গল্প আজব শহর ঢাকা আফছানা খানম অথৈ

0

আজব শহর ঢাকা

আফছানা খানম অথৈ

এই প্রথম ঢাকায় আসলাম।গুলিস্তান স্টেশন থেকে গাড়িতে উঠলাম মুহাম্মদপুর যাব।লোকান গাড়ি মানুষভরা। কোন সিট খালী নেই।তবুও মানুষ উঠছে।জরুরী ভিত্তিতে মুহাম্মদপুর যেতে হবে।মায়ের অসুখ ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।এক্ষণি না গেলে নয়।তাই আমি ও উঠে পড়লাম।কি আর করা অন্যদের মতো আমিও দাঁড়িয়ে রইলাম।গাড়ি চলছে তার আপন নিয়মে।ভালোই লাগছে বাসে ঝুলে ঝুলে যাচ্ছি।কিছুদূর যাবার পর গার্মেন্টস ফ্যাক্টিরি আসতে অনেক লোক নেমে গেল।বাস কিছুটা হালকা হলো,সিট খালী হলো।আমি একটা সিটে আরাম করে বসে পড়লাম।এমন সময় গাড়ি এস্টার্ন টাকা তুলতে আসল।আমার পাশের সিটে বসে আছে একজন বৃদ্ধ লোক।গাল পুরো দাঁড়ি মলিন চেহারা, ফ্যাকাসে ভাব,কেমন জানি আনমনা হয়ে বসে আছেন।গায়ে অনেক পুরানো একটা জামা,পরনে লুঙ্গি।বসে বসে কী যেন ভাবছেন।খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে।তার কাছে টাকা চাইতে তিনি করুণ স্বরে বললেন,
বাবারে আমায় মাফ করে দাও।আমার কাছে কোন টাকা নাই।
গাড়ি এস্টার্ন কি থেমে থাকার লোক, সে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিয়ে বলল,
টাকা না থাকলে গাড়িতে উঠেছেন কেনো?এক্ষণি নেমে যান বলছি।
কথাগুলো বলছে আর লোকটাকে নেমে যাওয়ার জন্য ধমকাচ্ছে।লোকটি বারবার টাকা নাই বলে অনুরোধ করছে।কিন্তু গাড়ি এস্টার্ন এর এক কথা, হয়তো টাকা দেন,নয়তো গাড়ি থেকে নামেন।লোকটির কাছে টাকা নেই,দেবে কোত্থেকে। তার চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।তিনি নেমে যেতে প্রস্তুত হলেন।আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।এস্টার্নকে কাছে ডেকে বললাম,
উনাকে আর নামতে হবে না।উনার ভাড়া আমি দিয়ে দিচ্ছি।
আর দেরী করলাম না।ভাড়া দিয়ে বৃদ্ধ লোকটাকে সিটে বসিয়ে শান্ত করলাম।অত:পর জিজ্ঞেস করলাম,
চাচা আপনি যাবেন কোথায়?
আমার বাড়িতে যাব?
কোথায় থেকে এসেছেন?
ছেলের বাসা থেকে?
আপনার ছেলে কী করে?
আমার ছেলে বড় অফিসার।
বলেন কী!তাহলে আপনার পকেটে টাকা নেই কেনো?
বাবারে সে অনেক বড় কাহিনী।অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি।।সে এখন আমাদের খোঁজ খবর লয়না। বিয়ে করে বউকে নিয়ে রাজার হালে আছে।বুড়ো হয়ে গেছি।কাজকর্ম করতে পারি না।কদিন ধরে সোহানের মায়ের খুব অসুখ।টাকার জন্য ডাক্তার দেখাতে পারছি না।বিছানায় পড়ে আছে।কদিন ধরে না খেয়ে আছি।তাই সোহানের কাছে আসলাম কিছু টাকার জন্য।টাকাতো দিলো না।বরং সোহানের বউ অনেক অপমান করে তাড়াইয়া দিলো।
চাচা সোহান ভাই কিছু বলল না?
নারে বাবা।বরং বউয়ের সুরে সুর মিলাল।কি আর করা খালী হাতে ফিরা আসলাম।বাবারে নিজের ছেলে যা করলো না,তুমি তাই করলে।আমি তোমার কাছে ঋনি হয়ে গেলাম।
কী যে বলেন চাচা সামান্য গাড়ি ভাড়া এ আর এমন কী?
তবু আমার জন্য অনেক।আজ তুমি না থাকলে কি যে হতো।
বৃদ্ধ লোকটির চোখের জলের বাঁধ মানল না।আরও জোরে গড়িয়ে পড়লো।আমি তার চোখের জল মুছে দিয়ে, তার হাতে পাঁচশত টাকার একটা নোট গুজে দিয়ে বললাম,
চাচা কাঁদবেন না।আল্লাহ এক ব্যবস্থা করে দিবেন।
মাঝে একটা স্টেশন আসতেই গাড়ি ব্রেক করলো।কিছু যাত্রী নামল,কিছু যাত্রী উঠল।গাড়ি হর্ন বাজিয়ে এগিয়ে চলল।কিছু দূর যাবার পর হঠাৎ গাড়ি থেমে গেল।কিছু লোক গাড়িতে উঠল।ভিতরে থাকা কিছু লোকের সাথে যোগ হলো।তারপর যাত্রীদের এট্যাক করলো।অস্ত্র তাক করে বলল,
তোমাদের কাছে যা কিছু আছে দিয়ে দাও।তানা হলে…।
ভয়ে কেউ কিছু বলছে না।এই সুযোগে তারা সবাইর পকেট চেক করে যার কাছে যা পেয়েছে নিয়ে নিয়েছে।তড়িঘড়ি করে তারা নেমে পড়লো।তারপর ড্রাইভারের সাথে ফিসফিস কি সব কথা বলল।এবং তার হাতে কিছু টাকা গুজে দিলো।কিছু যাত্রী তা দেখে ফেলল।এবং বুঝতে পারলো ড্রাইভারে সাথে চিন্তাইকারীদের যোগসুত্র আছে।তা না হলে স্টেশন ছাড়া গাড়ি থামালো কেনো? কিছু যুবকের রক্ত গরম হয়ে উঠল।তারা ড্রাইভারকে মারতে ছুটে গেল।ধপাধপ কিল ঘুষি কটা বসিয়ে দিলো।তখনি কিছু লোক বাঁধা দিলো।কারণ ড্রাইভারকে মেরে রক্তাত্ব করলে গাড়ি চালাবে কে?আপাতত পরিবেশ শান্ত হলো।গাড়ি আবার স্টার্ট দিলো।মনে মনে ভাবলাম,ঢাকা শহর সত্যি আজব শহর। দিন দুপুরে এসব কি হচ্ছে?পকেট চিন্তাই,ভাবতে অবাক লাগছে।বাসভর্তি লোকজন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। অথচ কেউ কিছু বলল না। গ্রামে হলে এতক্ষণে চিন্তাইকারী লাশ হয়ে যেত।ততক্ষণে গাড়ি মুহাম্মদপুর স্টেশনে থেমে গেল।আমি নেমে পড়লাম।স্মরণীয় হয়ে রইল আজব শহর ঢাকা শহরের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো।

ঃ সমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply