গল্প আমি সেই মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

0

আমি সেই মেয়ে

আফছানা খানম অথৈ

অরুপ চৌধুরী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।গাড়ি বাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স টাকা পয়সা কোন কিছুর কমতি নেই।তবে একটা কথা তার স্বভাব চরিত্র তেমন একটা ভালো না।ব্যবসার কাজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান আর সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে আবাসিক হোটেলে রাত কাটান আনন্দ ফুর্তি করেন।অরুপ চৌধুরী বড় লোক বিধায় কেউ এসব নিয়ে মাথা ঘামান না।আর ঘামালে বা কি তাদের জন্য মামলা মোকদ্দমাতো কিছু না,টাকা দিলে সব ফিনিশ।
অরুপ চৌধুরী ব্যবসার কাজে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গেলেন।তিনি সেখানে সপ্তাহ খানেক থাকবেন।তার থাকা খাওয়ার দায় দায়িত্ব পড়লো তার অফিসের টেককেয়ার রমজান আলীর উপর। রমজান আলী একমাত্র মেয়ে মালা নিজ হাতে রান্না করে অরুপ চৌধুরীর জন্য পাঠিয়ে দিলেন।অরুপ চৌধুরী রান্নার মজা পেয়ে বললেন,
রমজান তোমার স্ত্রীতো খুব ভালো রান্না করতে পারে,মাছ গোস্ত অনেক সুস্বাদু হয়েছে।
সত্যি বলছেন সাহেব?
হুম সত্যি।
আসলে রান্না আমার বউ করে নাই।
তো কে করেছে?
আমার একমাত্র মেয়ে মালা।
কী বল তোমার মেয়ে এত ভালো রান্না করতে পারে?
জ্বি সাহেব পারে।
রমজান আলীর মেয়ের কথা শুনে অরুপ চৌধুরীর মাথার নষ্ট পোকাগুলো কিলবিল শুরু করে দিলো।রাত তখন এগারোটা অরুপ চৌধুরী বলল,
রমজান মিয়া চলো তোমার বাসায় যাব।
এত রাতে আমার বাসায় ক্যান সাহেব?
তোমার মেয়ে এত ভালো রান্না করলো তাকে থ্যাংকস জানাতে হবে না?
রমজান আলী আর অমত করলো না।খুশি হয়ে বলল,
জ্বি সাহেব চলেন।
বলতে না বলতে অরুপ চৌধুরী রমজান আলীর বাড়িতে অবস্থান করলো।রমজান আলী মেয়েকে ডেকে বলল,
মালা মা মনি তাড়াতাড়ি সাহেবের জন্য চা নাস্তা পাঠিয়ে দেহ্।
জ্বি আচ্ছা বাবা।
মালা আর দেরী করলো না।চা নাস্তা বানিয়ে ট্রে করে অরুপ চৌধুরী সামনের টেবিলে রেখে সালাম দিয়ে বলল,
সাহেব এই নিন চা।
পরক্ষণে রমজান আলী বলল,
সাহেব এই হল আমার মেয়ে মালা।
অরুপ চৌধুরীর কুদৃষ্টি পড়লো মালার উপর।তিনি পলকহীনভাবে মালার দিকে তাকিয়ে রইলেন।মালা লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল,
সাহেব চা নিন।
অরুপ চৌধুরী চা খেতে খেতে বলল,
মালা চা অনেক মজা হয়েছে।তুমি দেখছি অনেক ভালো চা বানাতে পার।কাল থেকে রোজ তোমার হাতের চা খেতে আসব।এই নাও তোমার বখশিস।
বলতে না বলতে মালার হাতে এক হাজার টাকার একটা নোট গুজে দিলো অরুপ চৌধুরী।
মালা বলল,
সাহেব টাকা লাগবে না।আমি রোজ আপনাকে চা বানিয়ে খাওয়াব।আপনি হলেন আমাদের মুনিব।আপনি টাকা দিবেন কেনো?নিয়ে যান আপনার টাকা।
মালা আর কোন কথা নয়।এই টাকা আমি খুশি হয়ে তোমাকে দিয়েছি।এই টাকা দিয়ে তুমি জামা কাপড় কিনে নিও কেমন।চলি কাল আবার আসব।
পরদিন সকালে অরুপ চৌধুরী রমজান আলীর বাড়িতে অবস্থান করলো।রজমান আলী ডিউটিতে। বাসায় মালা একা আর এই সুযোগে অরুপ চৌধুরী আগমন।মালা অরুপ চৌধুরীর জন্য রান্না করার জন্য সবেমাত্র কিচেন ঘরে পা দিলো।এমন সময় অরুপ চৌধুরী মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে ডাক দেয়,
মালা এদিকে এসো।
মালা এগিয়ে এসে বলল,
সাহেব আপনি বসেন।আমি আপনার জন্য চা করে নিয়ে আসি।
অরুপ চৌধুরী তার হাত চেপে ধরে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলল,
মালা আমি চা খাব না।তোমার সাথে গল্প করব।
মালার কোনকিছু বলার অপেক্ষা না করে তিনি তাকে জড়িয়ে ধরে বলেন,
মালা তুমি খুব কিউট, তোমাকে দেখার পর আমার সব শান্তি উধাও।আমি তোমাকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারছি না।তোমার মিষ্টি মায়াবী চেহারাটি বারবার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।কিছুতে আমি তোমাকে ভুলতে পারছি না।আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
I love you মালা I love you.
সাহেব আমাকে ক্ষমা করবেন।আমি সামান্য একজন কেয়ারটেকারের মেয়ে। আমি কিছুতে আপনাকে ভালোবাসতে পারব না।আমি আপনার যোগ্য না।আমাকে ছেড়ে দিন।
না মালা আমি তোমার কোন কথা শুনব না।আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমি তোমাকে বিয়ে করব।
মালা শত চেষ্টা করেও নিজের বডিকে সেফ করতে পারলো না।অরুপ চৌধুরী ঠিক তার চাহিদা পূরণ করলো।এরপর থেকে প্রতি রাতে সে মালার সাথে রাত কাটাত। তার যাবার সময় হলো। মালা জিজ্ঞেস করলো,
আপনি কী সত্যি চলে যাবেন?
হুম যাব।কিছু বলবে?
আবার ফিরবেন কখন?
মাস খানেক পরে এসে তোমাকে বিয়ে করে আমার বাসায় নিয়ে যাব।
সত্যি আসবেন তো?
হুম আসব।তুমি কোন চিন্তা করো না।আমি ঠিক সময়মতো চলে আসব।চলি বাই বাই।
অরুপ চৌধুরী চলে গেল।মাঝে মাস দুয়েক পার হলো।একদিন ভর দুপুরে মালা মাথা ঘুরে পড়ে গেল।রমজান আলী মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল।ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানালেন মালা মা হতে চলেছে প্রেগন্যান্ট। কথাটা শুনামাত্রই রমজান আলীর মাথা ঘুরে উঠল।তিনি ডাক্তারের সামনে মেয়েকে কোনকিছু না বলে বাসায় ফিরে এলেন।তারপর মেয়ের পাশে বসে আস্তে করে বললেন,
মা তুই একি করলি?আমি এখন সমাজে মুখ দেখাব কী করে?এ বাচ্চা কার?
মালা দৃঢ় প্রত্যয়ে উত্তর দিলো,
বাবা তুমি কোন চিন্তা করো না।এ বাচ্চা অরুপ চৌধুরীর।
বলিস কী!
এখন কী হবে?
কী হবে মানে সে আমাকে বিয়ে করবে বলেছে।
সত্যি বলছিসতো?
জ্বি বাবা সত্যি বলছি।চলো বাবা কালই আমরা ঢাকা যাব।
যদি তিনি অস্বীকার করেন?
প্রশ্নই উঠে না।সে আমার গা ছঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছে আমাকে বিয়ে করবে।
তবুও মা আমার ভয় হয়।
প্লিজ বাবা না করো না।
রমজান আলী আর না করলো না।পরদিন সময়মতো মেয়েকে নিয়ে রওয়ানা করলো।অনেক কষ্টে তারা অরুপ চৌধুরীর বাসায় গিয়ে পৌছল।কলিংবেল টিপতেই দারোয়ান দরজা খোলে জিজ্ঞেস করলো,
আপনারা কারা,কাকে চান?
আমি কেয়ারটেকার রমজান আলী।অরুপ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
ঠিক আছে আপনারা বসেন।আমি উনাকে ডেকে দিচ্ছি।
দারোয়ান ভিতরে গিয়ে বলল,
ম্যাডাম এক লোক বড় সাহেবকে ডাকছেন।সঙ্গে একজন মেয়ে মানুষ ও আছেন।
এই সেরেছে মেয়ে মানুষের কথা শুনে অরুপ চৌধুরীর স্ত্রী আছমা চৌধুরী হনহন করে ছুটে আসল রমজান আলীর কাছে।এসে জিজ্ঞেস করলেন,

আপনারা কারা, এখানে কি চান?
রমজান আলী উত্তর দিলো।
আমি কেয়ারটেকার রমজান আলী, আর ওহ আমার একমাত্র মেয়ে মালা।
তা বুঝলাম। কিন্তু এখানে কী চান?
ম্যাম সাহেব কিছু চাইতে আসেনি।কিছু সত্য প্রকাশ করতে এসেছি।
বলুন সত্যটা কী?
বল মা তোর কথা তুই বল।
মালা আর দেরী করলো না।গড়গড় করে সব সত্য প্রকাশ করে দিলো।সবকথা শুনার পর আছমা চৌধুরী বলল,
সত্যি কী তোমার গর্ভে অরুপ চৌধুরীর সন্তান?
জ্বি ম্যাম সাহেব,আমরা গরীব হতে পারি তবে মিথ্যেবাদী নয়।সত্যি আমার গর্ভে উনার সন্তান।
স্ত্রী জানে স্বামীর স্বভাবের কথা। তাই বাড়াবাড়ি না করে সরাসরি বলল,
শুন মালা এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করে লাভ নেই।এতে তোমারি সম্মান হানি হবে।অরুপ চৌধুরীর কিচ্ছু হবে না।তুমি বরং কিছু টাকা নিয়ে যাও।এই টাকা দিয়ে বাচ্চা অ্যাবরশন করে নিও।
জ্বি না ম্যাডাম আমি কখনো অআমার বাচ্চা নষ্ট করব না।
তাহলে কি করবে?
কি করব মানে আমি আমার বাচ্চার বাবার পিতৃ পরিচয় চাই।স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি চাই।
তুমি তা কখনো পাবে না।
সেটা অরুপ চৌধুরীর মুখ থেকে শুনতে চাই।
তাদের কথা কাটাকাটির মাঝে উপস্থিত হলো অরুপ চৌধুরী।তাকে দেখামাত্রই স্ত্রী আছমা চৌধুরী বলল,
এই তুমি নাকি এই মেয়েকে প্রেগন্যান্ট করেছে?শুধু তাই নয়,তাকে নাকি বিয়ে ও করবে বলেছ? কথাগুলো কী সত্যি?
