গল্প সৎ মা আফছানা খানম অথৈ

0

গল্প
সৎ মা
আফছানা খানম অথৈ

আবু ছায়েদ মাস্টারের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন।তার বাচ্চাদের দেখভাল করার জন্য।তার দুটো বাচ্চা,আলাল আর দুলাল।মাসআল্লাহ দেখতে অনেক সুন্দর। দেখলে যে কারো মায়া লেগে যায়।

কিন্তু সে কী! সৎ মা আরিফা তাদের একটু ও দেখতে পারেন না।এতটুকুন বাচ্চা তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন।এই নিয়ে মাস্টারের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা কাটাকাটি হয়।কিন্তু কোন সমাধান হয় না।আরিফা রেগে বোম,বাচ্চা দুটোর সাথে আর ও খারাপ আরচণ করে।দিনে দিনে তাদের সাথে তিক্ততা আর ও বেড়ে যায়।
মাস্টারের হয়েছে যত জ্বালা।বউকে খুশি করতে গেলে বাচ্চারা হয় অসন্তোষ্ট। আবার বাচ্চাদের খুশি করতে গেলে বউ হয় অসন্তোস্ট।মহাটেনশনে আছেন ছায়েদ মাস্টার।ঘরে আসলে এক মূহূর্ত ও শান্তি নেই।বউয়ের ঘ্যানর ঘ্যানর, ফ্যানর ফ্যানর…।
বাচ্চাদের অভিযোগ আর অভিযোগ।ওরা কথা শুনেনা।সারাক্ষণ দুষ্টামি আর দুষ্টামি..।
রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগের শেষ নেই।

বাধ্য হয়ে মাস্টার বাচ্চাদের দুচার কথা বলেন।মায়ের কথা শুনতে বলেন।দুষ্টামি কম করতে বলেন।
কিন্তু মানলেতো তারা,কারণ বাচ্চাদের এ বয়সটা হচ্ছে দুষ্টামির, হেসে খেলে ঘুরে বেড়াবে এটাই নিয়ম।

আরিফা কিন্তু থেমে নেই।বাচ্চাদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করে।তাদেরকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই।এমনকি তাদেরকে মেরে ফেলার জন্য জল্লাদ ভাড়া করে।
কিছুদিন হলো আরিফা বাচ্চাদের খুব টেককেয়ার করে।যত্ন করে খাওয়ায়।জামা কাপড় পরিয়ে দেয়।দৃশ্যটা মাস্টারের চোখে পড়ে।তিনি ভাবলেন আরিফার সুবুদ্ধির উদয় হয়েছে।তাই বাচ্চাদের আপন করে নিয়েছে।কিন্তু না এসব তার ছলনা।সে কখনো আলাল দুলালকে ভালো চোখে দেখতে পারে না।কারণ সে সৎ মা।সে তার স্বার্থ হাসিল করার জন্য, বাচ্চাদের মন জয় করার জন্য এসব করছে।আলাল দুলাল মা হিসেবে সত্যি ভালোবাসতে শুরু করলো।আর এই সুযোগে সে একদিন তাদেরকে জল্লাদের হাতে তুলে দিয়ে বলল,
বাবা আলাল,দুলাল শুন।
জ্বি মা বলুন?
উনি তোমার আঙ্কেল।উনার সাথে যাও।
কোথায় যাব?
উনি তোমাদের বেড়াতে নিয়ে যাবেন,নানার বাড়িতে।
সত্যি বলছ মা মনি?
জ্বি বাবা সত্যি।যাও উনার সঙ্গে।

