গল্প অসহায় রহিমা আফছানা খানম অথৈ

0

অসহায় রহিমা

আফছানা খানম অথৈ

রহিমা হত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে।বিবাহিতা জীবনে সে খুব কষ্টে আছে।স্বামী ঠিকমতো ভরণ পোষন দিতে পারছে না।স্বামী কুদ্দুস ছিল অকর্মা ঢেকি।একদিন কাজ করলে তিন দিন বসে বসে খাই।কিছু বললে রহিমার গায়ে হাত তোলে মারধর করে।রহিমার হয়েছে যত জ্বালা।সে না পারে সইতে,না পারে কইতে।নীরবে মুখ বুঝে স্বামীর সকল নির্যাতন সহ্য করে।কিন্তু এভাবে আর কতদিন। আর কদিন না খেয়ে থাকবে।কোন উপায় না দেখে রহীমা অন্যের বাড়িতে কাজ নেই।আর এই সুযোগে কুদ্দস অবসর নেই।সে সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়াই।রহীমার আয়ে কোনমতে সংসার চলে।স্বামী বলে কথা, তাই রহীমা কোনকিছু বলতে পারেনা।

এভাবে চলছিল তাদের সংসার। মাঝে কয়েক বছর কেটে গেল।রহীমা তিন বাচ্চার মা হলো।একদিন কুদ্দুস কাজের নাম করে শহরে গেল।আর ফিরল না।শেষে শুনতে পেল কুদ্দুস আর একটা বিয়ে করেছে।রহীমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।এই বাচ্চাদের নিয়ে সে এখন কোথায় যাবে,কি করবে।না আছে স্বামীর কুল,না আছে মা-বাবার কুল।সবদিকে সে অসহায়।তবু বুকে পাথর চেপে সংসারের হাল ধরল।কিন্তু তা ও তার কপালে সইল না।তার দেবর তাকে মারধর করে তার স্বামীর ভিটে থেকে বের করে দেয়।রহীমা বিচারের জন্য গ্রামের বিচারকদের কাছে ধর্না ধরলো।স্বামীর ভিটেবাড়ি উদ্ধার করে দেয়ার জন্য।কেউ তার ডাকে সাড়া দিলো না।অবশেষে নিরুপায় হয়ে রহীমা তিন সন্তান নিয়ে শহরে পাড়ি দেয়।

কিন্তু শহরে সবকিছু তার অপরিচিত,মানুষজন পথঘাট।গাড়ি ষ্টেশনে থামার পর তারা নেমে পড়ল।কিন্তু এত রাতে যাবে কোথায়?কে তাদের আশ্রয় দেবে।কোন উপায় না দেখে রহীমা ফুটপাতের একপাশে খোলা আকাশের নিচে বাচ্চাদের নিয়ে শুয়ে পড়ল।সকাল হলে লোকের দুয়ারে দুয়ারে একটা কাজ চাইল।কেউ দিলো না।কারণ অপরিচিত কাউকে চাকরী দেয়া নিরাপদ নয়।এরপর থেকে রহীমা ভিক্ষার থালা হাতে নেই।একটা দুইটা টাকার জন্য লোকের দুয়ারে দুয়ারে ধর্না ধরে।কেউ দেয়,কেউ দুচারটা কথা শুনিয়ে তাড়িয়ে দেয়।রহীমা বাচ্চাদের নিয়ে খুব বিপদে আছে।কোনদিন পেটে দানাপানি পড়ে, কোনদিন পড়ে না।দিন শেষে বাচ্চাদের নিয়ে ফুটপাতে শুয়ে পড়ে।অসহায় রহীমার ঠাঁই হলো ফুটপাতে। এভাবে চলছিল রহিমার দিনগুলো।একদিন রহীমার বাচ্চারা গোস্ত খাইতে চাইল।কিন্তু কোথায় পাবে সে গোস্ত।ভাবতে লাগল, দেখতে পেলো ,একটা বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে।সে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।কিছু খাবার চাইল।কেউ দিলো না।ধাক্কা মেরে তাড়িয়ে দিলো।ভয়ে কাঁপছে রহীমার শরীর। তবুও গেলো না।বাইরে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইল।দেখল অনুষ্ঠান শেষে মেহমানের প্লেটের খাওয়া গোস্তের হাড্ডি গুড্ডি আইড়া ভাতসহ থালাবাসন কর্মচারীরা ধুচ্ছে, সেখান থেকে কিছু আঁইডা ভাত গোস্ত হাড্ডি বেচে নিলো।তারপর বাসায় নিয়ে গেল।

খাবার দেখে বাচ্চাদের আর তর সইল না।ঢগঢগ করে খেয়ে নিলো।এরপর শুরু হয় বড় মেয়ে হালিমার ডায়রিয়া।এই মূহূর্তে তাকে ডাক্তারের কাছে নেয়া দরকার।ডাক্তারের কাছে নিতে টাকা লাগবে।কিন্তু রহীমার হাতে কোন টাকা নেই।রহীমা হাউমাউ করে কাঁদছে আর বলছে,
ভাইয়ের,বইনেরা,আমি গরীব অসহায়,আমার মাইয়াটারে বাঁচান।আমারে কটা টাকা ভিক্ষা দেন।
কটা টাকা ভিক্ষা দেন।
এভাবে সে কাঁদছে আর সাহায্য চাইছে।কিন্তু কেউ তার কথা শুনছে না।
সারারাত কেটে গেল।সে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে ফুটপাতে শুয়ে রইল।কেউ তাদের বিপদে এগিয়ে আসল না।এক সময় দেখা গেল তার মেয়ের সাড়া শব্দ নেই।রহীমা বুঝতে পারল তার মেয়ে আর নেই।মারা গেছে।সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
তার চিৎকারে লোকজন জড়ো হলো।অসহায় রহীমার মেয়েকে সরকারী জাগায় দাফন করা হলো।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply