গল্প আদর্শ স্বামী আফছানা খানম অথৈ

0

আদর্শ স্বামী

আফছানা খানম অথৈ

রায়হান বাবা-মায়ের বাধ্য ছেলে।ছোট বেলা থেকে নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন।পড়া লেখায় খুব ব্রিলিয়ান্ট।অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে অডিট অফিসার পদে জব করছে।পরিবারের ছোট ছেলে,পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে চার ভাই-বোনের বিয়ে শাদী শেষ।এখন রায়হানের পালা,বাবা-মায়ের বয়স হয়েছে পাছে রায়হান ভালো জব করছে বিয়ের বয়স হয়েছে এখনই বিয়ে করা আবশ্যক।তাই রায়হানের মতামত জানতে চাইলে সে এক কথায় জবাব দিলো,
মা তোমরা যা ভালো মনে করো, তাতে আমি রাজী,এতে আমার কোন আপত্তি নেই।
মা শোকর আলহামদুলিল্লাহ পড়ে পাত্রী দেখা শুরু করলেন।রায়হান সব দিকে ফিট পড়া লেখা,চেহারা চুরুত,আচার আচরণ,এক কথায় বলা চলে খুব ভালো ছেলে। তাই পাত্রী পক্ষের পছন্দ হয়ে যায়।এখন সমস্যা রায়হানের ফ্যামিলির।
তাদের ছেলে ভালো তাই ভালো মেয়ে খুঁজছে।যাক দেখতে দেখতে অবশেষে সমাধান খুঁজে পেল। স্কুল টিচার ইমরুল কায়েসের বড় মেয়ে রিয়াকে তাদের পছন্দ হলো।সে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স পড়ছে।গভ:মেন্ট প্রাইমারী স্কুল টিচার ইমরুল কায়েস রায়হানের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে বিয়েতে সাঁই দিলেন।দু’পক্ষের পরামর্শ ক্রমে একটা ভালো দিন ধার্য করা হলো।বিয়ের তারিখ ১জুলাই ২০১৭।

খুব ধুমধাম করে রিয়া ও রায়হানের বিয়ের কাজ শেষ হলো।রায়হানের বাবা ও হাই স্কুল টিচার।মাস্টারে মাস্টারে আত্মীয়তা খুব ভালো।বিয়ের পর রায়হান সপ্তাহ খানেক ছিলো।তারপর ছুটি শেষ গন্তব্য স্থলে ফিরে আসতে হবে।কথাটা ভাবতেই তার মনের আকাশে শূণ্যতা অনুভব হলো।নতুন বউকে রেখে যেতে মন ছাইছে না।কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে।এমন সময় বাবা ডাকে,
রায়হান।
রায়হান এগিয়ে এসে বলে,
বাবা আমাকে ডেকেছ?
হ্যাঁ বস।
রায়হান বাবার পাশে সোফায় বসলো।পাশাপাশি মাও আছেন।বাবা সায়েদ মাস্টার বলল,
রায়হান বাসায় সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো?
কেন বাবা,তোমরা আমার সাথে যাবে নাকি?
বাবা হেসে উঠে বলে,
বোকা ছেলে বলে কি,বউকে নিয়ে যাবি না?
জ্বি না বাবা,সে এখন তোমাদের কাছে থাকুক তারপর..।
বোকা ছেলে বলে কি, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে থাকা ভালো,এটা শরীয়ত সম্মত।
বাবা তাহলে মা সহ তোমরা ও চলো।
রায়হান তুই এখন বউ মাকে নিয়ে যা,কিছুদিন যাক তারপর আমরা যাব তোদেরকে দেখতে।বউ মাকে বল সব কিছু গুছিয়ে নিতে।
রায়হান আর কিছু বলল না।কারণ তার মন ও তাই চাই।
পরদিন রায়হান তার বউকে নিয়ে গন্তব্য স্থলে ফিরে গেল।কাজের লোককে বলে রেখেছে,তাই সে রান্না রেডি করে রেখেছে।তারা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।ভোর হতে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে আযান ধবনি বেজে উঠল।রায়হান রিয়াকে জাগাতে সে গজ গজ করে বলল,
এই সাজ সকালে কি শুরু করে দিলে?
না মানে নামাজ পড়বে না?
রিয়া এক কথায় জবাব দিলো,
না পড়বো না।আর কখনো আমাকে সকাল সকাল জাগাবে না।
রায়হান আর কিছু বলল না।নিজে মসজিদে গেল নামাজ পড়তে।নামাজ শেষ করে কিছু সময় ওয়াকিং করলো।তারপর বাসায় ফিরে দেখে রিয়া এখনো শুয়ে আছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল নয়টা।কিন্তু রিয়া এখনো উঠেনি।আবুল মিয়া রায়হানের চাকরীর শুরু থেকে তার বাসায় কাজ করে।তাই কিছু বলার আগে তিনি নাস্তা রেডি করে স্যারকে ডাকলেন।রায়হান নাস্তার টেবিলে বসে বউকে ডাকার ইচ্ছা থাকলে ও ডাকেনি।কারণ সকালের মতো যদি সে রেগে যাই।এই কারণে সে একা খেয়ে নিলো।অফিসের জন্য রেডি হলো।আবুলকে ডাকতে তিনি এসে বললেন,
স্যার আমারে কিছু কইবেন?
রিয়া উঠলে ভালো করে নাস্তা পানি দিও।
জ্বি আচ্ছা স্যার।
রায়হান বের হবে এমন সময় রিয়া জেগে উঠল।হন হন করে স্বামীর সামনে এসে দাঁড়ালো।কোন কিছুর তোয়াক্ক না করে কড়া ভাষায় বলল,
কোথায় যাচ্ছ?
কোথায় আবার অফিসে।
নাস্তা না করে ।
আমি নাস্তা করেছি।তুমি নাস্তা করে নিও।আবুল মিয়াকে বলেছি,সে সব ব্যবস্থা করে দেবে।
হোয়াট!আমাকে ছাড়া তুমি নাস্তা করে ফেললে?
কি করব,তুমি ঘুমাচ্ছিলে যে।
তাই বলে আমাকে জাগাবে না?
আজব তো!তোমাকে জাগালে ও দোষ,না জাগালে ও দোষ।
কখন জাগালে তুমি আমাকে।
ঐ যে সকালে যখন আমি উঠলাম।
তখন তো খুব ভোর ছিল।আর এখন তো সকাল নয়টা। এত সময় পর্যন্ত আমি না খেয়ে আছি।অথচ তুমি আমাকে রেখে খেয়ে দিব্য চলে যাচ্ছ।এ কেমন কথা।
কথার ফাঁকে সে কেঁদে ফেলল।কাঁদতে কাঁদতে ধপাস করে শুয়ে পড়লো।রায়হান কোন কিছু না বলে অফিসে চলে গেল।অফিস শেষ করে বাসায় ফিরল। নামাজ পড়ে খেতে বসলো।রিয়াকে ডাকতে সে কড়া করে বলে,
আমি খাব না।তুমি খেয়ে নাও।
রায়হান ভেবে দেখল কড়া কিছু বলতে গেলে সে আরও রেগে যাবে।তাই মিষ্টি করে বলল,
লক্ষিটি রাগ করো না।খেতে আস।
যাক কোনমতে তার রাগ কমলো।দুজন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।এমনি মান অভিমানের মধ্য দিয়ে রিয়া ও রায়হানের নতুন জীবন শুরু হলো।
সাজ সকালে সায়েদ মাস্টার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে কল দেয়।রায়হান ফোন রিসিভ করে বাবাকে সালাম দেয়।তিনি সালামের উত্তর দিয়ে,জিজ্ঞেস করলেন,
রায়হান কেমন আছিস রে?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা।মা কেমন আছে?
