“রূপকথার গল্পে আমি”-১৮

0

(১৮)

হাসি খুশি আনন্দ বেদনা ফুর্তি আমোদ, সবকিছু মিলিয়ে কিভাবে যে তিন বছর কেটে গেল বুঝতেই পারিনি। ইন্টার ফাইনাল এক্সেম শেষ করেছি। তিন মাস পর রেজাল্ট দেবে। বাড়ীতে চলে আসি। বাড়িতে এসে নিহার বিয়ের ইনভাইটেশান কার্ড পাই। আমরা বান্ধবি সবাই মিলে বিয়েতে খুব ফুর্তি করি। আমার মনে মনে আছে অনিকের কোন খবর পাই কি না। যেহেতু নিহা অনিকের চাচাতো বোন। কিন্তু জানি নেগেটিভ কিছু ছাড়া আর কোন খবর শোনার নেই। বিয়ের অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এক বান্ধবি অনিক স্যারের বোনের সাথে কথা বলছে- অনিক স্যার কেমন আছেন, করে আসবেন দেশে এইসব। ঠিক তখনি আমি গিয়ে সামনে পড়ে যাই। তাই নেগেটিভ কিছু শুনার ইচ্ছা না থাকলেও শুনতে হল। অনিক স্যারের বোন বলছেন-ভাইয়া কে আসতে বলি সে আসতে চায় না, বারবার বলি তবুও আসে না।

এই কথাগুলো শুনে খুবই হতাশ হলাম। ধীরে ধীরে তাদের পাশ থেকে সরে পড়ি আর ভাবতে থাকি অনিকের কথা।

নিজের মনকে আশ্বস্ত করার জন্য মনে মনে কত সব বলে যাচ্ছি কিন্তু অনিক দেশে না আসার কারণ অন্য এমন কিছু হতে পারে যা আমি বুঝতেও পারছি না। বিধাতার খেলা বুঝা বড় দায়। দেখি এই সবের শেষ কিছু আছে কিনা।

বাড়িতে এসে মোটামুটি ভালোই কাটে দুই মাস। খালামনি আমার জন্য অস্থির হয়ে আছেন। অনেক দিন পাশে ছিলাম তো তাই চলে আসায় খারাপ লাগছে। আবার ফিরে যাই সঞ্চয়পুর…..!

 

এখানে এসে খালামনির সাথে ধারে কাছের আত্মীয়ের বাসায় ঘুরে বেড়াই, একদিন রিয়ার বাসায় ও বেড়াতে যাই। ওর মা খুব ভালো। একেবারে আমার মায়ের মতো। আমার মনে হয় পৃথিবীতে সব মা ই আমার মায়ের মতো ভালো।

রাহি অনেকদিন পর আমাকে পেয়েছে তাই সারাক্ষন আমার পিছু পিছু হাঁটছে আর এটা ওটা গল্প করেই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কত বছর পর আমাকে পেয়ে একসাথে সব গল্প করে নেবে।

পনেরো দিন পার হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার, বিকেলের দিকে পুকুর ঘাটে গিয়ে বসি।

একটা কথা বলা হয় নি। আমি যখন ইন্টার এ ভর্তি হয়ে খালামনির বাসায় চলে আসি তখন থেকে আমি প্রথম পারসোনাল মোবাইল ব্যবহার শুরু করি। অবশ্য এর অনেক আগে থেকেই মোবাইলের প্রচলন শুরু হয়েছিল।

তো আমি পুকুর ঘাটে বসে আছি, একটু পরে দেখলাম শরণ মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে দেখে পুকুর ঘাটের দিকে ই আসছে…..!

এসে সালাম বিনিময় হল।

কেমন আছো অধরা?

ভালো, তুমি কেমন আছো?

মোটামুটি আছি।

কেনো মোটামুটি কিছু কি হয়েছে?

অধরা আজ তোমার সাথে কিছু শেয়ার করবো।

ঠিক আছে বলো?

শরণ প্রায় দুই ঘণ্টার মতো কথা বলেছে, যার সারমর্ম আমি সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরলাম

 

“প্রায় তিন বছর থেকে আমার একজনের সাথে রিলেশন ছিল। ওর বাবা বিজনেস ম্যান। যখন আমাদের দুজনের বিয়ের কথাবার্তা শুরু হয়, আমরা যার যার পরিবারে বললাম আমাদের সম্পর্কের কথা। দু’ পরিবার মিলে কথাবার্তা হয় কিন্তু এক পর্যায়ে তাদের মতের অমিল দেখা যায় দুই পরিবারের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত আর বিয়েটা হলো না। তার জন্য আমাদের দুজন কে পরিবারের কথা চিন্তা করে আলাদা হতে হয়”।

 

এখন আপনাদের কে বলি আমি বলেছিলাম না আমি শুধু মানুষের স্বার্থপরতার স্বীকার হই। প্রায় তিন বছর থেকে আমি খালুর বাড়িতে আর শরণের সাথে ও পরিচয়, ওকে আমি খুব ভালো বন্ধু মনে করি কিন্তু আপনারা ই বলেন, এত বড় একটা বিষয় সে কিভাবে আমার কাছে গোপন করতে পারলো? আমাকে বললে কি সমস্যা হতো আমি বুঝতে পারতেছি না।

 

এখন শরণের দিকে আমি আর না গেলাম। ঐ দিনের পর থেকে আমার আর তেমন কথাবার্তা হয় নি শরণের সাথে। কারন আমি চলে আসি একেবারের জন্য আমার নিজের বাড়িতে। যাক এসব আর বাদ দিলাম। এখন আমি প্রিপারেশন নিচ্ছি অনার্স এ ভর্তি হব।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Sumana Begum

Author: Sumana Begum

আমি সুমানা বেগম। সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। আমার বাবার নাম হাজী মো. আতাউর রহমান এবং মায়ের নাম তায়্যিবা খানম। তারা কেউ বেঁচে নেই। আমি তাদের সব ছোট মেয়ে। বিয়ানী বাজার সরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি এবং সিলেট এম. সি. কলেজ থেকে মাষ্টার্স। আমার স্বপ্ন ছিল চাকরি করব। কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে তেমন উন্নতি করতে পারিনি। তবে আমার আশা পূরণ হয়েছে আমি কিছু দিন শিক্ষকতা পেশায় কাজ করতে পেরেছি। আমি বিবাহিত এবং আমার একটি আট বছরের মেয়ে আছে নাম মাহনূর জান্নাত।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to ““রূপকথার গল্পে আমি”-১৮”

Leave a Reply