শরিয়ত কাকে বলে শরিয়তের লক্ষ্য উদ্দেশ্য উৎস ও গুরুত্ব কী 14

শরিয়ত কাকে বলে? শরিয়তের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, উৎস ও গুরুত্ব কী? 

0

শরিয়ত ইসলামের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামের যাবতীয় বিষয় শরিয়তের উপরই নির্ভরশীল। তাই শরিয়ত ব্যাতীত ইসলাম অসম্পূর্ণ। কেননা ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবন বিধিবিধান। যেখানে একজন মুসলিমকে জীবনযাপন করতে হলে ইসলামের যাবতীয় নিয়মতান্ত্রিক বিধিবিধানের উপরই জীবন পরিচালিত করতে হয়। আর তাই শরিয়ত হচ্ছে সেই নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মূল দিকনির্দেশনা। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ইসলামী শরিয়ত কাকে বলে? ইসলামী শরিয়তের উৎস, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। 

 

শরিয়ত কাকে বলে 

শরিয়ত একটি শব্দটি আরবি। যার মূলধাতু হলো শারউন। এর সহজ অর্থ হলো পথ বা  রাস্তা। এই শব্দটি জীবনপদ্ধতি, আইন-কানুন কিংবা বিধি-বিধান অর্থেও ব্যবহার করা হয়। শরিয়ত শব্দটিকে আমরা যখন ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত করব। তখন এর  আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায়, মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এই পৃথিবীর মানুষকে তাদের জীবন পরিচালনার জন্য যেসব আদেশ-নিষেধ ও যাবতীয় ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ইত্যাদির বিধিনিষেধ দিয়েছেন তাদের সমষ্টিকে শরিয়ত বলে।

আমরা যদি একটু খোলাসা করি তাহলে হবে, আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের এই পৃথিবীর জীবন পরিচালনার জন্য এবং এই জীবন পরবর্তী পরকালের মঙ্গলের জন্য যেসব আইনকানুন, বিধি নিষেধ, বিধি বিধান এবং ইবাদত বন্দেগি দিয়েছেন। তাদের সমস্ত গুলোকে একত্রে বলা হচ্ছে ইসলামী শরিয়ত বা ইসলামের বিধিবিধান। যে সুনির্দিষ্ট পথে চললে বা অনুসরণ করলে মানুষ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আল্লাহ নির্দেশিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। আর ইসলামের মূল উদ্দেশ্যেই হলো আল্লাহ সন্তুষ্টি এবং জান্নাতের পুরস্কার। যা অর্জন করতে হলে শরিয়তের অনুসরণের বিকল্প নেই।

সূচিপত্র

শরিয়তের উদ্দেশ্য

আল্লাহ পৃথিবীর মানুষকে শরিয়ত দেওয়ার অনেক গুলো উদ্দেশ্য ও বিধেয় রয়েছে। এই উদ্দেশ্য গুলোর গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হলো। 

দ্বীন প্রতিষ্ঠিত রাখা 

এই পৃথিবীতে মানব রচিত অসংখ্য ধর্ম রয়েছে। একইসাথে আল্লাহ প্রদত্ত ধর্মের নানান ভ্রষ্ট অংশ দুনিয়ায় বিদ্যমান। যা আল্লাহ সরাসরি বাতিল করে দিয়েছেন। এখন এইসব বাতিল ধর্মের মধ্যে ইসলামকে কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য তিনি শরিয়ত প্রেরণ করেছেন। আর তাই আল্লাহ বলেন, 

শরিয়ত কাকে বলে? শরিয়তের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, উৎস ও গুরুত্ব কী? শরিয়ত কত প্রকার শরিয়তের প্রধান উৎসের নাম কি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎসের নাম কি শরিয়তের তৃতীয় উৎসের নাম কি শরিয়তের চতুর্থ উৎসের নাম কি

আর তাই কেউ এই দ্বীনে এসে শয়তানের ফাঁদে পড়ে ধ্বংস হয়ে না যায়। তার জন্য আল্লাহ এই শরিয়ত মানব জাতির জন্য নির্ধারণ করেছেন।

পরকালের পাথেয় সংগ্রহ 

ইসলামী শরিয়তের মূল উদ্দেশ্য হল, মানুষ পৃথিবীর যাবতীয় চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে নিজেকে রক্ষা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাত হাসিল করা। আর তাই শরিয়তের মাধ্যমে একজন মুমিন পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করতে পারে।

মানবের ধারাবাহিকতা রক্ষা

মানুষ আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। একইসাথে মানুষের রয়েছে স্বাধীন কাজ করার ক্ষমতা। এই ক্ষমতার কারণে নিজেদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই করে মানুষ এই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার চিত্র আমরা বিভিন্ন যুদ্ধ দাঙ্গাহাঙ্গামায় দেখতে পাচ্ছি। 

এর থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহ শরিয়তের আইন করে মানব হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন। যাতে করে মানব গোষ্ঠী নিজেদের মধ্য লড়াই করে ধ্বংস হয়ে না যায়। আর এভাবেই মানবের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য শরিয়ত প্রতিষ্ঠিত।

মানুষের মর্যাদা রক্ষা

প্রতিটি মানুষেরই আত্ম মান সম্মান রয়েছে। তাই চাইলেই যেন কেউ কারো সম্মান নিয়ে ক্রীড়া কৌতুক করতে না পারে, সে জন্য শরিয়ত খুবই কঠোরতা অবলম্বন করে।

এই জন্য পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা আছে যে, মানুষ যেন কেউ কাউকে উপহাস না করে, কাউকে বিনা দোষে দোষারোপ না করে, কাউকে যেন মন্দ বা খারাপ নামে না ডাকে, কেউ যেন অন্যের সম্পর্কে অমূলক খারাপ ধারণা না করে, একে যেন অন্যের গোপন দোষ প্রকাশ না করে, কারো অনুপস্থিতিতে তার সমালোচনা করে গিবত না করে। 

সুশৃঙ্খল জীবনব্যবস্থা

ইসলাম হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। শরিয়তে প্রতিটি মানুষের যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয়াদি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সবিস্তারে ব্যাপ্ত হয়েছে।  ইসলামী শরিয়ত মানুষের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, বিচারব্যবস্থাসহ যাবতীয় সকল কিছুর সমাধান দিয়েছে। আর এভাবে শরিয়ত মানুষের জন্য একটি সুশৃঙ্খল জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বংশ ধারা চলমান রাখা

ইসলামী শরিয়তের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে সুসভ্যতা গড়ে তোলা। আর তাই ইসলামে অবৈধ যৌন ক্রিয়া নিষিদ্ধ। মানুষ শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ করলে সুনির্দিষ্ট বংশ ধারা চালু থাকে।  অবৈধ পন্থায় যৌন কর্মে আসা সন্তান কখনোই সুনির্দিষ্ট বংশ ধারার হয় না। এই কারণে অবৈধ যৌনকর্ম শরিয়ত নিষিদ্ধ করে।

মানবিকতা বৃদ্ধি করা

আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা দিলেও তাকে তার মানবিক গুণাবলী গুলো কাজের লাগানোর জন্য এবং তার মানবিক গুণাবলি বৃদ্ধি করার জন্য যথেষ্ট নির্দেশনা দেয়। আর তাই প্রতিটি মুমিন তাকওয়া, সততা, বিনয়-নম্রতা, ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, দানশীলতা, আমানতদারি, ন্যায়পরায়ণতা, কর্তব্যপরায়ণতা ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেদেরকে মানবিক গুণে গুণান্বিত করতে পারে।

অন্যায় ও জুলুম নিষিদ্ধ করা

এই পৃথিবীতে জোর যার রাজ্য তার। এই নীতি থেকে মানুষকে সরে আসার জন্য আল্লাহ শরিয়ত প্রেরণ করেছেন। যাতে মানুষ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে, অন্যায়, অবিচার ও অসৎ কার্যকলাপ দূর করে  একটি সুন্দর পৃথিবী বিনির্মান করতে পারে। এই কারণে আল্লাহ যাবতীয় অন্যায় অবিচার জুলুম অত্যাচার নিষিদ্ধ করে।

সম্পদ রক্ষা করা ও সুষম বন্টন

এই পৃথিবীতে সুপ্রাচীনকাল থেকেই সম্পদের জন্য যুদ্ধ চলমান। আর এই সম্পদ অর্জনের পন্থা হচ্ছে দুটি। একটি হচ্ছে বৈধ পন্থায় অর্জন আরেকটি অবৈধ পন্থা অর্জন। শরিয়ত অবৈধ ভাবে সম্পদ অর্জন করা নিষিদ্ধের পাশাপাশি শাস্তির বিধান রেখেছে

যাতে শক্তির জোরে কোনো একটি শ্রেণীর কাছে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে না থাকে। একইভাবে যাকাতের মাধ্যমেও সম্পদের সুষ্ঠু বন্টনেরও ব্যবস্থা শরিয়ত রেখেছে।

সকলের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা

ইসলামী শরিয়ত শুধু মুসলমানদের জন্য নয় বরং পুরো মানবজাতির জন্যই শরিয়তের ব্যবস্থা করেছে। আর তাই পৃথিবীতে অহেতুক মানব হত্যা নিষিদ্ধ। শুধু তাইনয় শরিয়ত প্রতিটি জাতি ধর্ম বর্ণ সকলের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। এমনকি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা সংখ্যালঘু অন্যান্য ধর্মালম্বিদের জন্য জিজ্ঞাসিত হবে।  আর এভাবেই ইসমামী শরিয়ত সকলের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করছে।

শরিয়তের বিষয়বস্তু ও পরিধি

আল্লাহ ইসলামী শরিয়তে নানান বিষয়বস্তু অন্তর্ভূক্ত রেখেছেন। একইসাথে এর পরিধিও অত্যন্ত ব্যাপক৷ কেননা ইসলাম হল মানবজাতির জন্য সার্বিক ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা৷ এই কারণে শরিয়তে মানব জীবনের সকল বিষয়ের বিধি বিধান ও নির্দেশনা এতে বিদ্যমান৷ বিভিন্ন ইসলামিক স্কলারগণ শরিয়তের বিষয়বস্তুকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করেছেন

  • আকিদা বা বিশ্বাসগত বিধি বিধান
  • নৈতিকতা ও চরিত্র সংক্রান্ত রীতি নীতি
  • বাস্তব কাজকর্ম সংক্রান্ত জনিয়মকানুন

 

প্রতিটি মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে  সবধরনের আচার আচরণ চিন্তা চেতনা উপরিউক্ত তিনটি বিষয়ের আওতাভুক্ত৷ আর তাই মানুষের আর্থ সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক ধর্মীয় সকল কাজের মধ্যেই শরিয়তের বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত৷ আমাদের মানব জীবনের কোনো কিছুই  শরিয়তের দিকনির্দেশনার বাইরে নেই৷ 

শরিয়তের গুরুত্ব

আল্লাহ যে উদ্দেশ্য মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, সেই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তিনি মানুষকে শরিয়ত প্রদান করেছেন। তাই মানবজীবনের শরিতের গুরুত্ব খুবই অপরিসীম। শরিয়ত ব্যাতীত মুমিনের কোনো অস্তিত্ব থাকতে পারে না। কেননা একজন মানুষের ইসলাম পালনের মূল উৎস হলো শরিয়ত।

এই শরিয়ত পালনের উপর ভিত্তি করেই আল্লাহ প্রতিটি মানুষের বিচার করবেন। তাই শরিয়তের বিধি বিধান দিকনির্দেশনা মেনে চলা প্রতিটি মুনিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যারা শরিয়ত মেনে চলবে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা জান্নাত। আর যারা মেনে চলবে না তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি তথা জাহান্নাম।

এই কারণে প্রত্যেক মুমিনকে শরিয়ত মেনে চলতে হবে। শুধু তাইনয় শরিয়ত কখনোই অসম্পূর্ণ কিংবা আংশিক মানলেও তা পুরোপুরি মানা হবে না। এরূপ করলে আল্লাহর কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। শুধু যে পরকালের জন্য শরিয়তের গুরুত্ব রয়েছে তা নয়। ইহকালের জন্যও শরিয়তের গুরুত্ব অত্যাধিক।

একজন মানুষ শরিয়তের হুকুম আহকাম মেনে চললে সে আল্লাহর প্রিয় হয় এবং দুনিয়াবী পথচলা সহজ হয়। যে শরিয়ত মোতাবেক চলে না তার দুনিয়াবী পথচলাও আল্লাহ কঠিন করে দেন। তাই দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য শরিয়ত গুরুত্ব রয়েছে। একইসাথে অন্যান্য ধর্মের সাথে ভিন্নতার জন্যও শরিয়তের গুরুত্ব রয়েছে। 

শরিয়তের মাধ্যমেই একজন মুমিন প্রকৃত ইসলামের সাথে পরিচয় হয়। আর সে জানতে পারে মানুষের জীবনযাপনের জন্য  আল্লাহর বিধি বিধান কী। কোনটি তার জন্য হালাল আর কোনটি হারাম। একইসাথে একজন মুমিনের সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জীবন যাপনের জন্য শরীয়তের গুরুত্ব রয়েছে।

কেননা একজন ঈমানদারের উত্তম চরিত্র ও নৈতিকতার জন্য নানান শিক্ষা শরীয়তে বিবৃত হয়েছে। একইসাথে শরিয়তে রয়েছে  ইবাদতের পদ্ধতি ও নিয়ম কানুন। যার মাধ্যমে মুমিনগণ আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা করে। অতএব মানুষের সার্বিক জীবনাচরণে শরিয়তের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷

নবী-রাসুলের ভিন্ন ভিন্ন শরিয়ত 

ইসলাম হচ্ছে মানব জাতির জন্য সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। বর্তমান ইসলামের আগেও আল্লাহ বিভিন্ন নবী রাসূলদের মাধ্যমে ইসলামের পূর্ববর্তী সংস্করণ পাঠিয়েছিলেন। সেইসব পূর্ববর্তী সংস্করণে আল্লাহ প্রতিটি নবী রাসূলের উম্মতের জন্য আলাদা আলাদা বিধি বিধান সম্বলিত শরিয়ত প্রনয়ণ করেছিলেন।

আর এই শরিয়ত সর্বপ্রথম প্রবর্তিত হয় নুহ (আ.)-এর প্রতি। তাঁর পূর্ববর্তী কোনো নবী-রাসুলদের কোনো শরিয়ত ছিল না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, 

শরিয়ত কাকে বলে? শরিয়তের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, উৎস ও গুরুত্ব কী? শরিয়ত কত প্রকার শরিয়তের প্রধান উৎসের নাম কি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎসের নাম কি শরিয়তের তৃতীয় উৎসের নাম কি শরিয়তের চতুর্থ উৎসের নাম কি

আল্লাহ প্রতিটি নবী-রাসুলকে একই শরিয়ত দিয়ে পাঠাননি। তিনি নবী রাসুলদের উম্মতের অবস্থা, মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা ইত্যাদির উপর বিবেচনা করে শরিয়ত দিয়েছিলেন। যেকারণে একেক নবী-রাসুলের শরিয়ত একেক ধরনের ছিল।

শরিয়তের উৎস কি কি

ইসলামী শরিয়তের উৎস হচ্ছে চারটি। অর্থাৎ মূল চারটি উৎসের সমন্বয়ে ইসলামি আইনকানুন গুলো পরিচালিত। এই চারটি উৎস হলো – 

 

কুরআনের ছবি

পবিত্র কুরআন

আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমেই তাঁর মনোনীত ধর্ম ইসলামকে পরিপূর্ণ করেছেন। আর এই মাহা সম্মানিত কিতাব আল কুরআনের মাধ্যমেই তিনি তার পবিত্র বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আর তাই  মহা পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআনের-ই হচ্ছে মুসলমানদের জন্য ইসলামী শরিয়তের প্রধান উৎস। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনেই আল্লাহ মানুষের জন্য যা যা আদেশ ও নিষেধ দিয়েছেন তা-ই হচ্ছে ধর্মীয় আইন। আল্লাহ বলেন, 

শরিয়ত কাকে বলে? শরিয়তের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, উৎস ও গুরুত্ব কী? শরিয়ত কত প্রকার শরিয়তের প্রধান উৎসের নাম কি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎসের নাম কি শরিয়তের তৃতীয় উৎসের নাম কি শরিয়তের চতুর্থ উৎসের নাম কি

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, 

শরিয়ত কাকে বলে? শরিয়তের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, উৎস ও গুরুত্ব কী? শরিয়ত কত প্রকার শরিয়তের প্রধান উৎসের নাম কি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎসের নাম কি শরিয়তের তৃতীয় উৎসের নাম কি শরিয়তের চতুর্থ উৎসের নাম কি

অর্থাৎ পবিত্র কুরআন হচ্ছে সরাসরি আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র অবিকৃত ঐশি কিতাব। যার ভিত্তিতেই পৃথিবীর যাবতীয় বিচারিক কার্যক্রম ফয়সালা করতে হবে। আর এই কিতাবই রাসুল সাঃ এর উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। যা দ্বারা রাসুলুল্লাহ সা.  আল্লাহ মনোনীত একটি শরিয়ত এই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর এই শরিয়তের উপরই ভিত্তি করে কিয়ামতে  প্রতিটি মানুষের বিচার করা হবে। তাই  এই শরিয়তের যাবতীয় কর্মপন্থাকে প্রতিটি মুসলিমের অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। 

 

রাসুলের সুন্নাহ ও হাদিস 

পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা হচ্ছে রাসুল সাঃ এর হাদিস। কুরআন বুঝতে হলে অবশ্যই রাসুলের হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। রাসুলের দিকনির্দেশনা ছাড়া কখনোই কুরআন বুঝা এবং মানা সম্ভব নয়। তাই পবিত্র কুরআনের পর আল্লাহর রাসুলের সমগ্র জীবনের সুন্নাহ এবং হাদিস-ই হচ্ছে ইসলামি আইনকানুন তথা শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস।

অর্থাৎ রাসুল তাঁর নবুওয়তের জীবনে যা যা আদেশ নিষেধ এবং ইবাদতের যাবতীয়  রূপরেখা দিয়েছেন তার সবই হচ্ছে শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস। মোটকথা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আদর্শ এবং অনুসরণই হচ্ছে  ইসলামি শরিয়ত। তিনি দ্বীন ইসলামের যাবতীয় হুকুম আহকাম  যেভাবে যা করেছেন, নির্দেশ দিয়েছেন এবং করার অনুমতি প্রদান করেছেন তা-ই হচ্ছে ইসলামি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস। আল্লাহ বলেন, 

শরিয়ত কাকে বলে? শরিয়তের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, উৎস ও গুরুত্ব কী? শরিয়ত কত প্রকার শরিয়তের প্রধান উৎসের নাম কি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎসের নাম কি শরিয়তের তৃতীয় উৎসের নাম কি শরিয়তের চতুর্থ উৎসের নাম কি

অন্য আয়াতে বলেন,

শরিয়ত কাকে বলে শরিয়তের লক্ষ্য উদ্দেশ্য উৎস ও গুরুত্ব কী 6

একইসাথে আল্লাহ আরও বলেন, 

শরিয়ত কাকে বলে শরিয়তের লক্ষ্য উদ্দেশ্য উৎস ও গুরুত্ব কী 7

অর্থাৎ আল্লাহর পরবর্তী তথা কুরআনের যাবতীয় দিকনির্দেশনার পর আনুগত্য ও অনুসরণ করতে হবে রাসুলের (সা.)। রাসুল সাঃ যে কাজ যেভাবে করেছেন বলেছেন তা-ই তাঁর উম্মতের জন্য শরিয়ত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। এবং এই আনুগত্য অনুসরণ অনুকরণ ইত্যাদিতে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া যাবে না। মোটকথা রাসুল হচ্ছেন প্রতিটি মুসলিমের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। যেকারণে আল্লাহ সরাসরি তাঁর বান্দাদের আদেশ দিচ্ছেন, 

শরিয়ত কাকে বলে শরিয়তের লক্ষ্য উদ্দেশ্য উৎস ও গুরুত্ব কী 8

অর্থাৎ কেউ আল্লাহকে ভালোবাসতে চাইলে তাকে রাসুলের (সা.) অনুসরণ করতে হবে। তাহলে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন এবং ক্ষমা করে দিবেন। সুতরাং রাসুলুল্লাহর সুন্নাহ এবং সহিহ হাদিসই হচ্ছে শরিয়তের দ্বিতীয় স্তম্ভ। 

আজকাল অনেকেই আছেন যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে। কিন্তু রাসুলের সুন্নাহর কিংবা হাদিসের কোনো অনুসরণ নাই। তারা কুরআনের বাইরে হাদিস পর্যন্ত মানতে নারাজ। তাদের কাছে একমাত্র শরিয়ত হলো শুধুমাত্র কুরআন। যা কখনোই সঠিক ইসলাম নয়। শুধু কুরআন মানার কারণে তারা আজ মুনাফিক। আল্লাহ তাদের হিদায়াত দান করুক। 

ইজমা 

ইজমা একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে ঐক্যমত। রাসুল সাঃ পরবর্তী সময়ে ইসলামী শরিয়তের কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে তাঁর সাহাবীদের মতামত ও ঐক্যমত্যকে বলা হয় ইজমা। অর্থাৎ সময়ের সাথে যুগের পরিবর্তনে প্রতিনিয়তই মানুষের চাহিদা, চাল, চলনে, আচার, আচরণে বিভিন্ন পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। যেকারণে পরিবর্তিত সময়ে বিভিন্ন জটিল কঠিন সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে।

তাই রাসুল সাঃ পরবর্তীতে ইসলামে কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে, যার সমাধান কুরআন এবং হাদিসে সরাসরি পাওয়া যায় নি। তখন উদ্ভাবিত এইসব সমস্যা সমূহের সমাধান করার জন্য সাহাবীদের মধ্যে যে ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছিল তাকে বলা হয় ইজমা।

রাসুল (সা.) এর জীবদ্দশায়ও সাহাবিদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দেখা যেত। তখন রাসুলুল্লাহ সাঃ স্বয়ং উপস্থিত থাকার কারণে যেকোনো সমস্যা উদ্ভাবিত হলে সেটার সমাধানও তড়িৎ পাওয়া যেত। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওফাতের পর সাহাবিদের মধ্যে কোনো কোনো বিষয় নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে তাঁরা তা ইজমার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছান

যেমন: হযরত আবূ বকর (রা:) কে খলীফা হিসেবে নির্বাচিত করা, তার সময় কুরআন সংকলিত হওয়া, তার সময় ভণ্ড নবীদের বিরুদ্বে যুদ্ধ করা, উমর (রা:) এর খিলাফতকালে তারাবির সালাত জামায়াতের সাথে আদায় করা, উসমান (রা:) এর খিলাফত আমলে কুরআনকে নতুনভাবে সাজানো ইত্যাদি ছিল সাহাবিদের সম্মিলিত মত যাকে আমরা শরিয়তের তৃতীয় উৎস হিসেবে ‘ইজমাউস সাহাবা’ বলে থাকি।

ইজমাউস সাহাবা নিয়ে কেউ কখনোই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। কেননা সাহাবিদের স্বীকৃতি খোদ আল্লাহর রাসুল (সা.) দিয়ে গেছেন। তিনি  বলেছেন, 

শরিয়ত কাকে বলে শরিয়তের লক্ষ্য উদ্দেশ্য উৎস ও গুরুত্ব কী 9

সুতরাং তাঁদের ঐক্যমত্য হচ্ছে শরিয়তের আইন। এছাড়াও ইজমা হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর আলেমদের বা মুজতাহিদদের ইসলামী শরিয়তের কোনো একটি বিষয় এমন সিদ্ধান্ত। যে বিষয়ের উপর কুরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট দলীল নেই। সুতরাং ইজমা হলো এই ধরনের কোনো একটি বিষয়ে সমস্ত উলামায়ে কিরামের যেকোনো যুগে একত্রিত হয়ে ঐক্যমতে পৌছার নাম। 

কিয়াস

কিয়াস একটি আরবি শব্দ যার অর্থ হল অনুমান করা, পরিমান, পরিমাপ, তুলনা, ওজন, নমুনা, সাদৃশ্য করা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় কিয়াস হচ্ছে কোনো কিছুর আলোকে নতুন কোনো কিছুকে পরিমাপ করা বা তুলনা করা। 

শরীআতের যেসব হুকুম কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেইসব হুকুমের আলোকে নতুন কোনো বিষয় সম্পর্কে অনুরূপ হুকুম প্রদান করাকে শরী‘আতের ভাষায় কিয়াস বলা হয়।

অর্থাৎ পৃথিবীর আধুনিকায়নের যুগে নতুন নতুন বিষয় ও নতুন নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি আমাদের হতে হচ্ছে। যা অতীতে ছিলো না। তাই তা সরাসরি কুরআন, হাদিস কিংবা সাহাবীদের আমলেও উদ্ভাবিত নয়। ফলে এইসব বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার জন্য কুরআন হাদিস ও ইজমার আলোকে মাসালা মাসায়েল বের করাই হচ্ছে কিয়াস। 

মোটকথা বিবেক বুদ্ধির উপর নির্ভর করে যে দলীল পেশ করা হয় তাকে কিয়াস বলে। যে বিষয়ে কুরআন এবং হাদিস থেকে সুস্পষ্ট কোনো দলীল পাওয়া যায় না তখন কুরআন, হাদিস এবং ইজমার নির্দেশনা অনুযায়ী যে আন্দাজ বা অনুমান করা হয়ে থাকে সেই অনুমান বা আন্দাজকেই কিয়াস বলা হয়।

এই বিষয়ে ইমাম মালিক (র.) বলেন, 

শরিয়ত কাকে বলে শরিয়তের লক্ষ্য উদ্দেশ্য উৎস ও গুরুত্ব কী 10

ইমাম শাফিঈ (র.) বলেন, 

শরিয়ত কাকে বলে শরিয়তের লক্ষ্য উদ্দেশ্য উৎস ও গুরুত্ব কী 11 1

ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর মতে, 

শরিয়ত কাকে বলে শরিয়তের লক্ষ্য উদ্দেশ্য উৎস ও গুরুত্ব কী 12

সুতরাং কিয়াস হচ্ছে এমন বিধিবিধান বা আইনকানুন যা কোনো না কোনো আইনের ছত্রছায়ায় গঠিত। আর কিয়াস এমনভাবে বের করা হয় যাতে কুরআন হাদিস এবং সাহাবিদের ইজমাকে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় বা কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধী না হয়।

কিয়াস ইসলামি শরিয়তের মুল তিনটি উৎস কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার দলিলের উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত। তাই এইসবের আলোকে নতুন উদ্ভাবিত সমস্যার সমাধান নির্ণয় করাই হচ্ছে কিয়াস। আর এই কিয়াসকে ইসলামি শরীয়াতের চতুর্থ উৎস হিসাবে ধরা হয়। 

উদাহরণ স্বরূপ কোকেন, ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও আফিমসহ অনেক মাদকদ্রব্যই পৃথিবীতে নিত্যনতুন  আবিষ্কার হচ্ছে। যা অতীতে ছিলো না। তাই সরাসরি এ সকল মাদক দ্রব্য হারামের কথা কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা কোথাও নেই। কিন্তু এর ব্যাপারে মুলনীতি বর্ণিত আছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, 

শরিয়ত কাকে বলে শরিয়তের লক্ষ্য উদ্দেশ্য উৎস ও গুরুত্ব কী 13

সুতরাং কুরআনে বলা হচ্ছে মদ হচ্ছে ঘৃণ্য বস্তু। এর কারণ কী? এর কারণ তা নেশার উদ্রেক করে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান নষ্ট করে দেয়। তাই তা হারাম। এখন পরবর্তীতে মুজতাহিদ্গণ চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে এটি আবিষ্কার করলেন যে, হিরোইন, গাজা, আফিম ইত্যাদি মদের ন্যায় একটি খারাপ ও জঘন্য কাজ, যা মানুষের ভিতর নেশার উদ্রেক সৃষ্টি করে তাই তা মদের ন্যায় হারাম বলেই  বিবেচিত হবে।

আরেকটি দৃষ্টান্ত আমরা পাই, যখন  হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মুআয ইবন জাবাল (রা)-কে ইয়ামানের শাসনকর্তা হিসাবে পাঠান। তখন  হযরত মুআয ইবন জাবাল (রা)-কে রাসুল সাঃ প্রশ্ন করেছিলেন, বিচার আচারের ব্যাপারে যদি কখ‌নো কোনো নতুন সমস্যার উদ্ভব হলে তিনি (মুয়ায) এর প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন? 

তখন তিনি (মুয়ায) বলেছিলেন, আমি  কুরআনের অনুসরণ করব। এরপর তাকে রাসুল সাঃ আবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “যদি কুরআনে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকে?”

তখন মুআয (রা) উত্তর দিয়েছিলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর (হাদিসের) অনুসরণ করবেন। আর যদি রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহর দ্বারা ফায়সালা করতে না পারলে তিনি তাঁর নিজস্ব বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ

করে এর ব্যবস্থা নিবেন। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) তাঁর জবাবে অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন। এবং তাঁর জন্য দুআ করেন।

অপর একটি হাদিসে এসেছে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) হযরত আবু মূসা আল-আশআরী (রা.) কে বললেন, “আল্লাহর কিতাব (কুরআন) অনুযায়ী বিচার কর। তোমার যা প্রয়োজন, তা যদি এতে না থাকে তবে তেমাদের নবী (সা.)- এর সুন্নাহ হতে খোঁজ কর। যদি সেখানেও না পাও তখন নিজের মতামত ব্যক্ত কর।”

 

এই হিসাবে মুতাহিদ ইমামগণ লিখিত নীতিমালার উপর ভিত্তি করে কিয়াস গ্রহণ করতেন-

  • কিয়াস কখনোই কুরআন-হাদিস ও ইজমার পরিপন্থী হবে না।
  • কুরআন-হাদিস ও ইজমা দ্বারা সুনির্দিষ্টকৃত কোনো আইনের মূলনীতি বিরোধী অন্য কোনো আইন তৈরি করা কিয়াসের আওতাভূক্ত হবে না। 
  • কিয়াসের মূলনীতি মানুষের জ্ঞানের পরিসীমার মধ্যে থাকতে হবে।
  • যে সকল সমস্যার সমাধান আগেই কুরআন, হাদিস ও ইজমা দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছে, ঐসকল বিষয়ে কিয়াস কখনোই প্রযোজ্য হবে না।

এইসব কারণে কিয়াসকে অনেকে ইজতিহাদও মনে করেন। বিভিন্ন মুজতাহিদগণ একই বিষয়ে তাদের মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন রায় প্রদান করেন। যা বিভিন্ন মাযহাবের আলোকে বিভিন্ন হয়ে থাকে। এইসব মাসয়ালাগত রায়কে ইজতিহাদ বলা হয়। ইজতিহাদগত বিষয় গুলো শুদ্ধ হলে দ্বিগুণ সওয়াব। আর ভুল হলেও সওয়াব রয়েছে। 

উপসংহার 

শরিয়তের উপরোক্ত চারটি মূল উৎস ছাড়া দ্বীন ইসলামে শরিয়তের আর কোনো উৎস নেই। যদি কেউ এই চারটি মূল উৎস ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে ইসলামি শরিয়তে নতুন কিছু যোগ করার চেষ্টা করে বা নতুন কোনো হুকুম আহকাম পালন করে তবে তা হবে বিদআত। কেননা ইসলামে শরিয়তের মূল এই চারটি উৎস ছাড়া আর কোনো উৎস নেই, সেখান থেকে শরিয়তের নতুন কোনো হুকুম আহকাম প্রবর্তিত হবে।

আর তাই রাসুলুল্লাহ সাঃ ও সাহাবিদের থেকে প্রমাণিত নয় এমন কোনো ঈমান আমল ইবাদত কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কেউ যদি স্বপ্ন, কাশফ, ইলহাম বা কোনো বুজুর্গ পীর অলি আউলিয়ার আদেশ নিষেধ ইত্যাদিকে শরিয়ত মনে করে তাহলে তা ইসলাম স্বীকৃত নয়। কেউ যদি শরিয়ত বহির্ভূত এমন কোনো ঈমান আমল আকিদা পোষণ করে তাহলে তা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক এবং পথভ্রষ্টতার লক্ষণ হবে।

 

শরিয়তের বিভিন্ন পিডিএফ বই

  • শরিয়ত ও আত্মশুদ্ধি, মাওলানা মুতীউর রহমান
  • শরিয়ত ও আধুনিক বিজ্ঞানে দাড়ি, মাওলানা আনোয়ার বিন আখতার
  • শরিয়ত, তরিকত, হকিকত ও মা’রিফতের আলোকে, মোঃ আবুল কাসেম
  • কোরান বনাম শরিয়ত, ম. জামিলুল বাসার
  • ইসলামী ব্যাংকিং-এ শরীয়াহ, মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান
  • মৃত ব্যক্তির জন্য ইসলামী শরীয়াহ কী বলে, মুহাম্মদ আব্দুর রহমান খন্দকার
  • উলূমুল আরাবিয়্যাহ ওয়াশ শরীয়াহ, মাওলানা মোহাম্মদ মোহিব্বুল্লাহ আজাদ

প্রশ্নোত্তর 

শরিয়া আইন বলতে কি বুঝায়

শরীয়া আইন হলো ইসলামের বিধি বিধান সম্বলিত আইনকানুন। যার মূল উৎস হলো  পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন এবং রাসুল সাঃ এর সুন্নাহ ও হাদীস। বিশেষকরে রাসুল সাঃ তার নবুওয়াত প্রাপ্তির পর যেসব আদেশ নিষেধ উপদেশ, সম্মতি, মৌন সম্মতি, অসম্মতি, অনুমতি ইত্যাদি দিয়েছেন। সেইসব কিছুর সমষ্টির আলোকে যেসব আইনকানুন সৃষ্টি হয়েছে তাদেরকে বলা হয় শরিয়া আইন।

শুধুমাত্র কুরআন, সুন্নাহ নয়, কুরআন সুন্নাহর বাইরেও সময়ের প্রয়োজনে যুগোপযোগী কোনো বিষয়ের উপর সাহাবা ও মুজতাহিদ ইমামদের ইজমাকেও শরিয়া আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।   মোটকথা শরীয়া হলো একজন মুসলমানের জীবনাচরণের সেই পদ্ধতি যা তাকে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত মেনে চলতে হয়। 

ইসলামী আইন ও আধুনিক আইনের মধ্যে পার্থক্য

 

ইসলামী আইন ও আধুনিক আইনের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য গুলো রয়েছে। 

 

  • ইসলামী আইন ঐশ্বরিক তথা মহান আল্লাহর হুকুম ও রাসুল সাঃ এর আদেশ নিষেধ নির্দেশ ইত্যাদিই হলো ইসলামী আইন। সাধারণ  মানুষের নিজস্ব কোনো মতামতের অস্তিত্ব শরিয়া আইনের মধ্যে নেই। 