আলহামদুলিল্লাহ তোর মাও ভালো আছে।রিয়া কেমন আছেরে,,রায়হান,তাকে ফোনটা দেতো কথা বলব।
রিয়ার এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি। তাকে জাগালে রেগে যাবে।তাই রায়হান বাবাকে বানিয়ে বলল,
বাবা রিয়া বাতরুমে।
ঠিক আছে সে আসলে কথা বলতে বলবি।আর ও হ্যাঁ তার ভালোভাবে টেক কেয়ার করবি কিন্তু।
ওকে বাবা করব।এখন রাখি। ভালো থেকো, খোদা হাফেজ।
বাবা ছেলের কথোপকথন শেষ করে ফোন রেখে দিলো।এমন সময় রায়হানের শ্বাশুড়ির ফোন আসে।রায়হান বিনয়ের সহিত সালাম দেয়।তিনি সালামের জবাব না দিয়ে জামাইকে বকা দেয়।রায়হানের শ্বাশুড়ি বদ মেজাজি টাইপের।তাই আসল নকল যাচাই না করে মেয়ের কথা বিশ্বাস করে জামাইকে বকা দেয়।মায়েদের এ সমস্ত অন্যায় সাপোর্টের কারণে অধিকাংশ মেয়ের সাজানো সুখের সংসারে আগুন জ্বলে,শুধু তাই নয় সংসার ভাঙ্গার প্রবণতা ও বেড়ে গেছে বহু গুনে।বিয়ের পর মায়েদের উচিৎ স্বামীর সংসার সুন্দর ভাবে গুছিয়ে তোলার জন্য সৎ পরামর্শ দেয়া।কিন্তু অধিকাংশ মায়েরা কুপরামর্শ দিয়ে থাকেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। আর এই জন্য,স্বামী স্ত্রীতে অমিল,বউ শ্বাশুড়ির হ্রেষা হ্রেষি ঘেষা ঘেষি ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত।আজ রায়হান বউকে নিয়ে ফ্যামিলি কোয়াটারে উঠেছে।এখানে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, দেবর-ননদ কেউ নেই।তবুও শ্বাশুড়ি বলে,
রায়হান তুমি নাকি আমার মেয়ের টেক কেয়ার ঠিক মতো করো না।কেমন স্বামী তুমি।এত বড় চাকরী কর।তবুও বউয়ের প্রতি অবহেলা।
আর কখনো এমন শুনেছি তো..।
রায়হান বুঝতে পেরেছে শ্বাশুড়ির মুভমেন্ট ভালো না।আরও কিছু সময় কথা বললে তিনি আরও কড়া ভাষা প্রয়োগ করবেন।তাই ফোন কেটে বন্ধ করে দেয়।কিছুক্ষণ পর রায়হান রিয়াকে ঘুম থেকে জাগালে সে ঐ দিনের মতো খারাপ আচরণ করে।রায়হান কোন কিছু না বলে প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে দস্যি বউটা যেন হেদায়েতে আসে তার জন্য আল্লাহ পাকের কাছে প্রার্থনা করে।এভাবে চলছে রিয়াও রায়হানের জীবন।মাস শেষ হলো রায়হান বেতন পেল।বাবা-মায়ের জন্য টাকা পাঠিয়ে বাকী টাকা নিয়ে বাসায় আসল।রিয়া জিজ্ঞেস করলো,
মাস শেষ হয়েছে,বেতন পাওনি?
হ্যাঁ পেয়েছি,তোমার টাকা লাগবে?
লাগবে মানে,আমি কেনাকাটা করব।
রায়হান বাধ্য হয়ে বলল,
ঠিক আছে চলো।
রায়হান রিয়াকে নিয়ে নিউ মার্কেটে গেল।কিছু কিছু মেয়েদের একটা বাজে অভ্যাস স্বামীর আয়ের দিক চিন্তা না করে ব্যয়ের দিক বাড়িয়ে পেলেন।এতে করে স্বামীকে টাকার জন্য হিমশিম খেতে হয় প্রতিনিয়ত।আজ রিয়ার অবস্থাটা তাই হয়েছে।স্বামীর পকেটে কত টাকা আছে তা ভেবে না দেখে,অনেক কেনাকাটা করে পেলে।যার বিল দিতে গিয়ে রায়হানকে পুরো মাসের খরচের টাকা সহ দিয়ে আসতে হলো।পকেট একেবারে খালী,ফ্যামির খরচের জন্য যে টাকা রাখা হয়েছে,রিয়ার এক কেনাকাটাতে সব শেষ।যার ধরুন রায়হানকে এ মাসে ফ্যামিলি খরচ বহন করতে অনেক হিমশিম খেতে হয়।রায়হান অডিস অফিসার,বিভিন্ন জাগায় তার ডিউটি পড়ে।তিনি দুদিনের জন্য কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অডিট করতে গেছেন।রিয়ার তর সইল না।সে রাগ করে বাবার বাসায় চলে গেল।রায়হান ফিরে দেখে বউ নেই।আবুলকে জিজ্ঞেস করলে বলে,
উনি উনার বাবার বাসায় গেছেন।
রায়হান আর কিছুই বলল না।বউকে আনার জন্য শ্বশুর বাড়িতে ছুটে গেল।রায়হানকে একা পেয়ে মা মেয়ে এক গাদা বকা দিলেন।রায়হান নিরবে সব কিছু হজম করে নিলো।তারপর রিয়াকে নিয়ে রওয়ানা করলেন।রিয়া সাজু-গুজু করে পর্দাবিহীন অবস্থায় বের হলো।রায়হান তার দিকে তাকিয়ে খুব লজ্জিত হলো,এবং নিজেকে গুনাগার মনে হলো।তাই নম্র স্বরে বলল,
প্লিজ রিয়া বোরকা পরে নাও।বিয়ের পর নারীদের পর্দা করতে হয়।তানা হলে গুনা হবে।
রিয়া খিলখিল করে হেসে উঠে বলল,
কি আমি বোরকা পরব,হা হা হো হো।
এতক্ষণ পরে রায়হান একটা কাজের কথা বলল,
প্লিজ রিয়া,থাম আমি তোমাকে এমন খারাপ কি বলেছি, যার জন্য এমন ব্যঙ্গ করে হাসতে হবে।
খারাপ বল নি মানে,বোরকা পরতে বলাটা খারাপ না,এ যুগে কেউ বোরকা পরে?
রায়হান আর কথা বাড়ালো না।রিয়াকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসল।রিয়া রায়হানের জীবনটা অতিষ্ট করে তুলেছে।তবুও রায়হান নিরবে সব কিছু হজম করে প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহপাকের কাছে সাহায্য চাইছে।যাক রিয়া প্রেগন্যান্ট, তার কোন কিছু করতে ইচ্ছে করছে না,খেতে ইচ্ছে করছে না,মাথা ঘোরে বমি হয়।
প্রেগন্যান্সির ক্ষেতে নারীদের যা হওয়ার রিয়ার ক্ষেত্রে ও তা হতে চলেছে।কিন্তু রিয়া এটাকেও মেনে নিতে পারছে না।এর জন্য রায়হানকে দায়ী করছে।রায়হান খুব কেয়ারফুল তার টেক কেয়ার করে চলেছে।তবুও রিয়া রায়হানের সঙ্গে মন্দ আচরণ করে প্রতিনিয়ত।রায়হান ও রিয়ার মাঝে বিরাট পার্থক্য,রায়হান কোরান ও হাদিসের বিধি বিধান মেনে চলতে পছন্দ করে,আর রিয়া তা অপছন্দ করে। রায়হানের সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া,সত্য কথা বলা,সৎ পথে চলা,ঘুষ না খাওয়া এসব কারণে রিয়া তাকে অপছন্দ করে।রিয়ার প্রেগন্যন্সির পাঁচ মাস পূর্ণ হলো।রিয়া রায়হানকে বলল,
রায়হান চলো মার্কেটে যাব।আমার কিছু কেনাকাটা আছে।
রায়হান অমত করলো না বলল,
হ্যাঁ চলো।
রিয়া সাজু-গুজু করে পর্দাবিহীন ভাবে সেদিনের মতো বের হলো।দৃশ্যটা রায়হানের চোখে খুব খারাপ লাগল।সে ভাবল রিয়া এ অবস্থায় বের হলে লোকে খারাপ সমালোচনা করবে।তাছাড়া এর জন্য আল্লাহপাকের কাছে তাকে জবাব দিহি দিতে হবে।কারণ বিয়ের পর স্ত্রীর সব পাপ-পূণ্যের অংশীদার স্বামীকে হতে হবে।রিয়া দিনে দিনে অনেক বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।রায়হান বলে,
না না আর থেমে থাকা যাবে না।এক্ষণি তাকে শাসন করা দরকার।তখনি রায়হান বলল,
রিয়া মার্কেটে যেতে হলে আমার একটা শর্ত তোমাকে মানতে হবে।
বলো কি শর্ত?
তোমাকে বোরকা পরতে হবে।
রিয়া চোখ রাঙিয়ে বলে,
না আমি কখনো বোরকা পরবো না।
কেনো কেনো?
কেনো বুঝ না।
না বুঝি না।
আমি বলছি শুন বোরকা পরাটা সেই পুরানো কৃষ্টিকালচার্ড।এখন আধুনিক যুগে এসব বোরকা মানায় না।এখন হচ্ছে মডেলিং’র যুগ।এ যুগে এসে আমি বোরকা পরবো প্রশ্নই উঠে না।তাছাড়া আমার ফ্রেন্ড সার্কেল আত্মীয়-স্বজন আমাকে বোরকা অবস্থায় দেখলে কি বলবে?আর বোরকা পরলে দম বন্ধ হয়ে আসে,ব্যাকডেটেড যত্তসব আমি এসব পারবো না।
রিয়া তুমি বলেছ আমি শুনেছি।এবার আমি বলি তুমি শুন।
রিয়া আমরা মুসলিম,ইসলাম আমাদের ধর্ম।আমরা যদি মুসলিম হয়ে অমুসলিমের মতো কাজ করি আল্লাহপাক কখনো তা ক্ষমা করবেন না।আর তোমার ফ্রেন্ড সার্কেল, আত্মীয়-স্বজন কোন বিষয় না।মূল বিষয় হলো তোমার স্বামী।
বিয়ের পর একজন স্ত্রী প্রথম কাজ হলো তার স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা।নিজের স্বামীর বাধ্য থাকা।পর্দা মোতাবেক চলাফেরা করা। তা না হলে আল্লাহপাক তার উপর থেকে রহমতের দরজা বন্ধ করে দেন।তাই আমি স্পষ্ট ভাষায় বলছি।আজ থেকে তুমি বোরকা পরে বাইরে বের হবে।
রিয়া পূণরায় বলে,
না আমি কখনো বোরকা পরব না।
এবার রায়হান ও ছাপ ছাপ বলে দিলো,
বোরকা না পরলে আমি ও তোমার সাথে যাব না।
এমনি ভাবে তারা আরও কিছু সময় তর্ক বিতর্ক করে।তর্ক বিতর্ক চরমে উঠে যাই।রিয়া রাগ করে বাবার বাড়ি চলে যাই।মা-মেয়ে দুজন মিলে রায়হানকে ডিভোর্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।কিন্তু মজার ব্যাপার হলো,রিয়ার পেটের বাচ্চাকে কি করবে?শেষে দুজনে বাচ্চাকে নষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়।তারা ছুটে গেল এক গাইনি মহিলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে।আধুনিক যুগে এখন প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তিন থেকে চার বার পরীক্ষা করা বিশেষজ্ঞদের মতে ভালো।তাই ডাক্তার পেশন্টকে ভালো ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রেশক্রিপশন লেখার জন্য কাগজ কলম হাতে নিলেন।তখনি রিয়ার মা বলল,
ডাক্তার সাহেবা আগে আমার কথা শুনুন তারপর ঔষধ ।
ওকে বলুন।
আমরা বাচ্চা রাখব না, নষ্ট করে ফেলব।
কেনো, বাচ্চার বাবা নেই?
