গল্প ফাঁসি আফছানা খানম অথৈ

0

ফাঁসি

আফছানা খানম অথৈ

মিন্নি বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে।পড়া লেখায় মোটামুটি ভালো।সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েটে পা দিয়েছে।এরই মধ্যে রিফাত নামের একজনের সাথে পরিচয় হয়।রিফাত ডিগ্রীতে পড়ে।দুজনের মাঝে ভালো ভাব সাব তৈরী হয়।ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা তারপর একে অপরকে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড ভাবতে শুরু করে।রিফাত মিন্নির মতো একজন গার্লফ্রেন্ড পেয়ে খুব খুশি।মিন্নির ও একই অবস্থা।দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে।একে অপরকে এক পলক না দেখে থাকতে পারে না।মিন্নি কোন কারণে কলেজে না আসলে রিফাত ছুটে যায় মিন্নির বাসায়।মিন্নির বাবা মা এ ব্যাপারে সবই জানে।তারাও রিফাতকে পছন্দ করে।আর এই সুযোগে মিন্নি রিফাতকে নিয়ে যা খুশি তাই করে।মা বাবা এতে বাধা দেয় না।

বর্তমানে প্রেম ভালোবাসাকে যুগের ফ্যাশন বলে অবিভাবকেরা সাপোর্ট করেন।এই জন্য আমাদের যুব সমাজ আজ ধ্বংসের পথে।কোরান হাদিসের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন।এসব নিয়ে এখন অবিভাবকেরা ভাবেন না।কোরান হাদিসে কিন্তু বিয়ে ছাড়া কোন প্রেম বৈধ বলে স্বীকার করেন না।আমাদের সমাজে আজ ডজনে ডজনে বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসা হচ্ছে।কোন প্রেমের মিলন হচ্ছে, কোন প্রেমের হচ্ছে না।প্রেগন্যান্ট হয়ে মেয়েরা রাস্তায় ঘুরছে।নিরুপায় হয়ে অনেকে আত্মহত্যা করছে।ময়লা বা ডাস্টবিনে পড়ে থাকে কিছু পূরণীয়,কিম্বা অপূরণীয় বাচ্চা।জীবিতদের কেউ নিয়ে যাচ্ছে আর অপূরনীয়দের কুকুরে কিম্বা শকুনে কামড়ে খাচ্ছে।এ দৃশ্যটা আজ আমাদের চোখে পড়ছে প্রতিনিয়ত।এসবের মুল হচ্ছে নষ্ট প্রেমের খেলা।অবিভাবকেরা যদি একটু সচেতন হতেন তাহলে যুব সমাজ এত ধ্বংস হতো না।আজ মিন্নির অবস্থাও তাই অবিভাবকের সাপোর্টের কারণে সে নষ্ট প্রেমের খেলায় মেতে উঠেছে।

এরই মধ্যে রিফাত তার বন্ধুদের সাথে মিন্নিকে পরিচয় করিয়ে দেয়।মিন্নির সাথে সবাই হাই হ্যালো বলে কথোপকথন করে।তারপর সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে।
ইতিমধ্যে রিফাতের বন্ধু নয়ন মিন্নির দিকে নজর দেয়।নয়নের স্বভাব চরিত্র ভালো না।সে পকেমার চিন্তাইকারী নেশাখোর।একদিন বাড়ি ফেরার পথে সে মিন্নির পথ আটকে দাঁড়ায়।মিন্নি কারণ জানতে চাইলে সে মিন্নিকে ভালোবাসার কথা বলে।মিন্নির অস্বীকার করলে সে তাকে ভয় দেখায় তুলে আনার হুমকি দেয়।মিন্নি বাড়াবাড়ি না করে বাসায় ফিরে যায়।
এভাবে সে প্রায় সময় মিন্নিকে ডিস্টার্ব করত।এক সময় মিন্নি তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে।এই সুযোগে সে তাকে বাসায় নিয়ে যায়।দুজনে শারীরিক সম্পর্ক করে।নয়ন মিন্নির অজান্তে তা ভিডিও করে ফেলে।

মিন্নি রিফাত এবং নয়ন দুজনের সাথে সমান সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কারো কথা কাউকে বলছে না।সে রিফাতকে ও সময় দেয়,নয়নকেও…।
আজকাল নিজের স্ত্রী ও গার্লফ্রেন্ডকে বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়াটা ফ্যাশনে রুপ নিয়েছে।কোন স্ত্রী যদি স্বামীর বন্ধুর সাথে দেখা না করে তাকে ক্ষ্যাত বলে আখ্যায়িত করা হয়।অনুরুপ গার্লফ্রেন্ড এর ক্ষেত্রে ও তাই।এজন্য অনেকে বাধ্য হয়ে পর পুরুষের সামনে যায়।এরপর দেখা যায় একসময় নিজের স্ত্রীকে বন্ধু ভাগিয়ে নিয়ে গেছে।এরপর স্ত্রীকে চরিত্রহীনা বলে সম্বোধন করা হয়।শুধু তাই নয় এই নিয়ে সমাজে রীতিমত হৈহুল্লুড শুরু হয়।একবার ও স্বামী নামক গাদাটাকে নিয়ে কোন আলোচনা সমালোচনা হয় না।শুধু স্ত্রীর দোষটাই ফুটে উঠে সবার কাছে।অথচ এর জন্য দোষী হচ্ছে স্বামী।কারণ সে বউকে বন্ধুর সামনে সাজিয়ে গুছিয়ে প্রদর্শন করেছে,আর এই সুযোগে বন্ধুর নজর পড়েছে।বন্ধু কখনো মাহারাম হয় না।তাকে দেখা দেয়া হারাম।