আধুনিক যুগের সকল আইনই হচ্ছে ধর্ম নিরপেক্ষ। কিন্তু শরিয়া আইন ধর্মনিরপেক্ষ নয় বরং ইসলাম সাপেক্ষে। তাই মানব সমাজে প্রচলিত সকল আইনই মানবসৃষ্ট।

 

  • ইসলামী আইনে নৈতিক বিধানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তাই নৈতিকতা ও আইনের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়না। কেননা শরিয়া আইন হচ্ছে আল্লাহর আদেশ নির্দেশ তথা ধার্মিকতা ও নৈতিকতার ওপর ভিত্তি প্রাপ্ত।

অন্যদিকে, দুনিয়াবী আইনে নৈতিক বিধান ও আইনের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এখানে নৈতিকতার কোনো প্রাধান্য নেই। এখানে শুধু আইনগত বিধানই গ্রহণযোগ্য। যেকারণে আধুনিক দুনিয়াবী আইনে পার্থিব ও দর্শন অধিক সংযুক্ত।

  • ইসলামী শরিয়া আইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের দুনিয়াবী ও আখিরাতের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করা।

কিন্তু, আধুনিক যুগের আইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধু সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা। যা পরলোকের সাথে সম্পূর্ণ  সম্পর্কহীন এবং যার সম্পূর্ণ সম্পূর্ণরূপে জাগতিক।

  • ইসলামী শরিয়া আইনে ইসলামী আইন হচ্ছে একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কর্তৃক রাসুলের মাধ্যমে প্রেরিত এবং প্রতিষ্ঠিত আদেশ ও নিষেধ।

কিন্তু আধনিক আইনতত্ত্ব অনুযায়ী দুনিয়াবী আইন হচ্ছে সামাজিক জীব, পারিবারিক সম্পর্ক ও রাষ্ট্রীয় নাগরিক হিসেবে মানুষের আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণের বিধিন যা রাষ্ট্র কর্তৃক প্রয়োগ করা হয়।

  • ইসলামী আইন সামাজিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক ইত্যাদির প্রয়োজনের উপর নির্ভরশীল নয়। তাই শরিয়া আইনের পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা বাতিলকরণ কখ‌নোই সম্ভব নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই আইন অনুসারেই সকলকে পরিবর্তিত হতে হবে।
  • অন্যদিকে, আধুনিক দুনিয়াবী  আইন সামাজিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ব্যবস্থার উপর  নির্ভরশীল। আর এই কারণে  সময়ের প্রয়োজনে জীবনের তাগিদে এ আইন পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও বাতিলযোগ্য।
  • ইসলামী শরিয়া আইন কেউ  ভঙ্গ করলে তার ইহলৌকিক শাস্তিুর ভয় থাকে না তবে তাকে পরলৌকিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তবে যেসব দেশে শরিয়া আইন চালু আছে সেসব দেশে শরিয়া আইন ভঙ্গ করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

কিন্তু আধুনিক আইনের বিধি বিধান লঙ্গন করলে আইন আদালতের মাধ্যমে তার জন্য শাস্তি পেতে হবে।

  • ইসলামী শরিয়া আইন কোন একটি  নির্দিষ্ট দেশের জন্য নির্ধারিত কিংবা সীমাবদ্ধ নয়। বরং সমগ্র পৃথিবীর সকল মানব জাতির জন্য এই আইন  প্রযোজ্য।

কিন্তু আধুনিক আইন বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট রাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। 

  • ইসলামী শরিয়া আইন সুনির্দিষ্ট রাষ্ট্র ভিত্তিক নয়

কিন্তু আধুনিক আইন বিভিন্ন রাষ্ট্রের জন্য বিভিন্ন হয়ে থাকে। 

শরিয়ত কত প্রকার

শরিয়তের হুকুম আহকাম গুলোকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। যথা,

  • ফরজ
  • ওয়াজিব
  • সুন্নাত
  • নফল
  • মুস্তাহাব
  • মুবাহ
  • হালাল 
  • হারাম 
  • জায়েজ
  • নাজায়েজ ইত্যাদি

শরিয়তের প্রধান উৎসের নাম কি 

শরিয়তের প্রধান উৎসের নাম হল আল্লাহর কিতাব তথা পবিত্র কুরআন মাজীদ

শরিয়তের দ্বিতীয় উৎসের নাম কি

শরিয়তের দ্বিতীয় উৎসের নাম হচ্ছে রাসুল সাঃ এর সুন্নাহ বা হাদিস (সহিহ) 

শরিয়তের তৃতীয় উৎসের নাম কি

শরিয়তের তৃতীয় উৎসের নাম হচ্ছে ইজমা 

শরিয়তের চতুর্থ উৎসের নাম কি

শরিয়তের চতুর্থ উৎসের নাম হচ্ছে কিয়াস 

 

   


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

Author: সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী জন্ম চট্টগ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখেছেন। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস। বর্তমানে বেসরকারি চাকুরিজীবী। তাঁর ভালোলাগে বই পড়তে এবং পরিবারকে সময় দিতে।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply