গল্প কাজের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

0

কাজের মেয়ে

আফছানা খানম অথৈ

শুভ চৌধুরী লন্ডন থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরেছে।একমাত্র ছেলের আগমনে মা-বাবা খুব খুশি।একমাত্র ছেলেকে রিসিভ করতে ছুটে গেলেন দু’জনে এয়ারফোর্টে।সন্ধ্যা সাতটার ফ্লাইটে শুভ চৌধুরী বাংলাদেশে ল্যান্ড করলো।বাবা-মা সাদরে ছেলেকে বরণ করে বাসায় নিয়ে আসল।কাজের মেয়ে হাফসা হেনা চা নাস্তা দিয়ে ডাইনিং টেবিল সাজিয়ে দিলো।শুভ চৌধুরীর পলক যেন পড়ছে না।হাফসা হেনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।মনে মনে বলে,

এ আমি কী দেখছি,দেশ বিদেশ ঘুরে এলাম কোত্থাও এমন রুপসী মেয়ে দেখলাম না।একি মানবী নাকি পরী?খোদা যেন সকল সৌন্দর্য তার তনুতে রক্ষিত করেছেন।সৃষ্টিকর্তা যেন নিজ হাতে তাকে গড়াইয়াছেন।মিষ্টি মায়াবী চেহারা,কাজল কালো ভ্রু,আঁখি যুগল স্বচ্চ কাঁচের মতো,অধর দুটো পলাশ রাঙা,বড়ি ফিটনেস ও সুন্দর,সব মিলিয়ে অপরুপ রুপবতী।
যাকে শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।মা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
শুভ হা করে কী দেখছিস,খেতে বস।
মা এই মেয়েটা কে?
ওর নাম হাফসা হেনা। আমাদের কাজের মেয়ে।
তাই নাকি?
কেনো তোর বিশ্বাস হচ্ছে না?
না মানে ঠিক তাই না। কখনো দেখেনি তো তাই।
শুভ তুই দেখবি কী করে,তুই যাওয়ার পরেতো এনেছি।প্রায় পাঁচ বছর হলো।আর কোন কথা নয়।এখন খাওয়া শুরু কর।
শুভ আর কোন কথা না বলে আপন মনে খেয়ে নিলো।খাওয়ার পর মা বলল,
বাবা শুভ শরীরের উপর দিয়ে এমনিতে অনেক দখল গেছে।এবার রেস্ট নাও।
ঠিক বলেছ মা।আমি শুতে গেলাম।
শুভ শুয়ে পড়লো।চোখ দু’টো বন্ধ করে নিলো।কিন্তু সে কী তার চোখের সামনে ভেসে উঠল কাজের মেয়ের প্রতিচ্ছবি।শতচেষ্টা করেও তাকে সরাতে পারছে না।বারবার তার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে।চোখ বন্ধ করলে ও যা, খুললে তা।হাফসা হেনা যেন তার চারিপাশে চায়া হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে।তার চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেলো।মনের সুখ নষ্ট….।
শতচেষ্টা করে ও দু’চোখের পাতা এক করতে পারলো না। এক প্রকার নির্ঘুম রাত পার করলো শুভ চৌধুরী। সকাল হলে হাফসা হেনা বেড টি নিয়ে হাজির।আস্তে সুরেলা কণ্ঠে বলল,
সাহেব আপনার বেড টি।
কাজের মেয়ের মুখে বেড টি শুনে শুভ অবাক হলো।তারপর বলল,
এই শুন?
জ্বি সাহেব বলুন।
তুমি পড়ালেখা কতদূর করেছ?
নবম শ্রেণি পর্যন্ত।
আর পড়নি কেনো?
আমার ইচ্ছা ছিল অনেক দূর পড়ার, কিন্তু পারলাম না।
কেনো কি হয়েছে?
সাহেব এসব কথা শোনে আপনি কী করবেন।
না মানে আমি শুনব তুমি বলো।
সাহেব আমরা খুব গরীব ছিলাম।তবুও ভালোভাবে চলছিল আমাদের সংসার।বাবা রিক্সা চালাতেন।মা সংসার দেখতেন।আমরা পাঁচ বোন ছিলাম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আমার বাবা।হঠাৎ গাড়ি এক্সিডেন্টে আমার বাবা মারা গেলেন।তারপর আর পড়া, পেট চালানো কষ্টকর হয়ে উঠলো।এরপর আর কী, পড়ালেখা ছেড়ে পেট বাঁচানোর জন্য কাজে লেগে গেলাম।
সো সেড।শুন?
জ্বি সাহেব বলুন।
ততক্ষণে শুভর মায়ের ডাক পড়লো।হাফসা হেনা এগিয়ে গিয়ে বলল,
খালাম্মা আমায় ডেকেছেন?
শুভকে চা দিয়েছিস?
জ্বি খালাম্মা।
মা দ্রুত পায়ে ছেলের ঘরে গেল। তারপর বলল,
শুভ তোমার বাবা তোমাকে ডাকছে।
তুমি যাও মা। আমি আসছি।
বাবা ছেলে বৈঠকে বসল।তারপর ছেলেকে ব্যবসা বাণিজ্য বুঝিয়ে দিলো।ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে শুভ চৌধুরী ব্যস্ত হয়ে উঠল।কিন্তু কেনো জানি মনের ভিতর শূন্যতা লাগছে।কোনকিছু ভালো লাগছে না।বারবার কাজের মেয়ে হাফসা হেনার কথা মনে পড়ছে।আকাশে বাতাসে চারদিকে যেন তার বিচরণ।যেদিকে দু’চোখ যায় শুধু তাকে দেখে শুভ চৌধুরী।মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তাকে।তাই আর দেরী না করে শুভ চৌধুরী হাফসা হেনাকে ডেকে নিয়ে গেল ছাদে।তারপর সরাসরি বলল,
হাফসা হেনা I love you.
হাসনা হেনা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল।তারপর বলল,
কী বললেন সাহেব?
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
অসম্ভব এটা কখনো হতে পারে না।
কেনো পারে না?
আমি কাজের মেয়ে,আপনি মুনিব। আপনি আপনার কথা ফিরিয়ে নিন।
না আমি ফিরিয়ে নেবো না।সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।
প্লিজ শুভ সাহেব থামুন।লোকে শুনলে কলঙ্ক রটে যাবে।আপনার সম্মান হানি হবে।
আমি এসব কলঙ্ককে পরোয়া করি না।
আপনি না করলেও আমি করি।আমায় ক্ষমা করবেন।আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না।
না সুচক জবাব দিয়ে হাফসা হেনা ছাদ থেকে নেমে যাচ্ছিল।ঠিক তখনি শুভ তার পথ রোধ করে হাত চেপে ধরে বলল,
হাফসা হেনা আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি।তুমি যদি আমার ডাকে সাড়া না দাও, আমাকে ভালো না বাস তাহলে…।
তাহলে কী থামলেন কেনো বলুন।
আমি এক্ষণই এই ছাদ থেকে পড়ে সুইসাইড করবো।
বলতে না বলতে শুভ একেবারে ছাদের কিনারে চলে গেল।লাফ দিতে প্রস্তুত হলো।ঠিক তখনি হাফসা হেনা বাধ্য হয়ে বলল,
I love you শুভ সাহেব I love you.
সত্যি বলছ তো?
হুম সত্যি বলছি।আপনার বাবা মাকে বলতে পারবেন তো ভালোবাসার কথা?
এই নিয়ে তুমি ভেবো না।আমি সময়মতো সবকিছু করবো।সত্যি পারবেন তো?
হুম পারবো।
দু’জনের ভালোবাসা পাকা করার শেষ মুহূর্তে মায়ের ডাক পড়লো।তিনি গলা ছাড়িয়ে ডাকছেন,
হাফসা হেনা এদিকে আয়তো?
শুভ সাহেব খালাম্মা ডাকছে। আমি গেলাম।
হাফছা হেনা তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এলো।তারপর শুভ’র মায়ের কাছাকাছি গিয়ে বলল,
খালাম্মা আমায় ডেকেছেন?
ডাকছি তো সে কখন থেকে।এত সময় কোথায় ছিলে?
ছাদে গিয়েছিলাম কাপড় আনতে।
ঠিক আছে।আমাকে কড়া করে এক কাপ চা বানিয়ে দেতো,হ্যাঁরে শুভ কোথায়?
ততক্ষণে শুভ মায়ের পাশে এসে দাঁড়াল।ছেলেকে দেখে মা বলল,
শুভ…?
জ্বি মা বলো।
তুমি কাল অফিসে যাবে না।
কেনো মা?
কাল পাত্রী দেখতে যাব।
কার জন্য?
তোমার জন্য।
সরাসরি মাকে ভালোবাসার কথা কিভাবে বলবে।তাই একটু ঘুরিয়ে বলল,
মা আমি এখন বিয়ে করবো না।
কেনো রে?
মা সবেমাত্র ব্যবসা বুঝিয়ে নিলাম।একটু গুছিয়েনি তারপর…।
শুন বাবা মেয়ে দেখলে তো আর বিয়ে হবে না।আগে দেখ না মেয়ে পছন্দ হয় কী না?
মা বিয়ে যখন করবো না,তখন মেয়ে দেখার দরকার কী?সরি মা আমি এখন মেয়ে দেখতে পারবো না।
কোনকিছু শুনার অপেক্ষা না করে শুভ চলে গেল অফিসের দিকে।শতচেষ্টা করেও মা ছেলেকে ফেরাতে পারলো না।কিন্তু পাত্রী দেখা বন্ধ হলো না। পরদিন ঠিক সময়ে তারা পাত্রী দেখতে গেল।শুভ কোনমতে মেয়ে দেখে বাসায় ফিরে আসল।মা জিজ্ঞেস করলো,
শুভ মেয়ে পছন্দ হলো?
না মা হয়নি।
কেনো রে?মেয়েটাতো খুব কিউট।
মা আমি এতো কৈফিয়ত দিতে পারবো না।মেয়ে পছন্দ হয়নি ব্যস এটাই যথেষ্ট।
ঠিক আছে বাবা তোকে আর কিচ্ছু বলতে হবে না।
ছেলের মুভমেন্ট বুঝতে পেরে মা অফ হয়ে গেল।এভাবে তারা আরও অনেক মেয়ে দেখল।শুভ একেক জনের একেক কারণ দেখিয়ে পছন্দ হয়নি বলে কোন রকমে মা-বাবাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।কিন্তু এভাবে আর ক’দিন সত্যতো একদিন প্রকাশ করতে হবে।
এসব কথা ভেবে সে হাফসা হেনাকে বলল,
চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।
কী বলছেন আপনি।মা-বাবাকে না জানিয়ে এভাবে বিয়ে করা কি ঠিক হবে?
তা পরে দেখা যাবে।
শুভ এক প্রকার জোর করে হাফসা হেনাকে নিয়ে গেল কাজী অফিসে।তারপর ঠিক বিয়ে করে বাসায় ফিরল।শুভ’র অফিসের এক স্টাফ তাদেরকে কাজী অফিস থেকে বের হতে দেখল।ঠিক তখনি সে তাদের বিয়ের খবরটা লেলিন চৌধুরীর কাছে প্রকাশ করলো।তিনি কি আর থেমে থাকেন।উল্কার গতিতে বাসায় ফিরলেন।তারপর স্ত্রীকে বললেন,
তোমার ছেলে নাকি কাজের মেয়ে হাফসা হেনাকে বিয়ে করেছে?
কী বলছেন এই সব।সমাজে এতো মেয়ে থাকতে সে কাজের মেয়েকে কেনো বিয়ে করবে?