জ্বি হ্যাঁ ম্যাডাম আছে।
তাহলে বাচ্চা নষ্ট করবেন কেনো?
ম্যাডাম জামাই ভালো না।আমরা এ সমন্ধ রাখব না।তাই।
ব্যস আর বলতে হবে না। বুঝতে পেরেছি।আমার ভাবতে অবাক লাগছে আপনি মা,না ডাইনি?
এবার রিয়া রেগে উঠে বলল,
হোয়াট!আমাকে এত বড় অপমান,আমার বাচ্চা আমি নষ্ট করব।এতে আপনার সমস্যা কোথায়?
শুন মেয়ে, তোমার বাচ্চা তুমি নষ্ট করবে তা ঠিক।তার আগে শুন বাচ্চা নষ্ট করলে কি ক্ষতি হয়।তারপর সিদ্ধান্ত নিও কি করবে?
দুজনে এক সঙ্গে বলল,
ঠিক আছে বলুন।
শুন মেয়ে ভালো করে বুঝে নাও।আমার মনে হয় তুমি স্বামীর উপর অভিমান করে বাচ্চা নষ্ট করতে এসেছে।
এবরশন করার কিছু নিয়ম আছে,
এখন তোমার বাচ্চার বয়স পাঁচ মাস পূর্ণ হয়ে গেছে।এই বয়সে এবরশন করানো সম্পূর্ণ নিষেধ।এ সময় অবৈধ সন্তান ছাড়া কোন মা সন্তান এবরশন করে না।কারণ রোগী বাঁচানো তখন রিক্স হয়ে পড়ে।
এছাড়া আরও জঠিল সমস্যা হয়।বিশেষ করে জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী।
আর ইসলামের নির্দেশ, বাচ্চা এবরশন করা আর খুন করা সমান পাপ।শুধু যে পেশন্ট পাপী হবে তা না।তার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে সমান পাপের অংশীদার হতে হবে।অতএব তোমার এ জীবন্ত বাচ্চা নষ্ট করে আমি পাপের অংশীদার হতে পারবো না।আসলে রিয়া আমি কখনো বাচ্চা এবরশন করি না।সে বৈধ হোক আর অবৈধ হোক,কারণ আল্লাহপাক কখনো এ সমস্ত কঠিন গুনা ক্ষমা করবেন না।রিয়া আমাকে ক্ষমা করো।
ভুল করতে যাচ্ছে রিয়া ক্ষমা চাইল ডাক্তার বিষয়টা উল্টো হয়ে গেল না।রিয়ার ভিতরে প্রতিক্রিয়া শুরু হলো।
তার বিবেকের জাগরণ ঘটল।সে তার ভুল বুঝতে পারলো।তারপর নম্র স্বরে বলল,
প্লিজ ম্যাডাম আমার কিছু কথা শুনুন।
হ্যাঁ বলো।
ম্যাডাম আমি বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম।আপনার সাথে দেখা না হলে আমার ভুলটা শুধরানো যেত না। আমি বুঝতে পারি নি।আমার স্বামী খুব ভালো।আমি কালই তার কাছে ফিরে যাব।আমাকে ক্ষমা করুন
ডাক্তার বলল,
ভেরী ভেরী থ্যাংকস। রিয়া,তোমার ভুল বুঝতে পারার জন্য। ক্ষমা আমার কাছে নয়,তোমার স্বামীর কাছে চাও।তাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলো।মান অভিমানের পালা শেষ কর।আবার নতুন বছরে নতুন করে সংসার জীবন শুরু কর।সব ঠিক হয়ে যাবে।
ওকে ম্যাডাম আপনি ঠিক বলেছেন।আমি কালই যাব।
রিয়া দ্রুত বাসায় ফিরে আসল।সব কিছু গুছিয়ে নিলো।এদিকে চারদিকে নতুন বছরেকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি শুরু হলো।
রাত বারোটা বাজার সাথে সাথে চারদিকে নতুন বছরের স্লোগান ধবনি বেজে উঠল।যুবক যুবতি আতশ বাজির মাধ্যমে ২০১৮ সালকে বরণ করে আনন্দ উল্লাস করলো।প্রায় দু’তিন ঘন্টা ধরে আতশ বাজি জ্বলছিল।সারা আকাশের আলো দেখতে আগুনের ফুলকির মতো লাগছে।খুব ভালো লেগেছিল দৃশ্যটা দেখতে।এদিকে ভোর হতে না হতে রিয়া রওয়ানা করলো।রায়হানের মন ভালো নেই।রিয়া চলে গেছে রাগের মাথায় কি জানি করে, এই চিন্তা তার মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে।তাই আজ নামাজ পড়ে ওয়াকিং না করে শুয়ে পড়েছে।রিয়া আজ সম্পূর্ণ অন্য রকম সাজে সেজেছে,গায়ে বোরকা,মাথায় হিজাব,।
সকাল সকাল এসে কলিংবেল টিপ দিলো।রায়হানের ঘুম যেন ভাঙছে না।তবুও সে জেগে উঠে দরজা খুলে দেয়।রিয়াকে পর্দা অবস্থায় দেখে সে চিনতে পারেনি।তাই জিজ্ঞেস করলো,
কে আপনি,কাকে চান?
রিয়া ফুলের তোড়া এগিয়ে দিয়ে বলল,
Happy new year 2018.
রায়হান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
রিয়া তুমি?
হ্যাঁ রায়হান আমি তোমার স্ত্রী রিয়া।
রিয়া ভিতরে এসো।
রিয়া ভিতরে গিয়ে রায়হানের পাশে বসলো।তারপর বলতে শুরু করলো।
প্লিজ রায়হান আমার কিছু কথা আছে।
হ্যাঁ রিয়া বল?
রায়হান আমি অনেক বড় ভুল করেছি।না জেনে না শুনে তোমার সঙ্গে অনেক বাজে আচরণ করেছি।আজ আমি সকল ন্যায় অন্যায় বুঝতে পেরেছি।পুরাতন বছরের কলুষতা দূর করে নতুন বছরের নতুন দিনে তোমার আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলব।
রায়হান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
রিয়া সত্যি বলছ তো?
হ্যাঁ রায়হান সত্যি।কারণ আমি যা করেছি সব ভুল ও অন্যায়,আর তুমি যা করেছ তা সঠিক ও ন্যায়।রায়হান আমি তোমাকে বুঝতে পারিনি।তাই এমন অন্যায় বাজে আচরণ করেছি।আজ সব বুঝতে পেরেছি,তাই নতুন বছরের নতুন দিনে আমি আমার “আদর্শ স্বামীর” হাতে হাত রেখে শফথ করিতেছি যে,আমি আর কখনো এমন ভুল করবো না।আমার আদর্শ স্বামীর আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলবো,”ইনশাআল্লাহ”।
রায়হান রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল,
হে পরওয়ার দেগার আপনি সব কিছুর মালীক।আমার স্ত্রীর প্রার্থনা কবুল করুন।আমীন।।
দুজন মিট হয়ে নতুন বছর থেকে নতুন জীবন শুরু করলো।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to “গল্প আদর্শ স্বামী আফছানা খানম অথৈ”

Leave a Reply