অরুপ চৌধুরীর জন্য এসব কোন ব্যাপার না।তাই খিলখিল করে হেসে উঠে বলল,
বউ লোকে কত কি বলে সব কথায় কান দিতে নেই।গরীবদের একটা স্বভাব বড় লোকদের নামে বদনাম রটিয়ে টাকা কামানো।টাকা কটা দিয়ে দাও সব ঠিক হয়ে যাবে। সামান্য কেয়ারটেকারের মেয়ে, তাকে আমি বিয়ে করতে বলব,এটা তুমি বিশ্বাস করলে কিভাবে?দারোয়ানকে বল গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে।
অরুপ চৌধুরীর মুখের মিথ্যে বয়ান শুনার পর মালার শরীর ঘৃণায় রিরি করে উঠল।সে চৌধুরীর মুখের উপর বলল,
ছিঃ চৌধুরী সাহেব,ছিঃ এই আপনার ভালোবাসা, এই আপনার ওয়াদা,আমরা গরীব হতে পারি তবে আপনাদের মতে মিথ্যাবাদী,লুচ্চা প্রতারক বেঈমান নয়।আমি আবার ও চিৎকার করে বলছি হে আকাশ হে মাটি তোমরা সাক্ষী থেকো,আমার পেটের বাচ্চার বাবা এই অরুপ চৌধুরী।সে বিয়ে করার কথা বলে আমার কুমারীত্ব নষ্ট করে এখন সবকিছু অস্বীকার করছে।
অরুপ চৌধুরী চোখ রাঙিয়ে বলল,
এই মেয়ে তুমি জান আমার ক্ষমতা কত।এক্ষণই এখান থেকে বিদায় হও।তানা হলে আমি তোমাকে পুলিশে দেব।শুধু তাই নয়,আর কখনো আমার সামনে আসবে না।যদি আস বাপ মেয়ে দুজনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেব।তারপর বুঝবে কত ধানে কত চাল।আজ থেকে তোমার বাবার চাকরী নট।
বড় লোকদের ক্ষমতার কাছে গরীবদের সততার কোন মূল্য নেই।তাই মালা আর কথা না বাড়িয়ে বাবাকে নিয়ে অচেনা শহরে পাড়ি দিলো।যাক অনেক ঘুরাঘুরির পর কোনমতে বস্তির ছোট্ট একটা ঘরে তাদের থাকার জায়গা হলো। রমজান আলী মেয়েকে বাঁচানোর জন্য এই বুড়া বয়সে ঠেলা গাড়ির হেল্পারের কাজ নিলো।কোনমতে চলছে বাবা মেয়ের ছোট্ট সংসার।মাঝে কমাস পার হলো।মালার বাচ্চা হওয়ার সময় হলো।মাঝরাতে তার প্রসব ব্যথা শুরু হলো।রমজান আলী মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে গেল।মালার ফুটফুটে একটা মেয়ে বাচ্চা হলো।হুবাহুব দেখতে অরুপ চৌধুরীর মতো।মালা অরুপ চৌধুরীর নামের সঙ্গে মিল রেখে মেয়ের নাম রাখল অধরা।হাটি হাটি পা পা করতে করতে অধরা বড় হয়ে উঠল।সে এস এস সি তে গোল্ডেন পেল।মালা খুশি হয়ে বস্তির সবাইকে মিষ্টি খাওয়াল।অধরা প্রায় সময় তার মাকে বাবার কথা জিজ্ঞেস করে।মালা এটা সেটা বলে এড়িয়ে যায়।কিন্তু আজ অধরা মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
মা আজ কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়ছি না।
মানে কী অধরা?
মানে হলো আজ তুমি আমাকে আমার বাবার পরিচয় বলতে হবে।বলতে হবে কে আমার বাবা?
অধরা এখনো তোর বাবার পরিচয় দেয়ার সময় হয়নি।
কেনো মা,সমস্যা কোথায়?
কোন সমস্যা নেই। তবে আর একটু সময় লাগবে।তোকে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে।তবে তোর বাবার পরিচয় বলব,এর ব্যতিরেকে নয়।আর যদি কখনো প্রশ্ন করিস আমি তোকে ছেড়ে অনেক দূর চলে যাব।তখন বুঝবি মা কি জিনিস।
ঠিক আছে মা তোমাকে আর কখনো বাবার পরিচয় জিজ্ঞেস করব না।এবার চলো খাব।খুদা পেয়েছে।

মা মেয়ে দুজন খেয়ে শুয়ে পড়লো।মায়ের চোখে ঘুম আসলেও মেয়ের চোখে কিন্তু ঘুম আসেনি।সে শুয়ে শুয়ে তার বাবার কথা ভাবছে।কে তার বাবা,কি তার পরিচয়,মা কেনো তার বাবার পরিচয় দিচ্ছে না।তবে কি সে কারো পাপের ফসল?এসব ভাবনা তার মাথায় উৎপেতে বসেছে।
এদিকে অরুপ চৌধুরী একমাত্র মেয়ে টিনা চৌধুরী স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে গিয়ে অমানুষে পরিণত হয়েছে। বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে এক বখাটের হাত ধরে পালিয়েছে।অরুপ চৌধুরী মান সম্মানের কথা চিন্তা করে মেয়েকে ত্যাজ্য করেন।অরুপ চৌধুরীর এখন আপন বলতে আর কেউ নেই।একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে বাবা-মা দুজনে মানসিকভাবে আহত।অরুপ চৌধুরী রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে বসে মাথা ঘুরে পড়ে যান।পাশের কেবিনে অধরা নাস্তা করছে।দৃশ্যটি অধরার চোখে পড়তেই সে এগিয়ে এসে অরুপ চৌধুরীর নাকে মুখে পানি ছিটা দিলো।তার জ্ঞান ফিরে আসল।তিনি অধরার দিকে তাকিয়ে বললেন,
কে তুমি মা?
আমি অধরা। আঙ্কেল মনে হয় আপনি অসুস্থ। আপনার একা যাওয়া ঠিক হবে না।চলুন আপনাকে বাসায় পৌছে দিহ্।
চলো মা।
অরুপ চৌধুরীকে সঙ্গে করে অধরা বাসায় পৌছল।অধরার কাঁধে ভর করে অরুপ চৌধুরী সিঁড়ি বেয়ে উপরে উড়ছে।আছমা চৌধুরী এগিয়ে এসে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে বললেন,
ওগো তোমার কী হয়েছে?
রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে বসে মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম।অধরা মা মনি না থাকলে একটা অঘটন ঘটে যেত।মা মনিকে বসতে দাও।নাস্তা দাও।
জ্বি না আঙ্কেল আজ থাক।
তখনি আছমা চৌধুরী বলল,
সে কি মা।আজ থাকবে কেনো,বস বস,চা নাস্তা করে তবে যাবে।
বলতে না বলতে বুয়া চা নাস্তা নিয়ে হাজির।চা নাস্তা খেতে খেতে আছমা চৌধুরী বলল,
মা তুমি কি কর?
আমি আইন বিভাগে পড়া শেষ করেছি।এখন উকিলের সঙ্গে প্রেকটিক্স করছি।আগামী মাস থেকে ওকালতি শুরু করব ভাবছি।
ভালো মা ভালো। যে মা তোমাকে পেটে ধরেছে তাকে স্যালুট জানাই।আচ্ছা তুমি থাক কোথায়? তোমার বাবার নাম কি?
বাবার নাম জিজ্ঞেস করতে সে থবনে হারিয়ে গেল।উত্তর না দিয়ে বলল,
আন্টি আমি এখন আসি।মা আবার চিন্তা করবেন।
কোন রকমে উত্তর দিয়ে সে কেটে পড়লো।বাসায় এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
মা আজ না একটা মজার ঘটনা ঘটে গেছে।
বলিস কী মজার ঘটনা!
জ্বি হ্যাঁ মা মজার ঘটনা।
তো কী মজার ঘটনা ঘটেছে?
মা আজ আমি নামকরা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অরুপ চৌধুরীর বাসায় গিয়েছিলাম।
বলিস কী অরুপ চৌধুরীর বাসায়,কেনো গিয়েছিলে?
মা লোকটা হঠাৎ. …।
লোকটা কি থামলে কেনো বল?
অধরা আর থেমে থাকল না।ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মায়ের কাছে প্রকাশ করলো।সবকথা শুনার পর তার মায়ের রাগ হাইতে উঠে গেল।তিনি কড়া ভাষায় বললেন,
তুই তোর বাবার পরিচয় জানতে চেয়েছিলি না?
জ্বি হ্যাঁ মা চেয়েছিলাম।
এই অরুপ চৌধুরী হচ্ছে তোর বাবা।
সত্যি মা?
আমি মিথ্যে বলতে যাব কেনো?অরুপ চৌধুরী সত্যি তোর বাবা।
তাহলে আমরা এখানে কেনো?
সেটা ও বলবো।কারণ আজ আমার বলার সময় হয়েছে।তোর বাবা এই অরুপ চৌধুরী ব্যবসার কাজে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসেছিলেন।তোর নানু তার অফিসের কেয়ারটেকার ছিলেন।অরুপ চৌধুরীর টেককেয়ারের দায়িত্ব পড়ে তোর নানুর উপর।তিনি গভীর রাতে আমাদের বাসায় আসেন।তারপর…।
তারপর কি মা থামলে কেনো বল?
মা আর থেমে থাকল না।প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল ঘটনা মেয়ের কাছে প্রকাশ করলো।সবকথা শুনার পর অধরার ভিতরে বিদ্রোহী সত্বা জেগে উঠল।সে বিদ্রোহী স্বরে বলল,
অরুপ চৌধুরী তোমাকে আমি ছাড়ব না।তুমি হবে আমার প্রথম মক্কেল।তোমাকে দিয়ে আমার ওকালতি জীবন শুরু করব।অধরা আর থেমে থাকল না।মাকে বাদী করে থানায় মামলা করলো।নারী ঘটিত মামলা বলে কথা।পুলিশ সুপার কি আর থাকে।তার দলবল নিয়ে অরুপ চৌধুরীকে এরেস্ট করে থানায় নিয়ে আসল।শুরু হলো জেরা। জজ সাহেব বাদী মালা বেগমকে আদালতে আসার অনুমতি দিলেন।মালা বেগম শফথ নামা পাঠ করে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন।তার পক্ষের উকিল অধরা বলল,
আদালতের কাছে আপনি আপনার আরজি পেশ করুন।তখনি মালা বেগম বলতে শুরু করলো,
মহামান্য আদালত বিশ বছর পূর্বে এই অরুপ চৌধুরী বিয়ে করার কথা বলে আমার সত্বীত্ত হরন করে।তারপর আমি প্রেগন্যান্ট হই।স্ত্রী অধিকার চাইতে আসলে আমাকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে দূরদূর করে তাড়িয়ে দেয়।এখন আদালতের কাছে আমার জোরালো আবেদন,আমি স্ত্রীর অধিকার চাই। আমার মেয়ের পিতৃ পরিচয় চাই।
তখনি আরুপ চৌধুরীর পক্ষের উকিল বলল,
মহামান্য আদালত আজকাল এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। সম্পদের লোভে এই মহিলা আষাঢ়ে গল্প সাজিয়ে চৌধুরী সাহবকে ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছে?আপনি এই অভিযোগ প্রত্যহার করুন।
তখনি মালা বেগমের পক্ষের উকিল অধরা বলল,
মহামান্য আদালত কোন ঘটনা মিথ্যে নয়।সব ঘটনা সত্যি। এখানে কিছু ডাক্তারি রিপোর্ট আছে দেখুন বাবা-মেয়ের জ্বিন গোত্র এবং ডি এন এর মিল।
জজ সাহেব আর দেরী করলেন না কাগজপত্র দেখে বললেন,
সবকিছু ঠিক আছে।এখন মেয়েটাকে আদালতে হাজির করুন।
তখনি অধরা বলল,
মহামান্য আদালত “আমি সেই মেয়ে” যাকে উনি পিতৃ পরিচয় থেকে বঞ্চিত করেছেন।
আদালতে থমথমে ভাব, সবাই অধরার দিকে তাকিয়ে রইল।অরুপ চৌধুরী বলল,
অধরা মা মনি তুমি!
জ্বি বাবা “আমি সেই মেয়ে” যাকে বিশ বছর আগে তাড়িয়ে দিয়েছিলে।চলো মা আমরা ফিরে যাই।
যাসনে না মা, আমার বুকে আয়।আমি পাপিরে সাজা দেহ্।
বাবা মেয়ে মিট হলো। অরুপ চৌধুরীক মালা বেগমকে স্ত্রীর অধিকার দিয়ে স্বসম্মানে বাড়ি নিয়ে গেল।
ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply