অপেক্ষা। পর্ব-১০। সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি

0

 

স্কুল থেকে প্রবেশ পত্র আনতে যেতেই সবাই কেমন আলোর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে রইলো। আলো ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো এভাবে তাকিয়ে থাকার কারন। আলো আরো একবার জহির রায়হান ও রোশানের বলা কথাগুলো স্মরণ করে নিলো। তারপর সবার দিকে তাকিয়ে ক্রোধিত স্বরে শুধালো,”কি সমস্যা? এমনে তাকাইয়া আছোছ কেন সবাই? আমারে কি কোনোদিন দেহছ নাই?”

সবার মাঝ থেকে উগ্র স্বভাবের এক মেয়ে যে কিনা আলোর থেকে অনেক নিচের ক্লাসে পড়ে সে আলোর প্রতিত্তোরে বললো,”তুই যা করছোছ আলো। তারপরও সবার সামনে কথা কছ কেমনে? আমি হইলে তো বিষ খাইয়া মরতাম।”

“সবাইরে নিজের মতো ভাব্বি না। আমারে জ্ঞান না দিয়া নিজেরে দে। কাজে লাগবো।” বলেই আলো সেখান থেকে চলে এলো। কারন আলো জানে এদের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই।

স্কুল থেকে বাড়ি ফিরার পথে দেখলো তাফীফ সাইকেল চালিয়ে কোথাও একটা যাচ্ছে। আলোকে দেখে তাফীফ সাইকেল ঘুরিয়ে আলোর পাশাপাশি হেঁটে যেতে লাগলো। আর তা দেখে আলো শুধালো,”সাইকেল ঘুরাইলি কেন? যেনে যাইতাছিলি যা না!”

“মন চাইতাছে না যাইতে। তোর সমস্যা আছে?”

“হ সমস্যা। কেউ আমারে আর তোরে একলগে দেখলে উল্টাপাল্টা কথা কইবো।”

“এই তাফীফ মাইনষের কথার পরোয়া করে না। আর আমার প্রাণভোমরা যেইহানে আমিও সেইহানেই থাকমু।”

“তো যা, তোর প্রাণভোমরার কাছেই যা। এনে কি?”

“আমি তো আমার প্রাণভোমরার কাছেই আছি। এইযে পাশাপাশি।”

তাফীফের কথায় আলো লজুক হাসলো। মুখে লাল আভার দেখা মিললো। আড় চোখে একবার তাফীফের দিকে তাকালো। দেখলো তাফীফও আলোর দিকেই তাকিয়ে আছে। তাফীফের চোখে-মুখে খুশির ঝলক ফুটে উঠেছে। আলো তাফীফের কথার মানে বুঝতে পেরেছে, আর তা বুঝে লজ্জা পেয়েছে এটা ভেবেই তাফীফের মনে খুশীর জোয়ার বইতে লাগলো।
তারপর দুজনের মাঝে কিছুক্ষণ বিরাজ করলো পিনপতন নিরবতা। একসময় এই নিরবতা ভেদ করে তাফীফ শুধালো,”এই পথটা যদি শেষ না হইতো তাইলে কি খুব বেশি খারাপ হইয়া যাইতো আলো?

আলো তাফীফের বলা কথার মর্মার্থ বুঝল না। অথবা বুঝেও না বুঝার ভান করলো। যাকে রোশানের ভাষায় বলে তুমি মেয়ে যতোটা শান্ত ঠিক ততোটাই ভয়ংকর।

“তোর মাথায় যে সমস্যা আছে এইডা আমার আগেই সন্দেহ হইতো।”

আলোর কথার বিনিময়ে তাফীফ হাসলো। প্রাণ খুলে হাসলো। তারপর একসময় দুজনে দুদিকে চলে গেলো।

আলো বাড়ি ফিরতেই দেখলো উঠোনে বড় ধরনের হট্টগোল লেগে আছে। জহির রায়হান, আমেনা বেগম, রহিমা খাতুন, সবুজ, জুবায়ের সহ জুবায়েরের চ্যালাপেলা রয়েছে। জহির রায়হানের সাথে জুবায়েরের তুমুল কথার কাটাকাটি হচ্ছে। তবে বাড়ি ফিরে আলো যেটুকু শুনলো-

“আমিও দেখমু আপনার মাইয়ারে কে বিয়া করে।”

“আমার মেয়েকে নিজের কাছে রাখার সামর্থ্য আমার আছে। দরকার পড়লে আমার মেয়েকে চিরকুমারী বানিয়ে রাখবো তাও তোমার মতো ছেলের হাতে মেয়েকে দিবো না।”

“একদিন এই আমার হাতেই আপনার মাইয়া তুইলা দিতে হইবো।”

“চলে যাও এখান থেকে। নূন্যতম আত্মসম্মান থাকলে কোনোদিনও আমার বাড়ির আঙিনায় পা ফেলবে না।”

“চল সবাই, একদিন নিজেই আইয়া পা ধইরা মাইয়া দিতে চাইবো দেহিস।”

জহির রায়হানের কথায় জুবায়ের ক্ষিপ্ত হয়ে চলে গেলে। তবে যাওয়ার সময় আলোর দিকে তাকিয়ে কুৎসিত ভাবে হেসে গেলো। যা দেখে আলোর মনে হলো এই হাসির মাধ্যমে কোনো কিছুর আগাম বার্তা দিয়ে গেছে জুবায়ের।

————-

” তুমি মোর জীবনের ভাবনা
হৃদয়ের সুখের দোলা
নিজেকে আমি ভুলতে পারি
তোমাকে যাবে না ভুলা।”

তাফীফ নিজের কাপড় ধুয়ে দিচ্ছিলো আর গান গাইছিলো। পাশেই বাহাদুর মিয়া রান্নার জন্য কাঠ কাটছিলেন। তাফীফকে গান গাইতে দেখে উনি জিজ্ঞেস করলেন,”তা আব্বাজান আইজকাল দেহি খুব গান গাওয়া হয়।”

“মানে কি আমার সব কাজে আপনার বাম হাত না ঢুকাইলে হয় না আব্বা?”

“এই বেয়াদব। আমি তোর বাপ হই।”

“আমি কখন কইলাম আপনে আমার বাপ না। আপনিই তো সবসময় কন আমি আপনার পোলা না।”

তাফীফের কথা শুনে বাহাদুর মিয়া একটা কাঠ নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই তাফীফ দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেলো। আর তা দেখে বাহাদুর মিয়া হেসে ফেললেন। কেননা উনাদের বাপ ছেলের সম্পর্ক সাপ বেজির মতো হলেও ভালোবাসায় কোনো কমতি নেই।

চলবে….


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Sumaiya Akter Bristy

Author: Sumaiya Akter Bristy

❝শুভ্রচিন্তার উদ্ভব ঘটে যার কথা ভেবে সে যদি মোহ হয় দোষ বা কি তাতে?❞ ~Sumaiya Akter Bristy

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

2 Replies to “অপেক্ষা। পর্ব-১০। সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি”

Leave a Reply