অবুঝ বাচ্চা ষড়যন্ত্রের কি বুঝবে।তারা ছুটে চলল জল্লাদের সঙ্গে।জল্লাদ তাদের নিয়ে একটা ডিঙি নৌকায় উঠল।আলালের বয়স পাঁচ বছর।দুলালের বয়স চার বছর।দুলাল আলালেরে বলে,
ভাইয়া অনেকদিন পর নানু বাড়ি যাচ্ছি।খুব মজা হবে।
জল্লাদ মনে মনে বলে,নানু বাড়ি না,দেখাচ্ছি মজা…।
কিচ্ছুক্ষণ পর বুঝবি,কোথায় যাচ্ছিস।
অল্পকিছুক্ষণের মধ্যে জল্লাদ তাদের নিয়ে এক জঙ্গলে প্রবেশ করলো।গভীর জঙ্গল, কোন জনমানবের চিহ্ন নেই।সে একেবারে ভিতরে চলে গেল।এমন সময় আলাল বলল,
আঙ্কেল আমাদের কোথায় নিয়ে এলে?
জাহান্নামে,কথা বলিস না, একদম চুপ।
আমি আঙ্কেল না।আমি জল্লাদ।আমি মানুষ মারি।এক্ষণি তোদেরকে মেরে ফেলব।
বলতে না বলতে জল্লাদ ব্যগ থেকে ধারালো চুরি বের করে।আলালকে চেপে ধরে তার গলায় বসিয়ে দেয়।দুলাল কেঁদে কেঁদে বলে,
আমার ভাইয়েরে মারিস নারে জল্লাদ,আমারে মার।
এবার জল্লাদ আলালকে ছেড়ে দিয়ে দুলালের গলায় চুরি বসায়।এবার আলাল কেঁদে কেঁদে বলে,
আমার ভাইয়েরে মারিসনারে জল্লাদ আমারে মার।
এবার জল্লাদ দুলালকে ছেড়ে দিয়ে আলালের গলায় চুরি বসায়।
দুলাল কেঁদে কেঁদে একই বাক্যে পেশ করে।এভাবে কয়েকবার তারা জল্লাদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাই।জল্লাদের মায়া হয়।তাদেরকে না মেরে জঙ্গলে ফেলে রেখে আসে।
আরিফাকে মিথ্যে বলে,তাদেরকে মেরে ফেলেছে।আরিফা খুশি হয়ে তার পাওনা বুঝিয়ে দেয়।ছায়েদ মাস্টার ঘরে আসলে বাচ্চাদের কথা জিজ্ঞেস করতে, আরিফা বলে,
দেখ বাইরে কোথাও খেলাধুলা করছে।
ছায়েদ মাস্টার এদিক, সেদিক, চারদিক,খেলার মাঠ সবজাগায় বাচ্চাদের খুঁজল কোথাও পেলোনা।

সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।সঙ্গে সঙ্গে আরিফাও মায়া কান্না করলো।এমন কান্না করলো,মনে হলো সত্যিকারের কান্না।যাতে তাকে সন্দেহ না করে।

ছায়েদ মাস্টার কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে দোয়া করে,
হে পরওয়ার দেগার,তুমি রহমানুর রহিম,
আজ দুদিন ধরে আমার বাচ্চাদের খুঁজে পাচ্ছি না।
তুমি জান আমার বাচ্চারা কোথায় আছে।তুমি তাদের ভালো রেখো, সুস্থ রেখো।হেফাযত করো।দীর্ঘ নেক হায়াত দান কর।তাদেরকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।মৃত্যুর আগ মূহূর্ত..।

এদিকে অবুঝ শিশু কি করবে,কোথায় যাবে ভেবে পাচ্ছে না।কেঁদে কেঁদে আল্লাহকে ডাকছে,আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে, সাহায্য চাইছে।আল্লাহ তাদের প্রার্থনা কবুল করেছেন।মূহূর্তে তাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে আবদূর রহিম সওদাগর। সে পাখি শিকার করতে বনে এসেছে।আলাল দুলালকে দেখে খুশি হয়ে গেল।তাদেরকে আদরের সহিত বুকে টেনে নিলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো,
বাবা তোমরা কারা?
আমি আলাল আর এ হলো আমার ভাই দুলাল।
তোমাদের বাবা -মা নেই?
বাবা আছে মা নেই।
তো এখানে কী করছ?
সৎ মা জল্লাদ দিয়ে কর্তল করার জন্য এখানে পাঠিয়েছে।
বলো কী?
জ্বি আঙ্কেল সত্যি।
চলো তোমাদের বাবার কাছে পৌছে দিয়ে আসি।
জ্বিনা আঙ্কেল আমরা যাবনা।
কেনো যাবে না?
ওখানে গেলে মা আবার আমাদের মেরে ফেলবেন।
ঠিক আছে,যেতে হবেনা।তোমরা চলো আমার সঙ্গে।

সওদাগর বাচ্চা দুটোকে পেয়ে খুব খুশি হলো।কারণ তার বাচ্চা-কাচ্চা নেই,নি:সন্তান।ডাক্তার জানিয়েছে সে কখনো বাবা হতে পারবে না।এই নিয়ে বউ মাঝে মাঝে মন খারাপ করে।রহিম সওদাগর বউকে বুঝ ভরসা দেয়।আল্লাহর কাছে সবর মানতে বলে।একটা সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে প্রার্থনা করেন।মনে হয় আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করেছেন।আজ একটার পরিবর্তে দুটো ফুটফুটে বাচ্চা তাকে উপহার দিয়েছেন।আলাল দুলালকে নিয়া আবদুর রহিম সওদাগর দেশে ফিরে আসল।তাদেরকে দেখে তার স্ত্রী রাজিয়া খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করে,

ওগো এরা কারা?
এরা আমাদের সন্তান।
কোথায় পেয়েছ?
আল্লাহ দিয়েছেন।আজ থেকে ওরা আমাদের সঙ্গে থাকবে।
সত্যি বলছেন?
হুম সত্যি।আলাল দুলাল আজ থেকে রাজিয়াকে মা আর আমাকে বাবা বলে ডাকবে?আজ থেকে আমরা তোমাদের বাবা মা।
জ্বি বাবা ডাকব।

রাজিয়া বাচ্চা দুটোকে কোলে নিয়ে খুব আদর করলো,চুমু খেল।আলাল দুলাল ফিরে পেল তাদের মায়ের ভালোবাসা।আর রাজিয়া পেল সন্তান।তার শুন্য কোল আজ পূর্ণ হলো।হাসিখুশিতে ভরে উঠল তার জীবন।
এদিকে সন্তান হারিয়ে ছায়েদ মাস্টার পাগল প্রায়।খাওয়া-দাওয়া শিক্ষকতা কোনকিছু ভালোমতো করতে পারছে না।সারাক্ষণ মনমরা হয়ে বাচ্চাদের কথা ভাবেন।অনেকে বলাবলি করছে সৎ মা আলাল দুলালকে মেরে ফেলেছে।এইনিয়ে রীতিমতো কানাঘুষা চলছে।ছায়েদ মাস্টারকে অনেকে কানপড়া দিচ্ছে স্ত্রীকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য। সে তার সিদ্ধান্তে অটল। কারো কথা আমলে নিচ্ছে না।

এরফাঁকে কিছু সময় পার হলো।সময়ের গণ্ডিপেরিয়ে আলাল দুলাল স্কুল জীবন পেরিয়ে কলেজ জীবনে পা রাখল।রহিম সওদাগর ও তার স্ত্রী সন্তান দুটোকে অপূর্ব ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন।বুঝতে দিচ্ছেন না মা-বাবার অভাব।নিজের সন্তানের মতো দেখভাল করছেন।আলাল দুলাল ও তাদেরকে নিজের মা-বাবার মতো ভক্তিশ্রদ্ধা করছে।খুবই সুখে কাটছে তাদের দিনকাল।কলেজের ফাস্ট ও সেকেন্ডবয় আলাল দুলাল।তাদের নিয়ে প্রিন্সিপাল এর অনেক স্বপ্ন।তারা সেরা রেজাল্ট করে,সবার মুখ উজ্জল করবে।তারাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।খুব মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করছে।

এদিকে আরিফার জীবনে ঘটে গেল আরেক ঘটনা।তার সন্তান হচ্ছে না।এর জন্য ডাক্তার কবিরাজ অনেক দেখিয়েছেন।স্বামী স্ত্রী দুজনের অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছেন।কারো কোন সমস্যা ধরা পড়ছে না।কিন্তু বাচ্চা কেনো হচ্ছে না।তা কেউ বলতে পারছে না।ডাক্তারের এক কথা,
আপনাদের কারো কোন সমস্যা নেই।সময় হলে বাচ্চা হবে।
এর চেয়ে বেশী কিছু তারা বলছেন না।আরিফা দিন শেষে মাস,মাস শেষে বছর,অপেক্ষার পর অপেক্ষা,একটা বাচ্চার জন্য..।
কিন্তু কোন লাভ নেই।তার কোল এখনো শুন্য।কোন সন্তান নেই।একটা সন্তানের জন্য তার শুন্য বুকটা হাহাকার করছে।কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না।খুব মনে পড়ছে আলাল দুলালের কথা।আজ বুঝতে পেরেছে তাদেরকে মেরে ফেলে কী ভুলটাইনা করেছে।এটা তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত। আল্লাহ হয়তো এজন্য তাকে সন্তান দিচ্ছে না।এসব বুঝতে পেরে সে গুমরে গুমরে কাঁদছে।মাস্টারকে এসব বুঝতে দিচ্ছে না।
এক সময় ছায়েদ মাস্টার চাকরী থেকে অবসর নিয়েছেন।বার্ধক্যে নুয়ে পড়েছে।আগেরমতো শরীরে শক্তি নেই।আরিফার ও একই অবস্থা।দুজন বার্ধক্যে নুয়ে পড়েছে।তেমন হাটাচলা করতে পারছেন না।তাদের দেখভাল করার মতো আপন কেউ নেই।

মাস্টারের দু:সম্পর্কের এক ভাগিনা তাদের দেখাভাল করেন।সে তাদের জায়গাজমি, দোকানপাট এসব দেখাভাল করেন।সে লোক হিসেবে ভালো না,মন্দ স্বভারের।মাস্টারের জায়গাজমি হাত করার জন্য এখানে পড়ে আছে।আজ মাস্টার বার্ধক্যে নুয়ে পড়েছে এই সুযোগে সুযোগ…।
সে মাস্টারের বাড়িঘর, জায়গাজমি, দোকানপাট সব নিজের নামে লিখে নিয়েছে।তারপর এক গভীর রাতে তাদেরকে অনেক দূরে এক অপরিচিত রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসে। মাস্টার চিৎকার করে বলছে,

আমান আমাদেরকে ফেলে যাসনে।নিয়ে যা,নিয়ে যা..।
কে শুনে কার কথা,আমান সত্যি তাদেরকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসল।এতরাতে তারা কোথায় যাবে,কি করবে,কোনকিছু মাথায় কাজ করছে না।তাছাড়া দুজন ভালোমতো হাটাচলা করতে পারছে না।বার্ধক্যে নুয়ে পড়েছে।কি আর করা দুজন রাস্তার একপাশে কাত হয়ে শুয়ে আছে।সকাল হলে লোকজন জড়ো হয়।অনেকে তাদের নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করলো।ছায়েদ মাস্টার তাদের পরিচয় দিলেন।এবং তারা যে ষড়যন্ত্রের স্বীকার তা প্রকাশ করলেন।কেউ তাদের বিপদে এগিয়ে আসল না। এমনকি তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব কেউ নিলো না।দুজনের ঠাঁই হলো ফুটপাতের আস্তানায়।ছায়েদ মাস্টার খুব ক্লান্ত হাটতে পারছেন না।আরিফা একটু একটু হাটতে পারেন।কি আর করা বাধ্য হয়ে তিনি লোকের দুয়ারে হাত পাতেন।দুচার টাকা যা পান তা দিয়ে কোনমতে চলছে তাদের দিনকাল।

এদিকে অনেক সময় পার হলো।আলাল দুলাল মানুষের মতো মানুষ হলো।দুজন নামীদামী ডাক্তার হয়ে গেল।বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ পেল।উপজেলা সদরের হাসপাতালে দুভাই যোগ দিলো।রহিম সওদাগর ও তার স্ত্রী রাজিয়া খুব খুশি।প্রাণভরে ছেলেদের জন্য দোয়া করলেন।আত্মীয়-অনাত্মীয়,পাড়া প্রতিবেশী শিক্ষক,সবাইকে মিষ্টি খাওয়ালেন।আলাল দুলাল মা-বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কর্মস্থলে ফিরে গেল।
তারা মনোযোগ দিয়ে রোগী দেখছেন।দায়িত্বপালনে কোনরুপ অবহেলা করছেন না।কিছুদিনের মধ্যে তাদের দুভাইয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।দুভাইয়ের রুমের সামনে রোগীর সিরিয়াল।

ছায়েদ মাস্টার ও তার স্ত্রী খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন।একদিকে বার্ধক্য অন্যদিকে উপোষ,দুটোই তাদেরকে ঘিরে ধরেছে।আর সইতে পারছে না।ফুতপাতের একপাশে শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছে।হঠাৎ একটিভি রিপোর্টারে সামনে দৃশ্যটা পড়ে।তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এম্বুলেন্স কল করেন।দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু…।
এ ডাক্তার আর কেউ না।ছায়েদ মাস্টারের বড় ছেলে আলাল।রোগীর নাম শুনে আলাল মুখের দিকে তাকাল।
সে কী! এযে আলালের বাবা ছায়েদ মাস্টার।সে বাবাকে বুকে জড়িয়ে বলে,
বাবা তুমি?
তুমি কে বাবা?
আমি তোমার বড় ছেলে আলাল।
বাবা আলাল তুই বেঁচে আছিস?
জ্বি বাবা আমি বেঁচে আছি।
দুলাল কোথায়?
সেও বেঁচে আছে বাবা।
এতদিন কোথায় ছিলে?
সব বলব,বাবা আগে তুমি সুস্থ হয়ে উঠ।
ছায়েদ মাস্টার দুসন্তানকে ফিরে পেয়ে,আল্লাহর কাছে লাখলাখ শুকরিয়া আদায় করলেন।সন্তানকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদলেন।দুসন্তানের চিকিৎসা আর সেবাযত্নে ছায়েদ মাস্টার ও তার স্ত্রী সুস্থ হয়ে উঠলেন।তারপর আলাল দুলাল তাদের কর্তল করার কাহিনী বাবার কাছে প্রকাশ করলো।সবকথা শুনার পর ছায়েদ মাস্টার বলল,
আরিফা তুমি পারলে এমন জঘন্য কাজ করতে।আমার সন্তানদের মেরে ফেলতে?
আরিফা দুহাত জোড় করে কেঁদে কেঁদে বলে,
আলাল দুলাল আমি পাপি।আমি অনেক বড় পাপ করেছি।আমি সকল সম্পত্তি একাভোগ করার জন্য তোদেরকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আল্লাহ তোদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।আল্লাহ ন্যায়বিচার করেছেন।অন্যের সন্তানের মৃত্যু চাওয়াতে, আল্লাহ আমায় কোন সন্তান দেননি,বন্ধ্যা রেখেছেন।তোদেরকে হারিয়ে আমি আমার সবভুল বুঝতে পেরেছি।আমি লোভী, আমি পাপি।আমায় ক্ষমা করে দাও বাবা।
মা তুমি এসব কী বলছ?
হ্যাঁ বাবা ঠিক বলেছি।তোরা আমায় ক্ষমা না করলে আল্লাহ ও আমায় ক্ষমা করবেন না।বল তোরা আমায় ক্ষমা করেছিস?
দুভাই মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
মা তোমার উপর আমাদের আর কোন রাগ নেই।
আলাল দুলাল আমি এতদিন তোদের “সৎ মা” ছিলাম। আজ থেকে আসল মা হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত থাকতে চাই।বল আমাকে এই অধিকার থেকে কখনো বঞ্চিত করবি না?
ঠিক আছে মা, আজ থেকে আমরা সবাই একসঙ্গে থাকব।
সকল ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দুপরিবারের লোকজন একসঙ্গে বসবাস শুরু করলো।

ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply