লাল কোলবালিশ

4

এক ছেলে আর এক মেয়ে। একে অপরকে খুব ভালোবাসে। একদিন ছেলেটি গেল মেয়েটির বাড়ি, মেয়েটির সঙ্গে দেখা করবে বলে। বাড়ি গিয়ে ছেলেটির মনটি খুব খারাপ হলো, কারণ ছেলেটি দেখল যে মেয়েটির একটি (নীল) কোলবালিশ আছে, কিন্তু ছেলেটির কোনো কোলবালিশ নেই। তাই ছেলেটি মেয়েটিকে তার মনের কথা বলে দিলো: তার একটি টুকটুকে লাল কোলবালিশ চাই। মেয়েটি তার কথায় রাজি হয়ে গেল। বললো বিয়ের পর মেয়েটি সেই টুকটুকে লাল কোলবালিশ তৈরী করে দেবে। কিন্তু ছেলেটির বা মেয়েটির-কারোর তর সইল না। তাই মেয়েটি সেদিন থেকেই কোলবালিশ বানানো শুরু করে দিলো। আহা, শিমুল তুলার টুকটুকে লাল কোলবালিশ, কার না ভালো লাগে।

অবশেষে ছেলেটির আর মেয়েটির-দুজনেরই বিয়ের দিন চলে এলো। মেয়েটি তার মালামালের সঙ্গে কোলবালিশটিও ব্যাগে উঠিয়ে ফেলল। বাসররাতে মেয়েটি যখন তার ব্যাগ থেকে কোলবালিশটা বের করল, ছেলেটি কিছুতেই তা মেনে নিতে পারল না। ছেলেটি চেয়েছিল লাল কোলবালিশ, আর এ তো গাঢ় গোলাপি কোলবালিশ। তাই ছেলেটি বললো এই কোলবালিশ তার চাই না, সে কোলবালিশ ছাড়াই থাকবে, আর মেয়েটির সাথেও কথা বলবে না। মেয়েটি ছেলেটিকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলো, এটি লাল কোলবালিশ, গোলাপি কভার দিয়ে আবৃত। কিন্তু ছেলেটি কিছুতেই এটি বুঝতে রাজি হলো না। এভাবেই রাত শেষ হয় হয় অবস্থা। এর কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে আজানের শব্দ এলো এবং ছেলেটি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বেশ কিছু সময় পর ছেলেটি বাড়ি ফিরে নিজের ভুল স্বীকার করল। বললো যে এই কোলবালিশের ওপর দুজনেরই অধিকার আছে। কিন্তু মেয়েটি এ কথায় রাজি হয়নি। সে বলেছে যে ছেলেটির এই কোলবালিশের ওপর কোনো অধিকার নেই। এরপর ছেলেটি নানাভাবে মেয়েটিকে বোঝানোর চেষ্টা করলো যে তার ভুল হয়ে গেছে এবং এমনটি আর কখনো হবে না। কোনো কোনো রাতে ছেলেটি শুয়ে শুয়ে কাঁদত, ঘুমাতো না। কিন্তু এত কিছু করার পরও মেয়েটির মন গলেনি।

অবশেষে একদিন বাইরে থেকে সেই একই শব্দ আসার পর ছেলেটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল, আর ফিরল না।
কিছুদিন পর জানা গেল, সেই ছেলেটি ‘মরে গেছে’। তখন মেয়েটি খুব কাঁদতে লাগলো এবং এই সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করতে লাগলো। মেয়েটি সারাদিন ঠিকমতো কিছুই করতে পারলো না। রাতেও মেয়েটি নিজের বুকে কোলবালিশ আঁকড়ে ঘুমাতে পারেনি।

পরদিন সকালে জানা গেল, ছেলেটি মরেনি। ছেলেটি মেয়েটির কাছে ফিরে এলো, এবং দুজনেই নিজেদের ভুল স্বীকার করলো। মেয়েটি বললো, আজ থেকে কোলবালিশের ওপর ছেলেটির অধিকার নেই। ছেলেটি বললো, কোলবালিশের ওপর তার অধিকার না থাকলেও মেয়েটির ওপর তার অধিকার আছে। এই বলে ছেলেটি মেয়েটিকে চুমু দিলো এবং তাকে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েটি হাসলো, এবং বললো যে আজ থেকে কোলবালিশের ওপর দুজনেরই অধিকার আছে। ছেলেটি বললো যে মেয়েটির লাল কোলে লাল কোলবালিশটি আরো ভাশো মানাবে (ঘটনাচক্রে সেদিন মেয়েটি লাল শাড়ি পরেছিল, এবং কোলবালিশের আবরণও ছিল না)। এরপর থেকে ছেলেটি মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো, এবং সকল খুনসুটির সময় কোলবালিশ তাদের দুজনের কোল দখল করে রাখতো। এভাবেই শুরু হলো এই দম্পতির নতুন জীবন।

 


আরো পড়ুন-


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

4

rezwan noor

Author: rezwan noor

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

3 Replies to “লাল কোলবালিশ”

Leave a Reply