সে প্রশ্নতো আমার ও। ডাকো তাকে।
মা উঁচু গলায় ছেলেকে ডাকলেন।শুভ কিন্তু থেমে থাকল না।বাবা-মায়ের সামনে এসে দাঁড়াল।বাবা কোন প্রকার বনিতা না করে সরাসরি জিজ্ঞেস করলো,
শুভ আমি এসব কী শুনছি?
কী শুনছ বাবা?
তুমি নাকি আমাদের কাজের মেয়ে হাফসা হেনাকে বিয়ে করেছ?
শুভ ও কোন বনিতা না করে সরাসরি উত্তর দিলো,
জ্বি হ্যাঁ বাবা করেছি।
কথাটা শুনামাত্রই লেলিন চৌধুরী ও তার স্ত্রী সিমলা চৌধুরীর চোখ উপরে উঠে গেল।কাজের মেয়েকে বিয়ে করলো একমাত্র ছেলে কথাটা তাদের বিশ্বাস হলো না।তাই চোখ দুটো ছানা বড় করে বলল,
কী বললে!সত্যি কি তুমি কাজের মেয়ে হাফসা হেনাকে বিয়ে করেছ?
জ্বি বাবা সত্যি সত্যি সত্যি।
ঠিক আছে বিয়ে যখন করে ফেলেছ তখন করার কিচ্ছু নেই।এখন তাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও।
জ্বি না বাবা আমি তা পারবো না।কারণ আমি হাফসা হেনাকে খুব ভালোবাসি।
বাবা একগাল উপহাসের হাসি হেসে বলল,
বাদ দাও তো এসব ভালোবাসাবাসি।কাজের মেয়ের আবার কিসের ভালোবাসা।এদেরকে নিয়ে আনন্দ করা যায়,ফুর্তি করা যায়,সময় কাটানো যায়,কিন্তু সংসার করা যায় না।মানছি তোমার ওকে ভালো লেগেছে।ক’দিন আনন্দ ফুর্তি করেছ।এখন এসব বাদ দিয়ে দাও।অন্যত্র বিয়ে কর সবঠিক হয়ে যাবে।
বাবা আমি এসব পারবো না।আমি সত্যি ওকে ভালোবাসি।ও আমার স্ত্রী।আমি সারা জীবন ওর সঙ্গে থাকতে চায়।
সত্যি?
জ্বি বাবা সত্যি।হাফসা হেনা আমার স্ত্রী।আমি ওকে ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।
এটাই কী তোমার শেষ কথা?
জ্বি বাবা এটাই আমার শেষ কথা।
তাহলে তুমিও কান খুলে শুনে রাখ আমার আলটিমেটাম।চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে যদি তুমি আমার কথায় ফিরে না আস হাফসা হেনাকে ছেড়ে না দাও, তাহলে…।
তাহলে কী বাবা থামলে কেনো বলো?
চিরদিনের জন্য এদরজা বন্ধ হয়ে যাবে।শুধু তাই নয়, আমি তোমাকে ত্যাজ্যপুত্র করবো। সকল সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবো।এবার ভেবে দেখ কি করবে।সময় মাত্র চব্বিশ ঘন্টা।
নিঃসংকোচে ছেলে উত্তর দিলো,
বাবা চব্বিশ ঘন্টা লাগবে না।আমি এক্ষণই উত্তর দিচ্ছি,হাফসা হেনা আমার স্ত্রী, আমি শুধু ওকে ভালোবাসি।রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড ভালোবাসার জন্য সিংহাসন ত্যাগ করেছেন।আর আমি সম্পত্তির মায়া ত্যাগ করতে পারবো ন?।পারবো বাবা পারবো।তুমি তোমার সম্পত্তি নিয়ে থাক।এসো হাফসা হেনা।
যাওয়ার আগে আমার শেষ কথাটা শুনে যাও।
বলো বাবা?
