গল্প একজন জান্নাতি ক্রীতদাসীর গল্প আফছানা খানম অথৈ

0

একজন জান্নাতি ক্রীতদাসীর গল্প

আফছানা খানম অথৈ

একদিন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা:) এর পিতা মক্কার বাজারে যান কিছু কেনাকাটা করার জন্য।এক জায়গায় তিনি দেখলেন,
“একজন লোক কিছু দাসদাসী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছেন।আব্দুল্লাহ দেখলেন,সেখানে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছোট নয় বছরের কালো আফ্রিকান আবিসিনিয়ার মেয়ে।মেয়েটাকে দেখে আব্দুল্লাহর অনেক মায়া হলো।একটু রুগ্ন হালকা পাতলা।কিন্তু কেমন মায়াবী ও অসহায় দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।তিনি ভাবলেন ঘরে আমেনা একা থাকে।মেয়েটা পাশে থাকলে তার একটা সঙ্গী হবে।এইভেবে তিনি মেয়েটাকে কিনে নিলেন।

মেয়েটি আব্দুল্লাহ ও আমেনাকে অনেক ভালোবাসতেন,স্নেহ করতেন,এবং তারা লক্ষ করলেন যে,তাদের সংসারে আগের চেয়ে বেশি রহমত ও বরকত চলে এসেছে।এই কারণে আব্দুল্লাহ ও আমেনা মেয়েটিকে আদর করে নাম দিলেন বারাকাহ।

একদিন আব্দুল্লাহ ব্যবসার কারণে সিরিয়া রওয়ানা দিলেন।আমেনার সঙ্গে এটাই ছিল উনার শেষ বিদায়।উনার যাত্রার দু’একদিন পর আমেনা স্বপ্নে দেখলেন,আকাশের একটা তারা যেন তার কোলে এসে পড়লো।পরদিন সকালে তিনি বারাকাকে এই স্বপ্নের কথা বললেন।উত্তরে বারাকা মৃদু হেসে বললেন,

“আমার মন বলছে আপনার একটা সুন্দর সন্তানের
জন্ম হবে”।
আমেনা তখন ও জানতেন না যে,তিনি গর্ভধারণ করেছেন।কিন্তু কিছুদিন পর তিনি বুঝতে পারলেন বারাকার ধারণাই সত্য।

আব্দুল্লাহ আর ফিরে আসেননি। সিরিয়ার পথে মৃত্যু বরণ করেছেন।আমেনার সেই বিরহ ও কষ্টের সময় একমাত্র সঙ্গী ছিলেন বারাকাহ।এক সময় তার অপেক্ষার শেষ হয়।এবং তিনি জন্ম দিলেন আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা:)

ওমর সুলাইমানের বর্ণনা অনুযায়ী সর্বপ্রথম আমাদের নবীকে দেখার ও স্পর্শ করার সৌভাগ্য হয়েছিল যে মানুষটির সেই হলো এই আফ্রিকান ক্রীতদাসী ছোট্ট কালো মেয়েটি।আমাদের নবীকে নিজ হাতে আমেনার কোলে তুলে দিয়েছিলেন। আনন্দে খুশিতে বলেছিলেন,

“আমি কল্পনায় ভেবেছিলাম,সে হবে চাঁদের মতো।কিন্তু এখন দেখছি সে চাঁদের চেয়ে ও সুন্দর”।
এই সেই বারাকা।নবীজির জন্মের সময় উনার বয়স ছিল তেরো বছর।
ছোট বেলায় শিশু নবীকে আমেনার সঙ্গে যত্ন নিয়েছেন,গোসল দিয়েছেন,খাওয়াতে সাহায্য করেছেন,এবং আদর করে ঘুম পাড়িয়েছেন।

মৃত্যুর সময় আমেনা বারাকার হাত ধরে অনুরোধ করেছেন,
“তিনি যেন তার সন্তানকে দেখে শুনে রাখেন”।
বারাকা তাই করেছিলেন।বাবা -মা দুজনকে হারিয়ে ইয়াতীম নবী চলে আসলেন দাদা আব্দুল মোত্তালিবের ঘরে।উত্তরাধীকার সুত্রে নবী হলেন বারাকার নতুন মুনিব।কিন্তু তিনি একদিন বারাকাকে মুক্ত করে দিলেন,
“আপনি যেখানে ইচ্ছা চলে যেতে পারেন,আপনি স্বাধীন ও মুক্ত”।
সেই শিশুকাল থেকে নবী এই ক্রীতদাস প্রথাকে দূর করতে চেয়েছিলেন।বারাকা নবীকে ছেড়ে যেতে রাজী হলেন না।রয়ে গেলেন।

এমনকি নবীজীর দাদা উনাকে কয়েকবার বিয়ে দেয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলেন।কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজী হলেন না।
তারপর এহকদিন খাদিজা (রা) সঙ্গে নবীজীর বিয়ে হলো।বিয়ের দিন রাসুল (সা:) খাদিজা (রা:) এর সঙ্গে বারাকাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন।তিনি বললেন,

“উনি হলেন আমার মায়ের পর আরেক মা”।

বিয়ের পর একদিন রাসুল( সা:) বারাকাকে ডেকে বললেন,।
“উম্মি আমাকে দেখাশুনা করার জন্য এখন খাদিজা আছেন,।আপনাকে এখন বিয়ে করতেই হবে”।
তারপর রাসুল (সা:) ও খাদিজা মিলে উনাকে উবাইদ ইবনে জায়েদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলেন।
কিছুদিন পর বারাকার নিজের একটা ছেলে হলো,নাম আইমান।একদিন বারাকার স্বামী উবাইদ মৃত্যু বরণ করেন।নবীজি গিয়ে আইমান ও বারাকাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসলেন এবং সেখানে থাকতে দিলেন।

কিছুদিন যাওয়ার পর নবীজি একদিন বেশ কয়েকজন সাহাবীকে ডেকে বলললেন,
“আমি একজন নারীকে জানি,যার কোন সম্পদ নেই,বয়স্ক এবং সঙ্গে একটা ইয়াতীম সন্তান আছে,কিন্তু তিনি জান্নাতি”।
“তোমাদের মধ্যে কেউ কি একজন জান্নাতি নারীকে বিয়ে করতে চাও”?

এই কথা শুনে জায়েদ ইবনে হারিস (রা:)নবীজির কাছে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।নবীজি উম্মে আইমানের সঙ্গে কথা বলে বিয়ের আয়োজন করলেন।
বিয়ের দিন রাসুল (সা:) জায়েদকে বুকে জড়িয়ে আনন্দে, ও ভালোবাসায় ভেজা চোখে,কান্নাজড়িত চোখে বললেন,
“তুমি কাকে বিয়ে করেছ জানো জায়েদ”?
জ্বী হ্যাঁ জানি উম্মে আইমানকে।
নবীজি বললেন,”না তুমি বিয়ে করেছ আমার মাকে”।

সাহাবীরা বলতেন,রাসুল( সা:) কখনো জোর করা যেত না।উনি যেটা পছন্দ করতেন না।কিন্তু উম্মে আইমান একমাত্র নারী,তিনি রাসুল (সা:) খাবার দিয়ে, “খাও”খাও”
বলে তাড়া দিতেন।আর খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাশে বসে থাকতেন।নবীজি মৃদু হেসে চুপচাপ খেয়ে নিতেন।
রাসুল( সা:) উনার দুধ মাতা হালিমাকে দেখলে যেমন করে নিজের গায়ের চাদর বিছিয়ে তার উপর হালিমাকে বসতে দিতেন।ঠিক তেমনি মদিনায় হিজরতের পর দীর্ঘ যাত্রা শেষে উম্মে আইমান যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন,নবীজি উনার গায়ের চাদরের একটা অংশ পানিতে ভিজিয়ে উম্মে আইমানের মুখের ঘাম ও ধুলোবালি মুছে দিয়ে দিলেন,এবং বলেছিলেন,

“উম্মি জান্নাতে আপনার এই রকম কোনো কষ্ঠ হবে না”।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply