প্রবৃত্তির অনুসরণ কী? প্রবৃত্তির অনুসারীদের পরিনতি
প্রবৃত্তির অনুসরণ তথা খেলায় খুশির অনুসরণ মানুষের একটি নিকৃষ্ট বদ অভ্যাস। যা একজন মানুষকে শয়তানের বাধ্য গোলামে পরিনত করে। তাই প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে প্রতিটি ঈমানদারকে বেঁচে থাকতে হবে। কেননা প্রবৃত্তির অনুসরণ যেকোনো মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে ধাবিত করে। যার শেষ গন্তব্য হচ্ছে জাহান্নাম। তাই আমাদের উচিত হবে প্রবৃত্তির অনুসরণ সম্পর্কে জানা এবং এর অনুসারীদের কী পরিনতি হয় সে সম্পর্কে জানা। যাতে আমরা আল্লাহর গজব থেকে বেঁচে তাঁর রহমত প্রাপ্ত হতে পারি।
প্রবৃত্তির অর্থ কী
বাংলা অভিধানে প্রবৃত্তি শব্দের অর্থ দেওয়া হয়েছে প্রবৃত্তি /বিশেষ্য পদ/ নিযুক্ত বা রত হওয়া; অভিরুচি, স্পৃহা; ঝোঁক, প্রবণতা ইত্যাদি। অর্থাৎ কোনো কিছুর প্রতি অভিরুচি হওয়া বা স্পৃহা জন্মানো কিংবা কোনো কিছুর প্রতি ঝুঁকে যাওয়াই হচ্ছে প্রবৃত্তি। সহজ ভাষায় প্রবৃত্তি অর্থ হলো খেয়াল খুশি। কোনো কিছুকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের খেয়াল খুশিমত চলা মানে হচ্ছে প্রবৃত্তি।
ইসলামের আলোকে প্রবৃত্তি
প্রবৃত্তি বা খেয়াল-খুশির আভিধানিক অর্থ যদি আমরা করি। তাহলে এর অর্থ করতে হবে আরবি থেকে। আরবি “হাওয়া” শব্দের অর্থ হলো, কোনো কিছুকে ভালবাসা, বা কোনো কিছুর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা। কিংবা কাম্য বস্তু পাওয়ার প্রবল বাসনা জাগা।
এই হিসাবে “হাওয়ার” বাংলা প্রতিশব্দ হিসাবে পাওয়া যায় মনের খেয়ালখুশি, নিয়ম ছাড়া কিংবা অনিয়ম তান্ত্রিক চলা, স্বেচ্ছাচারিতা করা, খামখেয়ালি মনোভাব, অযৌক্তিক ইচ্ছা পোষণ করা, কামনা, বাসনা, প্রবৃত্তি, কুপ্রবৃত্তি, ভোগের বস্তুকে বেহিসাবী ভাবে ভোগ করা ইত্যাদি।এই হিসাবে আরবী هَوٰى শব্দটি هَوِىَ ক্রিয়ার ধাতু। যার আভিধানিক অর্থ হল, কোনো কিছুকে ভালবাসা, কাম্য বস্তুকে পাওয়ার প্রবল আগ্রহ ও বাসনা জাগা। (আল-মুগরাব ফী তারতীবিল মু‘রাব ২/৩৯২)
আমরা যদি প্রবৃত্তিকে তথা প্রবৃত্তির অনুসরণকে ইসলামের আলোকে চিন্তা করি, তাহলে এর পারিভাষিক অর্থ দাঁড়াবে, ইসলামী শরিয়তের অনুমোদন ছাড়াই দুনিয়াবী উপভোগ্য জিনিসের প্রতি মনের যে অন্যায় ঝোঁক তৈরী হয় তাকে খেয়ালখুশি বা প্রবৃত্তি বলে।
আরো সহজ করে যদি আমরা বলি, তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে, কোনো মানুষ যখন শরিয়তের বাইরে গিয়ে নিজের ইচ্ছামত ধর্মীয় অনুশাসন গুলো মানবে কিংবা যা মানার দরকার তা মানবে না এবং ধর্মীয় যাবতীয় কিছুতে শরিয়তকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয় তখন তা হয় প্রবৃত্তির অনুসরণ।
একইভাবে কোনো মানুষ চাইলেই ধর্মকর্ম না করে নিজের ইচ্ছামত চলতে পারে। আল্লাহর হাজারো নিদর্শন দেখেও আল্লাহকে বিশ্বাস না করে নিজের মনের মতো চলাই হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসরণ বা খেয়াল খুশির অনুসরণ। অথবা আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করার পরও আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্মকান্ড গুলো মানলেন না। নিজের ইচ্ছামতো জীবনযাপন করলেন এটাই হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসরণ।
আমরা যদি একটু উদাহরণসহ আলোচনা করি তাহলে হবে, কারো মন চাইলেই সে একটুখানি মদ খেল। মন চাইলেই প্রতিহিংসামূলক অন্যের সম্পদ জোরপূর্বক দখল করে নিল। কারো মন চাইলেই মনের কুপ্রবৃত্তির লালসায় ব্যভিচারের মতো পাপ কাজে তিনি জড়িয়ে গেলেন। মন চাইলেই আরো বেশী আয়ের আশায় ঘুষ নিলেন। টাকা সম্পদ বৃদ্ধির আশায় সুদ নিলেন। মন চাইলেই সালাত আদায় করলেন না হয় করলেন না। যখনকার সালাত তখন আদায় করলেন না। কোনো কারণ ছাড়াই জামাতে সালাত আদায় করলেন না। মন চাইলেই আপনার ইচ্ছা এবং সুবিধামতো ধর্মকর্ম করলেন ইত্যাদি।
এইসব ছাড়াও সত্য জানার পরও পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণে যারা ভুল পথে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ইবাদত বন্দেগী ইত্যাদি পালন করে। কিংবা যারা জেনেবুঝে ইসলামের সঠিক পথে না থেকে ভুল পথে থাকেন। অথবা যাদেরকে ইসলামের সঠিক পথে ডাকার পরও নিজেদের মনগড়া বানানো ইসলামের পথকে আঁকড়ে ধরে, তারা হচ্ছেন প্রবৃত্তির অনুসারী।
মোটকথা মনে যা চায় তা ই করে মনের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া কিংবা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের নিয়ম পদ্ধতি কিছুই তোয়াক্কা করে নিজের মতো জীবনযাপন করা হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসরণ। আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করাই হচ্ছে ইহকাল পরকাল উভয়ই ধ্বংস হওয়া।
প্রবৃত্তির অনুসারী কারা
পবিত্র কুরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তিকে আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবৃত্তির অনুসারী হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এখন আমরা সেইসব প্রবৃত্তির অনুসারীদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।
সত্য অস্বীকারকারীরা
যারা সত্যকে অস্বীকার করে তারা মূলত প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। অধিকাংশ মানুষ জাগতিক কারণে সত্য গ্রহণে আগ্রহী নয়। কেননা সত্য মেনে নিতে হলে কখনোই খেয়াল খুশীর অনুসরণ করা যায় না। যেকারণে সত্য ব্যাতিরেকে নিজেদের খেয়াল খুশির অনুসরণ কখনোই ভালো নয়। আর এই জন্যই আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ যারা সত্যকে অস্বীকার করে নিজেদের মন মত চলে তাদেরকে আল্লাহ শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন। কেননা একটি নির্দিষ্ট সময় পর ঠিকই তারা তাদের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ধরাশায়ী হবেন।
এই আয়াতের ভিত্তিতে আমরা আমাদের সমাজের অধিকাংশ সুফিবাদী সুন্নি মুসলমানদের দেখি, যারা পীরর অলি, আউলিয়াদের দেখানো পথকেই ইসলাম ধরে বসে আছে। তারা কখনোই তাদের ধর্মীয় কর্মকান্ডকে কুরআন সুন্নাহর মাপকাঠি দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে না। তাদের যতই কুরআন সুন্নাহর সত্যর দিকে আহবান করা হোক না কেন, তারা তাদের খেয়াল খুশি মতো পূর্বপুরুষদের অনুসরণ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সুতরাং তারা সত্যকে গ্রহণ না করার কারণে প্রবৃত্তির অনুসারীতে রূপান্তরিত হয়েছে।
দলিল বিহীন অনুসারী
এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যারা কোনো কিছুর দলিল নিদর্শন বা প্রমাণ ছাড়াই ধর্মীয় অনুসরণ করে। তারা যা করছে তার স্বপক্ষে না তাদের কোনো নিদর্শন আছে, না তাদের কোনো প্রমাণ আছে। শুধু পূর্বপুরুষরা করে গেছে বলেই তারা করে যাচ্ছে।
এটা ইসলাম ব্যতীত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য। ঠিক তেমনি মুসলমানদের মধ্যেও এমন এমন লোক আছে যারা কুরআন হাদিসের দলিল ছাড়াই এমন সব ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ইবাদত বন্দেগীর চর্চা করে যার কোনো প্রমাণই তাদের কাছে নেই। তাদের বিষয়ে আল্লাহ বলেন,
উপরোক্ত আয়াত মক্কার মুশরিকদের জন্য নাযিল হলেও, বর্তমান উপমহাদেশের সুফিবাদীদের জন্য এই আয়াত খুবই প্রযোজ্য। কেননা তারা তাদের পীর আউলিয়াদের থেকে এমন এমন ঈমান আকিদার চর্চা করে এবং বিশ্বাস করে। যার কোনো প্রমাণ কুরআন হাদীসে নেই। কিন্তু তারা নিজেদের মনমতো এইসব তৈরি করে তাদের অনুসারীদের মধ্যে প্রচার প্রসার করেছে। যা সুস্পষ্ট প্রবৃত্তির অনুসরণ ছাড়া কিছুই নয়।
মন্দ কাজে আকৃষ্টরা
ভালো মানুষ ভালো কাজের অনুসরণ করবে আর মন্দ মানুষ মন্দ কাজে। আর তাই যারা ভালো কাজের পরিবর্তে মন্দ কাজকে নিজেদের নেশা ও পেশা হিসাবে নিবে এবং মন্দ কাজে আকৃষ্ট হবে, তারা হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসারী।
আর তাই প্রবৃত্তির অনুসরণ নিষিদ্ধ হওয়ার পরও অধিকাংশ মানুষ তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণে জীবনযাপন এবং ধর্মকর্ম পালন করে। আর আল্লাহও তাদের চোখের সামনে এই মন্দ কর্মগুলো খুবই শোভনীয় করে দেখান। যাতে তারা তাদের এই প্রবৃত্তির কর্মগুলোকে অপছন্দ না করে। সেইসাথে তারা যেন এইসব কুকর্মের মধ্যে সন্তুষ্টি নিয়ে ঘুরপাক খায়। আল্লাহ বলেন,
উপরোক্ত আয়াতের অনুসারে যারাই স্বাভাবিক জীবনযাপনে ইসলামের বাইরে গিয়ে আধুনিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে পাশ্চাত্যের অনুসরণ করবে তারা হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসারী। শয়তান তাদের ইসলাম বিমুখী প্ররোচনা দিয়ে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে। যাতে তারা ইসলামকে পশ্চাৎপদ মনে করে আধুনিকতাকে আঁকড়ে ধরে। শয়তানের এইসব মরিচিকার ভেলকিবাজি সেইসব মানুষের চোখে শোভনীয় মনে হয়। এবং তারা ইসলাম বিসর্জন দিয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এছাড়াও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যারা সহীহ্ ইসলামের পরিবর্তে নিজস্ব মনগড়া রীতিনীতিতে ইসলাম পালন করছে তারাও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তারা মনে করছে যে, তারা যা করছে তা সবই সঠিক। কেননা তাদের চোখে তা খুবই চমৎকার এবং ভালো বলে হচ্ছে।
আসলে তারা বুঝতে পারছে না যে, শয়তান তাদের চোখে এইসব চমৎকার এবং শোভনীয় করে উপস্থাপন করছে। যাতে তারা মনে করে এইসব আসলেই বুঝি সওয়াবের কাজ। কিন্তু না তা কখনোই নয়। কেননা তারা যা করছে তা কখনোই কুরআন হাদিসের আলোকে নয়। যেমন উপমহাদেশের সুফি সুন্নিরা ইসলামের যেসব আমল করে তা একপ্রকার প্রবৃত্তির অনুসরণ।
কুরআন বর্জনকারী
যারা কুরআনকে বর্জন করে তারা নিজেদের মনমত খেয়াল খুশির মত চলে তারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। কেননা পবিত্র কুরআনের আইনকানুন বিধি নিষেধ ছাড়া কখনোই নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ধর্মকর্ম বিচার ফায়সালা কোনো কিছুই করা যাবে না। যেকারণে আল্লাহ বলেন,
সুতরাং যারাই কুরআন সুন্নাহর অনুসরণ না করে নিজেদের উদ্ভাবিত পথে ধর্মকর্ম ইত্যাদি পালন করে তারা কখনোই সুপথ প্রাপ্ত হবেনা। আমাদের উপমহাদেশের ইসলামের নামে কুরআন সুন্নাহর বাইরে অসংখ্য আচার অনুষ্ঠান পালিত হয়। যা কখনোই আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল প্রতিষ্ঠিত করে যাননি। এসবই কিছু মানুষের উদ্ভাবন। যারা এইসব অনুসরণ করছে তারা প্রবৃত্তির অনুসারীরা।
বেনামাজীরা
যারা ঈমান আনার পর সালাত নিয়ে অলসতা করে তারা হচ্ছে মুনাফিক। আর যারাই নিজেদের সালাত নষ্ট করে বা নিয়মিত সালাত আদায় করে না তারা হচ্ছে কুপ্রবৃত্তিপরায়ণ। এইসব মানুষ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
ইসলামে সালাত একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ঈমানের পরিচায়ক। সুতরাং যারা সালাত নিয়ে খামখেয়ালিপনায় লিপ্ত থাকে তারা কুপ্রবৃত্তির অনুসারী। আর তারাই হলো পথভ্রান্ত যা তারা অচিরেই জানতে পারবে।
ইসলাম যেখানে সালাত বা নামাজকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, সেখানে সুফিবাদে সালাত বা নামাজের কোনো গুরুত্বই নেই। সুফিবাদের অনুসারীরা সালাতকে খামখেয়ালিপনায় পরিনত করেছে। তাদের আকিদা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবো।
সত্য দ্বীনকে অস্বীকারকারী
আল্লাহর প্রেরিত দ্বীন ইসলাম কখনোই প্রবৃত্তির অনুসরণে চলে না। যদি মানুষের প্রবৃত্তির অনুসরণে ইসলামের বিধি নিষেধ নাযিল হতো, তাহলে এই পৃথিবী অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেতো। আল্লাহ বলেন,
উপরোক্ত আয়াতে মক্কার মুরিকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণে ধর্মকর্ম পালন করাকে পছন্দ করে। তারা সুনির্দিষ্ট কোনো কিছুর অনুসরণকে পছন্দ করে না। যখন যা বা যাকে ভালো লাগে তখন তা কিংবা তার উপাসনা করতে পছন্দ করতো।
এখানে সত্য বলতে দ্বীন ও শরীয়তকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, দ্বীন বা ধর্ম যদি তাদের ইচ্ছানুসারে অবতীর্ণ হত, তাহলে এ কথা স্পষ্ট যে, পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত নিয়ম-শৃঙ্খলা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত। যেমন তাদের ইচ্ছা এক উপাস্যের পরিবর্তে অনেক উপাস্য হোক। যদি সত্যই এ রকম হত, তাহলে কি বিশ্ব-জাহানের নিয়ম-শৃঙ্খলা ঠিক থাকত? অনুরূপ তাদের নিত্যনতুন অন্যান্য ইচ্ছা ও বাসনাও রয়েছে।
উল্লিখিত আয়াতের ভিত্তিতে উপমহাদেশের সুফিরাও তাদের মনমতো দ্বীন ইসলাম পালন করে। তাদের ঈমান আকিদা গুলো সরাসরি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কুরআন সুন্নাহর বিরোধী। তারা ইলহাম, স্বপ্ন ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ থেকে দ্বীন ইসলামের নতুন নতুন ঈমান আকিদা আমল ইত্যাদি পেয়ে থাকে বলে দাবি করে।
যদিও দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ। তবুও সেখানে বিভিন্ন উৎস থেকে নিত্যনতুন ঈমান আকিদার সন্নিবেশ ঘটায় সুফিবাদীরা। যা তাদের কামনা বাসনার প্রতিফলন। তাদের এহেন কর্মকান্ডে সুফিরা ইসলামের নামে জগাখিচুড়ির ধর্ম পালনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাদের সম্পর্কে জানতে সুফিদের ঈমান আকিদা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
আল্লাহ ছেড়ে অন্য উপাস্য গ্রহণ
এক আল্লাহ ছেড়ে অন্য উপাস্য গ্রহণ করাই হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। কেননা সকল ইবাদতের মালিক হচ্ছে আল্লাহ। যারাই প্রবৃত্তির তাড়নায় আল্লাহকে ছেড়ে অন্যদের আল্লাহর সমকক্ষ মনে করে ইবাদত করে তারা সুস্পষ্ট পথভ্রান্ত। আল্লাহ বলেন,
সুতরাং যারাই খেয়াল খুশীর অনুসরণে চলে পথভ্রষ্ট হয়, তাদের পথ কখনোই সুপথ নয়। উপমহাদেশের সুফিরা তাদের পীর আউলিয়াদের এমনভাবে মান্য করে যেন তারা ওহীপ্রাপ্ত নবী রাসুল। যেখানে তাদের আকিদা গুলো সরাসরি কুরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক সেখানে তাদের অনুসারীরা এইসব পীর আউলিয়াদেরই একপ্রকার ইবাদতে ব্যস্ত।
সুফিরা এমন এমন সব আকিদা পোষণ করে যা আল্লাহর তাওহিদের সাথে সাংঘর্ষিক। এইসব আকিদা একজন মুসলমানকে শিরক কুফর এবং বিদআতের দিকে ঠেলে দেয়। যা একজন প্রকৃত মুমিনের ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক।
জ্ঞানহীনরা
যাদের কোনো বিষয়ে জ্ঞান থাকে না তখন তারা ঐ বিষয়ে খেয়াল খুশির অনুসরণ করে। অর্থাৎ যারা জ্ঞানহীন তারাই স্বাভাবিকভাবেই প্রবৃত্তির অনুসারী। আল্লাহ বলেন,
উপরোক্ত আয়াতে কয়েকটি বিষয় আল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন। একটি হচ্ছে, আল্লাহ মানবজাতির জন্য দ্বীনের একটি সুনির্দিষ্ট পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। এবং প্রতিটি মুমিনকে সেই পথেই চলতে হবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, যারা দ্বীনের পথ সম্পর্কে অবগত নয় অর্থাৎ দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানহীন কিংবা দ্বীন জানার সম্পর্কেও আগ্রহী নয় তাদের অনুসরণ কখনোই করা যাবে না।
অথচ আমাদের উপমহাদেশে ইসলামের নামে সুফিবাদী সুফি সুন্নি নামে যা চালু আছে, তার মূলেই রয়েছে অজ্ঞতা। তারা এবং তাদের অনুসারীরা কখনোই কুরআন সুন্নাহকে দ্বীনের মাপকাঠি হিসাবে মেনে চলে না। তারা তাদের পীর অলি আউলিয়া বুজুর্গদের দ্বীনের উৎস এবং মাপকাঠি হিসাবে ধরে নেয়। যা জ্ঞানহীনতার পরিচায়ক।
দ্বীন সম্পর্কে এইজাতীয় মনমানসিকতাই প্রবৃত্তির বা খেয়াল খুশির অনুসরণ। আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনের পরিবর্তে এই খেয়াল অনুসরণই ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যা আল্লাহ নিজেই তাঁর রাসুল (সা.) কে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
বিদআতীরা
আল্লাহ তাঁর রাসুলকে সতর্ক করেছেন যে, যা আল্লাহ নাযিল করেননি তা কখনোই পালন যোগ্য নয়। যদিও আল্লাহ বিরোধীরা সাক্ষ্য দেয় তবুও। কেননা যারাই আল্লাহ বিরোধী, পরকালে অবিশ্বাসী এবং শিরককারী তারাই হচ্ছে কুপ্রবৃত্তির অনুসারী। আল্লাহ বলেন,
উপরোক্ত আয়াত থেকে বুঝা গেলো, যা আল্লাহ নাযিল করেননি তা করা, পরকালে বিশ্বাস না করা, আল্লাহর সাথে শিরক করা ইত্যাদি যারা করে তারা মূলত প্রবৃত্তিপরায়ণ। তাদের সাথে কখনোই কোনো সংস্রব রাখা যাবে না।
এই হিসাবে যারা ইসলামের নামে নতুন ইবাদতের আকিদা ও আমল সৃষ্টির মাধ্যমে বিদআত সৃষ্টি করে। তারাও মূলত প্রবৃত্তিরই অনুসারী। কেননা এইসব বিদআত আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সৃষ্টি করেননি। এইসব বিদআত পরবর্তীতে বিভিন্ন পথভ্রষ্ট বুজুর্গরা তৈরী করে গেছেন। তারা মুখে রাসুলের প্রতি কৃত্রিম ভালোবাসা দেখায়। কিন্তু তারা তাঁর আদর্শকে মানে না। অথচ রাসুলের আদর্শ এবং অনুসরণই হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম।
আল্লাহ থেকে বিচ্যুতরা
প্রবৃত্তির অনুসরণ কখনোই মানুষকে সৎপথ দেখায় না। যেকোনো প্রবৃত্তিই মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। এই ধ্বংস তাকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দেয়। যারাই প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারাই নিশ্চিতভাবে আল্লাহ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। আর একইভাবে আল্লাহ থেকে বিচ্যুতরাই প্রবৃত্তির অনুসারী। তাই আল্লাহ বলেন,
এই আয়াতে আল্লাহ হযরত দাউদ (আ.) কে উদ্দেশ্য করে কথা বললেও, মূলত কোনো নবী রাসুলই পাপী নয় এবং তাদের দ্বারা কখনোই পাপ সংঘটিত হয়নি হওয়া সম্ভব নয় যতটুকু আল্লাহ চান। এখানে আল্লাহ দাউদ (আ.)কে উপরোক্ত আদেশ দিলেও মূলত এইসব আদেশ আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরই দিচ্ছেন। সুতরাং আল্লাহ যেখানে নবী রাসুলদেরই প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হবে পারে?
পথভ্রষ্টরা
যারা বিভিন্ন কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে যায়, তারা প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে পড়ে। আর পথভ্রষ্টরা কখনোই সুপথ প্রাপ্ত হয় না। আল্লাহ বলেন,
অতএব কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে অবস্থান করার অর্থই হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা এবং পথভ্রষ্ট হওয়া। আজ বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমানই ইসলামের গন্ডির বাইরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তারা মুখে ও আনুসাঙ্গিকভাবে মুসলিম দাবি করলেও মূলত তারা তাদের মনমতোন খেয়াল খুশির অনুসরণেই জীবনযাপন করে। আর যারাই প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে তারাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট জালেম। সুতরাং ইসলামে কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে কখনোই কোনো কিছু পালন করা যাবে না।
প্রবৃত্তির অনুসারীদের পরিনতি
আমরা এতক্ষণ জানলাম কারা কারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। এখন আমরা জানব যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে কুরআন হাদিসে তাদের কী পরিনতি কথা উল্লেখ আছে তা জানার চেষ্টা করব।
তারা হিদায়াত পাবে না
পৃথিবীতে যারাই আল্লাহর নির্দেশনার পরিবর্তে নিজেদের প্রবৃত্তি তথা খেয়াল খুশিকে নিজেদের ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে তারা কখনোই হিদায়াত তথা সৎপথ প্রাপ্ত হবে না। আল্লাহ বলেন,
উপরোক্ত আয়াতটি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর স্বীকারোক্তি মূলক আয়াত হলেও, এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, রাসুল (সা.) কখনোই প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে পারেন না। কেননা তাঁকে পরিচালিত করছেন স্বয়ং আল্লাহ।
তারপরও তাঁর উপর এই আয়াত নাযিল করে পুরো বিশ্ববাসীকে শিক্ষা আল্লাহ শিক্ষা দিচ্ছেন। সুতরাং যেখানে রাসুল (সা.) নিজে বলতে পারেন যে, তিনি যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কথায় খেয়াল খুশির অনুসরণ করেন তবে তিনিও পথভ্রান্ত হয়ে যাবেন এবং সুপথ প্রাপ্ত হবেননা। সেখানে যারা আল্লাহর পরিবর্তে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তাদের কী অবস্থা হবে?
অতএব, কোনো অবস্থাতেই কারো কোনো সুযোগ নেই প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। আল্লাহ প্রবৃত্তির অনুসরণ নিয়ে এতো কঠোরতা অবলম্বন করলেও সুফিবাদীরা কখনোই তা গ্রাহ্য করে না। তারপরও তারা ধর্মের নামে নানান রীতিনীতি নিত্যনতুন আচার অনুষ্ঠান তৈরি করে ইসলামের নামে চালিয়ে যাচ্ছে।
সাহায্যকারী নেই
যারাই প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে তাদের কোনপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা আল্লাহর পক্ষ থেকে করা হবেনা। এমনকি তা খোদ রাসুলুল্লাহ (সা.) করলেও! আল্লাহ বলেন,
উপরোক্ত আয়াতে বলা হচ্ছে, ইহুদী খ্রিস্টানরা চায় রাসুল (সা.) তাদের অনুসরণ করুক। কিন্তু আল্লাহ কখনোই তাদের অনুসরণ সমর্থন করেননা। সেজন্য এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ এটাই নির্দেশ দিচ্ছেন যে, রাসুল (সা.) যদি ইহুদী খ্রিস্টানদের অনুসরণে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তবে তাঁকেও কেউ আল্লাহর হাত থেকে রক্ষা করতে কিংবা উদ্ধার করতে পারবে না। যদিও সমস্ত নবী রাসুলরা হচ্ছেন নিষ্পাপ। এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ সকল মুসলমানদের জন্য সতর্কীকরণ দিয়েছেন।
আজ ইহুদী খ্রিস্টানরা মুসলমানদের উপর খুবই সন্তুষ্ট! কেননা বিশ্বের অধিকাংশেরও বেশী মুসলমানরা তাদের অনুসরণে জীবনযাপন করছে। ইহুদী নাসারা মুসলমানদের জীবনযাপনে তাদের এমন সব কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দিয়েছে, যা কখনোই ইসলামের সংস্কৃতি নয়। যেমন জন্মদিন পালন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি। এইসবের মাধ্যমে সাধারণ মুসলমানরা খেয়াল খুশির অনুসরণে জ্ঞাত এবং অজ্ঞাতাবসত ইহুদী খ্রিস্টানদের সেইসব শয়তানী সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ছে। এই কারণে কুরআনের বিপরীতে ইহুদী খ্রিস্টানদের অনুসরণ হচ্ছে প্রকৃতার্থে প্রবৃত্তির অনুসরণ।
অবাধ্য দলের অন্তর্ভুক্ত
যারাই আল্লাহর কিতাব আইনকানুন আদেশ নিষেধ মানবে না তারাই হবে যালিম। সুতরাং যারা আল্লাহর জ্ঞান আসার পরও খেয়াল খুশি তথা প্রবৃত্তির অনুসারী হবে। তারা সবাই আল্লাহর অবাধ্য দলের অন্তর্ভুক্ত হবে যালিম হিসাবে। আল্লাহ বলেন,
এথেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, যারাই সঠিক জ্ঞানের অনুসরণ না করে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারাই হচ্ছে জালিম। যেমনঃ সুফিবাদীরা কুরআন সুন্নাহর অনুসরণ না করে নিজেরাই নিত্যনতুন ঈমান আকিদার সৃষ্টি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এভাবেই তারা প্রবৃত্তি তথা নিজেদের খেয়াল খুশিকে শরিয়ত বানিয়ে নিয়ে ইসলাম পালন করে। যা কখনোই মুমিনের ইসলাম লক্ষণ নয় বরং মুনাফিকী ইসলাম। এবং তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ তাদের পথভ্রষ্ট করেন
যারা নিজেরাই নিজেদের খেয়াল খুশির অনুসরণে জীবনযাপন এবং ধর্মীয় জীবন পালন করে তাহলে তাদের আল্লাহ নিজ দায়িত্বে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ বলেন,
সুতরাং যারাই কুরআন হাদিসের বাইরে গিয়ে বে ইনসাফী এবং জ্ঞানহীন জীবনযাপন করবে, তারাই তাদের অজ্ঞানতার জন্য প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে পড়বে। আর এদেরই আল্লাহ নিজে পথভ্রষ্ট করে ছেড়ে দেন।
এর প্রমাণস্বরুপ দেখা যায়, যারা প্রবৃত্তির অনুসরণে জীবনযাপন করে তারা তাদের খামখেয়ালি জীবনযাপনে খুবই মত্ত এবং আসক্ত। তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র এই চেতনা কাজ করে না যে, আমরা যা করছি তা কতটুকু ইসলামসম্মত?
এই চেতনাবোধ না থাকার কারণে প্রবৃত্তিপরায়ণরা দিনদিন তাদের বেহিসাবী অনৈসলামিক কর্মকান্ডে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। সেইসাথে শয়তান তাদের এটা বলে আশ্বস্ত করে যে, যদি আল্লাহ না চাইতেন তাহলে কি তোমরা এইসব করতে পারতে? অর্থাৎ তোমরা যা করছো তা অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি আছে। সুতরাং তোমরা তোমাদের মতোই চলতে থাকো।
এভাবেই চলার কারণে তারা আল্লাহর হিদায়াতের দেখা পায় না। আর এটাই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা যা আল্লাহ নিজে তাদেরকে ধ্বংসের মুখোমুখি করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ ছাড়া তাদের আর উদ্ধার করার কেউ আর নেই।
একইভাবে যারা বিশেষকরে সুফিবাদীরা ইসলামের নামে কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান ঈমান আকিদা ইত্যাদি পোষণ করে, তারা মনে করে তারা যা করছে তা অবশ্যই সঠিক। যদি ভুল হতো তাহলে তারা সফলতা পেতো না। এইসব বলেই শয়তান তাদের কুরআন সুন্নাহ থেকে দূরে সরিয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে। আর এভাবেই আল্লাহ তাদের পথভ্রান্ত করে।
প্রবৃত্তিপরায়ণরা পশুর মতো
যারাই প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তাদের জ্ঞানবোধ নষ্ট হয়ে যায়। তারা সত্য অনুধাবনে জাগতিক জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। যারফলে প্রকৃতার্থে নির্বোধ সম্পন্ন প্রাণী তথা পশুর মতো আচরণ করে। পশুরা যেমন কোনো কিছু বুঝার বা করার জ্ঞান নেই। ঠিক তেমনি তাদের অবস্থাও একই। আল্লাহ বলেন,
যারা নিজের নফসের অনুসারী হয়ে যায়, তাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তখন তারা তাদের খেয়াল খুশি মতোই পশুতুল্য জীবনযাপন করে। অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট শৃঙ্খলায় তারা চলার চেষ্টা করে না। মন যা চাই তা ই করতে থাকে। তারা তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগায় না। ফলে তারা পশুতে পরিনত হয়।
একইভাবে ধর্মীয় জীবনে যারাই প্রমাণিত নিদর্শন দেখে ইসলাম গ্রহণ করে না। অথবা ইসলাম গ্রহণ করলেও সহীহ্ কুরআন সুন্নাহর আলোকে জীবনযাপন না করে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ দ্বীন দুনিয়া পালন করে। তারা কখনোই মানুষ হতে পারে না। বরং তাদের অবস্থা হচ্ছে জীব জন্তুর মতো। কেননা তারা সঠিক ইসলাম যাচাই না করে নিজেদের মন মতো সুবিধাবাদী ধর্ম পালন করে। অতএব তারা পথভ্রান্ত। তারা কখনোই সঠিক পথ পাবে না।
উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে সুফিবাদীরা হচ্ছে পশুর মতো। কেননা তারা কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে বিভিন্ন ঈমান আমলের চর্চা করে। তাদের এবং তাদের অনুসারীদের যতই কুরআন হাদিসের নিদর্শন দেখানো হোক না কেন, তা তারা মানতে নারাজ। তাদের দাবি পূর্বপুরুষ পীর আউলিয়াদের থেকে যা তারা পেয়েছে তা ই সঠিক। সুতরাং তারা জ্ঞানার্জনের ধার ধারে না। ফলে তারা পশুর চাইতেও অধমে পরিনত হয়।
প্রবৃত্তির অনুসরণ নিষিদ্ধ
আল্লাহ তালাআলা কখনোই প্রবৃত্তির অনুসরণকে পছন্দ করে না। ইসলাম সুস্পষ্ট ভাবে প্রবৃত্তির অনুসরণ নিষিদ্ধ করেছে। কেননা ইসলামে রয়েছে সুস্পষ্ট এবং সুশৃঙ্খল জীবনবিধান। যা প্রতিটি মানুষের জন্য খুবই সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ। আল্লাহ বলেন,
অতএব ইহকাল পরকাল উভয় ক্ষেত্রের জন্যই কখনোই প্রবৃত্তির অনুসরণ কাম্য নয়। আজ পৃথিবীর চারদিকে মিথ্যার ছড়াছড়ি। কে কার কাছ থেকে কত অন্যায়ভাবে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করবে সেটা নিয়েই ব্যস্ত। কেউ ই ইসলামের অনুসরণে জীবনযাপনে আগ্রহী নয়। সকলেরই একটাই উদ্দেশ্য, দুনিয়াবী জীবনকে প্রাধান্য দেওয়া। অথচ সর্বাবস্থায় এবং সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের উপর অটল থাকাই হচ্ছে প্রকৃত মুমিনের কাজ।
প্রবৃত্তি থেকে নিবৃত্তরাই জান্নাতী
পৃথিবীতে যারা শয়তানের প্ররোচনা থেকে নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে তারাই হচ্ছে জান্নাতের অধিকারী। আল্লাহ বলেন,
আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা যে, দ্বীন ইসলামের বিধান ব্যতিরেকে যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে না, তার স্থান হবে জান্নাত। অর্থাৎ যে মুমিন ব্যক্তিজীবনে প্রবৃত্তির অনুসরণ (খানাপিনা, চাল চলন,আয় ব্যয়, কামনা বাসনা ইত্যাদি) থেকে বিরত থেকে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, সে ই হবে জান্নাতের উত্তরাধিকারী এবং তারাই হচ্ছে আল্লাহর কাছে সফল।
একইসাথে ধর্মীয় ঈমান আকিদার ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র কুরআন এবং সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া যদি অন্যান্য কোনো বুজুর্গ পীর আউলিয়াদের অনুসরণ করা হয় যা কুরআন সুন্নাহর বিরোধী, তাহলে তা হবে প্রবৃত্তির অনুসরণ। যা কখনোই মুমিনকে জান্নাতের পথ দেখায় না।
উপসংহারঃ
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট হলো যে, ব্যক্তিজীবন এবং ধর্মীয় জীবনে কখনোই নিজের মন মতোন বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করা যাবে না। যদিও শয়তানের প্ররোচনায় প্রবৃত্তির অনুসরণে মনে হবে এটাই সঠিক। তাই প্রকৃত মুমিনের উচিত হবে সর্বাবস্থায় প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন সুন্নাহর সহীহ্ অনুসরণ করা।
আপনি আরো যা পড়তে পারেন
- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ-এর ব্যাখ্যা (পর্ব-১)
- ঈমান কী? এবং ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহ কী কী?
- ইসলাম কাকে বলে? ইসলামের পরিচয়, ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
- ১০০+ মোটিভেশনাল উক্তি, এসএমএস, স্ট্যাটাস ও ছবি ডাউনলোড
- জুমা মোবারক, জুমার দিনের আমল, ফজিলত, করণীয় ও বর্জনীয়
- ইসলামিক ফেসবুক পোস্ট- বাংলা স্ট্যাটাস ডাউনলোড
- ইমাম বুখারি (রহ.) এর জীবনী
- হযরত উসমান (রা.) এর জীবনী
- হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর জীবনী
- হযরত আদম (আ.) এর জীবনী
- হযরত আলী (রা.) এর জীবনী
- হযরত ওমর (রা.) এর জীবনী
- ইমাম আবু হানিফা (রহ.)
- ১০ টি সেরা ইসলামিক বই–যা অবশ্যই পড়া উচিত
- ইসলামিক ফেসবুক পোস্ট- বাংলা স্ট্যাটাস ডাউনলোড
- হযরত আবু বকর (রা.) এর জীবনী
- যে আমলে নেকী বৃদ্ধি হয়