আইসক্রিম

0

হঠাৎ বাসার কারেন্ট চলে গেছে। দুপুরের কাঠ পোড়া রৌদ্রে কারেন্ট যাওয়া মানে মৃত্যুর প্রহর গোনা। প্রচন্ড গরমে কার শরীর সুস্থ থাকে? ঘামের পুকুরে যেন সবাই হাবুডুবু খাচ্ছে। উফ! মাথা নষ্ট! এত কঠিন গরমে কোন বেচারার বেঁচে থাকার ইচ্ছা আছে?

পাশের বাসার তাকিয়া ও তার আম্মু তাই্যয়েবার বাসায় চলে এলো। কারণ, তাই্যয়েবাদের বাসায় তাকিয়াদের বাসার থেকে অনেক ঠান্ডা। তীব্র গরমের তাপে এখানে কিছুটা হলেও শীতল অনুুভব পাওয়া যাবে।

দুই ঘরের লোকজন যখন একত্রে হয় তখন গরম সহজেই পালিয়ে যায়৷ গল্প – আড্ডার কোনো ইতি নেই। দুই প্রতিবেশী বান্ধবী এবং দুই বান্ধবীর দুই মায়েদের জমজমাট আলাপ আলোচনা । যতক্ষণ পর্যন্ত কারেন্ট না আসবে ততক্ষণেরই এদের ফুর্তির সীমানা।

-ভাবি! প্রচন্ড অগ্নি বেলায় কি আইসক্রিম খাবেন?

-না থাক, এত কষ্ট আপনার করা লাগবে। অন্য কোনোদিন হবে, আজকে থাক!

-আরে ভাবি কি বলছেন! আমার বাসায় আসছেন আমি কি এভাবেই আপনাদেরকে ছেড়ে দিবো! কিছু না কিছু মুখে দিয়েই যেতে হবে।

অন্য রুমে তাই্যয়েবা তাকিয়াকেও একইভাবে জোড় করছে-

-কি করে ম্যাডাম! আমার বাসায় আসছিস আমি কি তোরে এভাবেই ছেড়ে দিবো!

-বুঝলাম না।

-বলছিলাম আমাদের বাসায় তোদেরকে কিছু না খাইয়ে ছাড়ছি না।

-আজকে থাক, অন্য কোনো দিন হবে। আজকে এই কঠিন গরমে এত প্যারা নিও না।

-আজব তো! প্যারা কেন? কাছের লোকদেরকে নিয়ে আমাদের কোনো প্যারা নেই।

 

তাই্যয়েবা তার আম্মুর কাছে এসে আইসক্রিম খাওয়ানোর কথা জানায়, তিনিও তাকে একই কথা জানায়। ছোট ভাই যায়েদকে ডাক দিল। যায়েদ তখন একা বসে বসে মক্কা ও মদিনা শরিফের ড্রইং করছিলো। যখন তাকে বললো আমরা আজকে প্রতিবেশী আপু- খালাদের নিয়ে আইসক্রিম খাবো তখন যায়েদ খুশিতে ব্যাকুল। ‘টাকা দাও আমিই এনে দিচ্ছি’।

তাই্যয়েবার আম্মু ভিতরের কামরায় গেলো টাকা বের করতে। আলমারির সিন্দুক থেকে টাকা ঠিকই বের হলো ৷ কিন্তু অল্প টাকা বের হয়েছে। ঘরে যা ছিল সব শেষ। মাস ফুরানো দিনে কার ঘরে পরিপূর্ণ টাকা থাকে? তাই্যয়েবার আব্বু সামনের সপ্তাহে মাসিক বেতন পাবে। সংরক্ষণ করা টাকা সব শেষ। অল্প টাকা দিয়ে শুধু তিন জনের আইসক্রিম কেনা যাবে।

তাকিয়ারা পাশের রুমে আছে এসব বিষয়ে কিছুই জানে না তারা।যদি জেনে ফেলে তাহলে আইসক্রিম আর খাওয়ানো যাবে না। তাকিয়ারা আজকে না খেয়ে চলে যাবে।

তাই্যয়েবা একটা বুদ্ধি পাকালো। ওর আম্মুকে জানিয়ে দিলো সমস্যা নেই যা টাকা আছে তা দিয়েই আজকে হয়ে যাবে। কারণ জিজ্ঞেসা করার পর মাথায় পাকানো বুদ্ধির কথা জানালো। তার প্লানটা ছিলো- যে দামের আইসক্রিম কেনার উদ্দেশ্য ছিল সেটা দুই পিস তাকিয়া ও খালার জন্য কিনে বাকি টাকা দিয়ে একই রকম দেখতে একদম কম দামের আইসক্রিম আছে আমাদের জন্য সেগুলো কিনলেই হয়ে যাবে।

আপুর আদেশ মতে ছোট ভাই যায়েদ বাজার থেকে আইসক্রিম কিনে আনলো। তাকিয়া এবং তার আম্মুকে দামি আইসক্রিম দিয়ে বাকি কম দামের গুলো তাই্যয়েবারা নিলো। কম দামে হওয়ার কারণে স্বাদ মোটেও ভালো ছিলো না তবুও হাসিমুখে গ্রহন করলো। প্রতিবেশি তাকিয়াদের সামান্যও বুঝতে দেইনি৷

 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to “আইসক্রিম”

Leave a Reply