বাস্তব বড় কঠিন।অর্থ ছাড়া জীবন চলে না।পথ চলতে যখন হোঁচড় খাবে,অর্ধাহারে অনাহারে জীবন কাটাবে,তখন তোমাকে এই মহলে ফিরে আসতে হবেই।তাই বলছি এত ন্যাকামো না করে ওকে ছেড়ে দাও।কিছু টাকা দিয়ে দাও। তার মা-বাবা অন্যত্র বিয়ে দেব।কারণ চৌধুরী বাড়ির বউ কখনো কাজের মেয়ে হতে পারে না।
কেনো পারে না বাবা।কাজের মেয়ে বলে কী ওরা মানুষ না?
শুভ আমি তোমাকে এত কৈফিয়ত দিতে পারবো না।শুধু এটুকু বলবো,যাকে যেখানে মানায় তাকে সেখানে রাখতে হয়।তুমি একবার ভুল করেছ দ্বিতীয়বার ভুল করো না?ওকে ওর স্থানে পাঠিয়ে দাও।
বাবা তোমার এই অহংকার একদিন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।সেদিন অনুশোচনা করার ও সময় পাবে না।কারণ অহংকার ও দাম্ভিকতা আল্লাহপাক কখনো পছন্দ করেন না।আর অর্থের কথা বলছ,তোমার অর্থের প্রতি আমার কোন লোভ নেই।আমি শত দু:খ কষ্ট করলেও তোমার কাছে আসব না।আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সুখে থাকব।চলি বাবা।
বাবা-মায়ের সামনে দিয়ে হাফসা হেনার হাত ধরে হনহন করে চলে গেল একমাত্র ছেলে শুভ চৌধুরী।মা শত কান্নাকাটি করে ও ছেলেকে ফেরাতে পারলো না।তারা অনেক দূরে চলে গেল।ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া করে নিলো। কিছুদিন ঘুরাঘুরির পর ঠিক একটা চাকরী পেল শুভ চৌধুরী।আপাতত তাদের কোন টেনশন নেই।দুজন মনের সুখে খাচ্ছ দাচ্ছে আরামছে ঘুমাচ্ছে।
এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা খুব ভেঙে পড়লেন।ছেলের ভালোবাসাকে মেনে নেয়ার জন্য,তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কেঁদে কেঁদে স্বামীকে খুব অনুরোধ করলেন সিমলা চৌধুরী।তিনি কিছুতেই রাজী হলেন না।তার এককথা কাজের মেয়েকে ছেড়ে না দিলে তিনি ছেলেকে ফিরিয়ে আনবেন না,কখনো না।তার এক ঘেয়েমিভরা অহংকার কখনো ভাঙাতে পারলো না স্ত্রী সিমলা চৌধুরী।একদিন লেলিন চৌধুরী অফিসে স্ট্রোক করলেন।তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।তবু শেষ রক্ষা হলো না।তার একহাত এক পা অবশ হয়ে গেল।শুধু তাই নয়।তার কণ্ঠস্বর ও চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।তিনি আর কখনো কথা বলতে পারবেন না।সপ্তাহ খানেক হাসপাতালে থাকার পর স্বামীকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসলেন সিমলা চৌধুরী।নিয়মিত ঔষধপথ্য সবকিছু চলছে তবু লেলিন চৌধুরী রোগের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।তিনি হাটতেও পারছেন না,কথাও বলতে পারছেন না।
এদিকে লেলিন চৌধুরীর অনুপস্থিতে ব্যবসায় প্রচুর ঘাটতি দেখা দিয়েছে।কর্মচারীরা যে যেভাবে পারছে,সে সেভাবে লুটে পুটে খাচ্ছে।কেউ কাউকে বাঁধা দিচ্ছে না।সিমলা চৌধুরী একা মানুষ কদিক সামলাবেন।একদিকে অসুস্থ স্বামী ঘরে অন্যদিকে ব্যবসা কোনটাই ঠিকমতো পালন করতে পারছেন না তিনি।তাই ছেলেকে খুঁজতে বের হলেন।শহরের আনাছে কানাছে তন্ন তন্ন করে ছেলেকে খুঁজলেন কিন্তু কোত্থাও পেলেন না।
এদিকে শুভ একদিন রাতে একটা দু:স্বপ্ন দেখে ঘুমের ঘোরে কেঁদে উঠল।বউ জাগিয়ে দিয়ে বলল,
এই কাঁদছ কেনো?দু:স্বপ্ন দেখেছ বুঝি?
হাফসা হেনা ঠিক তাই।আমি দেখলাম বাবা খুব অসুস্থ।ডাক্তার বলল আর বাঁচবে না।
চোখের জল ও বাঁধা মানল না।অনায়াসে গড়িয়ে পড়লো। হাফসা হেনা স্বামীর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
ওগো চলো আমরা বাবা -মাকে দেখে আসি।এতদিনে হয়তো উনাদের রাগ পরে গেছে।
শুভ আর অমত করলো না।বউকে নিয়ে মা-বাবাকে দেখতে গেল।কলিংবেল টিপতেই এক ভদ্র মহিলা দরজা খোলে বলল,
আপনারা, কাকে চান?
না মানে এই বাসার মালীক লেলিন চৌধুরী আর সিমলা চৌধুরী কোথায়?
এই বাসার মালীক এখন উনারা না।
কেনো?
কারণ উনারা বাসা বিক্রি করে গেছেন।
কেনো বলতে পারবেন?
শুনেছি ব্যাংকের ঋন সুদে আসলে দ্বিগুন হয়ে গেছে।আর তা শোধ করার জন্য উনারা এই বাসা আমাদের কাছে বিক্রি করেন। এইজন্য এই বাসার মালীক এখন আমরা।
উনারা কোথায় গেছেন বলতে পারবেন?
জ্বি না।
একবুক দু:খ নিয়ে শুভ চৌধুরী বাসায় ফিরে আসল।তারপর থেকে মা-বাবাে খুঁজতে শুরু…।
একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে শুভ চৌধুরী দেখল এক বৃদ্ধ মহিলা এক মধ্যবয়সী লোকের সামনে হাত পেতে বলছে,
সাহেব আমাকে কটা টাকা ভিক্ষা দিন।ঘরে অসুস্থ স্বামীকে রেখে এসেছি।আজ ক’দিন ধরে পেটে দানাপানি পড়ে নাই।দিন সাহেব ক’টা টাকা দিন।
লোকটি কড়া একটা ধমক দিয়ে বলল,
বললাম না ভাংতি নাই।তবুও ডিস্টার্ব দিচ্ছেন কেনো?যান এখান থেকে।
কথাগুলো বলে লোকটি দিলেন এক ঠেলা।আর অমনি তিনি পড়লেন শুভ’র গায়ে। শুভ মুখের দিকে তাকাতে দেখলেন তিনি অন্য কেউ না তার মা।শুভ মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
মা তুমি এখানে।বাবা কোথায়?তোমাদের এ অবস্থা হলো কি করে?
মা কেঁদে কেঁদে বলে,
সে অনেক কথা বাবা।আমরা এখন আর আগের মতো বড় লোক নেই।বাড়ি গাড়ি সব শেষ।এখন আমার নি:স্ব, অসহায়।
শুভ মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
এমন করে বলো না মা।সবঠিক হয়ে যাবে।বাবা কেমন আছে?
তোর বাবার অবস্থা ভালো না, খুব অসুস্থ।দুদিন ধরে উপোস।
বলো কী মা!
হ্যাঁরে সত্যি।
চলো মা বাবাকে নিয়ে আসি।শুভ আর দেরী করলো না।মা-বাবা দু’জনকে নিজের বাসায় নিয়ে আসল।বাবা-মা দুজনে ছেলেও বউকে বুকে জড়িয়ে অনেক কাঁদলেন।তারপর নিজেদের ভুল শিকার করে “কাজের মেয়েকে ” স্বসম্মানে পুত্র বধু হিসেবে বরণ করে নিলেন।।
:সমাপ্ত:


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

2 Replies to “গল্প কাজের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ”

Leave a Reply