“রূপকথার গল্পে আমি”-২০

0

(২০)

আমি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি। এই দুই তিন বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমার অনেক বান্ধবির বিয়ে হয়ে গেছে। আমি এখন বাস্তবতা সম্পর্কে অনেক কিছু উপলব্ধি করতে শিখেছি। ছোট ছিলাম নিজের চিন্তা ধারার পরিসর সিমাবদ্ধ ছিল কিন্তু এখন বয়স হওয়ার সাথে সাথে বুঝতে শিখেছি “নিজের চিন্তাধারার নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে এক বিশাল জগৎ আছে- সেখানে মানুষ বিভিন্ন ভাবে নিজেকে নিয়ে চিন্তা করে এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়”।

 

আমি যখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখন অনিক দেশে আসছে। তার বোনকে বিয়ে দেয়ার জন্য। তো বোনের বিয়ের দাওয়াত দিতে আমাদের বাড়িতে আসছিল। ওই দিনের কথা আমার এখনো চোখে ভাসে, আমাদের বাসায় কেউ ছিলেন না মনে হয় সবাই কোথায় দাওয়াতে গেছিলেন। আমি একা বাসায় ছিলাম। তো বিকেলের দিকে হবে আমি কম্পিউটারের সামনে বসে কি যেন লিখতে ছিলাম দরজাটা খুলা ই ছিল। হঠাৎ পিছন থেকে কে আমার নাম ধরে ডাকছে শুনে পিছন ফিরে তাকাই। আমি অবাক হয়ে যাই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারি নাই এত বছর পর আমি কি দেখতেছি। ৩০ সেকেন্ডের মত হবে আমি বোবার মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিল না আমি যে ওনাকে বলবো ভিতরে আসতে বা উনাকে বসার রুমে নিয়ে যাব আমি কিছুই বলতে পারতেছি না। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম- স্যার আপনি কেমন আছেন আসেন স্যার ভিতরে আসেন। উনাকে বসার রুমে নিয়ে বসাই এবং আমি কি করবো বসবো নাকি চলে আসব আমি কিছুই বুঝতেছিনা আমি হাবার মতো এখানে দাঁড়িয়ে আছি আর আমার মনে হচ্ছে পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার হাত পা কাঁপতেছে, মুখের কথা জড়িয়ে আসছে। তখন স্যার বললেন- বসো অধরা আমার হাতে খুব সময় নেই আমি চলে যাব।

আমি পাশে একটা ছোফায় বসে পড়লাম।

আমার বোনের বিয়ের দাওয়াত দিতে আসলাম বলে একটা কার্ড আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন আমি এই কার্ডটা হাতে নিলাম শুধু মুখে কোন কিছু বলতে পারি নাই। তখন স্যার জিজ্ঞেস করলেন কেমন আছো? পড়াশোনা কেমন চলছে?

আমি ছোট্ট একটা উত্তর দিলাম হ্যাঁ চলছে ভালো। তারপর আর কোন কথা বলতে পারি নাই। এরপরে স্যার কি বলছেন না বলছেন আমি আর কিছুই বলতে পারব না। আমি ভাবনার জগতে ডুবে যাই স্যারকে দেখার সাথে সাথে চোখের সামনে ভেসে ওঠে পুরানো সেই স্মৃতিগুলো। তারপর স্যার কি বললেন কি বলে বিদায় নিলেন, কিভাবে চলে গেলেন, আমি আর কিছুই বলতে পারব না, আমি মনে করতে পারতেছি না তখন এর পরে আমি কি কথা বলেছি স্যারের সাথে, আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারি নাই কেমন জানি হয়ে গেছি। আমি যেখানে বসেছিলাম সেই জায়গায় আধা ঘন্টার মত বসে আছি স্যার যাওয়ার পর ও আমি নিজেও বুঝতে পারি নাই। এরপর ফিরে এসে আবার কম্পিউটারের সামনে বসি……!

 

এই দেখা ছিল স্যারের সাথে আমার শেষ দেখা। এর মাঝে এই দুই তিন বছরে আমার অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসে কোন কোন ক্ষেত্রে পাত্রপক্ষের আমাদেরকে পছন্দ হয় না আবার কখনো আমাদের পাত্রপক্ষকে পছন্দ হয় না এরকম ভাবেই চলছিল কিন্তু আমি জানি আমার মন জানে আমি কিসের অপেক্ষা করতেছি। বিভিন্ন অজুহাত দেখাইতেছি আমি পড়তে চাই অনেক কিছু বলছি আমি বিয়ে করবো না কিন্তু কাউকে আমি বলতে পারি নাই কখনো আমি যে স্যারের জন্য অপেক্ষা করতেছি। 

 

অবশেষে আমি যখন ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি তখন স্যার দেশে আসলেন এসে বিয়ে করলেন। বুঝলাম আমি এতদিন অদৃশ্য হাওয়ায় ভেসে বেড়িয়েছি। আসলে আমি যা করেছি আমার নিজের মনকে আস্বস্ত করার জন্য করেছি। লাস্ট টাইম যখন স্যার বোনের বিয়ের দাওয়াত দিতে আসছিলেন, আমি বুঝতে পেরেছি তখন স্যার পুরনো সবকিছু ভুলে গেছেন। স্যারের সাথে তো আমার সরাসরি কোন কথা হয় নাই কোনদিন আমি এরকম সাহসও করতে পারি নাই। কিসের ভিত্তিতে আমি অপেক্ষা করলাম আমার অপরাধ বলেন অথবা আমার নিজের বোকামি বলেন আমি নিজের মনকে শান্ত করার জন্য এটা করেছি। এখন আর আমার আফসোস হবে না আমি অপেক্ষা করি নাই কেনো?

এই হলো আমার হৃদয়ে আঁকা প্রথম যে ছবি সেই ছবির মানুষের সমাপ্তি। আমি জানিনা কোনদিন এই ছবি মুছে ফেলতে পারব কিনা আর এটা কি আদৌ সম্ভব আপনারাই বলেন, এরকম যাদের সাথে হয়েছে আপনারা কি পেরেছেন নিজের মন থেকে প্রথম যে ছবি এঁকেছিলেন ওটাকে মুছে ফেলতে? এটা কি সম্ভব হবে কখনো আমি জানিনা আদৌ সম্ভব হবে কিনা….!

স্যারের বিয়ে করার প্রায় দেড় বছর পর আমার বিয়ে হয়ে যায়। তখন আমি অনার্স শেষ করে ফেলি। বিয়ের পর মাষ্টার্স শেষ করি।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Sumana Begum

Author: Sumana Begum

আমি সুমানা বেগম। সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। আমার বাবার নাম হাজী মো. আতাউর রহমান এবং মায়ের নাম তায়্যিবা খানম। তারা কেউ বেঁচে নেই। আমি তাদের সব ছোট মেয়ে। বিয়ানী বাজার সরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি এবং সিলেট এম. সি. কলেজ থেকে মাষ্টার্স। আমার স্বপ্ন ছিল চাকরি করব। কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে তেমন উন্নতি করতে পারিনি। তবে আমার আশা পূরণ হয়েছে আমি কিছু দিন শিক্ষকতা পেশায় কাজ করতে পেরেছি। আমি বিবাহিত এবং আমার একটি আট বছরের মেয়ে আছে নাম মাহনূর জান্নাত।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

2 Replies to ““রূপকথার গল্পে আমি”-২০”

Leave a Reply