আজ মিন্নির অবস্থা ও তাই।নয়নকে যদি রিফাত পরিচয় করিয়ে না দিত এই অবস্থা হত না।একদিন নয়ন মিন্নিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।মিন্নি রাজী হয় না।এরপর সে তার ভিডিও ভাইরাল করে দেয়ার কথা বললে মিন্নি রাজী হয়। তারপর নয়নের বাসায় তাদের বিয়ে হয়।মিন্নির একটাই শর্ত বিয়ের বিষয়টা গোপন রাখতে হবে।রিফাত যেন জানতে না পারে।নয়ন তাই করলো।বিয়ের বিষয়টা গোপন রাখল।
রিফাত একদিন মিন্নির মা বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।তারা রাজী হয়।সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী তারা মিন্নি রিফাতের বিয়ে সম্পাদন করে।
এক মিন্নি দুস্বামীর সংসার করছে।মিন্নির অবিভাবকেরা কিন্তু এ ব্যাপারে কিছুই জানে না।তারা জানে মিন্নির একমাত্র স্বামী রিফাত।মিন্নি দুস্বামীকে নিয়ন্ত্রণ করছে একসঙ্গে। একজনকে প্রকাশ্যে একজনকে গোপনে।

মোটামুটি ভালো কাটছে তাদের দিনগুলো।একদিন রিফাত কলেজের এক ছাত্রের মোবাইল চিন্তাই করে।এই নিয়ে তাদের মাঝে কথাকাটাকাটি হয়।রিফাত তার মোবাইল দেয় না।রিফাতের স্বভাব ও তেমন একটা ভালো না।নয়নের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পকেটমার চিন্তাই মাস্তানি এসব করে বেড়াই।আজ মাস্তানির চলে একজনের মোবাইল কেড়ে নিয়েছে।এ বিষয়টা মিন্নিকে ওই ছেলেটি বলে দেয়।মিন্নি মোবাইল ফেরত দিতে বললে রিফাত তার সাথে খারাপ আচরণ করে গায়ে হাত তুলে।মিন্নি ক্ষেপে গিয়ে নয়নকে ভাড়া করে রিফাতকে শায়েস্তা করার জন্য।পরদিন রিফাত কলেজে আসে।ক্লাসের পর মিন্নি রিফাতকে নিয়ে মাঠে অপেক্ষা করে।এমন সময় নয়ন তার সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে হাজির হয়।পাঁচ ছয় জন পাহারা দিচ্ছে আর নয়ন ধারালো দা দিয়ে রিফাতকে কোপাচ্ছে।তার এক হাত কেটে গেছে।মিন্নি তাকে রক্ষা করতে চাইছে,কিন্তু পারছে না।নয়ন একটার পর একটা কোপ দিয়ে চলেছে।রিফাত মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েছে।সাড়া শব্দ নেই।মাঠ ভিজে রক্তে লাল হয়ে গেছে।কলেজ মাঠে এমন একটা ঘটনা ঘটল।ভিতর থেকে কেউ বের হলো না।ঘটনা ঘটার পর কে বা কাহারা পুলিশকে ফোন করল।পুলিশ আসল।ততক্ষণে নয়ন তার দলবল নিয়ে পালিয়ে গেল।রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করলো।

পুলিশ তার দলবল নিয়ে নয়নকে ধরতে গেল।নয়ন কিন্তু থেমে নেই,পুলিশকে পালটা আক্রমণ করলো।পুলিশ ও থেমে নেই।ঘুলি ফায়ার..।
দুদলের সংঘর্ষে নয়ন পুলিশের গুলিতে নিহত হলো।এরপর পুলিশ বাকী আসামিদের ধরে নিয়ে আসল।এদের একজন পুলিশের কাছে জবান বন্দি দিলো।
মিন্নি রিফাতের খুনের জন্য দায়ী।কারণ সে নয়নকে ভাড়া করেছে,রিফাতকে শায়েস্তা করার জন্য।এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নয়ন তাকে মেরে ফেলেছে।পুলিশ এমন তথ্য পাওয়ার পর ছুটে যায় মিন্নির কাছে।তাকে থানায় নিয়ে আসার পর সে সব সত্য প্রকাশ করে।তার জীবনে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা।সব কথা শুনার পর পুলিশ বুঝতে পারে প্রকৃত দোষী কে?
রিফাতের বাবার দায়ের করা মামলা ১ নং আসামী মিন্নিকে জেল হাজতে দেয়া হয়।তারপর সকল সাক্ষ্য প্রমাণ অনুযায়ী মিন্নি দোষী সাব্যস্ত হয়,এবং বিজ্ঞ আদালত তার “ফাঁসির” রায় কার্যকর করে।
সাবধান অবিভাবকেরা সময় থাকতে ছেলে মেয়ের নষ্ট প্রেমের খেলা বন্ধ করে বিয়ের ব্যবস্থা করুন।তানা হলে কেয়ামতের মাঠে আল্লাহপাক আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করবে।কারণ সেদিন শত কান্নাকাটি করলে ও মাফ পাবেন না।

বি: দ্র: গল্পটি সত্য ঘটনা অমলম্বনে লেখা।

ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply