোচ্চ উদ্ধারকারী হলো একমাত্র আল্লাহ। আর আমাদের অধিকাংশ মানুষই নিজেদের যেকোনো বিপদে আপদে ইয়া গাউসুল আজম বলে আব্দুল কাদের জিলানীকে কিংবা গাউসুল আজম মাইজভান্ডারীকে ডাকে। তাদের ধারণা এরাই কবর থেকে তাদেরকে সাহায্য সাহায্য সহযোগিতা করবে এবং করে। যা সরাসরি মুশরিকী আকিদার চেয়েও খারাপ। 

মূর্তি ও অলি আউলিয়ারা সুপারিশকারী

তখনকার সময় আরবের মুশরিকরা দেব দেবী বা অলি আউলিয়া ইত্যাদির মূর্তি পূজা এইজন্যই করতো, যাতে এইসব অলি আউলিয়ারা  আল্লাহর কাছে তাদের ব্যাপারে সুপারিশ করে। কেননা তাদের ধারণা ও বিশ্বাস ছিলো যে, তারা যেহেতু নানান পাপ কাজ করেছে সেহেতু তারা পাপী। আর তাই  আল্লাহ তাদের কথা সরাসরি শুনবেন না বা রাখবেন না। যেকারণে এমন কাউকে দিয়ে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে হবে, যারা আল্লাহর কাছে প্রিয়।

এইকারণে মুশরিকরা দেবদেবী ও অলি আউলিয়াদের সুপারিশকারী হিসাবে ডাকত। যেহেতু তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা সেহেতু তাদের কথা আল্লাহ শুনবেন এবং তাদের ভক্ত মুরিদদের দুঃখ দুর্দশা দূর করে দিবেন।  এই বিষয়ে পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, 

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

আল্লাহ আরো বলেন,

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

সুতরাং এইসব আয়াতে মুশরিকদের মনোভাব খুবই সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তারা ভালো করেই জানে যে, এরা (অলি আউলিয়ার মূর্তি বা কবরবাসী) আমাদের কোন উপকার করার ক্ষমতা রাখে না। তবে তাঁরা (অলি আউলিয়ারা) আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য সাফাই বা সুপারিশ করে আমাদের প্রয়োজন দুঃখ দুর্দশা বিপদ আপদ ইত্যাদি দূর করে দিবেন। 

তখনকার মুশরিকদের মতো আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষের ধারণা এবং আকিদা হলো, এইসব কবরবাসী, মাজারবাসী, পীর অলি আউলিয়ারা তাদের ভক্ত মুরিদদের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। 

বিশেষ করে কিয়ামতের ময়দানে এই অলি আউলিয়ারাই তাদের ভক্ত মুরিদদের যতই পাপ করুক না কেন জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। অথচ পবিত্র কুরআনে এবং হাদিসে কিয়ামতের যে ভয়াবহ বর্ণনা করা হয়েছে তাতে সেখানে কেউ কাউকে রক্ষা করা দূরের কথা, বরং রাসুল (সা.) ছাড়া  সকল নবী রাসুলই আল্লাহর ভয়ে তটস্থ থাকবেন।

আল্লাহ সরাসরি কুরআনের উল্লেখ করেছেন সেদিন কেউ কাউকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ যারা ঈমানদার তাদেরকে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সাহায্য সহযোগিতা করবেন। তবে এখানে শর্ত হচ্ছে ঈমান থাকা। অথচ যারা এই আশায় বসে আছেন, তাদের ঈমান আকিদারই কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।

যাদের ঈমান আকিদার ঠিক নেই তারা কীভাবে আল্লাহর অলি থেকে সাহায্য সহযোগিতা পাবেন?

তারা বহু উপাস্যবাদী

আরবের মুশরিকরা ছিলো বহু উপাস্যবাদী। অর্থাৎ তারা নানান কারণে নানান প্রয়োজনে নানান ধরনের দেবদেবীর পূজা করত। কেননা তারা এটা পছন্দ করতো না যে, তাদের শুধুমাত্র একজন আল্লাহই রব থাকবে। মুশরিকদের চিন্তা চেতনা ছিলো যে,  যতবেশী ইলাহ বা রব থাকবে ততবেশী মঙ্গল। কেননা যতবেশী দেবদেবীর পূজা করা হবে ততবেশী সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যাবে।

সুতরাং একজনকে ডেকে কখনোই কোনো লাভ নেই। একজনের শক্তি আর অধিকজনের শক্তি কি এক হতে পারে? অতএব এক আল্লাহ নয়, বরং আল্লাহর পাশাপাশি আরো রব, ইলাহকে ডাকা প্রয়োজন। তাই তারা নানান দেবদেবী, অলি আউলিয়ার পূজা শুরু করল। আর এটাই ছিলো তাদের অন্তর্নিহিত চিন্তা চেতনা। যে কথা কুরআনেও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে। কুরআনে এসেছে, 

মুশরিক কে মুশরিকের বৈশিষ্ট ও তাদের পরিনতি কী১৩

 

এই আয়াত থেকেই মুশরিকদের মনোভাব সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। রাসুল (সা.) যখন সকল দেবদেবী অলি আউলিয়ার মূর্তির বিপরীতে একমাত্র এক আল্লাহর ইবাদতের ডাক দিল, তখনই তারা সম্পূর্ণ আশ্চর্য হয়ে গেল! কেননা এটা তাদের জন্য খুবই বিস্ময়কর এবং আশ্চর্যজনক ব্যাপার যে এতগুলো রব বা ইলাহকে ছেড়ে তারা কীভাবে একজনের ইবাদত করবে? আর তাই তারা কখনোই  এক আল্লাহতে সন্তুষ্ট থাকতে চায়নি। ফলে তারা আল্লাহর পাশাপাশি  বিভিন্ন দেবদেবীকেও উপাস্য হিসাবে গ্রহণ করে।

মক্কার মুশরিকদের মতো আমাদের মুলমানদের মধ্যেও যারা কবরবাসী মাজারবাসীর সিজদা মানত করে। তারাও এক এক অলি আউলিয়াকে এক এক কারণে ভক্তি শ্রদ্ধা করে। এইসব অলি আউলিয়ারা কেউ মামলা মোকাদ্দামায় জিতিয়ে দেয়, কেউ বিপদ আপদে সাহায্য করি, কেউ সন্তান দিয়ে সাহায্য করে, কেউ পরীক্ষায় পাশ করিয়ে সাহায্য করে, কেউ ফসল ফলাদি দিয়ে সাহায্য করে ইত্যাদি। 

এইসব কারণে এক এক মাজারের ভক্ত এক এক রকম। এইসব ভক্ত মুরিদরা তাদের নানান প্রয়োজনে নানান পীর অলি আউলিয়াকে ডেকে থাকে। যেমনটা তৎকালীন মুশরিকরা করত। অথচ আল্লাহ বলেন, তিনি সর্বোত্তম সাহায্যকারী। এবং তিনি ব্যতীত তাঁর মোকাবেলায় এই পৃথিবীতে আর কোনো সাহায্যকারী নেই।

একইসাথে তিনি তাঁর ক্ষমতা কাউকে ভাগ করে দেননি যে, তাঁর বান্দারাই নানান ক্ষমতার অধিকারী হয়ে মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা করবে। সুতরাং আল্লাহ ছাড়া আল্লাহর মোকাবেলায় আর কোনো সাহায্যকারী থাকতে পারে না।  অতএব যারাই আল্লাহ ছাড়া পীর অলি আউলিয়াদের সাহায্যকারী মনে করে থাকে তারা সরাসরি মুশরিকী আকিদা পোষণ করে আছে।

মুশরিকরা আল্লাহর দ্বীনকে অপছন্দ করে

আরবের তৎকালীন মুশরিকরা আল্লাহকে বিভিন্নভাবে মানলেও কখনোই আল্লাহর দ্বীন “ইসলামকে” তথা আল্লাহর জীবনবিধানকে পছন্দ করেনি। তারা শুধু মুখেই আল্লাহকে স্বীকার করত। কিন্তু কাজে কর্মে কখনোই আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে নেয়নি। যে কারণে তারা ইসলামের বিধি নিষেধ তথা ইসলামী শরিয়তকে কখনোই স্বীকার করে নেয়নি।

আর এই কারণেই তারা প্রতিনিয়তই রাসুলুল্লাহ (সা.) এর বিরোধিতায় পড়ে থাকতো। যাতেকরে আল্লাহর রাসুল তাঁর দ্বীন আর কারো কাছে পৌঁছেতে না পারে।  মুশরিকদের এই অপতৎপরতা এবং অপছন্দের  কথা কুরআনে এসেছে এভাবে,

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

 

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

এইসব আয়াতে স্পষ্ট এসেছে যে, আল্লাহর রাসুল যে কুরআন মানুষের জন্য নিয়ে এসেছেন তা মুশরিকরা অপছন্দ করত। অর্থাৎ তারা কুরআনের নানান বিধি বিধানকে অপছন্দ করত এবং তাদের এইসব আইনকানুন পছন্দনীয় ছিলো না।

তৎকালীন মুশরিকদের মতো আমাদের সমাজেও একশ্রেণীর মুসলমান আছে, যারা সুফি সুন্নি আকিদায় বিশ্বাসী। তারাও কুরআনের নানান আইনকানুন এবং রাসুলের নানান নির্দেশিত পথ এবং সুন্নাহকে অপছন্দ করে।

এই কারণে তারা তাদের আকিদায় এমন এমন সব আমল ও বিশ্বাস যুক্ত করে, যা সরাসরি কুরআন হাদিসের বিরোধী। এমনকি তাদের যখন কুরআন এবং হাদিসের অনুসরণের দিকে আহবান করা হয়, তখন তারা এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সুতরাং মুশরিকরা যেমন কুরআনের বিধান অপছন্দনীয় ছিলো, ঠিক তেমনি এরাও তাই করে মুশরিকী আকিদায় পর্যবসিত। 

মুশরিকরা  মানত করে

রাসুল (সা.) এর সময়ে যারা মুশরিক ছিলো তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে মান্নতের প্রথা প্রচলিত ছিলো। একইসাথে তারা ভাগ্য নির্ধারণে বিশ্বাসী ছিলো। তাদের ছোট বড় যেকোনো ঘটনা বা যেকোনো সফর বা যেকোনো কাজে যাওয়ার আগে তা ভালো নাকি মন্দ তা জানার জন্য  তীর দিয়ে ভাগ্য গনণা করতো। 

এই ভাগ্য গনণায় ভাগ্য খারাপ হলে কিংবা  যেকোনো উদ্দেশ্য পূরণের নিমিত্তে মুশরিকরা যথেষ্ট মান্নত করতো। এমনকি তাদের মান্নতও ছিলো ব্যাপক পরিধির এবং একইসাথে অচিন্তনীয়!

আমরা বিভিন্ন সীরাত গ্রন্থে থেকে জানতে পারি মানতের কারণে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর দাদা আবদুল মোত্তালিব নিজ পুত্র আবদুল্লাহকেও কাবার পাশে কোরবানী দিতে চেয়েছিল। আর এই ঘটনা ছিলো  যমযম কূপ পুনঃখননের সময়। আর এই মানতের কারণেই আব্দুল্লাহর পরিবর্তে ১০০টি উট কুরবানীর দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন। এটা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

অর্থাৎ মক্কার তৎকালীন মুশরিকরাও মানত করতো তার প্রমাণ পবিত্র কুরআনে সুরা হজ্জ্বের ২৯ আয়াত। যেখানে আল্লাহ বলেছেন তারা যেন তাদের (অঙ্গীকার কৃত) মানত পূরণ করে। 

একইভা‌বে সুরা বাকারার ২৭০ আয়াতে আল্লাহ বলেন যে, তোমরা যা (নিজের কিংবা অন্যের জন্য) ব্যয় করো বা (কোনো উদ্দেশ্যে) মানত করো তা অবশ্যই আল্লাহ জানেন। এই দুই আয়াত যদিও মুমিনদের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছিল। কিন্তু এ থেকে তৎকালীন মানতের কথা উঠে এসেছে। অর্থাৎ কোনো মুসলমান যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোনো মানত করে থাকে তাহলে তা তাদের অবশ্যই পূরণ করতে হবে। তবে কোনো অবস্থাতেই কখনোই আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টির জন্য মানত করা যাবেনা। যা করে থাকে মুশরিকরা। তাদের কথা আল্লাহ বলছেন এভাবে,

 

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

এখান থেকে প্রমাণিত যে, মুশরিকরাও মানত করতো। কিন্তু তাদের মানতের উদ্দেশ্য কখনোই আল্লাহর জন্য ছিলো না বরং তাদের উদ্দেশ্য থাকত দেবদেবীর সন্তুষ্টি। যা আল্লাহ এখানে সরাসরি এখানে নাকচ করে দিয়েছেন। 

মুশরিকরা অপবিত্র

মুশরিকরা যতই আল্লাহ বিল্লাহ করুক না কেন, তারা সর্বদাই অপবিত্র। আর এরা ঈমান এনে তবেই আল্লাহর সাথে শিরক করে। অতএব তারা ঈমান আনলেও মুশরিক। যেকারণে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরাঃ আত তাওবাহর  ২৮ আয়াতে ঘোষণা দিয়েছেন যে, মুশরিকরা হচ্ছে  অপবিত্র 

এখানে অপবিত্র বলতে বাহ্যিক ভাবে অপবিত্র নয়। বরং অংশীবাদী বা মুশরিকরা অপবিত্র কথার অর্থ হল, তাদের ঈমান আকীদা-বিশ্বাস ও আমল হিসাবে তারা (অভ্যন্তরীণভাবে) অপবিত্র। আবার কিছু কিছু মুশরিক রয়েছে যারা শারীরিকভাবেও অপবিত্র থাকে। পবিত্রতা সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞানও নেই এবং পবিত্রতা রক্ষাও করে না।  

মুশরিকদের আল্লাহ পছন্দ করেন  

তৎকালীন মুশরিকরা দাবি ছিলো যে, তারা আল্লাহর সাথে শিরক করলেও আল্লাহ অবশ্যই তাদের পছন্দ করেন। তাদের এই দাবির পেছনে যুক্তি ছিলো যে,  যদি আল্লাহ তাদের পছন্দ না করতো তাহলে তারা কখনোই সফলতা পেতো না। কিংবা আল্লাহ না চাইলে কীভাবে তারা আল্লাহর সাথে  শিরক করতে পারে? তাদের স্পষ্ট যুক্তি ছিলো যে, তাদের উপর অবশ্যই  আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি না থাকত তাহলে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দিতেন। তাই তারা দেবদেবীদের ডাকলেও আল্লাহ তাদের কোনো ক্ষতি করছে না। আর এই যুক্তিটি তারা কুরআনে এভাবে দিয়েছে 

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

সুতরাং উপরোক্ত আয়াত থেকে এটা সুস্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মুশরিকরা আল্লাহর সাথে শিরক করার পরও খুশি ছিলো। কেননা তাদের ধারণা এবং আকিদা ছিলো যে, শিরক যদি খারাপ কিছু হতো, কিংবা তারা আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে ডাকলে যদি আল্লাহ নাখোশ হতো, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ এর শাস্তি দিতেন। এবং তিনি না চাইলে তো তারা কখনোই শিরক করতে পারতো না।

অতএব আল্লাহ অবশ্যই তাদের শিরকি কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট ছিলো। এমনকি তারা এইসব শিরক নতুন নয় বরং যুগ যুগ ধরে বাপ দাদাদের আমল থেকেই করে আসছে। সুতরাং তারা তাদের এইসব কুকর্ম করেও আফসোস করত না বরং খুশি ছিলো।

এইসব মুশরিকদের মতো আমাদের উপমহাদেশে যারা নানান শিরকি বিদআতী কর্মকাণ্ডে জড়িত আছে, তারাও বুক ফুলিয়ে বলে যে, আমরা বাদ দাদার আমল থেকেই এইসব মাজার পূজা পীর আউলিয়াদের দরবার দরগাহয় মানত ইত্যাদি করে আসছি। আমরা যদি কিছু না পেতাম তাহলে কি এইসব করতাম?

অর্থাৎ যারা কবরবাসী এবং মাজারবাসীদের কাছে মানত করে, উছিলা ধরে সন্তান চায়, বিপদ আপদ থেকে উদ্ধার চায়, রিজিক ইত্যাদি চায়। তারা এইসব চাওয়ার ফলে আল্লাহ তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে দেন। যদি এইসব চাওয়া সত্য না হতো কিংবা আল্লাহ ছাড়াও পীর অলি আউলিয়ারা কিছু দিতে না পরাত তাহলে কখনোই এইসব সত্য হতো না।

তারা কবরবাসী মাজারবাসীর কাছে চাইলেই সব পেয়ে যাচ্ছে। সুতরাং তারা যা করছে তা অবশ্যই ঠিক। এবং আল্লাহও তাদের এবং তাদের অলি আউলিয়াদের পছন্দ করেন। তা নাহলে অলি কাছে চাইলে কেন আল্লাহ তা পূরণ করে দেন? অথচ পবিত্র কুরআন বলছে এইসব সবই হচ্ছে শিরক। অতএব যারা এমন আকিদা রাখবে তারা মুশরিকে পরিনত হবে।

মুশরিকদের পরিনতি

মুশরিকরা যে আকিদা পোষণ করে তা কখনোই আল্লাহ মেনে নেয়নি। আর তাই তাদের ব্যাপারে আল্লাহ খুবই কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন। একইসাথে তিনি মুশরিকদের ব্যাপারে অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা এবং শাস্তির কথা কুরআনে উল্লেখ করেছেন।

মুশরিকরা মসজিদে আবাদ করতে পারবে না

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি মক্কার মুশরিকরাও আল্লাহর ইবাদত করত। তবে তা তাদের মতো করেই তারা নানান ইবাদত বন্দেগী করত। যেকারণে ইসলাম বিজয়ের পূর্বে মক্কার মুশরিকরাই ছিলো কাবা ঘরের রক্ষাকর্তা। তবে তারা এককভাবে শুধুমাত্র এক আল্লাহর বন্দেগী করতো না এবং মেনে নিতো না।

ফলে এইসব মুশরিকদের ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা হলো তারা কখনোই কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাবে না। আর তাই তাদের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম পবিত্র  কুরআনেই দিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, 

 

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

উপরোক্ত আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট হলো যে, মুশরিকরা কখনোই মসজিদে কাবায়  আবাদ তথা ইবাদত বন্দেগী এবং  দায়িত্বপ্রাপ্ত হতে পারে না। এটা শুধুমাত্র প্রকৃত ঈমানদারাই মসজিদে ইবাদত বন্দেগী ও  দায়িত্বপ্রাপ্ত হতে পারবে। 

এই আয়াতের আলোকে পৃথিবীর সকল মসজিদেই শুধুমাত্র যারা প্রকৃত ঈমানদার তারাই ইবাদত বন্দেগী করতে পারবে। অথচ আমাদের উপমহাদেশের অধিকাংশেরও বেশী মুসলমান চলে মুশরিকী আকিদায়। এরা মসজিদে নামাজও পড়ে আবার কবরবাসীর কাছে গিয়ে সিজদাও দেয়। এরা আল্লাহকেও মানে আবার পীর অলি আউলিয়াদের কাছে সাহায্যও প্রার্থনা করে। সুতরাং এদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী হতে পারে? 

মুশরিক নারীদের বিয়ে করা যাবেনা

মুশরিকরা কখনোই ঈমানদার নয়। তাই বেঈমানদারের সাথে কখনোই বিয়ে জায়েজ নয়। যেকারণে মুশরিক নারীদের ঈমান আনা ছাড়া কখনোই কোনো মুসলিম বিয়ে করতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, 

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

সুতরাং যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে তাদের সাথে কখনোই বিয়ে জায়েজ নয়। আর আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষই আজ প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্য নানাবিধ শিরকে লিপ্ত। যা আমরা অনেকেই জেনেও জানি না। তাই বিয়ে শাদীর ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের আকিদা কেমন তা জানা উচিত।

মুশরিকদের জন্য দোয়া চাওয়া যাবে না

কখ‌নোই কোনো জীবিত কিংবা মৃত মুশরিকের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া কালাম করা যাবে না। আর তাই  আল্লাহ মৃত মুশরিকদের জন্য মাগফেরাত তথা ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রাজি করেছেন। এটা আল্লাহ কখনোই পছন্দ করেন না যে,  কোনো মুমিন কোনো মুশরিকের জন্য দোয়া করুক। তাই আল্লাহ বলেন,

মুশরিক কে মুশরিকের বৈশিষ্ট ও তাদের পরিনতি কী ২২

 

সুতরাং যারাই আল্লাহর সাথে শিরক করে মৃত্যুবরণ করবে তাদের জন্য কখনোই কোনো দোয়া করা বৈধ হবে না। অথচ আমাদের দেশে শিরক কী মুশরিক কারা ইত্যাদির কোনো বাচ বিচার নেই। এমনকি আমাদের অধিকাংশের ঈমান আকিদাই হলো শিরকি মুশরিকী আকিদা।

শিরকের কোনো ক্ষমা নেই

যারা শিরক তারা কাফিরদের কাছাকাছি। তাই আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা যে, যারা আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে শিরক করবে তাদের কোনো ক্ষমা পরকালে নেই। আল্লাহ বলেন,

মুশরিক কে মুশরিকের বৈশিষ্ট ও তাদের পরিনতি কী ২৩

 

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, 

 

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন,

মুশরিক কে মুশরিকের বৈশিষ্ট ও তাদের পরিনতি কী ২৫

 

উপরোক্ত এইসব আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ এটা নিশ্চিত করে দিলেন যে, এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অপরাধ কিংবা পাপ হলো আল্লাহর সাথে শরিক করা। আর তাই কেউ যদি দুনিয়াতে তওবা করা ছাড়া শিরক করে মারা যায়। তাহলে সে কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর কাছ থেকে কোনো ক্ষমা পাবে না।

একইসাথে ইহুদী নাসারাদের মধ্যে কাফের মুশরিক হয়েছে তারা কখনোই ক্ষমা প্রাপ্ত হবে না। তাই তাদের স্থান হবে জাহান্নাম। যেখানে তারা স্থানীয় ভাবে থাকবে।  অতএব মুশরিকরা জাহান্নামী।

যাবতীয় সৎ আমল বরবাদ

আমরা জেনেছি যারা শিরক তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। আর এই কারণে তাদের যাবতীয় আমলও বরবাদ হয়ে যাবে। এই সম্পর্কে আল্লাহ তার রাসুল (সা.) কে দিয়ে আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন যে, 

মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী? শিরক কী? মুশরিক কারা, মুশরিকের পরিচিত, মুশরিকের পরিচয় ও পরিনতি কাদের মুশরিক বলা হয় কাফির ও মুশরিকের পার্থক্য কী

 

আমরা সবাই জানি যে নবী রাসুলগণ হচ্ছেন নিষ্পাপ। অর্থাৎ তারা কোনো পাপ করতে পারে না। তারপরও আল্লাহ তাঁর রাসুল (সা.) কে উদ্দেশ্য করে এই হুশিয়ারি দেওয়ার অর্থ হলো, আমরা যেন শিরক সম্পর্কে সচেতন হই এবং এর থেকে সাবধানতা অবলম্বন করি। একইভাবে আল্লাহ আরও বলেন, 

মুশরিক কে মুশরিকের বৈশিষ্ট ও তাদের পরিনতি কী ২৭

 

অর্থাৎ হিদায়াতের পথে থাকার পরও যদি কেউ শিরক করে তাহলে তার সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। 

জান্নাত হারাম 

মুশরিকরা এতোটাই পাপিষ্ঠ যে, তাদের জন্য জান্নাত সরাসরি হারাম করে দেওয়া হয়েছে। 

মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, 

মুশরিক কে মুশরিকের বৈশিষ্ট ও তাদের পরিনতি কী ২৯

মুশরিক ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য

কাফির ও মুশরিক শব্দ গুলো হচ্ছে আরবি। যাদের মাঝে শুধু শাব্দিক পার্থক্য থাকলেও মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। আমরা জানি কাফির অর্থ অস্বীকারকারী। অর্থ যারা মহান  আল্লাহকে সরাসরি অস্বীকার করে। অপরদিকে মুশরিক শব্দের অর্থ হলো যিনি আল্লাহর সাথে শিরক তথা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরিক করে।

যে কাফির সে সরাসরি আল্লাহর যাবতীয় গুণাবলী ক্ষমতা ইত্যাদি অস্বীকার করে। অন্যদিকে যে মুশরিক সে মুখে আল্লাহকে স্বীকার করলেও অন্তর দিয়ে আল্লাহর যাবতীয় গুণাবলী ও ক্ষমতাকে অস্বীকার করে অন্যকে তার সমকক্ষ করে মনে করে।

অতএব একজন সরাসরি আল্লাহকে অস্বীকার করে, অন্যজন কাজে কর্মে আল্লাহকে অস্বীকার করে। তাই একথা বলা যায় যে যে কাফির মুশরিকের পার্থক্য হলো, যে শুধু কাফির সে মুশরিক নয়। আর যে মুশরিক সে কাফিরও এবং মুশরিকও।

এখানে আরেকটি কথা উল্লেখ্য যে, আহলে কিতাবীরাও কাফির তবে যারা ফিরে এসেছিল তারা ছাড়া। যদিও তারা আল্লাহকে স্বীকার করে। তবে তারা ইসলাম ও রাসুল মুহাম্মদ (সা.) কে  স্বীকার করে না। এই ব্যাপারে কুরআনে এসেছে, 

মুশরিক কে মুশরিকের বৈশিষ্ট ও তাদের পরিনতি কী ৩০

 

উপরের উল্লিখিত আয়াতটি তৎকালীন সকল কাফির মুশরিকদের জন্য নাযিল হয়েছিল। যাদের ব্যাপারে আল্লাহ ফয়সালা করে দিয়েছিলেন যে, তারা ঈমান আনার মতো নয়। এছাড়াও কুরআনের বর্ণনানুযায়ী আহলে কিতাব বা ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানরাও কাফির মুশরিক। যা  সূরা আল-বাইয়্যিনাহর  ৬ নং আয়াতে এসেছে। 

মুশরিক কত প্রকার

আমরা জানি শিরক হচ্ছে মূলত দুই প্রকার। একটা হচ্ছে শিরকে আকবর আরেকটি হচ্ছে শিরকে আজগর। যদিও অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ শিরককে দুই ভাগে ভাগ করেন না। তাদের মতে শিরক এক প্রকারই। যাইহোক শিরকে আকবর সম্পর্কে আমরা জানি যে, আল্লাহর রুবুবিয়্যত, উলুহিয়্যত ও আল্লাহর আসমা ও সিফাতের সাথে শিরক বা অংশীদার করা। 

আর শিরকে আজগর ধরা হয়, ছোটদের বদ নজরের জন্য কালো টিপ দেওয়া, হাতে তায়ালা বাঁধা ইত্যাদি। উপরোক্ত হিসাবে মুশরিকও প্রধাননত তিন প্রকার। যারা আল্লাহর রুবুবিয়্যত উলুহিয়্যত এবং আসমা ও সিফাতের সাথে শিরক করে। 

শিরক ও মুশরিক সম্পর্কিত পিডিএফ বই

  • তাওহীদ এবং শিরক, আবুল কালাম আযাদ
  • তাওহীদ শিরক ও তিন তাসবীহর হাকীকত গোলাম আযম
  • শিরক , ড. মোঃ সেলিম রেজা
  • শিরক কি ও কেন ১ম খণ্ড, ড. মুহাম্মদ মুযাম্মিল আলি
  • শিরক কি ও কেন ২য় খণ্ড, ড. মুহাম্মদ মুযাম্মিল আলি
  • শিরক বিহীন ঈমানের মর্যাদা, মোহাম্মদ সিফাত হাসান
  • শিরকের বাহন, ড. ইব্রাহিম বিন মুহাম্মদ আল বুরাইকান
  • শিরকের বেড়াজালে উম্মত বেসামাল, নুরজাহান বিনতে আব্দুল মজিদ
  • শিরকের শিকড় পৌঁছে গেছে বহুদুর, মাসুদা সুলতানা রুমী

শেষ কথা 

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম মুশরিক কারা? মুশরিকের পরিচয়, কী তাদের ধর্মীয় আকিদা, কেন তারা মুশরিক এবং আল্লাহ তাদের ব্যাপারে কী কী ফয়সালা নির্ধারণ করে রেখেছেন। একইসাথে তৎকালীন মুশরিকদের মতো কীভাবে উপমহাদেশে সুফিবাদী সুন্নিরাও মুশরিকি আকিদা পোষণ করে।

আর তাই আমাদের উচিত  সত্যিকারের ইসলামকে জানা এবং সেই অনুযায়ী ইসলাম পালন করা। কেননা বাপ দাদার অনুসরণে ইসলাম পালন কখনোই আল্লাহ সমর্থন করেন না এই কারণে আমরা যারা জন্মগত মুসলমান আছি তাদের উচিত হবে সঠিক ইসলাম পালন করার জন্য সুফিবাদ এবং সুফি সুন্নি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা। যাতে করে আমরা আমাদের ঈমান আকিদা মজবুত এবং দৃঢ় রাখতে পারি।

 

আপনি আরো যা পড়তে পারেন

 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

Author: সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী জন্ম চট্টগ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখেছেন। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস। বর্তমানে বেসরকারি চাকুরিজীবী। তাঁর ভালোলাগে বই পড়তে এবং পরিবারকে সময় দিতে।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

2 Replies to “মুশরিক কে? মুশরিকের বৈশিষ্ট তাদের পরিনতি কী?”

Leave a Reply