অপেক্ষা। পর্ব–১৩। সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি

0

 

প্রিয় অষ্টাদশী,

আমার সাথে এসব কি হচ্ছে অষ্টাদশী? বাস্তবতা উপেক্ষা করে আবেগে ভেসে বেড়াচ্ছি। এই বয়সে যে এসব বড্ড বেমানান। আমার মনের কোণে কেন এতো ইচ্ছে জাগে আপনাকে নিয়ে বলতে পারেন? শুনবেন কি আমার ইচ্ছে? থাক নাহয় নাই শুনলেন। যদি উপরওয়ালার ইচ্ছেতে কখনো আপনাকে আমি আমার একান্ত ব্যক্তিগত শখের নারী হিসেবে জীবনে পাই তখন না হয় বলবো।

ইতি
আপনার অপ্রেমিক

আজও আলো নিজের জানালায় এই চিরকুটটা পেলো। কিন্তু বুঝতে পারছে না এসব কার কাজ। তবে সে যেই হোক, আলো চায় না কেউ আলোকে নিয়ে কিছু অনুভব করুক। তাতে লোকটা শুধু শুধুই কষ্ট পাবে। কারন আলো তো একজনকে মনে মনে ভালোবাসে। আর তার সাথেই ঘর বাধার স্বপ্ন দেখছে। সে ছাড়া যে আর কারো কথা আলো ভাবতেও পারে না।

সকাল হতেই পুরো গ্রামে পিশাচের কথাটা রটে গেলো। অবশ্য কুতুব মিয়া বলেন নি মাছ চুরি করতে গিয়ে তিনি এসবের সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি বলেছেন রাত করে বাড়ি ফিরার পথে পিশাচের দেখা পেয়েছেন। সাথে উনার স্বভাব অনুযায়ী অনেক কিছু বাড়িয়েও বলেছেন। উনার না দেখা সেই পিশাচের বর্ননাও উনি সবাইকে দিয়ে দিয়েছেন। উনার ভাষ্যমতে পিশাচটি দেখতে খুবই ভয়ংকর ছিলো। তার ইয়া বড় বড় দাঁত ছিলো। যা কুতুব মিয়া ভেংগে দিয়েছেন এক ঘুষিতে। নখ গুলোও বিশাল আকারের ছিলো। মুখ বেয়ে অঝোর ধারায় রক্ত পড়ছিলো। চোখ ছিলো একেকটা রসগোল্লার মতো। আকৃতি দেখে যে কেউ ভয় পাবে। কিন্তু কুতুব মিয়া ভয় পান নি। বরং উনি মোকাবিলা করে বেঁচে ফিরেছেন। এমনটাই উনি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন। অবশ্য কেউ উনার কথা বিশ্বাস করছেন না। তবে বিনোদন ঠিকই নিচ্ছে সবাই।

———

“আলাউদ্দিন দাদু! আইজকা আপনেরে একটা জিনিস দেহাইতে নিমু। রাইতে তাড়াতাড়ি ঘুমায়েন না কিন্তু।”

“কি জিনিস?”

“ওইডা দেখলেই বুঝবেন। এহন যাই। রাইতে আমু।” বলে সয়তানি হেসে ছেলেটি চলে গেলো। আর এদিকে আলাউদ্দিন ভাবতে লাগলেন কি এমন দেখাবে জুবায়ের-এর এই চ্যালা?

আলো অনেকদিন ধরেই ভাবছিলো আলো ও তাফীফের এই ব্যাপারটা যেভাবে বাজে ভাবে রটানো হয়েছিলো তা নিয়ে তো এতোদিনে রণক্ষেত্র হয়ে যাওয়ার কথা। তা না হয়ে সব এমন শান্ত রইলো কিভাবে। তাই আজকে না পেরে আমেনা বেগমকে জিজ্ঞেস করেই বসলো আলো।

“আম্মা! একটা কথা জিগাই?”

“কি কথা?”

“কুতুব চাচার ওই কথায় তো গেরামে এতোদিন আমাগো নিয়া অনেক ঝামেলা হওয়ার কথা তা হইলো না কেন?”

আমেনা বেগম কাঁথা সেলাই করছিলেন। আলোর কথা শুনে সেলাই থামিয়ে আলোর দিকে তাকালেন। তারপর বললেন,”তোর না দুইদিন পর পরীক্ষা? পড়ায় মন দে। এগুলা নিয়া তোর ভাবা লাগবো না।”

“কউ না আম্মা! আমার জানতে মন চাইতাছে অনেক।”

“রোশান বাবায় সব ঠিক করছে। তোর আব্বার লগে মিল্লা গেরামের মানুষের লগে অনেক তর্কও করছে। শেষে কুতুব ভাইজানরে চাপে ফালাইয়া সব সত্যি কথা বাইর করছে হের মুহের তে।”

আলো অবাক হলো এই কথা জেনে। কই লোকটা তো ওকে কিছুই জানায় নি। এর জন্য একবার ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আর আলো কিনা চায়ে করে লোকটাকে…! ভাবতেই লজ্জা লাগছে এখন।

আজকে আলো নিজ হাতে পায়েস বানিয়েছে। মূলত তাফীফের জন্যই বানিয়েছে। কারন আজ তাফীফের জন্মদিন। সেই জন্যই তাফীফের পছন্দের পায়েস বানিয়ে রাখলো আলো। তারপর রাতে চুপিচুপি এক বাটি পায়েস নিজের ঘরে নিয়ে রাখলো।

রাত হতেই আলো জানালা খুলে তাফীফের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। মিনিট দশেক পরেই তাফীফ চলে এলো। তবে আজ আলো ইশারায় জানালার কাছে ডাকলো তাফীফকে। তাফীফও আলোর ইশারায় ছুটে এলো জানালার ধারে।

“ছিহ আলো ছিহ! এমনে একটা নিষ্পাপ পোলারে রাইতের অন্ধকারে ইশারায় ডাকতে তোর শরম করে না?”

আলো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। সাথে করে এতোক্ষণের ফুরফুরে মেজাজটাও বিগড়ে গেলো।

“ওরে আমার সাধু পুরুষ রে। এই রাইতের অন্ধকারে তোমারে একটা মাইয়া ইশারায় ডাকলো আর তুমি তার ইশারায় এক দৌড়ে চইলা আসছো এইটা কিছু না?”

“আমার মনটা অনেক বড় বুঝছোছ? তাই আমি কাউরে না করতে পারি না।”

“দেখ ঝগড়া না কইরা কামে আহি। কেউ তোরে দেখলে ঝামেলা হইয়া যাইবো।”

“কি কাম? এই এক মিনিট তুই কি এই রাইতের অন্ধকারে আমার লগে পলাইয়া যাইতে চাইতাছোছ? দেখ আলো! আমি তোরে সবার সামনে নিজের বউ কইরা ঘরে তুলতে চাই। এমনে…..”

তাফীফকে আর বলার সুযোগ না দিয়ে আলো ক্ষিপ্ত স্বরে বললো,”আল্লাহর দোহায় লাগে থাম তুই। কেউ শুনে ফেললে অনেক বড় সমস্যা হইয়া যাইবো। এই নে পায়েস। এটা নিয়া চইলা যা। দূরে গিয়া খাবি। ধর তাড়াতাড়ি।”

“তুই বানাইছোছ?”

“হ।”

“আমার লাইজ্ঞা?”

“হ রে ভাই, যা তাড়াতাড়ি।”

তাফীফ হাত বাড়িয়ে নিলো পায়েসের বাটিটা। মুখে লেগে আছে বিশ্বজ্বয়ের হাসি। চোখে মুখে খুশি উপচে পড়ছে। তাতৎক্ষনাৎ এক চামচ পায়েস মুখে দিয়ে চোখ যুগল বন্ধ করে নিলো। তাফীফের কাছে মনে হচ্ছে এটা সাধারণ কোনো পায়েস না। এতে অমৃত মিশ্রিত করা হয়েছে। আলোর হাতের পায়েস বলে কথা! তবে মুখে তা প্রকাশ করলো না।

“না খারাপ হয় নাই, চলে। তোয় আরেকটু লবন লাগতো। যাই আমি।”

আলো জানতো তাফীফ ভালো কিছু বলবে না। তবে তাফীফের মুখের ধরনই বলে দিয়েছে পায়েসটা ঠিক কেমন লেগেছে তাফীফের কাছে।

এদিকে আরেক চামচ পায়েস মুখে দিয়ে পিছনের দিকে ঘুরতেই কি মনে করে জানি একবার ডানে তাকালো তাফীফ। আর যা দেখলো তা দেখে তাফীফের মনে অজানা এক ভয় ঢুকে গেলো। তবে সেটা নিজের জন্য না, আলোর জন্য।
তাফীফ আলোর দিকে ঘুরে একবার চোখে ইশারা করলো সরে যেতে কিন্তু আলো বুঝলো না। তাফীফ আবার ডানে তাকিয়ে হাসি মুখে শুধালো,”দাদু পায়েস খাবা?”

আলাউদ্দিন রাগের জন্য কথা বলতে পারছেন না। শুধু জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন। আর পাশে থাকা জগু নামের ছেলেটা যে সকালে উনার কাছে গিয়েছিলেন অর্থাৎ জুবায়েরের চ্যালাপেলাদের মাঝে একজন, সে আলাউদ্দিনের পাশে দাঁড়িয়ে নিরবে হেসে চলেছে। আলাউদ্দীন তাফীফকে কিছু বললেন না। আলোর জানালার সম্মুখে এসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার আলোর পানে তাকালেন। তারপর গটগট করে হেটে আলোদের বাড়ির সদর দরজার দিকে যেতে লাগলেন। আর তা দেখে আলো ও তাফীফ দুজনেই বুঝে গেলো কি হতে চলেছে। দুজনের মনেই হানা দিলো কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটার ভয়।

তাফীফ অনেক চেষ্টা করেছে আলাউদ্দিনকে থামানোর। কিন্তু উনি থামেন নি। বলে রাখা ভালো উনি এই গ্রামের গণ্যমান্য একজন ব্যাক্তি। উনার কথার প্রতিবাদ করবে বা বিরুদ্ধে যাবে এখন পর্যন্ত কেউ এই সাহস দেখায় নি। এবার দেখা যাক কেউ এই রেকর্ড ভাঙ্গতে পারে কি না!

চলবে……


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Sumaiya Akter Bristy

Author: Sumaiya Akter Bristy

❝শুভ্রচিন্তার উদ্ভব ঘটে যার কথা ভেবে সে যদি মোহ হয় দোষ বা কি তাতে?❞ ~Sumaiya Akter Bristy

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

2 Replies to “অপেক্ষা। পর্ব–১৩। সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি”

Leave a Reply